আজ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া।  সারারাত অবিরত  শুভ্র তুষার, ঘরের বাইরে  ড্রাইভওয়ে, রাস্তা, সর্বত্র  সাদা পেজা তুলার মতো জমা হচ্ছে । রাস্তায় মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ি দিয়ে শুভ্র তুষার পরিষ্কার করে  লবন ছিটাচ্ছে। কিন্তু বাড়ির আংগিনা এবং ড্রাইভ ওয়ে পরিষ্কার না করলে ঘরের দরজা খোলা  বা  গ্যারাজে এবং ড্রাইভওয়ে থেকে গাড়ি বের করে কাজে যাওয়া  যাচ্ছে না ।তা ছাড়া  অতি অল্প সময়ের মধ্যে ঠান্ডায় শুভ্র তুষার পাথর হয়ে জমে বরফ হলে  গাড়ি বা পায়ে  হাঁটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ।  মারিয়ার  কোনো অনুশোচনা নেই, তাকে কাজে যেতে হবে না।সে নিজে একা থাকে । কিন্তু নিচে বেজমেন্টে ভাড়াটিয়া ইয়ং ছেলে প্রদীপ যত অসুবিধাই হোক কাজে যেতে হবে । স্নো পরিষ্কার না করলে সে  আজ গাড়ি বের করতে পারবে না ।

 প্রদীপ ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘরের দরজা খুলতে পারছে না। পুরা ড্রাইভওয়ে পরিষ্কার না করলে ঘর থেকে বের হয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়া সম্ভব হবে না। মারিয়া  ডিম্ মামলেট রুটি টোস্টারে দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে দরজা নক করে ডাকে প্রদীপ।  

প্রদীপ দরজা খুলে বলে হাই মারিয়া।

মারিয়া বলে আমি রুটি ডিমের মামলেট করেছি তোমার জন্য।

থ্যাংক ইউ মারিয়া। আমার জন্য সকালের ব্রেকফাস্ট  তৈরী করার কোনো দরকার ছিল না। আমি কাজে যাওয়ার সময় রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু  নিয়ে কাজে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করি।

আজ না হয় আমার দেয়া ব্র্যাকফাস্ট খাইলে। 

তুমি কি আজ কাজে যাবে

হ্যাঁ কাজে যেতে হবে। বাহিরে আজ দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া, না গেলে হয় না?

যত দুর্যোগ হোক, কাজে যেতে হবে ।যেতে হলে বাসে  যাও আজ গাড়ি নেয়া নিরাপদ হবে না।

ঠিক আছে মারিয়া। 

তুমি  কাপড় ছেড়ে নাশতা করো, ততক্ষনে আমি কফি নিয়ে আসি। 

Maria so kind of you! 

মারিয়া কফি নিয়ে এসে বলে লোক এসে স্নো ক্লিন করতে দেরি হবে। ওরা অনেক বাড়িতে স্নো ক্লিন করে তবে এখানে আসবে ওদের সময় মতো ।ঠিক আছে, আমি বাসে যাবো ।

গরম কাপড়, জ্যাকেট , মাথায় উলেন হেট্ , পায়ে  গরম মোজা, বুট, হাতে গ্লাভস পরে  দুপুরের লাঞ্চ ব্যাগ নিয়ে প্রদীপ  আস্তে আস্তে বাস স্টপের দিকে গিয়ে দেখে আরও অনেক লোক বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা, সে  ঠান্ডায়  কাঁপতে থাকে।  প্রদীপ চিন্তা করতেছে আজ কাজে যাবো কি, দেখি শুচিতাকে কল দিয়ে সে কি বলে?

সেলুলার ফোন উঠিয়ে বলে ,হেলো শুচিতা! তুমি কি আজ কাজে যাবে

না, আমি কাজে যাবো না  অসুস্থ বলেছি । আমি বাস  স্টপে দাঁড়িয়ে ভাবছি কি করবো

শুচিতা বলে আজ অফিসে লোকজন কম হবে।  তুমি না গেলে বলে দাও আমি আজ কাজে আসবো না। আচ্ছা দেখি কি করা যায়। বাস এসেছে কিন্তু ভিতরে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। জন লোক উঠার পর বাস ড্রাইভার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আরও প্যাসেঞ্জার এসে লাইনে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে ।সে অফিসে কল দিয়ে বলে আমি তো আসতে পারছি না। আমার গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। এডওয়ার্ড  বলে না পারলে আর কি করবে, রেস্ট নাও, আগামী দিন দেখা হবে।    

প্রদীপ হাঁসতে হাঁসতে বাসায় গিয়ে দরজা খুলতেই মারিয়া বলে কি  ব্যাপার তুমি ফেরত আসলে

প্রদীপ বলে বস আমাকে আজকের জন্য ছুটি দিয়েছে। আবহাওয়া খারাপ আজ অনেকেই কাজে যাবে না।  সে বলে দেখি মারিয়া তোমার স্নো সভেল  দিয়ে দরোজার সামনে একটু পরিষ্কার করে লবন দিয়ে রাখি।

মারিয়া  খুশী হয়ে বলে পারলে একটু করে রাখো। সে গ্যারাজের  চাবি নিয়ে  সভেল এনে দরোজার সামনে পরিষ্কার করে বলে আমার গাড়ি না সরাইলে ওরা বরফ পরিষ্কার  করতে পারবে না। মারিয়া বলে ওদের জন্য অপেক্ষা  করো। পুরা বাড়িতে মারিয়া একা থাকে এবং ব্যাজমেন্টে প্রদীপকে রেখেছে এই ভেবে যে বাসা খালি রাখা ঠিক না, তাছাড়া সময় অসময় দরকার হতে পারে। 

মারিয়ার দুই মেয়ে  এবং এক ছেলে কেউ মারিয়ার সঙ্গে থাকে না। ওরা যার যার নিজস্ব সংসার নিয়ে আলাদা থাকে এবং মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়।তার স্বামী নিকোলাস এবং মারিয়ার  বনি বনা হয় নি , যে জন্য সে ডিভোর্স নিয়ে গত ১০ বৎসর আলাদা থাকে।  

নিকোলাস  ১৯৪৬ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পর ইতালি থেকে শিপে অনেকের সঙ্গে একত্রে কানাডা রেফিউজি হিসাবে   এসেছে।সে সময়  ইউরোপের বিভিন্ন  দেশ থেকে  দেশে  লক্ষ লক্ষ লোক রিফিউজি হিসাবে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে স্থায়ী ভাবে থাকার ব্যবস্থা করে। তাদের অধিকাংশ অন্টারিও, ভ্যাঙ্কুভার, আলবার্টা আরও অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ।  যে জন্য কানাডাকে বলা হয় রেফিউজি কান্ট্রি।   নিকোলাস  পরবর্তীতে দেশে গিয়ে বিয়ে করে মারিয়াকে নিয়ে আসে। ওই সময় এখানে নিজের পছন্দ মতো কোনও কাজ পাওয়া যেতো না। যেখানে যা পেতো করে জীবন বাঁচাতো । নিকোলাস   তার স্ত্রী মারিয়া আলবার্টা এবং সব শেষে অটোয়া ছেলে মেয়ের সুবিধার জন্য  গিয়ে স্থায়ী ভাবে  বাস করে ।

এ দেশে  ছেলেমেয়েরা বড়ো হলে মাবাবার সঙ্গে থাকে না, ওরা আলাদা থাকে। মাবাবা অবসর জীবনে হয় বাসায় থাকে,নতুবা সিনিয়র হোমে থাকে। মারিয়া বাড়ি ছেড়ে সিনিয়র হোমে থাকা পছন্দ করে না ।   সে বলে তার প্রতিবেশীরা তার আপনজন, সবাই খোঁজ খবর নেয়, তাই সে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বা সিনিয়র হোমে যেতে চায় না ।      

মারিয়া বলে আমরা যে সময় এ দেশে এসেছি  কানাডার কোনো শহর ততটা এক্সপানশন হয় নি। শহর ছিল ছোট এবং সুযোগ সুবিধার সৃষ্টি  হয় নি। দেশে এত ব্যাপক স্কুলকলেজ এবং ইউনিভার্সিটি  ছিল না।

প্রদীপ মারিয়াকে বলে আমি এখানে একা একা কি করি বরং আংকেলের বাসায় গিয়ে দিনটা কাটিয়ে আসি । মারিয়া বলে শুচিতা কি আজ ছুটি কাটিয়েছে? 

হ্যাঁ । তাহলে যাও গল্প এবং খাওয়া দাওয়া করে দিনটি কাটিয়ে এস।  

দিনের ১০টার দিকে  বাহিরের লোক এসে বাসার ড্রাইভ ওয়ে পরিষ্কার করার পর প্রদীপ  গাড়ির স্নো পরিষ্কার করে আস্তে আস্তে পিজ্জা  নোভাতে গিয়ে দুইটা   লার্জ সাইজ পিজ্জা কোক নিয়ে শুচিতাদের বাসায় গিয়ে দুপুরের লাঞ্চ টাইম উপস্থিত দ্রুব প্রদীপকে দেখে চিৎকার করে বলে আংকেল পিজ্জা এনেছে,পিজ্জা এনেছে। সবাই হাঁসে এবং বলে পিজ্জা দ্রুবর পছন্দের, দেখো তোমাকে দেখে কি রকম চিৎকার শুরু করেছে।

শুচিতা বলেছে মা আজ একটু খেচুরি রান্না করো,তাই আভা আজ খিচুড়ি রান্না করেছে দুপুরের খাওয়ার জন্য। প্রীতম হাঁসতে হাঁসতে বলে ভালোই হলো তুমি এসেছো খেতে বসে   প্রদীপ  বলে আমি বরাবরই আন্টির হাতের রান্না পছন্দ করি ।আমি যে সময় এই বাসায় থাকতাম অনেক সময় ক্ষিদে লাগলে রাতে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে নিজে ফ্রীজ খুলে  কিছু খেয়ে নিতাম। কাউকে কিছু বলতাম না।শুচিতা হেঁসে বলে আমি টের পেতাম,তবে কিছুই বলতাম না।

বিকেলে আবহাওয়া একটু পরিবর্তন হলে শুচিতা বলে প্রদীপ , দ্রুবকে নিয়ে চল আমরা একটু শপিং মল থেকে ঘুরে আসি। 

চলো যাই ।  দ্রুবর কাপড় নেই, ওর  জন্য দেখি কি কেনা যায়। ওরা ঘুরতে ঘুরতে দ্রুবর জন্য কিছু কাপড় কিনে রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাতের  খাওয়া খেয়ে প্রীতম আভার  জন্য কিছু খাওয়া এনে বাসায় এসে প্রদীপ বলে আমি বাসার দিকে যাই। 

আভা বলে কেন না খেয়ে যাবে? 

শুচিতা বলে আমরা বাহিরে খেয়ে এসেছি এবং তোমাদের জন্য খাওয়া এনেছি।

আভা বলে তোমরা আমাকে বলবে  না, আমি তোমাদের  জন্য রান্না করেছি। শুচিতা বলে মা আমি জানতাম না ।  দ্রুব বাহিরে খাবে তাই প্রদীপ আমাদের রেস্টুরেন্টে  নিয়ে  খাওয়াইছে এবং তোমাদের জন্য এনেছে।

আভা বলে প্রদীপ তোমাকে কালকের জন্য খাওয়া দিয়ে দিতেছি। তুমি একা থাকো, ফ্রীজে রেখে দেবে এবং কাল খেতে পারবে। আন্টি আমার ফ্রীজে খাওয়া আছে, তাছাড়া মারিয়া একা থাকে সব সময় কিছু না কিছু রান্না করলে আমার সঙ্গে শেয়ার করে। আপনি দিতে চান ,না করবো না। তবে বেশি কিছু দেবেন না। ঠিক আছে কম দেব।  সব ধরণের খাওয়া মিলিয়ে এক দিনের খাওয়া দিয়ে বলে ফ্রীজে রেখে দিও এবং কাল বের করে গরম করে খাবে। আন্টি আপনি যা দিলেন আমার দুই দিন আর রান্না করতে হবে না। দ্রুবকে একবার কোলে নিয়ে আদর করে বলে এবার যাই। দ্রুব হাত উঠিয়ে বলে bye  

প্রদীপ  গাড়ি চালাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে দেশে মাবাবা ভাইবোনকে ফেলে এসে এখানে আংকেলআন্টি শুচিতাকে পেয়ে যাক কিছুটা সময় ভালো যাচ্ছে ।

প্রদীপ  বাসায় ফিরে আসার পর মারিয়া বলে তোমার দিনটা কেমন কেটেছে?

হ্যাঁ, ভালো কেটেছে।

সুমিতের সঙ্গে শুচিতার আজকাল বিশেষ কথাবার্তা হয় না। সুমিত  অসুস্থ্য, মন থেকে ভেঙে পড়েছে এবং শুচিতা কল দিলে অনেক সময়  সে ফোন হ্যাং আপ  করে।সুমিত মনে করে শুচিতা মন  থেকে প্রদীপকে ভালো বাসে এবং ওকে সব সময় ওর সঙ্গে চলা ফেরা করে বলে অনেকে দেখেছে ।

রাতে শুচিতা সুমিতকে কল দিয়ে বলে তুমি কেমন  আছো

সুমিত বলে তুমি আজ এক মাস আমার কোনো খোঁজ খবর নেও নি। শুচিতা বলে আমি এটা সেটা নিয়ে একটু ব্যস্ত  ছিলাম যে জন্য তোমার কোনো খবর নিতে পারিনি। সুমিত বলে তোমার এমন কি  ব্যস্ততা  যে পাঁচ মিনিটের জন্য কল দিয়ে খোঁজ নিতে পারো নি এই বলে টেলিফোন রেখে দেয়।  

শুচিতা পুনরায় কল দিলে সুলতা টেলিফোন উঠিয়ে বলে কি  খবর তুমি কেমন আছো?

আমরা ভালো।  সুমিতকে টেলিফোন করেছিলাম সে টেলিফোন রেখে দিয়েছে। সুলতা বলে ওর মেজাজ ভালো নেই এখন তোমাকে গালি গালাজ করবে। তার চেয়ে তুমি এখন রেখে দাও এবং পরে  মেজাজ ঠান্ডা হলে কথা বলবে শুচিতা টেলিফোন রেখে দিয়ে আভাকে বলে মা তোমরা বলো সুমিতের সঙ্গে কথা বলতে ওকে টেলিফোন করেছিলাম । সে টেলিফোন রেখে দিয়েছে।আভা বলে তোমার যে  ভাবে ভালো হয় সে ভাবেই চিন্তা করে চলবে, আমরা তোমার কোনও কাজে বাধা দেই নি এবং আজও দেবো না।  । 

পর দিন অফিসে গিয়ে মনিকা ও আজিজের সঙ্গে লাঞ্চ ব্র্যাকে বসে শুচিতা বলে সুমিতের অবস্থা ভালো নেই, কাল টেলিফোন করেছিলাম ও জবাব না দিয়ে টেলিফোন রেখে দিয়েছে।  মনিকা বলে ও টেলিফোন উঠিয়ে তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আমাদের নিকট। সুমিত বলে তুমি প্রদীপের সঙ্গে আজকাল বেশি বেশি উঠা বসা করো । তুমি এমন কি তোমার ছেলে দ্রুবকেও নিয়ে দেখাতে যাও না। শুচিতা বলে তুমি কি এ সব বিশ্বাস করো? 

আমরা বলি সুমিত, তুমি ভালো হয়ে চাকরি করে নিজে বাসা নিয়ে আলাদা থাকো, আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সুমিত আপনা আপনি বক বক করতে থাকে।আমার মনে হয় সে প্রথম থেকেই কাজ খোঁজ করে নি বা এ ব্যাপারে উদাসীন ছিল। নতুবা এ দেশে পড়াশুনা করলে কাজ হবে না কেন?

কিন্তু সে, সে  ভাবে চিন্তা ভাবনা করে নি এবং সব সময় তোমার পিছনে লেগে ছিল ।সে তো তুমি সবই দেখলে, আমি আর তোমাকে কি বলি।  ওর ব্রেন অপারেশন, দুইবার হার্ট এটাক,  ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে।  তাছাড়া মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে যে জন্য কোনো কিছু ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা করতে পারে না। এ সব চিন্তা করলে আমার আপনা আপনি কান্না পায়, কিছুই ভালো লাগে না। শুধু  একা একা কাঁদতে ইচ্ছা করে।

শুচিতা, সুমিত তোমাকে  বিশ্বাস করে  না এটা সব চেয়ে বড়ো সমস্যা যে জন্য তোমাদের একত্রে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া যে ধরনের অসুস্থ এবং তার  ফ্যামিলি সাপোর্ট দিচ্ছে না। তুমি কি ভাবে ওদের সঙ্গে থাকবে?

তুমি তো সবই আমার কথা বললে, আমি আর কি বলি

শুচিতা ব্র্যাক শেষ করে নিজের টেবিলে গিয়ে কাজ করে।

সুলতা বিকেলে কলেজ  থেকে বাসায় না গিয়ে দ্রুবকে দেখতে এসেছে । আভা প্রীতম ওকে দেখে বলে,তুমি কেমন আছো?

আন্টি আমরা ভালো আছি, তবে দাদা ভালো না।

আভা বলে জানি, কিন্তু সে কি ঠিক ভাবে ট্রিটমেন্ট নিচ্ছে?

ওর ব্লাড প্রেসার আজকাল অনেক উঠা নামা করে। কোনো সময় হাই কোনো সময় লো থাকে। ডাক্তার ঔষুধ দিচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই নরমাল টেম্পারেচার আসে না। দুইবার বাথরুমে গিয়ে পরে গেছে এবং আম্বুলান্স কল করে একবার হাসপাতালে নিয়ে সারা রাত রেখেছে এবং   বিভিন্ন টেস্ট করে বাসায় পাঠিয়েছে। আর একবার ওকে বাসায় দেখে বলেছে ফ্যামিলি ডাক্তারের কাছে যাইতে।ও ফ্যামিলি ডাক্তারের কাছে যাইতে চায় না এবং ঠিক ভাবে ঔষধ খায় না।

শুচিতা ঘরে ঢুকতেই দ্রুব দৌড়ে এসে দরজা খুলে বলে মা  সুলতা এসেছে। 

সুলতা কে  খেতে দিয়েছো?

না, সুলতা  খায় নি। দ্রুব রোজকার মতো শুচিতার জুতা নিয়ে জায়গা মতো রেখে দিয়েছে। সুলতা দেখে হাঁসে এবং বলে দেখো মায়ের কেমন ভক্ত?

হ্যাঁ, ও আমার জুতা স্যান্ডেল গুছিয়ে রাখতে জানে।  তাছাড়া আমার জামা কাপড় বেডের উপরে দেখলে নিয়ে বলে আমি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখবো।সবাই ওকে নিয়ে হাঁসে এবং বলে দ্রুব তুমি অনেক কাজের।

 শুচিতা সুলতাকে বলে তুমি কেমন আছো

হ্যাঁ, আমি ভালো আছি।

তুমি কেমন আছো?

ভালো, তুমি কখন এসেছো

এইতো কয়েক মিনিট।

দ্রুব শুচিতার ব্যাগ হাত থেকে নিয়ে বেড রুমে রেখে দিয়ে বলে মা, তুমি হাতমুখ ধুয়ে খেতে এস, নানু রান্না করেছে।

আচ্ছা ঠিক আছে।

শুচিতা কাপড় ছেড়ে হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে গিয়ে বসতেই আভা খাওয়া লাগিয়ে দিয়ে বলে সুলতা তুমি খেতে এস। সুলতা বলে আন্টি আমি এখন খাবো না, আমি আসছি একটু দেখা করার জন্য। শুচিতা বলে এস খাই আর কথা বলি, দ্রুব গিয়ে সুলতাকে হাতে ধরে বলে সুলতা খেতে এস। সুলতা বলে ঠিক আছে তুমি যখন বলছো   না খেয়ে  কি থাকতে পারি?  আমি বাহির থেকে এসেছি ,হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসি।   

আভা আজ মুরগির মাংস, সবজি এবং ডাল রান্না করেছে। প্রীতম বলে সুলতা এসেছে আজ অতি সাধারণ খাওয়া। শুচিতা বলে মা তো জানে না আসবে। সুলতা বলে অত্যন্ত ভালো খাওয়া, এর চেয়ে আর বেশি কি খাবো?

গত  এক সপ্তাহ স্নো ছিল, আজ স্নো না থাকলেও রাস্তা বরফে অতিরিক্ত পিচ্ছিল এবং ঠান্ডা। এই ঠান্ডাতে ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। প্রীতম  বলে এটা ঠান্ডার দেশ, গাড়ি, বাড়িবাস, শপিং প্লাজা এবং কলে কারখানা  সর্বত্রই  তাপ দেয়া থাকে। দেশের মানুষ ঠান্ডায় অভ্যস্থ , কল কারখানা ২৪ ঘন্টা চলে। এই ঠান্ডাতে কেউ ঘরে বসে থাকে না। এখানে এক দিকে তুষার  পরে আর এক দিকে মিউনিসিপ্যালিটির লোক স্নো ব্লোয়ার দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে এবং ওপর দিকে লবন দিয়ে বরফ  গলানো হয়  ।  পরিষ্কার না করলে লোকজনের চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে , একসিডেন্ট  হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে।  সুলতা বলে আংকেল দেশের বরফ সাথে সাথে পরিষ্কার না করলে মানুষ ঘরে আটকা পড়বে।  

রাতের  ডিনারের  পর সুলতা বলে আমি বাসে বাসায় চলে যাবো। প্রীতম বলে এই ঠান্ডার মধ্যে তুমি বাসে যাইতে পারবে না। না, আংকেল আমি এক ব্লক হেঁটে গেলে বাস পাবো। শুচিতা বলে না, বাবা তোমাকে গাড়ি দিয়ে  নামিয়ে দেবে । বাবা তুমি গাড়ি দিয়ে ওকে দিয়ে এস। দ্রুব বলে আমি পিসির  সঙ্গে যাবো। তুমি কোথায় যাবে এই ঠান্ডা দিয়ে?

আমি যাবো বলে চিৎকার করে জামা কাপড় বের করে।  শুচিতা বলে ওকে রেখে যাওয়া যাবে না। বাবা তোমরা যাবে ওকে গাড়িতে বসিয়ে রাখো এবং ১০ মিনিট পর চলে আসবে এই বলে ওকে গরম কাপড় পরিয়ে তৈরী করে বলে যাও ওদের সঙ্গে  ।  

  আভা বলে আমি একটু দোকানে যাবো কিছু কেনা- কাটা লাগবে। সুলতাকে বিল্ডিংয়ের সামনে নামাতেই সে বলে আংকেল আপনারা উপরে আসবেন?

প্রীতম বলে আজ নয় আর একদিন  সুমিতকে দেখতে আসবো । ওরা সুলতাকে  নামিয়ে দিয়ে বাজার করে চলে আসবে  । গ্রোসারি স্টোরের পার্কিং লটে গাড়ি পার্কিং করে বের হতেই দ্রুব বরপের কুন্ডলি পাকিয়ে খেলা শুরু করে। আভা বলে ওটাই আসল, ও ঘরে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে গেছে ।  তাই বাহিরে আসার জন্য চিৎকার শুরু করেছে ।  অতিরিক্ত ঠান্ডা, দ্রুব  চলো ভিতরে যাই। কিন্তু দ্রুব বরফ নিয়ে খেলবে, প্রীতম বলে আভা তুমি ওকে নিয়ে এস, আমি ভিতরে ঢুকি।  

দ্রুব ভিতরে ঢুকেই তার পছন্দের চকলেট, আইস ক্রিম, বিস্কুট সেলফ থেকে নিয়ে বাস্কেটে ঢুকাচ্ছে।  প্রীতম এবং আভা দেখে হাঁসে এবং বলে ও জানে ওর পছন্দের জিনিস কোথায় থাকে । ওরা বাজার সেরে টিম হর্টন গিয়ে ডোনাট ও কফি নিয়ে বাসায় এসে বলে এই দেখো শুচিতা দ্রুব কি কি এনেছে?

শুচিতা বলে দ্রুব জানে দোকানে কোন সেলফে কি কি আছে এবং উঠিয়ে নিয়ে বাস্কেট ভর্তি করে।

তাই না  দ্রুব?

ও হাঁসে ।

দ্রুব ব্যাগ থেকে সব বাজার নামিয়ে ওর পছন্দের ডোনাট বের করে শুচিতাকে বলে খাও । কিচেন থেকে কফি কাপ এনে বলে মাকে দাও। সবাই হাঁসে এবং বলে দেখো মায়ের জন্য কত আদর । আভা বলে আমরা সারা দিন দ্রুবকে সামলাই  ।  শুচিতার কিছুই চিন্তা করতে হয় না। সে সারা দিন  কালার  পেন্সিল নিয়ে কাগজ ভর্তি করে কি কি আপন মনে আঁকতে থাকে। আবার নিজে নিজে হাঁসে এবং আমাদের দেখায় । যদি বলি বাহ্ কি সুন্দর হয়েছে, কি খুশী !   

সুলতা বাসায় পৌঁছার পর সুমিত ও তার মা আরতি ওর সঙ্গে অনেক রাগ করে এবং বলে তুমি কেন আমাদের না বলে শুচিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছো?

মা আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে যাই নি, আমি দ্রুবকে দেখতে গিয়েছি । দ্রুব আমার জন্য কি রকম করলো, আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না । সে আমার সঙ্গে গাড়িতে করে এসে আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেছে । ও অনেক বুদ্ধিমান ছেলে এবং দেখবে ভালো করবে । সে প্রতি মুহূর্ত আমাকে তার বিভিন্ন কাজ এনে দেখিয়েছে এবং না খাইয়ে দেবে না ।

 ওকে ছেড়ে আমি আসতে পারি?

আরতি বলে তুমি ওকে নিয়ে আসতে বাসায় । মা  আমি বলছি  আংকেলকে উপরে আসতে । ওরা শপিং এ  যাবে সে জন্য উপরে উঠে নি এবং বলেছে একবার আসবে ।

সুমিত বলে আমি ওদের আর দেখতে চাই না, শুচিতা এখানে আসলেই ঝগড়া হয় । আমার শরীর এত খারাপ, সে একদিন একটা টেলিফোন ও করে না এবং খোঁজ খবর নেয়া পছন্দ করে না । 

কমল বলে আমাদের নিজেদের দোষ ত্রুটি ও আগে দেখা দরকার, আমি ব্যাক্তিগত ভাবে শুচিতার কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছি না ।ও সারাক্ষন কাজ করে আমরা ওর পেছনে লেগে থাকি যা মোটেও ঠিক না ।

বিকেলে প্রতিবেশী অধরা ও তার স্বামী সুশীল রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খাওয়া নিয়ে এসে দরজা নক করতেই সুলতা গিয়ে দরজা খুলে বলে আদাব আপনারা  কেমন আছেন?

ভালো । তোমার বাবা- মা কি আছেন?

জ্বি  আছে, ভিতরে আসেন । 

সুশীল বলে আমরা কাজ থেকে এসেছি, বেশিক্ষন বসবো না । বসেন, কি বলেন বসবেন না ।

কমল ভিতর থেকে এসে বলে আপনাদের কথাই ভাবছিলাম । এই দেখেন আপনারা এসে গেলেন । সুশীল বলে আপনি স্বরণ করলে না এসে কি পারি?

আমি আজ কয়েক দিন থেকে ভাবছিলাম একটু এসে দেখে যাই ।

আপনাদের ব্যবসা কেমন চলছে?

কোনো রকম চালিয়ে যাচ্ছি ।

 সুমিত কেমন আছে?

আর বলবেন না, ও কয়েক দিন হলো আর একবার ছোটোখাটো একটা স্ট্রোক করেছে । ওকে ভালোভাবে দেখান কি জন্য ওর এ অবস্থা হচ্ছে?

সবই ভগবানের লীলাখেলা , কি বলবো ভাই ।

সুমিত ভিতর থেকে আস্তে আস্তে এসে প্রণাম জানিয়ে পার্শে সোফাতে বসে । সুশীল বলে ডাক্তার তোমাকে কি বলে?

আংকেল আমার অনেক ধরণের সমস্যা । আমি সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে পড়েছি । 

অধরা বলে শুচিতা কি আর আসলো না?

আরতি বলে আর ওর কথা বলবেন না । 

দেখেন আমার ছেলেটা কি রকম অসুস্থ?

হ্যাঁ, তাইতো দেখছি । অন্তত বাচ্চা নিয়ে কাছে থাকলে মন একটু   ভালো থাকত  ।  সুলতা বলে আমি গতকাল দেখতে গিয়েছিলাম, কি সুন্দর চটপটে এবং বুদ্ধিমান ছেলে । ওর সঙ্গে দুই ঘন্টা থেকে আমার প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। সারাক্ষন কথা বলে, এটা খাও, ওটা  খাও ।   না খেলে মুখে উঠিয়ে দিয়ে বলে খাও।  আমাকে কত আদর করলো । শেষে আমাকে গাড়ি করে দিয়ে গেলো ।  কমল বলে আমাদের দুর্দিন, সুমিত অসুস্থ থাকে, তাছাড়া শুচিতার সঙ্গে আমাদের বনিবনা হচ্ছে না ।   সুমিতের  মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছে সে এ অবস্থাতে সুখী না। তাছাড়া সে অনেক অসুস্থ ।

অধরা বলে শুনেছি শুচিতার সঙ্গে প্রদীপের ভাব রয়েছে , ওটা কি ঠিক?

আরতি বলে ওই ছেলের সঙ্গে ওর আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল  । মাঝখান দিয়ে এখানে আমার ছেলেকে সরল পেয়ে জড়িয়ে অশান্তির সৃষ্টি করেছে। 

সুশীল বলে চলো অধরা আমরা অনেক সময় এসেছি। আচ্ছা দাদা আমরা যাই, পরে দেখা হবে।  

সুশীল গাড়িতে এসে বলে ওদের  মাথা ঠিক নেই। সুমিত যেভাবে অসুস্থ হয়ে রয়েছে, শুচিতার সঙ্গে ওদের মিলে মিশে চলাই শ্রেয়।  তা না করে  ওরা কেবল দোষ খুঁজে বের করছে।

অধরা বলে সুশীল তুমি তো ওদের দু কথা বুঝিয়ে বলতে পারতে।  কে গায়ে পরে কাকে পরামর্শ দিয়ে ঝামেলা করে। আরতি হয়তো তখন আমাদের সঙ্গে ও কথা  কাটাকাটি করবে। কিছু না বলে আমরা বরং নিরপেক্ষ থাকি, সেই ভালো ।   

আমাদের কাজ হলো লোকজনের সঙ্গে মিলে মিশে থাকা এবং সময় পার করা । এখানে লোকজনের সঙ্গে মিলে মিশে চলা এত সহজ না । এ সব লোক যারা দেশ থেকে এসেছে তাদের কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ডাক্তার, কেউ অন্য পেশার লোক এবং সবাই দিন রাত কষ্ট করে পড়াশুনা এবং পাশাপাশি কাজ করে জীবন নির্বাহ করে।  এই যে বড়ো বড়ো বাড়িঘর দেখো ,এগুলি অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে করা। এ দেশে অকর্মন্য লোকের কোনো স্থান নেই। কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ নম-শুদ্র, কেউ ধোপা, মুচি, নাপিত এ সব নিয়ে আমাদের দেশে অকর্মন্য লোকজন বাড়াবাড়ি করে।

এ দেশে এ সব নিয়ে কথা বলার সময় কোথায়? 

 এ সব নিয়ে যারা দিন রাত চিন্তা করে, তাদের এ দেশে থাকার প্রয়োজন নেই। যেমন ধরো আমি দেশে কলেজে প্রফেসরি করতাম, এখানে আমি কি কাজ করবো। আমি ব্যবসা করে একজন প্রফেসরের চেয়ে অনেক ভালো আছি।

সুমিতের অবস্থা কি তুমি দেখেছো?

অধরা বলে ও অনেক শুকিয়ে গেছে দেখলে মনে হয় বেশি দিন বাঁচবে না। 

বাঁচলেও অনেক দিন লাগবে তাকে ঠিক হয়ে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ করতে। কমলের মেয়ে এবং ছোট ছেলে যদি ইমিগ্রেশন কাগজ হয়, পড়াশুনা শেষ করে কাজ করলে সংসারের অবস্থা ভালো হবে।  

সুশীল এবং অধরা তাদের শুভ ম্যারেজ ডে উপলক্ষ্যে কয়েকটি পরিবারকে  একত্রিত করে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ।এই উপলক্ষ্যে   কমল ও তার পরিবারকে ও নিমন্ত্রন করেছে । সুমিত স্বাস্থ্যগত কারণে আসতে পারে নি । তবে পরিবারের বাকি সবাই এসেছে। মহিলারা একত্রে নানাহ গল্প যেমন কে কি শাড়ি পরেছে , কে  কি গহনা পরেছে এ নিয়ে গল্প । কেউ বলে বৌদি আপনার এই গহনা তো খুবই সুন্দর! আর বলবেন না এই গহনা আমার স্বামী আমার ম্যারেজ ডে তে দিয়েছে। কেউ বলে আমার এই শাড়ি এবং গলার সোনার চেইন সেবারে দিল্লী গিয়েছিলাম, সেখান থেকে কিনেছি। বাহ্ খুব সুন্দর তো  এবং খুব মানিয়েছে ! আর একজন বলে আমরা সেবারে বোম্বে বেড়াতে গিয়ে মেয়ের বিয়ের গহনা শাড়ি ও আনুষঙ্গিক জিনিস এনেছি। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মেয়ে ছেলে পছন্দ করেছে আমরা কি অমত করতে পারি? 

 এক মহিলা আরতিকে বলে আপনার ছেলে বৌকে সেদিন শপিং মলে দেখেছি আপনার নাতি কে নিয়ে কি যেন কেনাকাটা করছে। সুমিতকে দেখলাম না, অন্য  একটা কাউকে যেন ওর সঙ্গে দেখলাম। আর একজন বলে হয়তো ওদের কোনো আত্মীয় কে নিয়ে গিয়েছে।

 অধরা বলে ছেলেটা দেখতে কেমন?

ফর্সা লম্বা মতো বয়স ৩৫-৩৬ হতে পারে। আরতি বলে এই ছেলে ওদের কোন আত্মীয়, দেশ থেকে ইমিগ্রেশন নিয়ে এসে ঝামেলা লাগিয়েছে। আরতি বলে আর বলবেন না, সবই আমার কপাল। সুলতা বলে মা তুমি চুপ  করো। কমল  চোখ রাঙিয়ে বলে চুপ করো ।

রেস্টুরেন্ট থেকে খাওয়া আসতে একটু দেরি হয়েছে ।কমলের মতো আরও কয়েকজন  নিরামিষ ভোজী, সবজি ছিল ও দিয়ে খেয়ে নিয়েছে।আরতি, সুলতা মাছ- মাংস  সবই খেলো । সুলতা   বলে আমরা আংকেলের দোকানের সব খাওয়াই পছন্দ করি।

বাসায় ছেলেমেয়েদের হৈ চৈ, মহিলাদের শাড়ি আর গহনার গল্প, পুরুষদের পলিটিক্স, এ যেন এক অপূর্ব দৃশ্য, কে কার চেয়ে বেশি কথা বলবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা।  মহিলা ও ছেলেমেয়েদের এক দিক এবং পুরুষদের অন্য দিকে গল্পের আড্ডা । খাবার পর ডেসার্ট এবং পরিশেষে পান ও স্বপ্ল পানীয় ব্যবস্থা, সবাই খেয়ে রাত ১২ টার পর যার যেই ঘরে ফিরেছে ।  

ঘরে এসে আরতি মুখ খুলেছে এবং বলে শুনলে শুচিতা সম্পর্কে কিছু?

সুমিত বলে কি শুনলে? 

ওখানে কিছু কিছু লোক এসেছে যারা শুচিতাকে প্রদীপের সঙ্গে বাহিরে ঘুরা ঘুরি করতে দেখেছে। সুলতা বলে মা এটা তুমি বাড়িয়ে বলছো। কেউ বলে নি যে শুচিতা প্রদীপের সঙ্গে বাহিরে ঘুরা ঘুরি করে। প্রদীপ ওদের আত্মীয়, তাছাড়া ওরা কি প্রদীপকে চিনে?

তুই আমার সঙ্গে তর্ক করিস না, সবাই প্রদীপকে চিনে এবং এ সম্পর্কে সব কিছু জানে। সুলতা বলে  দ্রুবকে নিয়ে শুচিতা বাজারে গেছে, হয়তো কারো সঙ্গে দেখা হয়েছে। এটাকে এত বড়ো করে দেখার কি আছে?

সুমিত বলে তুই এ সব বুঝবি না, মা যা বলছে তাই ঠিক।শুচিতার চলাফেরা ঠিক না, সে আমাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না। আমি এত অসুস্থ, সে একবার দ্রুবকে নিয়ে এসে দেখা করে যাওয়া মনে করে না। দাদা, শুচিতা কাজ করে বাসায় গিয়ে দ্রুবকে সামলায় তা ছাড়া নিজের পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত।

সে কিসের পড়াশুনা করে?  

শুচিতা কাজের পর ইভিনিং পোস্ট গ্রাজুয়েট করে অটোয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ।

তুই শুচিতার পক্ষে দালালি করিস ।   ঠিক আছে দাদা আমি এ নিয়ে তোমাদের সঙ্গে কোনোরকম কথা বলবো না।  তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করবে?

আমি আর কি করবো, আমি অসুস্থ, আমার কি করার ক্ষমতা আছে।আমার আকসিডেন্টের পর একবার ব্রেন অপারেশন,একবার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে । আমি আমার নিজের অবস্থা বুঝি, তোরা আমার কি বুঝবি?

দাদা আমরা জানি তুমি অনেক অসুস্থ, তুমি আমাদের এ দেশে এনেছো, এটা অনেক ভালো কাজ করেছো, আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ । এটা আমার দায়িত্ব ।  মাবাবা ভাইবোনকে সবাই ভালো অবস্থায় দেখতে চায় ।   আমি কি পুরা দায়িত্ব পালন করতে পারলাম?

দাদা তুমি অসুস্থ হয়ে পড়েছো, এর বেশি কি করবে?

তোমার এই দুর্দিনে আমরা তোমার পার্শে রয়েছি এবং সব সময় দেখা শুনা করি এবং আশীর্বাদ করি যাতে তুমি ভালো হও ।

পরদিন সকালে সুমিত আজিজকে টেলিফোন করে বলে তুমি কেমন আছ? 

আজিজ টেলিফোন উঠিয়ে বলে সুমিত আমি অফিসে কাজে ব্যস্ত।  জরুরি কিছু না থাকলে আমি বিকেলে কাজের পর তোমাকে টেলিফোন করবো। সুমিত বলে ঠিক আছে ।

দুপুরে লাঞ্চ টাইম-এ   আজিজ শুচিতাকে বলে সুমিত টেলিফোন করেছিল এবং জানিনা কি বলতে চায়। আমি বলেছি বিকেলে  কল দেব। তাই সে টেলিফোন রেখে দেয়।  

শুচিতা বলে এখন কথা বলে দেখতে পারো সে কি বলতে চায়। মনিকা বলে যাও  ৫ মিনিট টেলিফোন করে শুনে নাও সে কি বলতে চায়। আজিজ টেলিফোন করে এসে বলে সুমিত বলে শুচিতা কেমন আছে? 

আমি বলেছি ভালো আছে, তুমি কি ওর সঙ্গে  কথা বলতে চাও?

না, এখন কথা বলবো না এই বলে টেলিফোন রেখে দিয়েছে ।

মনিকা বলে শুচিতা তোমার এবং সুমিতের সঙ্গে মান অভিমান চলছে, এই বলে হাঁসে । শুচিতা বলে এতে মান অভিমানের কি আছে  । আমি টেলিফোন করলে ও টেলিফোন রেখে দেয়, এ দিকে তোমাদের টেলিফোন করে খোঁজ নিয়ে , বুঝাতে চায় যে আমি টেলিফোন করি না।

আজিজ বলে ও অনেক অসুস্থ, সারা দিন বাসায় বসে কি করবে ।  কথা বলার কোনো লোক পায় না । তুমি বরং দ্রুবকে নিয়ে বাসায় গিয়ে উঠো এবং দেখো সে  বা তার লোকজন কি বলে। না আমি ওখানে গেলে অযথা ঝগড়া হয় । আজকাল তো সুমিতের বোন , ভাই সবাই বড়ো হয়েছে এবং ওরা ন্যায় অন্যায় বুঝবে ।  

ক্রমশ : 

পূর্ববর্তী নিবন্ধসবজি উৎপাদনে পরাগায়নের গুরুত্ব
পরবর্তী নিবন্ধদেখা হবে
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন