অবকাঠামোগত ভাবে নাকি আমরা অনেক উন্নতি করেছি। কয়েকটা স্টেডিয়াম বানালাম, বড় বড় কিছু টুর্নামেন্ট আয়োজন করলাম আর হয়ে গেল ! কাগজে কলমে হয়তো হয়েছে কিন্তু বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে, প্রতিপক্ষের সমিহ আদায় করতে আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন যার ধারে কাছেও আমরা নাই।
ইন্ডিয়ার সাথে হারলে আমরা বাজে এবং পক্ষপাতদূষ্ট আম্পায়ারিংকে দোষ দেই। ইন্ডিয়া কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে আম্পায়াদেরকে কিনে ফেলে না। যারা এরকম ভাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। ইন্ডিয়া যেটা করে সেটা হচ্ছে ডিপ্লোমেসি-ক্রিকেট ডিপ্লোমেসি। আমরা এখানে করুন ভাবে মার খাই আর খিচতি খেউড় করতে থাকি এই বলে যে ইন্ডিয়ার সুবিধা হবে বলে টুর্নামেন্টের মাঝপথে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে আইসিসি ফিক্সচার বদলে দিল ! চায়ের টেবিলে বসে গুনতে থাকি না জানি কত কোটি টাকা ঘুস খেয়েছে।
আবার কোন বড় দলের বিপক্ষে জিতলে উপহার আর স্তুতিতে খেলোয়াড়দের ভাসিয়ে দেই। ক্রিড়া সাংবাদিকরাও তাতে সামিল হন। ব্যাটের কানায় লেগে যে বলটা স্লিপ এবং থার্ড ম্যানের হাত গলে কোন রকমে সিমানা পেরিয়ে যায় সেটাকেও তারা অসাধারন ব্যাটিং বলে চালিয়ে দেন। সাংবাদিকদের কি গঠনমূলক সমালোচনা শেখানো হয় না ?
গর্ডন গ্রিনিজের সাথে বিকেএসপিতে একবার বেশ কিছুটা সময় একান্তে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। সময়টা ছিল সম্ভবত: ১৯৯৮, তার কিছুদিন আগেই, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচে’ উল্লেখযোগ্য জয়টি এসেছিল তারই দক্ষ প্রশিক্ষনে। প্রশংসার সুরে বললাম, “তুমি তো এখন আমাদের হিরো। কি মনে হয় তোমার, বিশ্বকাপে কেমন করবে আমাদের ছেলেরা?” আমাদের “ছেলেরা” তখন নিউজিল্যান্ডে গিয়ে মোটামুটি খাবি খাচ্ছে। কিছুক্ষন চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে, যা হয় হবে, বলেই ফেলি, এরকম একটা ভাব নিয়ে মুখ তুলে বললো, “আমার বলতে খারাপ লাগছে যে, তোমাদের ছেলেদের খেলায় উন্নতি করার মানসিকা একেবারেই কম; তাদের একমাত্র মটিভেশান হচ্ছে টাকা।”
পত্রিকায় আজকে একটা লেখা পড়ছিলাম জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের সম্পর্কে। “মাসের পর মাস বেতন পান না ক্রিকেটাররা, কোচিং স্টাফ বদলায় প্রতিনিয়ত। মাঠের বাইরে হাজার সমস্যায় জর্জরিত তাদের ক্রিকেট। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও অভাবনীয় জয়ে গেয়ে উঠল তারা সামর্থ্যের জয়গান” (রনি)।
আমাদের খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের অভাব আছে এমন কথা কেউ বলবে না; অভাব শুধু মানষিকতার। যে দলের সিনিয়র এবং প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়রা খোঁড়া যুক্তিতে টেস্ট না খেলে শুধু ওয়ান ডে আর টি-২০ খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করে সেই দলের বাকিদের কাছ থেকে আর কিই বা আশা করা যায় ।
এই একটা খেলায় যেখানে আমাদের যথেষ্ট প্রতিভা আছে বলে প্রমাণিত, সেখানে আমরা কি পারিনা এর খেলোয়াড়দেরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে? একটা ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করলে কিংবা নতুন কোনো বোলার খেলতে নেমেই ৫ উইকেট নিলে তাকে ভিভিআইপি না বানিয়ে তার উন্নত খেলার ধারাবাহিকতা কিভাবে ধরে রাখা যায় সেদিকে মনোনিবেশ করতে ? মাশরাফি প্রায়ই বলে, “এদেশে বীর একমাত্র মুক্তি যোদ্ধারা, আমরা ক্রিকেটার, আমাদেরকে ক্রিকেটের হিসেবেই দেখা উচিৎ।”
পুনশ্চ: দল যাই করুক, দিন শেষে ওরা আমাদেরই ছেলে, আমাদেরই জাত। সারারাত জেগে খেলা দেখব। সুযোগ পেলে টরন্টো থেকে ফ্লোরিডা গিয়ে হলেও দেখব। জিতলে চিৎকার করে বাড়ি মহল্লা ফাটিয়ে দেব। হারলে নতুন নতুন গালির বিশেষণে গায়ের জ্বালা মেটাব। কোনো তত্ত্ব কথার ধার ধারব না। আমরা যে এরকমই। এরকমই যে ভালো লাগে!
Reference:
রনি, আরিফুল ইসলাম. “হতশ্রী ব্যাটিংয়ে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ”. বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, 6 November 2018, https://bangla.bdnews24.com/cricket/article1558000.bdnews. Accessed 6 November 2018
অসাধারণ লেখা, ধন্যবাদ মুন্না ভাই ৭০১ ।
Lekhata bhalo legeche! Ei rokom likha aro chai! ????