রাতের খাবার খেয়ে তমালদের বিছানায় যেতে যেতে প্রায় রাত একটা দুটা বেজে গেলো। তিতাসের থাকার ব্যাবস্থা পাশের রুমে হলেও আজকের রাতের জন্য ক্ষণস্থায়ী ভাবে একসাথেই সবাই গাদাগাদি করে আছে। স্বপ্নের কানাডায় প্রথম রাত। তিথির ইচ্ছা ছিল আরো কিছুক্ষন বিছানায় খানিকটা গল্প করা, কিন্তু বিছানায় যাওয়ার ছয় সাত মিনিটের মধ্যেই তমাল নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কিছুটা গম্ভীর স্বভাবের ছেলে তিতাস বাবার নাক ডাকাডাকিতে পিট পিট করে হাসছে। তমালের নাক ডাকার একটি বিশেষ প্যাটার্রন আছে, সেটি হলো প্রথম কয়েক সেকেন্ড স্লো ডেলিভারি খানিকটা ভুস ভুস শব্দ, পরের কয়েক সেকেন্ড মিডিয়াম ডেলিভারি হতে হতে মিনিট খানিকের মধ্যে পুরাদস্তুর পেস এট্যাক একবারে সোয়েব আক্তার, ব্রেট লি দের মতো রীতিমতো ঝড় তুলে ফাস্ট বোলিং, ভয়াবহ ধরণের শব্দে একেবারে কান তালা লাগার মতো অবস্থা । বিয়ের পর পর তিথি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলো, ধীরে ধীরে সয়ে গেছে। বিয়ের পরে মেয়েদের অনেক কিছুই সয়ে নিতে হয়।

কিছুক্ষনের মধ্যে তিতাসও ঘুমিয়ে পড়লো। তিথির কিছুতেই ঘুম আসছে না। পুরা রুমের মধ্যে জমাট অন্ধকার। একটি টেবিল ল্যাম্প কেনা দরকার । জানালা টানালা থাকলে কিছুটা সুবিধা হতো। বেজমেন্টে এই এক অসুবিধা, কোনো জানালা নেই। ছাদের সাথে প্রায় লাগানো একটি জায়গায় প্রায় দুই ফুট বাই আড়াই ফুট মাপের ভেন্টিলেটার । তিথিদের রাজশাহীর বাসাটায় বেড রুমে খাটের সাথে লাগানো বড় জানালা ছিল। শুক্ল পক্ষের একেকটি রাতে চাদেঁর আলোতে বিছানা ভেসে যেত, সেই সাথে বোনাস হলো নিচ থেকে উঠে আসা হাস্নাহেনার সুমিষ্ট সুবাস। এসব কথা মনে হতেই তিথি একটি মাঝারি টাইপের দীর্ধ নিঃশ্বাস ছেড়ে পাশ ফিরে শুয়ে দেশের ফেলা আসা সুখ সমূহের সাথে এই ভিন দেশের অজানা অচেনা কাঙ্খিত সুখের তুলনা করতে করতে ঘুমের শেষ চেষ্টা করলো।

তিথির ঘুমের শেষ চেষ্টা হলো শৈশব শৈশব খেলা। খেলাটি শুরু করার আগে মাথা থেকে জগৎ সংসারের যাবতীয় কম্পোনেন্টস সব ঝেড়ে মুছে ফেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে একেবারে শৈশবে চোলে যেতে হবে, ক্লাস ওয়ান /টু /থ্রি ইত্যদি যেকোনো ক্লাসের অথবা সে সময়ের খেলার সাথীদের মধ্যে যে কাউকে বেছে নিয়ে কোনো বিশেষ স্মৃতি মনে করতে হবে। তার পর এক সময় সেই স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে সেগুলি স্বপ্নের অংশ হয়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে নিয়ে যাবে। আজ তিথি বগুড়া পি টি আই স্কুলের ক্লাস থ্রিতে যেয়ে এর একটি এপিসোড বেছে নিলো। অংক স্যার অনুপস্থিত থাকায় হাতেম স্যার এসেছে। হাতেম স্যার এসে হাসতে হাসতে বললেন,’ কিরে বাঁদরের দল অংক করবি না অন্যকিছু করবি ?’ সবাই একবাক্যে চিৎকার করে বললো, ‘অন্য কিছু করবো স্যার। ‘তবে, এক কাজ কর, যার যা খুশি মনে যা আসে যে কোনো রচনা লেখ, যেমন ধর বড় হলে কি হতে চাস, বা কোনো একটি সুন্দর জায়গায় বেড়াতে গেছিস সে জায়গার বর্ণনা অথবা তোর স্বপ্নের কোনো জায়গা যা এখনো যাস নি কিন্তু মনে মনে যাওয়ার ইচ্ছা, সেই স্বপ্নের জায়গার বর্ণনা লিখলিও চলবে।’

তিথির প্রিয় বান্ধবী সালমা লিখলো বড় হলে ডাক্তার হতে চায়, চটপটে ছাত্র রাজু লিখলো তার নানার বাড়ির বর্ণনা নিয়ে রচনা, তিথি লিখলো তার স্বপ্নের অজানা অচেনা এক চমৎকার জায়গা ‘নায়াগ্রা ফলস’ এর বর্ণনা দিয়ে এক পাতার একটি রচনা। পরে, হাতেম স্যার একে একে সবার লেখা পড়লেন। এবার তিথির পালা। ভয়ে তিথির বুক কাঁপছে। হাতেম স্যার ওর লেখাটি পড়ে গম্ভীর মুখে কাছে ডাকলেন, সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। হাতেম স্যার তিথির মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘মা রে, ওখানে না যেয়েই এতো সুন্দর বর্ণনা দিয়ে নায়াগ্রা ফলস এর কথা লিখেছিস, আল্লাহ যেন তোকে নায়াগ্রা ফলসের দেশে নিয়ে যান।’ এবার তিথি সত্যিই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো। স্বপ্নে দেখলো, হাতেম স্যার প্রচন্ড গরমে খালি গায়ে স্কুলের বারান্দায় চেয়ারে বসে নিজে নিজে হাত পাখা দিয়ে বাতাস খাচ্ছে। তিথিকে দেখে লজ্জা পেয়ে কাচুমাচু করে বললেন, ‘বুঝলি রে মা, লোড শেডিং এ কারেন্ট নাই, একেবারে আগুন গরম পড়েছে, তুই কেমন আছি রে মা ? শুনলাম মা তোরা নাকি সত্যই কানাডাতে যাচ্ছিস?’

সপ্তাহ খানিকের মধ্যে কানাডাতে তমাল-তিথিদের উল্লেখযগ্য অগ্রগতি হলো। বাড়িঅলার সাহায্যে ব্যাংকে স্বামী-স্ত্রীর জয়েন্ট একাউন্ট খোলা হলো। তিতাসকে স্কুলে ভর্তি করানো হলো। স্থানীয় সার্ভিস কানাডা অফিসে যেয়ে সোস্যাল ইন্সুরেন্স কার্ড (SIN card) এর জন্য এপ্লাই করা হলো, বাড়িঅলাকে বলে বাথ রুমের ট্যাপের লিক সরানো হলো, পাশেই একটা কমিউনিটি অরগানাইজেশানে যেয়ে স্বামী স্ত্রী দুজনেই ইংরেজি ভাষা রপ্ত করার জন্য লিনক (Language Instruction for Newcomers to Canada / LINK) এর ক্লাসে ভর্তি হল, তবে একটি সমস্যা থেকেই গেলো সেটা হচ্ছে হেলথ কার্ডের জন্য এপ্লাই করা হলো না। হেলথ কার্ড এর জন্য এপ্লাই করতে হলে অন্তত এক শত তিপ্পান্ন দিন ওন্টারিওতে থাকতে হবে। তবে, এটা তেমন বড় সমস্যা না, দেখতে দেখতেই কয়েকটা মাস চলে যাবে, এই কয়েক মাস একটু সাবধানে থাকলেই হবে। 

নায়াগ্রা ফলসে যাওয়ার জন্য তিথির মন উতালা হয়ে আছে। তমাল বন্ধু পরাগকে বলেছিলো উইকেন্ডে একসাথে ওর গাড়িতে নায়াগ্রা ফলসে যাওয়ার জন্য, কিন্তু পরাগের ফ্যাক্টারিতে প্রচুর ব্যাস্ততা যাচ্ছে, পরাগকে ওভার টাইম করতে হচ্ছে। ওর পক্ষে এখন সময় বের করা একেবারে অসম্ভব ব্যাপার। তাই, পরাগ বন্ধুকে বললো, ‘দোস্ত, ভাবীকে বলিস কয়েকটা সপ্তাহ একটু অপেক্ষা করতে, কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলে সামনের মাসে মানে সেপ্টম্বরের ছয় তারিখে লেবার ডে, লংউইকএন্ডের ছুটি আছে, তখন সবাই একসাথে যাওয়া যাবে। অগত্যা, তিথিদের লংউইকএন্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

পরাগের বউ একেবারে সহজ সরল বাচ্চা একটি মেয়ে,  মিষ্টি ফুলের নামে  নাম বকুল। প্রায় সাড়ে চার বছরের ওদের একটি ফুটফুটে মেয়ে আছে নাম বিভা। বকুলের সাথে পরাগের গ্যাপ প্রায় সাত/ আট বছরের। অল্প কয়েক দিনেই বকুলের সাথে তিথির বেশ ভাব জমে গেছে। প্রথম দিনের পরিচয়ে বকুলকে তিথির প্রচন্ড ভালো লেগে গেল। ‘সম্বোধন’ আপনে থেকে তুমিতে নেমে এলো।  বকুলও সাহস করে বললো, ‘ আপনাকে ভাবি না ডেকে আপা ডাকি?’ ব্যাস, শুরু হয়ে গেল মিতালি। 

 বকুল কাজ করে বাড়ির কাছে পিঠে কে এফ সি-র একটি ষ্টোরে, কিচেন সেকশনে। ভোর ছয়টার  সময় বকুল মেয়েকে বিল্ডিংয়ের নিচতালায় বেবি সিটারের কাছে রেখে কাজে যায়, পরে বেবিসিটার মহিলা ইস্কুলের সময় হলে বিভা মনিকে ইস্কুলে নিয়ে যায়, আবার ইস্কুল  থেকে সময়মত নিয়ে আসে। 

বাসায় ফিরতে ফিরতে বকুলের বিকেল তিনটা সাড়ে তিনটা বেজে যায়। উইকেন্ডে বকুল বাসায় থাকলেও  পরাগ আবার উইকেন্ডে পিৎজা ডেলিভারির কাজ করে। ওদিকে, নিউকামার তিথিদের কাছে উইক ডেজ যা উইকেন্ডও তা। তবে, উইকেন্ডে বকুলের সাথে তিথির টেলেফোনে প্রানখুলে গল্প হয়। আজ শনিবার, তমাল পায়ে হেটে বাংলাদেশী একটি গ্রোসারিতে বাজার করতে গেছে।  বকুলের ফোন আসতেই তিথি তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে বেড রুমে গেলোঃ

-‘আপা, আমি কি অসময়ে ফোন করলাম?’ ‘আরে না, খুব ভালো সময়ে ফোন করেছো বকুল, তোমার কথাই ভাবছিলাম, বল কেমন আছো তোমরা?’ ‘ আপা আমরাতো ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ, তবে গত রাতে দেশ থেকে  একটি ফোন আসার পর থেকে চিন্তার মধ্যে আছি আপা।’  ‘ কি নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছ আমাকে বলা যাবে?’ 

‘আপা, আমরা জামাই বউ মিলে এই ছোট বাচ্চা নিয়ে কাজ করে খাটাখাটুনি করে এই সাত আট বছর এপার্টমেন্টে থেকে কিছু টাকা জমা করে রেখেছিলাম,  ছোটখাটো একটা বাসা বাড়ি কেনার জন্য আমাদের খুব শখ ছিল আপা। একটা তিন বেড রুমের কন্ডমেনিয়াম দুজনে পছন্দও করেছি। দুই জনেই চাকরি করায় ব্যাংক থেকে মরটগেজও এপ্রুভ করেছে। এখন শুধু এই বুধ বারে পনের হাজার ডলারের চেক জমা দেওয়ার কথা। এরই মধ্যে কাল রাতে শাশুড়ী আম্মা ফোন করে বললেন তমালের ছোট  বোনের  বিয়ে পাকাপাকি, আমরা যেন দ্রুত কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা পাঠাই। বলেন, আপা, এতো কষ্ট করে টাকা জমালাম, বাড়িটা বোধহয় আর কিনতে পারবোনা।’ এক পর্যায়ে বকুল কেঁদে ফেললো। 

তিথি বকুলকে শান্তনা দিতে দিতে বললোঃ ‘অত ভেঙ্গে পড় না বকুল, একটা  কিছু ইনশা আল্লাহ হয়ে যাবে। আর বোনের বিয়ে এত টাকাই বা লাগবে কেন?’ বকুল কাঁদতে কাঁদতেই বললোঃ ‘ জামাই ওদেরই খালাতো ভাই, নিজেদের মধ্যে জানাশোনা ছিল আগে থেকেই, স্বভাব চরিত্রে, দেখতে শুনতে খুব ভাল। একটা বেসরকারি কলেজে ঢোকার চেষ্টা করছে। চাকরির প্রায় সব ঠিক ঠাক। শুধু দুই লাখ টাকা ডোনেশন দিতে হবে। এ ছাড়া বিয়ের খরচপাতি, গয়নাগাটি সব মিলে পাঁচ লাখ টাকা, মানে আমাদের প্রায় পাঁচ হাজার ডলার।  কন, আপা, দেশের মানুষের ধারণা আমাদের কত টাকা। এই গত চার মাস আগে ওর ছোট ভাই তুষার নর্থ সাউথে বি বি এ তে ভর্তি হল। প্রাইভেট ভারসিটি, কত খরচ আপা সব এখান থেকে আমাদেরকেই করতে হল। অথচ দেখেন আপা, উনার আপন বড় ভাই মালয়েশিয়াতে থাকে একা, পরিবার পরিজন দেশেই থাকে, শুনেছি উনি শ্বশুরের বাড়িতেে চারতালা করছেন,  আপা আপনেই বলেন, বড় ভাই হিসাবে উনার কি কিছুই দায় দায়িত্ব নাই? সব দায়িত্ব কি শুধু আমাদেরই!! আপনার ভাই মায়ের  মুখের উপর কোন কথা বলতে পারে না, মানুষটা মুখ শুখনা করে সকালে কাজে গেল।’  বকুলকে আবারো সহানুভূতি জানিয়ে তিথি বললোঃ  কোন চিন্তা করনা বকুল, পাঁচ হাজার ডলারের জন্য তোমাদের বাড়ি কেনা ঠেকে থাকবে না। আমরাতো সবে মাত্র এসেছি, প্রয়োজন হলে দেশ থেকে যা এনেছি তা থেকে কিছু মিছু দিতে পারবো, তার পর ধর, পরাগ ভাই এখানে উনার পরিচিত মানুষদের কাছথেকেও কিছু ম্যানেজ করলো, ইনশাআল্লাহ সব মিলে হয়ে যাবে।’ 

তিথি এই কাজটি খুব চমৎকার গুছিয়ে করতে পারে। প্রচন্ড বিপদে শুধু নিজেরই মাথা ঠিক রাখে না, খুব সুন্দর ভাবে পরিস্থিতি সামলিয়ে নিতে পারে। তিথি বকুলকে টাকা ম্যানেজ করার কথা খুব সহজে বললেও টাকা ম্যানেজ করা যে কি ভয়ংকর কাজ সেটি তিথি তমালরা কানাডা আসার আগে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।

তিথির কাছে মাঝেমধ্যে  মনে হয় এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে খুবই বিচিত্র  টাইপের একেকটি সমস্যা ঘাপটি মেরে থেকে। ঘরের বাইরে আমারা অভিনয় করে হেসে হেসে কথা বলি, গল্প করি, আড্ডা দেই, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সেই সমস্যা গুলো নিয়ে গুমরে গুমরে উঠি। একজন বিশ্বস্ত শ্রোতা পেলে  কেঁদে কেটে ভিতরের সব কথা বলে কিছুটা হাল্কা হই। সাইকোলজির ভাষায় এটা একধরণের catharsis  অর্থাৎ ইমোশনাল রিলিজ।তিথির ধারণা, বকুল এখন কিছুটা ভালো ফিল করছে।  মধ্যবিত্তদের  দেশেই হোক বা বাইরে হোক বেশিরভাগ ঘরের সমস্যা হয় টাকা কেন্দ্রিক। টাকার মধ্যে একধরনের জাদুকরী শক্তি লুকিয়ে থাকে যা দিয়ে এই জগৎ সংসারের মধ্যবিত্তদের নিমিষেই সব সমস্যার সমাধান এনে দেয়। 

বকুলের ফোন রাখার পর থেকে তিথি তাদের নিজেদের জীবনের সমস্যা গুলোর কথা ভাবতে যেয়ে সিধান্ত নিল  সে এখন এমুহূর্তে  আর কোন সমস্যার কথা না ভেবে কিছু ভালো কিছু ভাব বে।  

কানাডায় আসার আগে প্লেনে উঠার পরে সারা রাস্তা তিথি অনেক অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভেবেছে। তার খানিকটা রিভিসন দিলে কেমন হয়! তিতাস মনযোগ দিয়ে হোমওয়ার্ক করছে। তমাল বাজার থেকে এখনো ফেরে নি। স্বপ্নের কথা ভাবার এইতো সুন্দর সময়। জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে অসময়ে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে তিথি ভাবছেঃ

ওঁরা একদিন  চাকরি বাকরি করে সেটেল্ড হওয়ার পরে  শহর থেকে কিছুটা দূরে বিচের কাছাকাছি একটা ডুপ্লেক্স বাসা কিনবে। বাসার পিছনে বিশাল ব্যাকেয়ার্ড থাকবে। সেখানে সব্জির বাগান করবে। বাড়ির সামনের দিকে সারি ধরে থোকায় থোকায়  টিউলিপ লাগাবে। বাসার সামনে বসার জন্য  একটি বেঞ্চ কিনবে। চাঁদনী রাতে সেই বেঞ্চে তমালের পাসে বসে দুলে দুলে রবীন্দ্র সংগীত গাইবে। কানাডায় আসার পর থেকে তমালের আবার কফির নেসায় পেয়েছে। একটু পর পর কফির বায় না ধরে। এখানে এখন পুরো সামার চলছে। বিকাল বেলা দুজনে বাসার সামনে বসে কফি খেতে খেতে জমিয়ে গল্প করবে। এর মধ্যে ওদের অটিস্টিক চাইল্ড তিতাস যদি একেবারে সুস্থ হয়ে যায় তালেতো কথাই নেই। তিতাস একদিন একদম ভালো হয়ে এখানে লেখা পড়া শেষ করে ভালো চাকরি করে আলাদা ছোট্ট টাউন হাউস কিনবে। এখানেই দেখে শুনে তিতাস কে একটি টুকটুকে মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে। একদিন, তিতাসের বাবু হবে। তিতাস ওর বাবু, বউমাকে নিয়ে বাসায় এলে সবাই মিলে হইচই করে বারবিকিউ করা হবে……।

তিথিদের কানাডাতে আসা দুই সপ্তাহই পুরাপুরি হয়নি। এই দুই সপ্তাহের মাঝে জেগে জেগে এসব স্বপ্নের কথা ভাবার পরে তিথির কিছুটা লজ্জা লাগে। আজ বকুলের সাথে কথা বলার পরে কেন জানি তিথির সমস্যার কথা একদমই ভাবতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তবে তিথির ইচ্ছা  হোক বা না হোক নিউ ইমিগ্রান্ট হিসাবে যে হাজার হাজার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা পুরপুরি উপলদ্ধি করা এই দুই সপ্তাহই যে যথেষ্ট না তা  তিথি টের পেয়ে মনে মনে আগামী দিনের স্ট্রাগল  মোকাবেলা করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকে।

(চলবে)

————————————–

জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন, রেজিস্টার্ড সোস্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার, টরেন্টো 

স্বপ্নের ইমিগ্রেশন-পর্ব ১ এর জন্যে  নিচের লিংক এ ক্লিক করুনঃ-স্বপ্নের ইমিগ্রেশন-পর্ব ১

পূর্ববর্তী নিবন্ধতথ্যের নেশা ! আগুন নেভাতে হলে পানি ঢালতে হবে, আগুন নয় !!!
পরবর্তী নিবন্ধপলাতক
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন