IMG_1119
Algonquin visitor’s center near east gate

শিরোনামের বাক্যটি বোধ হয় শুধু মাত্র বাংলাদেশের বা বাংলাদেশিদের জন্য নয় বরং পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষ তাদের জন্মভূমি সম্মন্ধে এ কথা বলতে পারে কারণ মা যেমনই হোক সে সব সময় স্বরব শ্রেষ্ট এবং সুন্দর , তাছাড়া আমি আমার জীবনে বিভিন্ন মহাদেশের ছোটো-বড়ো, ধোনি-গরিব যে ২২/২৩ টি দেশে গেছি তার কোনোটাতেই একেবারে  সুন্দর কোনো প্রকৃতি নেই তা নয়, হয়তো typical tourism এর খাতায় তাদের সেই সুন্দর জাগার নামগুলি থাকে না কিন্তু সেগুলিও অসাধারণ জায়গা।

আমাদের সুন্দর বাংলাদেশটির সৌন্ধর্য সবসমই থাকবে যদিও দেশটির অনেক সিস্টেম এর এখনো যথেষ্ট উন্নতির প্রয়জন আছে কারণ অনেক  উন্নয়নের সাথে অনেক সিস্টেমের এবং আমাদের মূল্যবোধের তেমন উন্নতি হয়নি। কত সুন্দর জাগা রয়েছে দেশটি জুড়ে, কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশের অর্থো-সামাজিক, অপর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রয়জনীয় নিরাপত্তার অভাবে সমাজের সব মানুষের সেগুলি উপভোগ করা হয়ে উঠে না তাই রবীন্দ্রনাথের কবিতা ” দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দু পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষে একটি শিশির বিন্দু ” এর আক্ষেপ অনেকের পক্ষে আক্ষেপই থেকে যাবে। তাই সাদ্ধ যাদের আছে তাদের এর থেকে বঞ্চিত  হওয়া উচিত না।

Rocky shore of Georgian Bay, Parry Sound, ON
Rocky shore of Georgian Bay, Parry Sound, ON

আমরা যারা কানাডাতে আছি তাদের জন্য যোগাযোগ বা নিরাপর্তা কোনো সমস্যা নয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থ কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না যদি কি না ইসছা থাকে, সেজন্য আমাদেরকে সময় সুযোগ পেলে এ দেশটির সুন্দর প্রকৃতিকে যতটা সম্ভব উপভোগ করা উচিত। যেমন ধরুন এখানে বেবস্থাটা এমন যে যদি কেউ পাঁচ তারকা স্টাইলে প্রকৃতি উপভোগ বা ভ্রমণ করতে চায় তাও পারবে, আবার কেউ যদি খুব সাধারণভাবে প্রকৃতির মতো হয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে এটাকে উপভোগ করতে চায় তাও সম্ভব। আমি দ্বিতীয়টির বেপারে আগ্রহী বেশি তাই আমার অধিকাংশ লেখাতেই সেই ধরণের এডভেঞ্চার বা ভ্রমণ কাহিনীর কথা থাকে, তবে আমি যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদেশের প্রকৃতি বা এডভেঞ্চারের কথা বলি তার মানে এই নোই যে আমাদের বাংলাদেশে এমন কোনো সুন্দর জায়গা নেই, আসলে দুৰ্ভাগ্যজনক যে উপরউল্লেখিত কারণে আমার নিজের দেশের অনেক অমূল্য রতন-সম জিনিস বা জাগাগুলি ভালো করে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আমি এখনাকর অনেক অনেক সুন্দর জাগাতে গেছি যখন আমি odd-job করতাম, গাড়ি ছিল না এবং যখন মাঝে মাঝে frustrated থাকতাম। কখন একটি ভালো চাকরি হবে, একটা ভালো গাড়ি হবে, জীবনটা একটু নিশ্চিত হবে সেই আশায় বসে না থেকে এক সপ্তাহ, এক দিন বা এক ঘন্টার জন্য হলেও বের হয়ে যান এই কংক্রিট আর high-rises এর মেলা থেকে একটু দূরে, দেখবেন অনেক ভালো লাগবে, প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে এবং কাজে অনেক স্টামিনা ফিরে পাবেন। কিছু কিছু newcomer দের নিয়ে প্রথম দিকে এমন অনেক জাগাতে গেছি যে এখনও তারা সেই প্রথম অনুভূতি বা ভালো লাগার কথা ভুলিনি তাই আমরা যারা এখানে অনেকদিন আছি তাদের উচিত নতুনদের এখানকার প্রাথমিক স্ট্রাগগল এর কথা বলার সাথে সাথে সময় সুযোগ হলে এখানকার সুন্দর জিনিষগুলির সাথেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত, ভালো মন্দ মিলেই তো সব। তফাৎ হস্ছে কোথাও একটু বেশি ভালো এবং কম মন্দ।

0068
Canola field, on the way to Tobermerry HWY 6 from Owen Sound

প্রকৃতি কিভাবে আপনার মনকে ভালো করে দিতে পারে সে বেপারে আমি ছোট্ট একটি বেক্তিগত উদাহরণ দেই। বেশ ক বছর আগে আমার মা যখন মারা গেলেন তার ঠিক পরপরই দেশে যাওয়া হয়নি কারণ তার চল্লিশতে যাওয়ার ইসছা ছিল। যদিও প্রথম যখন বিদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য প্লেনে পা রেখেছিলাম তখন ধরেই নিয়েছিলাম যে বাবা মা বা দেশের অন্নান্ন আত্মীয়দের মৃত্যুর সময় তাদের কাছে থাকা বা মৃত্যুর খবরে শোনার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছে ছুটে যাওয়াটা হবে ৬৪৯ লটারির মতো, তার পরেও সবাই যখন তার শেষ বিদায়ে উপস্থিত তখন আমি এখানে একা তাই নিজেকে খুব দুর্ভাগা মনে হসছিলো, after all I am a human being ! যাহোক তার চল্লিশা থেকে ফিরে আসার মাস  দুই  পরে একদিন খুব মন খারাপ লাগছিলো, তার সঙ্গে কাটানো অতি তুস্চ্ছো এবং ক্ষুদ্র ঘটনাগুলো একের পর এক ছায়াছবির ফিল্মের মতো ভেসে আসছিলো আমার মনের পর্দায়, এ সময়ে টরোন্টর ইস্ট এ এক বন্ধু পরিবার তার বাসাতে যাওয়ার জন্য বলেছিলো।
সঙ্গে সঙ্গে আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম এবং রওয়ানা হলাম GO ট্রেন ধরে, তারপর বাস। পথিমধ্যে বাসটি আমার পরিবর্তন করার কথা কিন্তু বসে বসে মায়ের সাথে পুরোনো সব স্মৃতি রোমন্থনের মধ্যে দিয়ে কখন যে সময় কেটে গেছে আর কখন যে ড্রাইভার এসে আমাকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে গেছে আমি নামবো কি না তা আমার মনে নেই; তাই বাসটি চলে গেলো অন্য একটি গন্তব্যে। সেখানে নামার পর জানতে পারলাম ফিরতি বাস পেতে বেশ কয় এক ঘন্টা দেরি। জনমানব শূন্য স্টেশনে বসে বসে ভাবছি কি করবো, হটাৎ মনে হলো কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখি লেক কত দূরে তাহলে হয়তো সময়টা লেকের পাড়ে বসে কাটানো যাবে। এ প্রসঙ্গে স্টেশনের টিকেট মাস্টারের সাথে আলাপ করে জানা গেলো যে অল্প কিছু দূর একটি ক্রিক আছে যেখানে লেক থেকে স্যামন মাছ ড্যামের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে আপ স্ট্রিমে যেতে চাছছে ডিম্ পাড়ার জন্য। উল্লেখ ডিম্ পাড়ার পরে স্যামন গুলো বাচ্চা রেখে মরে যায় এবং বাচ্চাগুলো বড়ো হয়ে লেকে ফিরে যায় এবং একই রীতিতে বয়সের শেষ দিকে ডিম্ পাড়তে সালমোনগুলি আবার চলে আসে আপ স্ট্রিমে, প্রকৃতির এক অদ্ভুত নিয়ম।

salmon 4
Big fishes are trying to jump over the dam, Bomenville Creek!

যাহোক মাস্টার আমাকে বললেন ওখানে গেলে আমার ভালো লাগবে। কথা মতো লোকাল বাস ধরে তার পর বেশ কিছুটা পথ হেটে গেলাম সেখানে। জায়গাটির নাম ছিল Bowmanville Creek এবং ড্যামটি ছিল Goodyear dam. যেয়ে দেখলাম এক অদ্ভুত দৃশ্য, অসংখ স্যালমন ড্যামের কাছে এসে লাফিয়ে ড্যামটির ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না তাই বেশ কিছু ভলন্টিয়ার মাঝ পানিতে নেমে একটি ছোটো নেট দিয়ে মাছ তুলে মাছের লেজ ধরে ড্যামের উপরে দাঁড়ানো লোকদের কাছে রশি দিয়ে উপরে তুলে দিসছে, তারা আবার মাছগুলিকে উপরের পানিতে ছেড়ে দিসছে, দৃশ্যটি এতো সুন্দর যে না দেখলে বোঝা যাবে না। আমার মনে পড়ে গেলো ইংরেজ কবি কিটস এর কথা, সে তার TB রোগের যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার জন্য নাইট্যাংল কে দেখে ক্ষনিকের জন্য বেথাকে ভুলে একটু সুন্দরের কল্পনা করতে চেয়েছিলেন আর তার ফল হলো একটি একটি অসাধারণ কবিতা, যাহোক আমি কবি নোই তাই স্যালমনদের ওই মেলা আর অসংখ্য ভলন্টিয়ারের ওই মাছগুলোকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করা দেখে আমার ইসছা হলো পানিতে নেমে যাই। ওদের একজন অর্গানাইজারকে আমার খায়েশের কথা জানালাম, সে রাজি হলো তবে বললো তোমাকে নেট দিতে পারবো কিন্তু তোমার তো waterproof প্যান্ট নেই।

salmon 2
Volunteers helping Salmon to go to the upstream shallow water to lay eggs

আমি বললাম লাগবে না আমার যা আছে তা পরেই নামবো। আমাকে ধরিয়ে দিলেন একটি নেট, শুরু করে দিলাম নেটে করে বিশাল বিশাল স্যালমন ধরে ড্যামের উপরে থাকা ভলেন্টিয়ারদের মাধ্যমে মাছগুলোকে আপস্ট্রিমে পৌঁছে দেওয়ার কাজ। আসলেই ভুলে গেলাম মনের কষ্ট। বেলা যখন গড়িয়ে গেলো এবং দিনের জন্য ওরা অভিযান সমাপ্ত করলো তখন একজনের কাছ থেকে টিস্যু পেপার নিয়ে মাথাটা কোনো মোতে মুছে চলে গেলাম একটি দোকানে এবং সেখান থেকে একটি অতি সস্তা দামের জামা, প্যান্ট এবং টাওয়েল কিনে কাপড় চেঞ্জ করে ফেললাম। পরদিন থেকে আবার কাজ তাই রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার মতো মনে হলো “miles to go before I sleep” সে জন্য রওয়ানা হলাম টরোন্টোর উদ্দেশে। বনধুকে ফোন করে বললাম তাদের বাসাতে সেদিন আর যাওয়া হবে না। পথি মধ্যে ভুল করে সংযোগকারী বাস মিস করা হয়তো আমার প্রয়াত মায়ের আশীর্বাদ ছিল তা না হলে ওই অনাবিল শান্তির অভিজ্ঞতাটি উপভোগ করতে পারতাম না। ফেরার পথে বাসের মধ্যে মার্ কথা ভাবতে ভাবতে মনে হলো আমি বা আমার মতো যারা মা হারা তাদের সব মায়েরাই হয়তো মা স্যালমনদের মতো আমাদেরকে রেখে চলে গেছেন স্বর্গে আর ঠিক তাদের মতো আমাদেরকেও দায়িত্ব দিয়ে গেছেন আমাদের পরবর্তী জেনেরেশনকে তাদের আদর্শকে ধারণ করে একটি সুন্দর সমাজ তথা সুন্দর পৃথিবী গড়ার প্রত্যাশায়।
Dear Mom, There aren’t enough words in any language to describe how much I love you, how much I miss you, and how grateful I am for what you are even if you’re not physically with me.
প্রকৃতি আর মা কে আলাদা করা যায় না কারণ প্রকৃতি তো মায়ের মতোই সুন্দর তাই লেখার শুরু প্রকৃতিকে দিয়ে করলেও শেষ করলাম পৃথিবীর সব থেকে মূল্যবান এবং প্রিয় জিনিস মাকে দিয়ে। অবশেষে যে দেশে, যেখানে এবং যত সমস্যায় থাকুন না কেন অল্প একটু সময় বের করে চলে যান প্রকতির কোলে, দেখবেন মিলে যাবে অনেক স্বস্তি এবং ফিরে পাবেন সামনে আগানোর অনেক উদ্দম।

HWY 118, Muskoka
HWY 118, Muskoka

দুঃখ, দুর্দশা, হতাশা যাই থাকে না কেন কথা বলুন আপনার হৃদয়ের সাথে, চলুন তার মোতে আপনার লক্ষ যদি দৃঢ় থাকে তবে চলার পথ বন্দুর হলেও লক্ষে আপনি পৌঁছাবেনই, যেমনটি ইংরেজ কবি Oliver Goldsmith তার Light Shining Out of Darkness কবিতায় লিখেছেন ” The bud may have a bitter taste, But sweet will be the flower.”
এটা শুধু আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা নয়, আমার বিগত ১০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। I have seen the changes and I strongly believe people can change no matter what, it may be the question of time and little support, and of course your determination. You have all of our support, you have seen when a question comes to the post how man people respond! Please do not hesitate to ask question, even it’s your question we learn from it so your are not only contributing by answering but also questioning.

Lake Opengo, Algonquin Park. We discovered it while looking for gas.
Lake Opengo, Algonquin Park. We discovered it while looking for gas.

আমি আগেই বলেছি লেখালেখিতে আমি খুব পারদর্শী নোই তবে I try to speak from my heart. অনুগ্রহ পূর্বক ত্রূটি নিজ গুনে মার্জনা করবেন।
ভালো থাকবেন সবাই।

মুকুল
টরন্টো ২০১৬

১ মন্তব্য

  1. চমৎকার লেখা মুকুল ভাই. নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণামূলক.

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন