প্রবাসে বিশেষকরে নিউ ইমিগ্রান্টদের বাঙ্গালী পাড়ায় থাকার সুবিধা ও অসুবিধা দুটাই আছে। সুবিধার দিকটা হলো নিউ ইমিগ্রান্টরা দেশ ছেড়ে এলেও, বিদেশে বসে অনেকটাই দেশের আবহাওয়া পেয়ে যায়, যেমন আশেপাশে অনেক ভাই/ভাবি/আপা জুটে যায়, নিত্যদিন দাওয়াত/পার্টিতে মনের কথা বলা যায়, শোনা যায়, দেশের গ্রোসারি দোকান সব হাতের মুঠোয়, রাস্তা ঘাটে বাংলায় কথাবার্তা, রেস্টুরেন্টে ঝাল মুড়ি, গরম পিয়াজু, ডাল পুরি, কলিজা সিংগারা সহ খটি বাংলায় আড্ডা ইত্যাদি যেন দেশের কথা ভুলিয়ে রাখে। একেবারে, বিদেশে বসবাস করে দেশের আমেজ।

অসুবিধার কথা এখন না শুনে চলুন গল্পের মধ্যে ঢুকে যাই, তাড়াহুড়ার কোনো দরকার নেই, ধীরে সুস্থে গল্পের পাতায় পাতায় না হয় শোনা যাবে সেসব কথা।

দেখতে দেখতেই তিথি তমালদের কানাডাতে থাকা প্রায় মাসখানিক হয়ে গেলো। পরাগ ছাড়া, এখানে টরেন্টোতে তমালদের তেমন কেউ থাকে না, তবে তিথির এক বান্ধবীর খালা থাকে মিসিসাগাতে। তমালরা থাকে একেবারে খোদ বাঙ্গালী পাড়ায়, ড্যানফোর্থ আর ভিক্টরিয়া পার্ক ইন্টারসেকশনের কাছে, সেই খালার বাড়িতে যেতে সাবওয়ে থেকে নেমে আবার দুইবার বাস চেঞ্জ করতে হবে। তাই তিথিদের এখনও খালার সাথে দেখা করা হয়নি তবে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে। খালার সাথে কথা বলে তিথিদের খুব ভালো লেগেছে, আগে কখনো এই ভদ্র মহিলার সাথে দেখাতো দূরের কথা কোনো পরিচয়ই ছিল না, অথচ, এরই মধ্যে বেশ কয়েকদিন ফোন করে কথা বলে উনাকে তিথির অনেক আপন মনে হয়েছে। গতকাল সেই খালা ফোন করে বললেন, ‘মা রে, নতুন এসেছো, প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট হবে, তোমরা দুজন্যেই শিক্ষত মানুষ, এখানে নতুন করে পড়া লেখায় ঢুকে যাও, পড়া লেখা শেষে দেখবে মোটামুটি চাকরি জুটিয়ে নিতে পারবে।’

খালা, বন্ধু পরাগ ছাড়াও এখানে এই কয়দিনে তমাল- তিথিদের আরও কয়েক বাঙ্গালীর সাথে পরিচয় হয়েছে। তিথি একটি ছোট্ট খাতায় সবার ফোন নাম্বার লিখে রেখেছে। এই কয়েক দিনে তিথি-তমালদের এখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটি বিষয়ে একটি ধারণা হয়েছে, এখানে সবাই মোটামুটি হেল্পফুল, তবে একেকজনের উপদেশ একেক টাইপের। আসলে, প্রত্যেকে উপদেশ দিতে চান নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে। তিথি তমালরা এতটুকু অন্ততো জানে, প্রতি মানুষের শিক্ষা দীক্ষা, স্কিলস একেকরকম, কাজেই, তাঁদের অভিজ্ঞতার ঝুলি অবস্যই আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক, তমাল তিথিরা প্রত্যেকের উপদেশ মন দিয়ে শোনে তবে সিদ্ধান্ত নেয় দুইজন মিলে।

এই যেমন, সেদিন এক বাংলাশি গ্রোসারির দোকানে ইমরান নামে এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। কথাবার্তার ধরন দেখেই হোক বা পোশাক আশাক দেখেই হোক, ভদ্রলোক গায়ে পরে পরিচিত হলেন। উনি বাংলাদেশের রংপুর পলিটেকনিক থেকে পড়াশুনা শেষে অনেক বছর আগে কুয়েতে সংসার পেতে বেশ কয়েক বছর থাকার পরে প্রায় বছর সাতেক হলো সপরিবারে এখানেই আছেন। তমালদের সাথে পরিচয় হয়ে কথাবার্তা বলার পরে বললেন, ‘ব্রাদার, নতুন এসেছেন, ঘোরাঘুরি যা করার এখনই করে নিন, পরে কিন্তু কাজে ঢুকে গেলে নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাবেন না।’ চাকরির কথা বলতেই উনি বললেন, এই গ্রোসারির দোকানে কথা বলে দেখতে পারেন ওঁরা মাংস কাটার জন্য লোক খুঁজছে।’ তমালের গা কাঁটা দিয়ে উঠলো।

আবার, উপরতলার বাড়িঅলা সোবহান ভাই সেদিন বললেন, ‘ছোট ভাই, নতুন এসেছেন, কি আর বলবো, এখানে একেক জন একেক কথা বলবে, এই কান দিয়ে শুনে ওই কান দিয়ে ফেলে দিবেন, মনে করেন বাংলাদশের মতো এখানেও সমাজ ব্যাবস্থা একই রকম, খুব ভালো স্টুডেন্টরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রিসার্চার এসব লাইনে যায়, আবার কলেজ লেভেলে ডিপ্লোমা পাশ দিয়েও অনেকে মাঝারি মাপের চাকরি পেয়ে যায়, এমন কি হাই স্কুল পাশ করেও বা না করেও এখানকার ছেলে মেয়েরা অনেকসময় ফ্রন্ট লাইনে কাজ পেয়ে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেতন দিয়ে এখানে মানুষকে মাপতে পারবেন না। আরো খোলাসা করে যদি বলি, যেমন ধরেন, এখানে নূন্যতম মজুরি হচ্ছে ঘন্টায় চৌদ্দ ডলার, অনেক শিক্ষিত পেশাজীবী আছেন যারা ঘন্টায় একশো/দেড়শো ডলার এর চাকরি করেন আবার রাস্তায় যারা মাথায় হেলমেট পরে গরমে/ঠান্ডায় পরিশ্রমের কাজ করে অনেক সময় তাদের বেতন ঘন্টায় প্রায় ষাট/সত্তর ডলার। আরোও মজার কথা হচ্ছে, আপনার বেতন যত বাড়বে, সরকারকে ট্যাক্সও তত বেশি দিতে হবে। সেজন্য, এখানকার অরিজিনাল বাসিন্দারা, আমাদের মতো করে বেতন ও কাজের কথা ভাবে না। এক বার, আমার কাজের জায়গায় এক বস বললেন, ‘মি সোবহান, আই এম ভেরি এক্সাইটেড টুডে, আই হ্যাভ এ ভেরি গুড নিউজ, মাই ডটার গট এ নার্সিং জব’। আমিতো শুনে হতবম্ভ, আমরা ডাক্তার হলেও হয়তো এতটা খুশি হতাম না, বুঝলেন ভাই যেখানে যেটা চল, এখানে নার্সদের অনেক সম্মান, এ তো আর বাংলাদেশ না, এটা হচ্ছে কানাডা, হাহা, এই দেখেন, বিরাট বড় লেকচার দিয়ে ফেললাম, কিছু মনে করেননা ভাই।’

তমালের এক সিনিয়র ভাই সাখওয়াত ভাই, ভার্সিটিতে দাপটের সাথে রাজনীতি করতেন, পর পর দুই বার মাদারবক্স হলের ভিপি ছিলেন, টরেন্টোতে অনেক বছর থেকেই থাকেন। দেশ থেকে আসার সময় তমাল ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছিলেন। ভদ্রলোক সেলফ ইমপ্লয়েড, নিজেই নিজের ব্যাবসা করেন। উনার ব্যাবসাটি হচ্ছে বাচ্চাদের আর ই এস পি (Registered Education Savings Plan/RESP), বড়দের আর আর এস পি (Registered Retirement Savings Plan/RRSP), গাড়ির ইন্সুরেন্স, ভিজিটর ভিসার ইন্সুরেন্স প্রভৃতি করা। ব্যাবসায়িক কারণে উনাকে অনেক সামাজিক হতে হয়। তমাল একদিন ফোন করা মাত্র তমালের বাসায় এসে হাজির।  সাখওয়াত সাহেব তমালদের সাথে জমিয়ে আলাপ করলেন। এক সময় বললেন, ‘তমাল, আমার সাথে গাড়ি আছে চলো তোমাদের বাজারে নিয়ে যাই, ভারী জিনিস পত্র, দুধের প্যাকেট, চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজের ব্যাগ বেশি করে কিনে বাসায় রেখে দাও, শেষ হলে আবার আসবো, চিন্তা করোনা। তমাল সিনিয়ার ভাইয়ের কথামতো উনার সাথে যেয়ে ব্যাগ ভর্তি বাজার করে আনলো। ইন্সুরেন্স ব্রোকার চতুর সাখাওয়াত সাহেব যাওয়ার আগে তমালের ছেলের আর ই এস পি ফর্মে সিগনেচার নিতে ভুললেন না।

তিতাসের স্কুলে ওর এক সহপাঠীর বাবা সেলিম সাহেবের সাথে সেদিন পরিচয় হলো। তমালদের মতো উনার ছেলেও অটিস্টিক। সেলিম সাহেব বললেন, ভাই শুনলাম নতুন এসেছেন, তাই যেচে পরিচয় হতে এলাম। এসব দেশে নিউ ইমিগ্রান্টদের অনেক অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় ভাইজান। আমি ভাই ওসব ঝামেলা টামেলার মধ্যে নেই। মামুর বাড়িতে থাকি। মামুর বাড়ি মানে বুঝলেনতো ভাই, একেবারে সরকারি বাসা, নাম মাত্র বাড়ি ভাড়া। ছোট ছোট তিনটা বাচ্চা, আর সোস্যাল ওয়েলফেয়ারের টাকায় নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমে থাকি। ছেলে পেলে নিয়ে কোনো চিন্তা নাই, একবার যখন এদেশে এসেছি ওরা ওদেরটা বড় হলে দেখে নিবে, বুঝলেন ভাইজান।’

সোবহান সাহেব খানিকটা কাছে এসে গলার সর নিচু করে ফিস ফিস করে বললেন, ‘ আপনার মতো আমার ছেলেও অটিস্টিক, একেবারে চিন্তা করবেন না, নাম কে ওয়াস্তে স্কুলে দিছি, হাই স্কুল পার হলেই অডিএসপি (Ontario Disability Support Program/ ODSP) এপ্ল্যায় করে দিবো। একবার গ্রান্ট হয়ে গেলে পরে হুহু করে টাকা আসবে, কি বুঝলেন ভাইজান। আর তাছাড়া কি আর করবো বলেন, আপনার কথা অবশ্য জানি না, আমার বৌ হচ্ছে কোল বালিশ টাইপের মহিলা, দেশে থেকে এস এস সি পাশ, দেশেই কোনদিন চাকরি বাকরি করে নি, এখানেতো প্রশ্নেই আসেনা, পেটে বোমা মারলেও আই গো , ইউ গো ছাড়া কোনো ইংলিশ বের হবে না, কে এফ সি আর পিজ্জা খেতে খেতে গায়ে মাংস আটছেনা, আর শুধু বৌ এর কথা বা বলি কেন, সেই যুবক বয়সে আমি দেশ ছেড়েছি, রাশিয়া, সুইডেন, নরওযে সব দেশ ঘুরে এখন কানাডায় এসেছি, জীবনে কিই বা করতে পেরেছি বলেন, তাই বলি কি ভাইজান, শুনে আপনে আবার মাইন্ড ফাইন্ড করেন না, ধুতরা গাছে তো আর গোলাপ ফুল ফুটবে না, কি বলেন ? আমাদের ছেলেপেলে তো আর অতীশ দীপঙ্কর বা বিদ্যাসাগর হবেনা, আমাদের ছেলেপেলে পড়ালেখা শেষে দেখবেন ঠিক ঠিক মোটামুটি টাইপের একটি একটি জব পেয়ে গেছে। তারপর দেখবেন একদিন, টা টা দিয়ে গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের হাতধরে বাড়ি ছেড়ে চোলে গেলো, আর আমরা বুড়োবুড়ি বেড রুমের জানালা দিয়ে বসে বসে এদেশের স্নোফল দেখে সময় কাটাচ্ছি, এই আর কি, দু দিনের জীবন ভাইজান এই আছি এই নাই, এতো চিন্তা করে কোনো লাভ নেই, নতুন এসেছেন, বিনা পয়সায় বুদ্ধি দিচ্ছি। আপনাদের বয়স কম, সময় থাকতে থাকতে আরো দুই একটি বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে নিন, আমার পথে আসুন ভাইজান, আপনাকে কাছের মানুষ বলে মনে হলো দেখে অনেক কথা বলে ফেললাম, কিছু মনে করলেন নাতো ? শোনেন, চাকরির কথা যদি চিন্তা করেন আরেকটি নাম্বার দিচ্ছি, একটি সিকিউরিটি ফার্ম, ওরা, কিছু টাকা পয়সা নিয়ে সিকিউরিটি গার্ডের ট্রেনিং দিবে, ট্রেনিং শেষে চাকরি কনফার্ম, একেবারে, আরামের চাকরি, গায়ে গতরে কোনো খাটা খাটনি নেই।’

লিংক (Language Instruction for Newcomers to Canada/ LINC) এর ক্লাস করতে যেয়ে তিথির সাথে সেলিনা নাম এক ভাবীর পরিচয় হলো। কয়েকদিনের পরিচয় বেশ মাখামাখি। কিছুদিন আগে সেলিনা ভাবি তাদের ভাড়া করা এপার্টমেন্ট বাসায় দাওয়াত করলেন। তিথি তমালের ছাড়াও আরো দুই একটি ফ্যামিলিকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। লিভিং রুমে আড্ডায় সিদ্দিক ভাই নামে একজন বেশ আসর জমিয়ে গল্প করছেন।

সিদ্দিক ভাই একসময় উঠে যেয়ে তমালের কাছে বসে আস্তে আস্তে বললেন, ‘ভাই আমরা যখন এসেছিলাম, হাতেগোনা কয়েকজন বাঙ্গালী পরিবার থাকে এই টরেন্টোতে, বুদ্ধি-শুদ্ধি দেবার তেমন কেউ ছিল না, যা করেছি নিজেদের বুদ্ধিতেই করতে হয়েছে। জাপান থেকে পি এইচ ডি করে এসেছি, আসার পর এক বন্ধু বললো, দোস্ত আমিতো এখানে ক্যাব চালাই, তুই তাড়াতাড়ি জি টু লাইসেন্স নিয়ে নে, আমার মালিকের সাথে কথা বলে তোকেও ক্যাব চালানের ব্যাবস্থা করে দিবো, চিন্তা করিস না। হারামজাদার কত বড় সাহস, আমাকে কি না বলে ক্যাব চালাতে, ওর কথাশুনে মনেহলো শালার গালে কসে একটা চড় দিতে পারতাম। যাহোক, হাতি যখন কাদায় পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে, বুঝলেন ব্রাদার, আমি বুদ্ধি করে এনভার্নমেন্ট সায়েন্স নিয়ে চার বছরের অনার্স নিয়ে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম, সরকারের লোনের টাকায় খাওয়া পড়া সংসার। কিন্তু কি লাভ বলেন, এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করলাম, কিন্তু কোনো চাকরি নেই। তাই বলি কি ব্রাদার, পড়া লেখার মধ্যে খামাখা যাওয়ার দরকার নেই। এখানে আমাদের ইমিগ্রান্টদের চাকরি/বকরীর বাজার একেবারে ভালো না, অনেকে নতুন এসে টুক টাক পড়া লেখা করলেও, যেই লাউ সেই কদু বুঝলেন, আমাদের গায়ের চামড়া দেখে সাদারা শত পড়া লেখা করলেও কোনো চাকরি দিবে না, ওই একই সারভাইভাল কাজ করতে হয়। পরে, নিজ বুদ্ধিতে রিয়েল এস্টেটের ব্যাবসা করি, বাড়ি কেনা বেচা করি, মাস আল্লাহ ভালোই আছি। আমি বিলি কি, শুনুন, সময় নষ্ট না করে ফ্যাক্টরি/ম্যাক্টারি একটা কিছুর মধ্যে মন দিয়ে লেগে পড়ুন, এসব কাজ করেও দিব্বি অনেক ভালো থাকা যায়, এত যদি দুইজন মিলে কাজ শুরু করেন সপ্তাহ শেষে দেখবেন একাউন্টে ভালোই জমে যাচ্ছে, ড্রাইভিং টা শিখে টুপ্ করে একদিন গাড়িটা কিনে নিবেন, এভাবে কয়েক বছর চলার পরে এমনকি বাড়িও কিনতে পারবেন, এখানে বাড়ি কেনা একেবারে পানির মতো সোজা। দেশ থেকেতো মোটামুটি টাকাপয়সা ভালোই এনেছেন, তাই বলি কি, ওসব দিয়ে দু রুমের একটি কণ্ডোমেনিয়াম কিনে ফেলেন, খামাখা মানুষকে ভাড়া দিবেন কেন , তার চেয়ে নিজের টাকায় একটা বাড়ি হয়ে গেলো । আমার বিজনিস কার্ড দিচ্ছি, পরে একসময় ফোন দিয়েন আরো ডিটেলস আলাপ করবো।’ তমাল অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভদ্রলোকের হাত থেকে কার্ড নিয়ে ওয়ালেটের মধ্যে রেখে দিলো ।

একদিন সময়মতো বাল্য বন্ধু পরাগকে পায়ে ইন্সুরেন্স ব্রোকার সাখওয়াত ভাই এর কথা, রিয়েল এস্টেট ব্রোকারের কথা ও চাকরিবাকরি নিয়ে নানাজনের এসব কথা বলায় পরাগ হেসে বললো ,’ দোস্ত সব ধান্দাবাজ, চোখ কান খুলে চলবি, আর চাকরিবাকরি নিয়ে দোস্ত কিছু চিন্তা করিস না, সিনকার্ড আগে পেয়ে নে, তোকে আমার ফ্যাক্টারিতে নিয়ে যাবো, সুপারভাইজারকে বলে রেখেছি, একটা কিছু হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।’

তমালের মুখে চাকরির এসব কথা শুনে তিথি কেঁদেকেটে একাকার, তমালকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘দেশে এতো ভালো চাকরি ফেলে এসে এখানে মাংস কাটার চাকরি নিবে, সিকুরিটি গার্ডের চারি নিবে, ফ্যাক্টারীরীতে কাজ করবে এসব আমি সহ্য করতে পারবো না, তার চেয়ে চলো, দেশে ফিরে চলে যাই, আমার ভার্সিটির মাস্টারির চাকরিটা তো এখনোও আছে, আমি ছুটি নিয়ে এসেছি, চালিয়ে নিতে ফারবো ইনশা আল্লাহ।’ তমাল এসব শুনে হা করে তাকিয়ে থাকে, কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।’

তিথি ও তমালের যখন চাকরির এসব ব্যাপার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আলাপ করছে এমন সময় তমালের ফেসবুকের মেসেঞ্জারে শ্যালক মন্টুর ফোন। ‘দুলাভাই, এরকমই হয়, বিদেশ যেয়েতো আমাদের ভুলেই গেলেন, আমরা এই চোর সেচরের দেশে যে কেমন আছি, খোঁজও নিলেন না। চারিদিকে শুধু চুরিচামারি, খুন খারাপি, এসব দেশে মানুষ থাকে? আমি তো ঔষুধ দোকানের ছোটোখাটো ব্যাবসা করে দিন পার করছি, কিন্তু ছোট ভাই রন্জু টার জন্য একটা কিছু করেন, ওর মাথা কিন্তু মাশাল্লাহ খুব ভালো, একটুর জন্য গোল্ডেন এ প্লাস পাইনি, ওকে কিন্তু অবশ্যই আপনাদের ওখানে নিয়ে যাবেন।’

মন্টু যখন একনাগারে কথাগুলি বলেই চলেছে, তমাল হু হা করে কথা শুনে বললো, ‘ মন্টু, আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো, তোমার বোনের সাথে কথা বল’ এই বলে আস্তে করে ফোনটি তিথিকে দিয়ে তমাল কেটে পড়লো।

মন্টু আবার শুরু করলো, এই আপা তোরা সব কেমন আছিস, কয়দিন ধরে ফোন টোন নেই, তাই মা বললো একটু খোঁজ নিতে, তো তোরা সব ভালো আছিতো আপা ? তিথি একটু আগের তমালের সাথে চাকরিবাকরি নিয়ে হতাশার কথা সব ভুলে চোখ মুছে মন্টুর সাথে হেসে হেসে কথা বললো, ‘ বুঝলি মন্টু, কি যে সুন্দর একটি দেশ তুই কল্পনাও করতে পারবি না, তোকে কোনটা ছেড়ে কোনটা আগে বলি, শোন, আমরা এখানে এসেছি এদের এখানে এখন সামার চলছে, এসময় এঁরা সারাক্ষন হৈচৈ করে, পার্টি/ফারটি করে, বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়, কবে ঠান্ডা নামবে, আমরা তুষার দেখার অপেক্ষায় আছি। আমাদের গাড়ি টারি এখনো হয়নি তাই , বাসে করে করে, তোর দুলাভাই এর বন্ধুদের গাড়িতে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সামনের মাসে আমরা নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাবো, আমারতো নায়াগ্রা ফলস দেখার জন্য এখন থেকেই ঘুম আসছে না। বুঝলি মন্টু, এদের এখানে এতলোকজন কম তুই বিশ্বাসই করবিনা, মনে কর বাহিরে বের হলে সব ফাঁকাফাঁকা দেশের মতো অত গিজগিজ করা লোকজন চোখেই পরবে না। কেনই বা এরকম হবে বল, যেখানে বাংলাদেশের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে লোকজনের সংখ্যা ১.২৬ হাজার সেখানে কানাডাতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে লোকসংখ্যা প্রায় ৪ জন, এখন তুইই বল বাংলাদেশের সাথে এখানে কত আকাশ পাতাল তফাৎ।’

তিথি প্রবল উচ্ছাসে ছোটভাইয়ের সাথে ক্রমাগত কথা বলতেই থাকে, ‘তারপর যদি খাবারের কথা বলিস মনে হয় একেবারে বেহেস্তে আছি। দুধে এক ফোটা ভেজাল নেই। যেখানে একটা ভালো চকলেটের প্যাকেটের দাম চার/ পাচ ডলার সেখানে প্রায় একই দাম দিয়ে চার লিটারের খাঁটি দুধের প্যাকেট কিনতে পারবি। আবার, আট কেজির মোটা ভাতের চালের প্যাকেটের দাম মনে কর দশ / বারো ডলার যে দাম দয়ে দিয়ে তোর দুলাভাই মনে কর এক প্যাকেট সিগারেট কেনে। মাছ মাংসের কথা আর কি বলবো, তোরা বাংলাদেশের যেসব ইলিশ, রুই/ কাতলা চোখেই দেখিস নি আমরা অনায়াসে সেসব দিয়ে ভাত খাই। এখন তুই বল, এমনই কি আর বলি বেহেস্তে আছি!! খালি মনেকর তোর দুলাভাই এর চাকরি বাকরি একটা হয়ে গেলে, ব্যাস, আলহামদুলিল্লাহ।”

এক নাগারে কথাগুলি কিছুটা দম নেয় তিথি । তমাল বাহির থেকে সিগারেট খেয়ে এসে ভাই/ বোনের কথাপকথন এনজয় করতে থাকে। হটাৎ করে তিতাসের ইস্কুল থেকে ফোন আসায় দেশের কল কেটে দিতে হলো। তিতাসের স্কুল থেকে ফোন করেছে, জরুরি ভিত্তিতে ইস্কুলে যেতে হবে। তমাল ও তিথি দ্রুত তিতাসের ইশকুলের দিকে রওনা হলো। দুরু দুরু বুকে তিতাসের ইস্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিতাস স্যারের রুমে এক সাইডে একটি চেয়ারে বসেছিল, বাবা মা কে দেখতে পেয়েই তিতাস দৌড়ে মা কে জাপ্টে ধরে মা বলে শব্দ করে কেঁদে ফেললো। তিতাসের থুতনির নিচের দিকে ছোট করে একটি ব্যান্ডেজ লাগানো। ডান দিকের চোখের নিচের দিকে কিছুটা ফোলা। তমাল ও তিথি কিছুই বুঝতে পাচ্ছে না কি ঘটেছে। ভাইস প্রিন্সিপ্যাল স্যার তিতাসকে শান্ত হতে বলে তমাল ও তিথিকে ইংরেজিতে যা বর্ণনা করলেন তার সারমর্ম হচ্ছে এরকম:

সকালে দুইটি ক্লাসের পরে ওরা যখন ফার্স্ট রিসের্সের সময় ক্লাস রুমের বাইরে বেরিয়েছিল তখন তিতাস ও আরো কয়েকটি ছেলে মাঠের এক সাইডে বাস্কেটবল প্লেগ্রাউন্ডে খেলছিল। ওঁদের মধ্যে একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি হলে তিতাস আফ্রিকান বংশোভূত এক সহপাঠীকে ‘নিগ্রো’ বলায় ছেলেটি অকস্মাৎ তিতাসকে চোখেমুখে কিল ঘুসি মারতে থাকে। তিতাস কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই ছেলেটি আরোও কয়েক বন্ধু মিলে তিতাসকে টেনে হিচড়ে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে এনে নালিশ জানায়। বলাবাহুল্য, ভাইস প্রিন্সিপ্যাল স্যারও আফ্রিকান বংশোভূত। তাই, তিতাস তার সহপাঠীদের নিয়ে কি বিষয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো অথবা তিতাসকে কে চোখেমুখে মারলো তার চেয়ে তিতাসের বলা ‘নিগ্রো’ শব্দটিকে নিয়ে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।

সত্যি কথা বলতে কি, ভাইস প্রিন্সিপ্যাল স্যার যখন ঘটনাটি বর্ণনা করছিলেন, তিথি ও তমালরাও প্রথমে কিছুক্ষন বুঝেই উঠতে পারেনি ‘নিগ্রো’ শব্দটি যে এতটা ভয়াবহতার রূপ নিতে পারে কারণ বাংলাদেশে থাকতে ওরা দেখে আসছে নিগ্রো শব্দটি খুব বেশি নেতিবাচক ভাবে ব্যাবহৃত হয় না। স্যার টানা আধা ঘন্টা খানিক সময় নিয়ে ‘ব্ল্যাক হিস্ট্রি’ নিয়ে লেকচার দেয়ার পরে ‘ব্ল্যাক হিস্ট্রি’ বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি রচনা লিখে আগামী তিন দিনের মধ্যে জমা দিতে তিতাসকে নির্দেশ দিযে আজকের মতো তিতাসকে বাবা মার সাথে বাড়ি যেতে বললেন।

ইস্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রায় সারা রাস্তা তিতাস ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো। তিথি ও তমাল ওকে বুঝিয়ে বললো ‘বাবা আমরা আসলে বুঝে না বুঝে এমন কিছু শব্দ বলি যা ওদেরকে হার্ট করে, এখন থেকে আমরা সবাই সচেতন হয়ে চলবো।’

রাতের বেলা তিতাসের গা কিছুটা গরম থাকায় খাবার শেষে তিতাসকে সকাল সকাল বিছানায় ঘুমাতে বলে তিথি ও তমালরাও ঘুমাতে গেলো। দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ করে নিঃশব্দে পাশাপাশি শুয়ে আবারো আকাশপাতাল ভাবতে থাকলো প্রবাসী জীবনের জটিলতা নিয়ে। আজ সকালে তমাল একটি কমিউনিটি অর্গানাইজেশনে গিয়ে রিজুমি লেখারউপর একটি ওয়ার্কসপে এটেন্ড করেছিল। চাকরির বাজারের যে অবস্থা সারভাইভাল জব পাওয়াও অনেক কঠিন ব্যাপার। তমাল, তিথি দুজনের চোখেই ঘুম নেই। তিথি বিরাট দীর্ঘ নিঃস্বাস ছেড়ে তমালকে বললো, ‘এক মাস হয়ে গেলো, এভাবে বসে বসে দেশ থেকে নিয়ে আসা টাকাপয়সা সব খরচ করলে চলবে? এসব টাকা শেষ হলে খাবো কি ? দেশে এতো ভালো চাকরি ফেলে এসে এখানে মাংস কাটার চাকরি নিবে, সিকুরিটি গার্ডের চারি নিবে, তিতাস ইস্কুলে মার খাবে, তুমি ফ্যাক্টারীরীতে কাজ করবে এসব আমি সহ্য করতে পারবো না, তার চেয়ে চলো, দেশে ফিরে চলে যাই, তমাল এসব শুনে হা করে তাকিয়ে থাকে, কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। তাদের বিদেশে আসার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল তিতাস, সেই তিতাস আজকে ইস্কুলে সহপাঠীদের হাতে বুলিং (bullying) এর শিকার হলো। বেচারা তিতাসের চোখের নিচে এখনো কিছুটা ফুলে আছে। ভাগ্য ভালো বড় কিছু হয় নি, ওদের এখনো হেলথ কার্ড নেই, তিতাসকে হাসপাতালে যেতে হলে সমস্যায় পড়তে হতো। ।তিতাসের কথা উঠতেই তিথি বিছানা থেকে উঠে তিতাসের কাছে গেলো। তিতাসের কপালে হাত দিতেই দেখে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। তিথি তোয়ালা ভিজে কপালে জলপট্টি দিতেই তিতাস ঘুম ভেঙ্গে মাকে বললো, ‘ বিশ্বাসঃ করো মা, নিগ্রো মানে যে এতটা খারাপ আমি বুঝিনি মা, আমি আর কখনো এসব কথা বলবো না। এবার তিথি নিজেকে আর সামলাতে না পেরে তিতাসকে বুকে চেপে শব্দ করে বাচ্চাদের মতো ডুকরে কেঁদে উঠলো।

তমাল পাশের রুমে মা ও ছেলের কান্নার শব্দ শুনে ভাবলেশহীন ভাবে বেজমেন্টের আবদ্ধ ঘরে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। সকাল হলে ঔষুধের দোকানে যেয়ে টায়লেনল কিনে আনবে। তিথিদের কান্নার শব্দ ছাপিয়ে বাহিরে আকাশ প্রচন্ড শব্দ তুলে সম্ভবত একটি উড়োজাহাজ গেলো। তমাল ভাবতে থাকে, হয়তো কে জানে সেই উড়োজাহাজে তাদের মতো কোনো ইমিগ্রান্ট দম্পতি একটু ভালো থাকার জন্য, সন্তানের নিরাপত্তার জন্য এক বুক আশা নিয়ে স্বপ্নের দেশে আসছে ইমিগ্রান্টের ভিসা নিয়ে। এই একমাসেই তমালরা জেনে ফেলেছে এই স্বপ্নের দেশে স্বপ্ন পূরণের পথে পদে পদে রয়েছে ছোটবেলার সেই সুয়োরানী দুয়োরানি রূপকথার গল্পের মতো অজশ্র বাধা, বিপত্তি। উড়োজাহাজটির শব্দ একসময় ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে বাতাসে মিলে যায়। বন্ধু পরাগের একটি কথা তমালের কানের কাছে সব সময় বাজতে থাকে, ‘দোস্ত, এখানে আসার পর দেখবি , একেক জন একেক কথা বলবে, একদম ঘাবড়াবি না, দেশের কথা মনে হয়ে কিন্তু খুব খারাপ লাগবে, এর ওর কথা কানে না দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘাপটি মেরে মাটি কামড়ে থাকবি, কোনো মতো অন্তত বছর খানিক কাটাতে পারলেই দেখবি টিকে গেলি।’

কিন্তু পরাগ বললেইতো আর হলো না, বাড়ি ভাড়া, ফোনের বিল, খাবার দাবার এসবের যোগান হবে কোথেকে ? একটা কিছু চাকরিবাকরি মধ্যে না ঢুকলেই না। এই এক মাসে দেশ থেকে নিয়ে আসা টাকা থেকে বাড়ি ভাড়া সহ প্রায় আড়াই হাজার ডলার খরচ হয়েছে, এই ভাবে চলতে থাকলে দেশ থেকে নিয়ে আসা টাকা দিয়ে বড়োজোর পাঁচ ছয় মাস চলা যাবে। ওদিকে, তিথির মাস্টারির চাকরিটা এখনো আছে, তাই দেশে ফেরার আইডিয়াটা একেবারে ফেলে দেয়া যায় না। যা করার অল্পদিনের মধ্যেই রতে হবে, ফ্লাইট ওর ফাইট। দেশে ফিরে যদি যেতেই হয় অন্তত টিকেটের টাকাটা হাতে থাকা উচিত। দেশে যেয়ে এতগুলা ধার দেনাও শোধ করা সোজা কথা না। এসব দোটানার ভাবনাগুলি ভাবতে ভাবতে দেয়ালের দিকে মুখ করে কিছুক্ষন মূর্তির মতো বসে থাকে তমাল । আসলে কোনো কিছুর অপশন থাকাটা অনেকসময় কাল হয়ে দাঁড়ায়। তিথি তোমালদের দেশে চাকরিগুলিতে ছুটি ছাটা না নিয়ে বরঞ্চ সবকিছু ঝেড়ে মুছে এলেই বরং ভালো ছিল, দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো তাগিদ থাকতো না। পরাগের কথার মতো একেবারে ঘাপটি মেরে বিদেশের মাটি কামড়ে থাকতে পারতো!!!

(চলবে)

————————————–

জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন, রেজিস্টার্ড সোস্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার, টরেন্টো 

আগের পর্বগুলির জন্য ক্লিক করুনঃ

স্বপ্নের ইমিগ্রেশন-পর্ব ১

স্বপ্নের ইমিগ্রেশন-পর্ব ২

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুমড়া ফুলের খাদ্যমান ও পুষ্টিগুন !
পরবর্তী নিবন্ধভূগর্ভস্থ আর্তনাদ
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন