পরাগায়নের পূর্বে ফুলের বিভিন্ন অঙ্গের নাম জানা জরুরী !  আসুন নিচের ছবিতে একটি উভয় লিঙ্গ  ফুলের বিভিন্ন অংশের নাম জেনে নেয় ! 

ফুলের অংশসমূহ: 

 

একটি ফুলের দুটা প্ৰধান অংশ থাকে: অঙ্গজ অংশ, আর প্ৰজনন অংশ। একটি আদৰ্শ সম্পূর্ণ ফুলের চার প্রকারের অংশ বোঁটার ওপর অবস্থিত পুষ্পাক্ষ নামক একটা অংশের উপর চক্রাকারে বিন্যস্ত থাকে। পুষ্পাক্ষ এর উপর সাজানো এই প্ৰধান অংশ চারটি হল: বৃতি মণ্ডল (sepals), পাপড়ি বা দল মণ্ডল (petals), পুং স্তবক বা পুংকেশর (stamens)  আর স্ত্ৰী স্তবক  (carpels) ! 

একলিঙ্গ ও উভলিঙ্গ ফুল: যে ফুলে শুধুমাত্র পুংস্তবক বা স্ত্রীস্তবক আছে, তাকে একলিঙ্গ ফুল বলে। যেমন- লাউ, কুমড়া, ঝিঙ্গা ইত্যাদি। যে ফুলে পুংস্তবক এবং স্ত্রীস্তবক উভয়ই আছে তাকে উভলিঙ্গ ফুল বলে। যেমন- ধুতুরা, জবা, সরিষা ইত্যাদি। 

সম্পূর্ণ ও অসম্পূর্ণ ফুল: যে ফুলে বৃতি, দল, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক এ চারটি স্তবকই থাকে, তাকে সম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন- ধুতুরা, জবা ইত্যাদি। যে ফুলে চার স্তবকের মধ্যে এক বা একাধিক স্তবক থাকে না, তাকে অসম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন- লাউ, কুমড়া, শসা, ঝিঙ্গা, লালপাতা ইত্যাদি।পরাগায়ন (pollination) কি ?

পরাগায়ন হচ্ছে উদ্ভিদের একটি যৌন জনন প্রক্রিয়া। 

যে পদ্ধতিতে ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু সেই ফুল বা অন্য ফুলের অথবা সমপ্রজাতির অন্যকোন উদ্ভিদের ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত হয়, তাকে পরাগযোগ/পরাগায়ন (pollination) বলে। 

সহজ ভাবে বলতে গেলে, পরাগায়ন হল এক ফুল থেকে অন্য ফুলে পরাগরেণু স্থানান্তর। সাধারণত পরাগায়ন পোকামাকড় বা বাতাসের দ্বারা সম্পন্ন হয়ে থাকে। এছাড়াও বায়ু,পানি ও অন্য কোনো প্রাণীর মাধমেও  পরাগায়ন হয়ে থাকে !  একটি পরাগ মাতৃকোষ থেকে চারটি পরাগ রেণু উৎপন্ন হয়ে থাকে ! 

পরাগায়ন এর গুরুত্বঃ

পরাগায়ন শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটি অত্যাবশ্যক কারণ এটি আমাদের খাওয়ার ফলের উৎপাদন করে এবং আরও বেশি উদ্ভিদ তৈরি করার জন্য বীজ তৈরি করে। ফুল দিয়ে পরাগায়ন শুরু হয়। অর্থাৎ পরাগায়ন এর মাধ্যমে গাছ ফুল ও ফল উৎপাদন করে থাকে তাই এটির গুরুত্ব অপরিসীম। 

উদ্ভিদে পরাগায়ন প্রধানত দুধরনের হয়ে থাকে। যথা:
স্ব পরাগায়ন (self  pollination) এবং পর-পরাগযোগ/পরাগায়ন (cross pollination)

স্বপরাগযোগ/স্বপরাগায়ন (self  pollination):

কোন ফুলের পরাগরেণু সেই একই ফুলের অথবা সেই একই উদ্ভিদের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হলে তাকে স্বপরাগযোগ/স্ব পরাগায়ন বলে (self pollination) ! অর্থাৎ এটি একই ফুলের মধ্যে বা একই গাছের দুটি ফুলের মধ্যে ঘটে।  যেমন: শিম, টমেটো ইত্যাদি ! 

স্বপরাগায়নের উপকারিতা:
ক. স্বপরাগায়ন উদ্ভিদের প্রজাতির বিশুদ্ধতা রক্ষা  করে ।
খ. পরাগযোগ প্রায় নিশ্চিত।
গ. পরাগরেণু নষ্ট হয় খুবই কম।
ঘ. এক্ষেত্রে বাহকের প্রযো়জন হয় না বললেই চলে।

স্বপরাগায়ণের অপকারিতা:
ক. সাধারণত বংশানুক্রমে কোনো নতুন গুণের আবির্ভাব হয় না।
খ. নতুন বংশধরদের অভিযোজন ক্ষমতা বা নতুন আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা কমে।
গ. এই প্রজনন অব্যাহত থাকলে, অভিযোজন ক্ষমতা হ্রাসের কারণে কোনো এক পর্যায়ে প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
ঘ. গাছের ফল-এ কম সহনশীল ও কম জীবনী শক্তি সম্পন্ন বীজের সৃষ্টি হয়।

পর-পরাগায়ন (cross pollination):

যখন পরাগধানী হতে পরাগরেণু কোনো মাধ্যমের বা বাহকের দ্বারা স্থানান্তরিত হয়ে একই প্রজাতির অন্য একটি গাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়ে তখন তাকে পর-পরাগায়ন বা ক্রস পলিনেশন বলে। 

অর্থাৎ এটি একই প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদে দুটি ফুলের মধ্যে ঘটে। ক্রস পরাগায়নের প্রক্রিয়াটির জন্য বায়ু, জল, পোকামাকড়, পাখি, বাদুড়, শামুক এবং অন্যান্য প্রাণীদের সহায়তা প্রয়োজন। 

এক্ষেত্রে ফুলগুলোতে জিনোটাইপের ভিন্নতা থাকে বিধায় এর ফল থেকে যে বীজ উৎপন্ন হয় তাতেও জিনোটাইপের পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ এ বীজ থেকে যে গাছ হয় তার বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি মাতৃ-উদ্ভিদের মতো হয় না; পরবর্তী বংশধরদের মাঝে নতুন প্রকরণ কিংবা নতুন প্রজাতিরও উদ্ভব হতে পারে। যেমন: সরিষা, জবা, কুমড়া, ধুতরা,  টমেটো, সিম।  

পর-পরাগায়নের উপকারিতা:

  • নতুন বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলে ফুল গুলি রঙিন হয়।
  • ভিন্ন প্রকরণ বা ভিন্ন প্রজাতির সৃষ্টি হতে পারে।
  • ফল-এ সৃষ্ট বীজ অধিক সহনশীল হয়।
  • নতুন বংশধরদের অভিযোজন ক্ষমতা বা নতুন 
  • আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ! 

পর-পরাগায়নের অপকারিতা:

  • পর পরাগযোগ বাহকের উপর নির্ভরশীল।
  • বাহক-নির্ভর পরাগায়ন বলে এ পরাগায়ন প্রায় অনিশ্চিত।
  • অধিকাংশ পরাগরেণু নষ্ট হয়।
  • প্রজাতি বিশুদ্ধতা রক্ষিত হয় না। 

স্পন্দন পরাগায়ন (Sonication বা buzz pollination): 

এটা হচ্ছে কিছু মৌমাছির দ্বারা পরাগ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কৌশল যা ফুলের পরাগ উৎপাদনকারী অঙ্গ Stamen-এ অল্প বা বেশি ধারণ করে এবং এই প্রক্রিয়া উক্ত উদ্ভিদসমূহে  পরাগায়নকে অধিক কার্যকর করে। 

টমেটো আর বেগুনের ক্ষেত্রে ভ্রমরই সবচে ভালো পরাগায়ন করতে পারে। নিম্নমুখী ফুলের শরীর নিচে থেকে পা দিয়ে আঁকড়ে ধরে ভ্রমর। এরপর তার 

উড্ডয়ন পেশী বা ফ্লাইট মাসল্‌-কে খুব দ্রুত গতিতে ল্যাবরেটরি টিউনিং ফর্কের মতো কাঁপাতে থাকে। দেখে মনে হয়, এই বুঝি উড়লো ভ্রমর। আদতে এই কাঁপুনিতে পরাগরেণুগুলি ঝুরঝুর করে খসে পড়ে তার দেহে, যেগুলোর কিছু জমা হয় তাদের পায়ের রোমশ থলি সিটি (Setae) তে এবং কিছু পরাগ লেগে যায় গর্ভমুণ্ডের ওপরে। এতে সুষ্ঠু পরাগায়ন হয়, টমেটো ও বেগুনের ফলন বাড়ে। এ ধরনের পরাগায়নকে উদ্ভিদবিদ্যার ভাষায় বলা হয় স্পন্দন পরাগায়ন বা Buzz pollination !  যেমন: বেগুন, আলু, টমেটো ! 

হাত পরাগায়ন (Hand Pollination):

বৈরী আবহাওয়া ও কীট নাশকের  prochur ব্যবহারে প্রকৃতিতে মৌমাছি  বা অন্যান্য উপকারী পোকা মাকড়ের সংখ্যা অনেক কমে গেছে ফলে প্রাকৃতিক উপায়ে  পরাগায়ন প্রায় অনিশ্চিত  হয়ে পড়েছে !তাই কৃত্রিম উপায়ে বা হাত দিয়ে পরাগায়ন সম্পন্ন করা হয়। তাই এই পদ্দতিকে হাত পরাগায়ন বলা হয়ে থাকে ! সঠিক কৌশল অনুসরণ করলে ১টি পুরুষ ফুল দিয়ে ১০-১২ টি স্ত্রী ফুল পরাগায়ন করানো যায়।কুমড়াজাতীয় সবজির ক্ষেত্রে হাত পরাগায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুমড়াজাতীয় সবজিতে দুই ধরণের গাছ দেখা যায়।

ক) ভিন্নবাসী-স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে থাকে অর্থাৎ স্ত্রী ও পুরুষ গাছ ভিন্ন। যেমন-পটল, কাকরোল ইত্যাদি। ভাল ফলন পেতে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই হাত পরাগায়ন করতে হবে।

খ) সহবাসী-স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছের ভিন্ন জায়গায় ধরে। যেমনঃ-অন্যান্য লাঊ ও অন্যান্য কুমড়াজাতীয় সবজি। 

হাত পরাগায়নের সময়:

ফুল ফোটার সময় জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী হাত পরাগায়ন সম্পন্ন করতে হবে। যেমন- সাদা ফুল (লাউ, চিচিঙ্গা) সাধারণত: বিকালে ফুটে। রঙিন ফুল (চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করল্লা, ধুন্দল) সাধারণত সকালে ফুটে। পরিপূর্ণভাবে ফোটার আগে হাত পরাগায়ন করতে হবে। 

হাত পরাগায়নে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানঃ

  • ফুল ফোটার সময় জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী হাত পরাগায়ন সম্পন্ন করতে হবে। যেমন- সাদা ফুল (লাউ, চিচিঙ্গা) সাধারণত: বিকালে ফুটে। রঙিন ফুল (চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করল্লা, ধুন্দল) সাধারণতঃ সকাল ফুটে।
  • পরিপূর্ণভাবে ফোটার আগে করতে হবে।  

কি ভাবে হাত পরাগায়ন করবেন: 

পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক হওয়ায় কৃত্রিমভাবে পুরুষ ফুলএনে স্ত্রী ফুলের উপর পরাগায়ন করতে হবে ! ঘটালে এ জন্য আগেই বলেছি পুরুষ ও স্ত্রী ফুল  চেনা প্রয়োজন! পুরুষ ফুল ফুলের বোঁটার অগ্রভাগে  ফুটে পাপড়ির মাঝখান দিয়ে বেড়ে যাওয়া  পুংদণ্ডে পাউডারের গুঁড়ার মত পরাগরেণু থাকে। আর স্ত্রী ফুলে পাপড়ির গোড়ায় গর্ভাশয়  অথবা ছোটফল থাকে ! গর্ভাশয়ের ওপর থেকে পাপড়ি  থাকবে! ছোট ও মোটা গর্ভদণে আঠালো পদার্থ  থাকবে। পুংরেণু এখানে পড়ার সাথে সাথে আঠায় আটকে যায়! অনেকেরই ধাণা, শুধু স্ত্রী ফুলের এই গর্ভাশয় থাকলেই ফলধরবে এ ধারনাটা ভুল! গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু না লাগা পর্যন্ত ফল ধরবে না! পুরুষ ফুল থেকে ফল হয় না, ফল হয় স্ত্রী ফুল থেকে, তাই মনে রাখবেন পুরুষ ফুল ছিড়ে এনে স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করতে হবে। স্ত্রী ফুল ছিড়া যাবেনা। এছাড়া তূলি বা কটন বাড ব্যবহার করেও ভালোভাবে পরাগায়ন করা যায় !  আগের দিনের  সন্ধা হওয়ার ১ ঘন্টা পূর্ব থেকে পরের দিনের সকাল ৮ টা পর্যন্ত হাত পরাগায়নের উপযুক্ত সময় !  

মনে রাখা দরকার যে পরাগায়নের জন্য একই দিনে ফোটা পুরুষ ও স্ত্রী ফুল নির্বাচন করতে হবে। একটা পুরুষ ফুল দিয়ে ৬ থেকে ৭টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে  পরাগায়ন করা যায়। 

বিভিন্ন সবজির ফুল ফোটার সময়:

ক) পটল:

পটোলের ফুল সাদা। পটোলের পুরুষ এবং স্ত্রী গাছ আলাদা। পটোল একটি উচ্চমাত্রার পর-পরাগায়ন ফসল। এজন্য স্ত্রী এবং পুরুষ গাছের অনুপাত হতে হবে ৯:১ অথবা ১০:১। পুরুষ ফুল স্ত্রী ফুলের ১৫ থেকে ২৯ দিন পর জন্মায়। তাই পুরুষ গাছ স্ত্রী গাছের চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে রোপণ করতে হয়। পটোল ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন ভোর ৫.০০টা থেকে সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হয়।

খ)  ঝিঙে:  

ঝিঙে ফুল বিকালের দিকে ফোটে। ফুল ফোটার সময় সাধারণত বিকাল ৫.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে। পরাগধানী পরাগরেণু বিকাল ৫.০০টা থেকে ৮.০০টা এর মধ্যে উন্মুক্ত করে। পরাগরেণুর কর্মক্ষমতা ফুল ফোটার দিন সবচেয়ে বেশি থাকে এবং ২-৩ দিন পর্যন্ত  এটা স্থায়ী হয়। গর্ভমুন্ডের ধারণক্ষমতা ফুল ফোটার ৬ ঘণ্টা আগে থেকে ফুল ফোটার ৮৪ ঘণ্টা পর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে ফুল ফোটার দিন বিকাল ৫.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে ঝিঙে ফুলের পরাগায়ন করিয়ে দিতে হবে।

গ)  চিচিঙ্গা:

সন্ধ্যা ৭.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে ফুটতে শুরু করে চিচিঙ্গা ফুল এবং স্ত্রী ফুল ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুটে যায়। পুরুষ ফুলের ফুটতে ১৯ মিনিট থেকে ৩৩ মিনিট সময় লাগে। বিকাল ৪.০০টা থেকে ৫.০০টার মধ্যে পরাগধানী ফাটতে শুরু করে এবং ৩ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে পরাগরেণু উন্মুক্ত হয়। চিচিঙ্গা ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৬.০০টা থেকে সকাল ৯.০০ টার মধ্যে করতে হবে।

ঘ) কাঁকরোল:

কাঁকরোলের পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে ধরে এবং পুরুষ গাছে কুড়ি ধারনের ১৫দিন পরে ফুল ফোটে এবং স্ত্রী গাছে ফোটে ১০ দিন পর। তাই পুরুষ গাছ আগে লাগাতে হয়। কাঁকরোল পুরুষ ফুল ভোর ৪.০০ টার সময় ফুটতে শুরু করে। স্ত্রী ফুল সকাল ৬.০০টা থেকে ৬.২০টার মধ্যে ফুটতে শুরু করে। সকাল ৫.০০টা থেকে ৬.০০টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল ফোটে। ফুল ফোটার ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরাগায়ন করলে ৬৪% পর্যন্ত ফল ধারণ করে। ১২ ঘণ্টার উপরে গেলে ফল ধারণ ১৭% এর নিচে চলে আসে। এজন্য ফুল ফোটার সাথে সাথে পরাগায়ন করে দিতে হবে।

ঙ)  মিষ্টি কুমড়া:

মিষ্টি কুমড়া ফুল ভোর ৩.০০টা থেকে ভোর ৪.০০টা পর্যন্ত ফুটতে শুরু করে এবং ভোর ৫.০০টা থেকে ৬.০০ টার মধ্যে সর্বোচ্চ ফুল ফোটে। ফুল সাধারণত ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ফুটন্ত অবস্থায় থাকে। ফুটন্ত ফুল সকাল ৮.০০টা থেকে বন্ধ হওয়া শুরু করে এবং ১১.০০টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হবে।

চ) চাল কুমড়া: 

চাল কুমড়ার পুরুষ ফুল সাধারণত ভোর ৪.৩৩টা থেকে ভোর ৪.৪৫টা নাগাদ ফুটতে শুরু করে এবং ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট এর মধ্যে  সম্পূর্ণ ফুল ফুটে যায়। স্ত্রী ফুল ভোর ৪.২০টা থেকে ভোর ৪.৩০টা নাগাদ ফুটতে শুরু করে এবং ২০ মিনিট থেকে ২৫ মিনিট এর মধ্যে  সম্পূর্ণ ফুল ফুটে যায়। পরাগধানী সাধারণত রাত ১.৪৫টা থেকে ২.৪০টা এর মধ্যে ফাটতে শুরু করে এবং গর্ভমুÐের ধারণক্ষমতা ফুল ফোটার ৬ ঘণ্টা আগে থেকে শুরু করে ১৬ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। পরাগরেণু ফুল ফোটার ২০ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সজীব থাকে। চাল কুমড়ার   কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯.০০টার মধ্যে করতে হয়! 

তবে কৃত্রিম পরাগায়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল দুটি যেন একই সময় ফুটেছে এমন ফুল নির্বাচন করা হয়। বড় ক্ষেত হলে স্প্রে মেশিনে পানি নিয়ে পরাগরেণু মিশিয়ে স্প্রে করা অথবা ড্রপার দিয়ে ফুলে পানির ফোটা দেয়া। তাহলে ফল ধারণ বৃদ্ধি পাবে। 

এছাড়া যদি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম পাথুরে চুন এবং ৩ গ্রাম বোরন সার মিশিয়ে পরপর ৩ দিন বিকালে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দেয়া হয় তাহলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা কমে যাবে স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে।

উপসংহার:

যে কোন ফসল বিশেষ করে ফলজ সবজি উৎপাদনে পরাগায়ন একটি প্রয়োজনীয় দিক যার গুরুত্ব অপরিসিম !  একজন সফল বাগানীর বাগানে উৎপাদিত ফসল বা সবজির উপর বিশেষ করে ফুলের প্রকারভেদ, ফুল ফোটার  সময় ও পরাগায়নের উপযুক্ত সময়ের উপর বেসিক  জ্ঞান থাকতে  হবে নইলে সফল বাগানী হওয়া যাবে না ! পরাগায়নের অভাবে চোখের সামনে ফুল ঝরে যাবে তখন দেখা ও হাহুতাশ  করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না !  বিভিন্ন বৈরী আবহাওয়া ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মৌমাছি  ও অন্নান্য উপকারী পোকার সংখ্যা পর্যাপ্তভাবে  কমে গেছে তাই প্রাকৃতিক উপায়ে পরাগায়নের হার এখন অনেক কম !  তাই hand pollination বা হাত পরাগায়নের মাধ্যমে আমরা এই সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারি !  

পরিসংখ্যানে  দেখা যায় যে কেবল মাত্র হাত পরাগায়নের  মাধ্যমে সবজির ফলন শতকরা 70-80  ভাগ বাড়ানো যেতে পারে ! হাত পরাগায়ন একটি সহজ ও স্বল্প সময়  সাপেক্ষ  কৌশল এর সঠিক প্রয়োগ আপনার সবজি বাগানের সফলতা বাড়িয়ে আপনার ও পরিবারের  সবার মনে নির্মল আনন্দ এনে দিবে ! 

 

 

Happy backyard gardening !

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন