তৃনা তার দুই কানে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে কাঁদছে, কারণ পাশের রুমে তার মা বাবা-কে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করছেন। তৃনার সাথে একই রুমে আরেকটি মহিলা কাঁদছে তাঁর নাম রুবিনা। তিনি কিছুক্ষন আগে স্বামীর সাথে স্বামীর বন্ধুর বাসায় অতিথি হয়ে এসেছেন। কপাল ভালো রুবিনার স্বামী রঞ্জু বাসায় নেই, প্যারাসিটামল কেনার জন্য ফার্মাসির দোকানে গিয়েছে। রুবিনার ধারণা রঞ্জু বন্ধু পত্নীর এসব কুৎসিত কথাবার্তা শুনে প্রচণ্ড কষ্ট পেতো। রুবিনা কিছুক্ষন আগে রঞ্জুকে জানিয়েছিল বগুড়া থেকে জার্নি করে এসে মাথা ধরেছে। রুবিনা চাচ্ছিলো না তাকে একা ফেলে রঞ্জু এই রাতে বাইরে যাক। রঞ্জু রুবিনার কাছ থেকে মাথা ব্যাথার কথা শোনা মাত্র চঞ্চল হয়ে উঠলো। পাশের রুমে বন্ধু টুটুলের কাছ থেকে প্যারাসিটামল চাইতে যেয়ে দেখলো বেডরুমের দরজা ভিতর থেকে ভেজানো। রঞ্জু রুবিনাকে বললো, ‘আমি নিচে যাচ্ছি, এই কাছে দেখেছি ফার্মাসি দোকান, চট করে এক পাতা প্যারাসিটামল কিনতে যাচ্ছি, জাস্ট যাবো আর আসবো।’ এর মধ্যেই রঞ্জুদের বেডরুম থেকে চ্যাঁচামেচি শুরু হয়েছে।

‘একজনের টাকায় সংসার চলে এটা তোমার প্রাণ প্রিয় বন্ধুদের কখনো বলেছো ? তা বলবে কেন ? তুমি তো আছো তোমার ধান্দায়, নিজে চাকরি করার মুরোদ নেই, বউকে দিয়ে কাজ করাচ্ছ, বউয়ের টাকায় বন্ধুদের নিয়ে হোটেলে হোটেলে আড্ডা দিচ্ছ, কলিজা সিঙ্গারা খেয়ে দেশের রাজনীতি উদ্ধার করছো, লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছ, তুমি কি ভেবেছো আমি এসব বুঝি না…।’

ওপাশ থেকে টুটুলের চাপা গলা শোনা যাচ্ছে, ‘এই কি যা তা বলছো, প্লিজ আস্তে বলো, ভাবি শুনতে পাচ্ছে।’ টুটুলের কথা যেন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্যাটালিস্টের মতো কাজ করা শুরু করলো। ত্রপার গলার স্বর প্রবল থেকে প্রবলতর হলো। ‘শুনলে শুনবে, স্বামীকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য উনি ড্যাঙ ড্যাঙ করে ঢাকা শহরে এসেছেন, মানুষেরt আক্কেল বলে তো একটা জিনিস আছে না কি।’

ঝগড়ায় টুটুলকে অভিযোগ করে ত্রপা যা যা বলেছে এসব প্রত্যাকটি বিষয়ে টুটুলের পরিষ্কার বক্তব্য রয়েছে। টুটুল বন্ধুদের সাথে কালেভদ্রে দুএকবার হোটেলে বসেছে তবে কলিজা সিঙ্গারার বিল সে কখনো দেয়নি। চাকরিবিহীন হাউজ হাজব্যান্ড টুটুলকে বন্ধুরা সমীহ করে চলে। ত্রপা ঝগড়ার সময় যে বলেছে টুটুল বাড়িতে টাকা পাঠায়, এই স্টেটমেন্টও সত্যি না । টুটুল বিবাহিত জীবনে বাড়িতে মাত্র দুবার টাকা পাঠিয়েছিল। একবার মায়ের ব্লাডপ্রেসার মেশিন কেনা বাবদ, আরেকবার ছোটবোন তহমিনার কলেজের পিকনিকের চাঁদা বাবদ সামান্য টাকা। এই মেয়ে সেটিও মনে রেখেছে। শশুড়বাড়ির ব্যাপারে স্ত্রীদের স্মৃতিশক্তি প্রখর থাকে।

টুটুলের খুব ইচ্ছা করছিলো তাঁর চাকরিজীবী স্ত্রীকে ইকোনমিক্সের অপরচুনিটি কস্ট (opportunity cost ) বিষয়ে বুঝিয়ে বলা। ‘ত্রপা শোনো, অপরচুনিটি কস্ট হচ্ছে ধরো একজন ডাক্তারের স্ত্রীর সাধ হলো সে কাঁঠালের বিঁচি দিয়ে চিংড়ি মাছ রান্না করে খাবে। সমস্যা হচ্ছে বাসায় চিংড়ি মাছ আছে কিন্তু কাঁঠালের বিঁচি নেই। বাসায় কাজের ছেলে নেই। ডাক্তার সাহেবকে বাজারে যাওয়ার জন্য যাওয়া আসা ঘন্টা খানিক সময় ব্যয় করে বাইশ টাকা খরচ করে কাঁঠালের বিঁচি যখন কিনতে যাবে সেই মুহূর্তে উনি কমপক্ষে তিনটি রুগী দেখতে পারবেন। একেকটা রুগীর ভিজিট সাড়ে তিনশো টাকা করে হলে হচ্ছে এক হাজার পঞ্চাশ টাকা। টুটুল এসব কথা মনে মনে ভাবলেও ত্রপাকে কিছুই বলতে পারলো না। ত্রপাকে বলতে পারলো না সে চাকরি না করলেও এই ঢাকা শহরে বাসায় রান্না-বান্না করা বাচ্চাদের দেখে রাখা, বাজারঘাট করা, তৃনাকে পড়াতে বসা ইত্যাদি মাঝারি বেতনের একটি চাকরির চেয়ে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।

টুটুল-ত্রপার বিবাদ আরো জোরালো হতে লাগলো। পারস্পরিক সম্বোধন মুহূর্তেই তুমি থেকে তুই -তুকারিতে নেমে এলো। এমন সময়ে গালাগালির বাক্যগুলিতে বিভিন্ন নিন্মশ্রেণীর জীবজন্তুর নাম ক্রমশঃ উচ্চারিত হতে লাগলো। এমন সময়ে প্রকৃতি টুটুলের পক্ষে কাজ করা শুরু করলো। মেঘে মেঘে ধাক্কা লেগে প্রচণ্ড শব্দে গর্জে উঠে বৈশাখের বৃষ্টি শুরু হলো। সেই শব্দে ত্রপা-টুটুলদের কুৎসিত ঝগড়ার শব্দাবলী পাশের ঘর পর্যন্ত তরঙ্গায়িত হয়ে যেতে খানিকটা সমস্যা হলেও মেঘের গর্জনের শব্দে টুসির ঘুম ভেঙে গেলো । টুসি চিৎকার করে কাঁদছে। ছোট বাচ্চাদের কান্নার সাথে বড়োদের ঝগড়ার বিশেষ মিল রয়েছে। বাচ্চারা যেমন চিৎকার করে কাঁদে, বড়োরা তেমনি চিৎকার করে ঝগড়া করে, চেঁচামেচি করে। তবে, বড়োরা কাঁদে নিঃশব্দে।

যেমন এমুহুর্তে টুটুলদের পাশের রুমে টুটুলের বন্ধুপত্নী রুবিনার দুচোখ থেকে গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এই গল্পের গ্রেড সিক্সের তৃনার ব্যাপারটা একটু আলাদা। তাকে ঠিক ছোটও বলা যায় না আবার বড়োও বলা যায় না। তাই, তৃনাকে কাঁদতে হচ্ছে খানিকটা মৃদু শব্দে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। এমন সময়ে হন্তদন্ত হয়ে বৃষ্টিতে জুবুথুবু হয়ে ভিজে পলিথিন ব্যাগে এক পাতা প্যারাসিটামল নিয়ে রঞ্জু ফিরলো।

স্বল্প আয়ের মধ্যবিত্ত পরিবারের হাজার রকমের সমস্যাবলী মোকাবেলা করতে যেয়ে স্বামী-স্ত্রীদের সম্পর্কের যেমন অবনতি হতে থাকে থাকে তেমনি তাদের মানবিক মূল্যবোধ, বিচারবুদ্ধিও ভোঁতা হতে থাকে। অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিক জ্ঞানে যে কাজগুলি করাকে যুক্তিসঙ্গত মনে করা হয় সেই কর্মকান্ডগুলিকে পরিস্থিতির কারণে অযৌক্তিক মনে হতে থাকে।

মফস্বল শহরগুলি থেকে ঢাকা শহরে বসবাসরত চাকরিজীবী সিঙ্গেল পরিবারগুলির শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক কর্মকান্ডের নমুনা হচ্ছে এরকম: স্বামীস্ত্রী দুজনেই কাজ করলে বাসায় দেশের বাড়ি থেকে বিশ্বাসী কাজের মানুষের কাছে ছোট বাচ্চাকে রেখে কাজে যেতে হবে, স্বামী-স্ত্রীর একজন কাজ না করলে তো কথাই নেই, যে কোনো একজনের টাকায় যদি সংসার চলে তবে আরেকজনের ক্যারিয়ার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে, সাধ্যমতো উভয়ের দেশের বাড়িতে আর্থিক সাহায্য করা বাঞ্চনীয়, এ বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীতে ভালো আন্ডারস্টেন্ডিং থাকতে হবে। উভয় উভয়কে সম্মান করবে।

হাউজ হাজব্যান্ড টুটুলের সংসারের কথাই ধরা যাক। এমুহুর্তে টুটুল -ত্রপার কুৎসিত ঝগড়ার মধ্যে দিয়ে আমাদের পাঠকদের অনেকেই হয়তো জেন্ডারভিত্তিক নানান ভাবনা ভাবতে শুরু করেছেন। অনেক পাঠক হয়তো ভাবছেন বেয়াক্কেল টুটুলের উচিত সব বাদ দিয়ে একটি ভালো বেতনের চাকরির মধ্যে ঢুকে হাউজ হাজব্যান্ডের তকমা থেকে বের হয়ে এসে পুরুষ সমাজের মান রক্ষা করা। এতে করে আমি খানিকটা সমস্যায় পরে যাবো। কারণ , সে ক্ষেত্রে এই ধারাবাহিককে আরো টেনে লম্বা করে উপন্যাসে রূপান্তরিত করার সুযোগ আমাকে হারাতে হবে। আবার কোনো কোনো পাঠক হয়তো ভাবছেন ত্রপা মেয়েটিরই বা কি আক্কেল, একটি বিদেশী অফিসে কাজ করা উচ্চ শিক্ষিত মহিলা, তাঁর মন মানসিকতা এতো খারাপ হতে পারে ? হলেও না হয় স্বামী এই মুহূর্তে বেকার রোয়েছে, তবুওতো সে সংসারের জন্য খেঁটে মরছে, তাই বলে তাঁর অতিথি বন্ধু -বন্ধু পত্নীর সামনে এরকম কুৎসিত ঝগড়া করতে হবে ? আসলে, বড়ো বড়ো শহরগুলিতে চাকরিজীবী মহিলাদের নানান সমস্যায় থাকতে হয়, অফিসে নানান জটিলতা, ওদিকে দুধের বাচ্চাকে বাসায় রেখে কাজে অস্থিরতা, সংসারের দারিদ্রতা, যত্রতত্র গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি , গ্রামে গ্রামে এনজিও প্রভৃতির কারণে বাসা বাড়ির কাজের মহিলার আকাল ত্রপাকে অনেক কঠিন ভাষায় কথা বলতে শিখিয়েছে।

তবে এক্ষত্রে বিচক্ষণ ত্রপার বিবেচনায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। একজন শিক্ষিত লোকের নিশ্চয় এতটুকু জ্ঞানবুদ্ধি আছে যে সে ঢাকা শহরে বন্ধুর বাসায় নিজে দু এক রাত থাকলেও স্ত্রীকে নিয়ে হুট করে থাকার জন্য চলে আসে না।

পাঠকরা যারা আগের পর্বগুলি পড়েছেন, নিশ্চয় মনে আছে রঞ্জু মাস ছয়েক আগে ঢাকায় অফিসের মিটিঙের ব্যাপারে বগুড়া থেকে এসে প্রায় সপ্তাহখানিক বন্ধু টুটুলের বাসায় ছিল। আসলে, মিটিংয়ের ব্যাপারটি সত্য ছিল কিন্তু মিটিংয়ের পরে যে আরো কয়েকদিন বন্ধু টুটুলের বাসায় ছিল তাঁর কারণ ছিল কিছুটা মানবিক। রঞ্জু সেবার একজন বিশেষ নেফ্রোলজিস্টকে খুঁজছিলো। তাঁর স্ত্রীর কিডনির কিছু সমস্যা হয়েছিল। মফস্বলের ডাক্তার রঞ্জুকে বিভিন্ন টেষ্টের রিপোর্ট দিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলো ঢাকায় ভালো কিডনি স্পেশালিষ্টের কাছে নিয়ে যেয়ে আলাপ করতে। রঞ্জু তাঁর এক ডাক্তার বন্ধুর সাজেশন নিয়ে প্রফেসর ডাঃ মোহাঃ কামরুল ইসলামের কাছে গিয়ে যেয়ে শোনেন তিনি সিঙ্গাপুরে বিশেষ কর্মশালায় গিয়েছেন। তিন দিন অপেক্ষা করতে যেয়ে সে বন্ধু টুটুলকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছিলো । এবার, রঞ্জু সাথে করে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছে ডাঃ কামরুল সাহেবকে দেখাবে। গত কয়েকদিন ধরে রুবানার শরীর ভালো যাচ্ছে না।

রঞ্জু ও রুবিনা গতকাল বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে উঠেছিল রুবিনার এক ফুপাতো বোনের বাসায়। স্ত্রীকে সেখানে রেখে রঞ্জু উঠেছিল বন্ধু টুটুলের বাসায়, টুটুলের সাথে চিকিৎসার ব্যাপারে বন্ধুর সাথে পরামর্শ করবে। রঞ্জুদের কপাল খারাপ। যে বাসায় উঠেছিল সেই বাসার মহিলার অর্থাৎ রুবিনার ফুপাতো বোনদের হটাৎ করেই বগুড়ায় দেশের বাড়িতে যেতে হচ্ছে, জমিজমা নিয়ে কি নাকি ঝামেলা হয়েছে। বাধ্য হয়ে রঞ্জু রুবিনাকে নিয়ে রঞ্জুর এখানে এসেছে। আজ রঞ্জু ডাক্তারের কাছে যেয়ে বুকিং দিয়ে এসেছে। আগামীকাল সকাল সাড়ে নয়টায় ডাঃ কামরুল সাহেবের চেম্বারে এপয়েন্টমেন্ট। রঞ্জু প্ল্যান করেছিল আজ রাতে টুটুলকে সব খুলে বলবে।

রঞ্জু ঘরে ঢুকে গামছা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বললো, ‘এই গলির মুখেই যে ফার্মেসির দোকান, সেটির মালিক দোকান খোলা রেখে এক বাচ্চা ছেলেকে বসে রেখে মসজিদে গেছে এশার নামাজ পড়তে। এদিকে ছেলিটিকে আমি বারবার বলছি প্যারাসিটামলের কথা, সে কথাই বুঝতে পাচ্ছে না । পরে আরো কিছুদূর হেঁটে আরেকটু ফার্মেসির দোকানে থেকে তোমার প্যারাসিটামল কিনে বাসায় ফিরতেই শালার বৃষ্টির পাল্লায় পড়লাম। রঞ্জু হঠাৎ করে খেয়াল করলো রুবিনা তাঁর কথা শুনছে না, সে নীরবে কাঁদছে।

বেলা প্রায় তিনটার মতো বাজে। তৃনাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার প্রায় সময় হয়ে এসেছে। টুটুল ঝটপট টুসিকে রেডি করে নিলো। ত্রপার অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় ছয়টা বেজে যাবে। টুটুলের কাছে বাসাটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। রঞ্জু তার স্ত্রীকে নিয়ে দুপুরের আগেই ব্যাগ গুছিয়ে চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে টুটুল জানেনা। অবশ্য টুটুল জিজ্ঞাসাও করেনি। এতো বড়ো ঢাকা শহরে নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও ম্যনেজ করে হয়তো স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছে। রঞ্জু যাওয়ার আগে তার বন্ধু টুটুলকে শুধু বলে গিয়েছে ‘দোস্ত, আমার বউয়ের জন্য দোয়া করিস, ওর শরীরটা ভালো না। কথার পিঠে কথা বললে আরো ডালপালা গজায়। টুটুল তাই আর ঝামেলায় না জড়ানের জন্য বন্ধুর কথার উত্তরে আর কিছু না বলে শুধু বলেছে ‘আচ্ছা’। টুটুলের এখন খারাপ লাগছে।

কিছু খারাপ লাগা ভালো লাগা নিয়েই মানুষের জীবন। এক জীবনে একজন মানুষ সবাইকে খুশি করতে পারে না। এই মুহূর্তে হাউজ হাসব্যান্ড টুটুলকে খুব ব্যস্ত হয়ে স্ত্রীকে খুশি রাখার জন্য মনোযোগ দিয়ে রান্না করতে দেখা যাচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে যেমন পড়াশুনা করতে হয় তেমনি মনোযোগ দিয়ে রান্না করতে হয়।  ত্রপা লইট্টা মাছের শুঁটকি বেশ পছন্দ করে। শুঁটকি মাছ রান্নার নিয়ম হচ্ছে শুঁটকি মাছ আগে পানিতে আধাসিদ্ধ করে নিতে হয়। অনেকে সিদ্ধ না করে গরম পানিতে মিনিট দশেক শুঁটকি মাছ ভিজিয়ে রাখে, এতে মাছের গন্ধ কিছুটা চলে যায়। এরপরে গরম পানি ড্রেন আউট করে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে অনেক বেশি পিঁয়াজ রসুন দিয়ে বাগার দিয়ে কষিয়ে ভুনা ভুনা করে রান্না করতে হয়। নামার কিছু আগে দিয়ে আস্ত কয়েক পিস কাঁচা মরিচ ছেড়ে দিতে হয়। অনেকে বাগার দেয়ার সময় চিকন করে বেগুনের ফালি ও কুঁচি কুঁচি করে আলু দিয়ে রান্না করে। এতে আরেক ধরণের স্বাদ হয়। ত্রপার পছন্দ ভুনা করে রান্না করা।

আজ টুটুল সেভাবেই লইট্টা শুঁটকি মাছ রান্না করেছে। এছাড়াও টুটুল আরেকটি আইটেম করেছে যা ত্রপার অত্যাধিক পছন্দ। রাইস কুকারে ভাত তুলে দিয়ে চালের ওপর কয়েকটি মিষ্টি কুমড়ার ফালি বসিয়ে দিয়েছে। ত্রপা যখন বাসায় ফিরবে ভাতের ভাপে সিদ্ধ হওয়া সেই মিষ্টিকুমড়া শুখনা মরিচ দিয়ে ভর্তা করে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করা হবে। হাউজ হাজবেন্ডের স্ত্রীদেরকে খুশি রাখার জন্য নানান পরিকল্পনা এঁটে থাকেন। তুবুও কি স্ত্রীরা খুশি থাকেন??

(চলবে)

আগের পর্ব দুটির লিংক-
পর্ব – এক
পর্ব – দুই

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিসিসিএস এর ১০ম চালের গুড়া পিঠা উৎসব
পরবর্তী নিবন্ধUnited BAU Alumni in Canada Inc এর চারা বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৩
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন