সারা বিশ্বে ‘চায়ের কাপে তুফান’ তোলার মতো আলোচ্য বিষয় এখন একটিই, আর তা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া । বাসায়, ঘরোয়া আলোচনায়, অফিসে কাজের ফাঁকে, আড্ডায় এই এক বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে অন্তহীন। সঙ্গত কারণেই অসাধারণ ক্ষমতা এবং মর্যাদা সম্পন্ন এই পদের জন্য এরখম একজন মানুষকে বেছে নেয়ার পিছনে আমেরিকার মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বুদ্ধিবৃত্তির স্তর নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ হতেই পারে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এই বিশ্লেষণ এখন অবান্তর। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা এবং প্রজ্ঞা এরখম মর্যাদায় ভূষিত হওয়ার দাবি রাখে কিনা সেই  আলোচনায় সময় নষ্ট না করে বরং দেখা উচিত কোন প্রেক্ষাপটে আমেরিকার রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে তার আবির্ভাব।

বোস্টন, কানেক্টিকাট, নিউইয়র্ক, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়ায় কিছু আত্মীয় স্বজন থাকার সুবাদে বিগত কয়েকমাসে এইসব জায়গায় কয়েকবার যাওয়ার এবং বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে অনেকবার। আরো অনেক কিছুর সাথে দুটো বিষয় আমার ব্যক্তিগত পৰ্য্যবেক্ষনে খুব সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে মানুষের মধ্যে শাসনামল ( regime ) পরিবর্তনের এক দুর্নিবার স্পৃহা। কেও কেও বলেছেন হিলারির শাসনামল হবে ওবামার এক্সটেনশন। অনেকে বলেছেন বার্নি স্যান্ডার্স হলেও তারা দ্বিতীয়বার চিন্তা করতেন. দ্বিতীয় যে বিষয়টি খেয়াল করেছি তা হলো দুর্নীতির সাথে হিলারির সংশ্লিষ্টতা এবং তার উপর আস্থার ভয়ানক অভাব। একজন আমাকে বলেছেন শয়তান এবং দানবের মধ্যে বেছে নিতে বললে উনি দানবকেই বেছে নিবেন। কিছুটা চুপ থেকে আমি বুঝতে চেষ্টা করছিলাম যে কতটা বীতশ্রদ্ধ হলে তুলনা এই পর্যায়ে নেমে আসতে পারে. রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এর সাথে হয়তো আরো অনেক কারণ যোগ করবেন।

যে কারণেই হোক, ট্রাম্প এখন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। প্রতিশ্রুতিতে ভরপুর ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর বাস্তবতায় কতটুকু বা কি রূপ নেয় তা এখন দেখার বিষয়। রিপাবলিকানদের প্রাথমিক মনোনয়নের দৌড়ে পরাস্ত টেড ক্রুজ কে অনুসরণ করলে হয়তো মনে করতে পারবেন উনার বিখ্যাত উক্তি, “All promises of Donald Trump have an expiration date”.  প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের এই নমুনা আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে শুরু করেছি। যে ওবামাকেয়ার কে একেবারেই বাতিল করে দেয়ার আস্ফালন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বার বার উঠে এসেছে, সেই ওবামাকেয়ার তিনি এখন পুরোপুরি বাতিলের পক্ষে না. অন্তত এর দুটি প্রধান অংশ রেখে দেয়ার যৌক্তিকথা ট্রাম্পের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে. একই রকম প্রবণতা অন্যান্য অঙ্গীকারের বেলায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমেরিকায় মুসলমানদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু করলেও মাঝপথেই তিনি অবস্থান বদল করে “এক্সট্রিম ভেটিং” এ মোড় নেন। মনে হচ্ছে তার এই অবস্থান ও পরিবর্তিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ক্যাপিটাল হিলে এক সাংবাদিক মুসলমানদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে ট্রাম্প কোনো উত্তর না দিয়েই প্রস্থান করেন। আমার মনে হয় তার অনেক অঙ্গীকারই হয় অনেক ঘষামাজা হয়ে বেরিয়ে আসবে আর কিছু হয়তো বাস্তবে রূপই নিবে না. কে জানে, ভবিষ্যতে তার ঔদ্ধত্ব, রাষ্ট্রপতি এবং ব্যবসায়ী পরিচয়ের মধ্যে স্বার্থগত দ্বন্দ, নৈতিক অবক্ষলন ট্রাম্পকে তার নিজ দলের মধ্যেই অভিশংসনের (impeachement ) মুখোমুখী করতে পারে। নিজের বক্তব্যকে উনি নিজে কতটা বিশ্বাস বা সমর্থন করেন এই বিষয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে. সময়, সুযোগ পেলে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জন ট্রাম্প হয়তো কোনো একদিন ব্রোনো মার্সের জনপ্রিয় গানের একটি লাইন ধার করে সবাইকে আশ্বস্ত করে বলবেন,

“ডোন্ট বিলিভ মি, জাস্ট ওয়াচ”

সৈয়দ মসিউল হাসান, টরোন্টো থেকে

3 মন্তব্য

  1. after all now he is democratically elected us president like Hamaj leader in Gaza Strips, Palestine. অতি পরিষ্কার যে মার্কিন সমাজের অসংখ লোকের চলমান স্টাব্লিশমেন্টের উপর আস্থা হারাতে বসেছিল তাই তারা for Trump এর থেকে against টি স্টাব্লিশমেন্ট কে ভোট দিয়েছে বেশি। Trump এর অনুসারীদের মতো অনেক লোক বাংলাদেশ বা কানাডাতে আছে তাই Trump জাতীয় কেউ যদি কোনো ক্রোমে উঠে আসতে পারে তাহলে আমাদের অবস্থাও আমেরিকানদের মতো হবে। আমার মনে হয়না মানুষ যেভাবে ভাবছে আমেরিকার Trump এর কারণে আমেরিকার অবস্থা সেরকম হবে। যাহোক আমি বিশ্বাস করি মার্কিন রাই আমেরিকানদের সমস্হার সমাধান করবেন। আমি যেটা দেখছি আমার গাড়ির নিবন্ধন ফি ৯৬ থেকে ১২০ ডলারে বেড়ে গেছে, আমাদের প্রাদেশিক সরকারের গাড়ি ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম কমানোর কথা বললেও অন্তত আমার তাতে কোনো ফয়দা হয়নি তাই নেক্সট ইলেকশনএ আরো কিছু বিষয় পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
    Mr. Trudeauর কিছু promise বাস্তবে রূপ দিয়েছে যদিও আমার বেক্তিগত বেপারে এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি, অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছর ট্যাক্স রিটার্ন পর্যন্ত, দেখি তার মিডল-ক্লাস ট্যাক্স রিডাকশন আমাদেরকে কি দেয়।

    যাহোক অন পার্সোনাল নোট, হাসান ভাই আমার মনে হয় আপনার লেখার সময় বেশ ডিপ thought থাকে, খুব ভালো।

  2. কেভিন ও ল্যারি নাম আমাদের কানাডাতে ও একজন আছেন যাকে অনেকে কানাডীয় ট্রাম্প নামে অভিহিত করেন. সন্দেহ নেই, ট্রামের উত্থানে এখানেও অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন. কিন্তু তারপরেও আমার দৃঢ় বিশ্বাস কানাডা অন্য রকমই থেকে যাবে. অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়া ও অনুপ্রেরণা দেবার জন্য.

  3. হা, হাসান ভাই লেরিকে মার্কিন TV show Shark Tank এ এবং কানাডিয়ান Dragon’স den এ দেখেছি তাছাড়া cbc র Lary ও Lang Exchange এ ছিল। কিছুদিন আগে যদিও শোনা জাসছিলো সে leadership প্রতিযোগিতায় নামবেন কিন্তু এখন শুনছি না অথবা already নাম জুড়ে দিয়েছেন। তবে আমার মনে হয় না conservative delegatesরা ওকে নির্বাচিত করবেন। অবশ্য ওর একটা বই পড়েছিলাম, আমার অনেক কাজে এসেছে। দেখা যাক আমাদের Trudeau কি করেন, তার উপর অনেকটা নির্ভর করবে আগামী অবস্থা। তবে In future, gradually the business leader might take over the politics and run the countries!
    France’s ultra nationalist leader is hopeful after Mr. Trump’s victory that her party will eventually make progress!

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন