আমি প্রতিবারই দেশে গেলে দেশের এক এক ধরণের উন্নতি লক্ষ করি, কিন্তু আমাদের মূল্যবোধের খুব একটা পার্থক্য দেখি না আর এটার উন্নতী না হলে আসলে আমরা কতদূর আগাতে পারবো তা জানিনা।  ঠিক এক্সাক্টলি এই ধরণের ঘটনা প্রথম হলেও, আরো অনেক ঘটনা অহরহ ঘটেই যাচ্ছে কিন্তু আমরা যা লক্ষ করছি যে আমরা এগুলির ঠিক একটা Band Aid সলুশন দেওয়ার চেষ্টা করছি, যার ফলে একটার পর একটা ঘটেই যাচ্ছে।  আর আমরা ঠিক শেওলা আলা পুকুরে ঢিল ছোড়ার মতো প্রথম প্রথম বেশ সক্রিয় থেকে আস্তে আস্তে সেটা ভুলে যাই, যেমন শেওলা আলা পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়লে শেওলা গুলি দূরে সরে গিয়ে পরিষ্কার পানি দেখা যায় কিন্তু আস্তে আস্তে শেওলা গুলি এগিয়ে এসে পানিকে ঢেকে দেয়। পেশায় একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার এবং এ বিষয়ে Structural তত্ত্বে বিশ্সাশি হওয়ার কারণে যেকোনো সমস্যাকে একটু critically দেখাই অভ্যাস। আমরা কোনো সমস্যার সমাধানের পিছনে যত সময় দেই তার থেকে বেশি সময় এবং সম্পদ খরচ করা উচিত “কেন ” প্রশ্নের পিছনে। স্কুল, কলেজ বা জেল খানা শুধু মাত্র Band Aid সলুশনই দিবে তার সাথে যদি কোনো সমস্যার কাঠামোগত কারণ উদ্ঘাটন না করা হয়। আর এই দায়িত্ব শুধু মাত্র সরকার, বিরোধী দল বা সুশীল সমাজের নয় বরং সমাজের প্রতিটি সদস্যের, প্রতিটি পরিবারের। বাবা মা বা পরিবারের বয়জোষ্ঠদের সন্তান বা ছোটদের সাথে শুধু মাত্র (authoritative) কতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে চলবে না, তাদের সাথে ঘনিষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যাতে করে তার মনের ভিতরের বিষয়টি শেয়ার করতে পারে। আগেকার দিনে হয়তো এটা না হলেও চলতো কিন্তু বর্তমান যুগে এটার প্রয়জন অপরিহার্য।

একটা মানুষকে গড়ে উঠতে শুধু মাত্র টাকা পয়সাই যথেষ্ট নয় , তাকে কি ধরণের পরিবেশ দিতে পারছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।এই কর্পোরেট যুগে  আমরা কেনো যেন ছেলেমেয়ের উন্নতি শুধু মাত্র ম্যাটেরিয়ালিস্টিক দিক থেকেই দেখছি , যেমন ভালো পড়াশুনা, বাড়ি গাড়ি এবং ভালো চাকরিবাকরি হলেই যেন সব। ছেলেমেয়েদের মনের দিক বা তাদের মূল্যবোধের উন্নতির কথা খুব কমই চিন্তা করি, মনে মনে ভাবি ওটা অটোমেটিক হয়ে যাবে , কিন্তু সেটা ওতো  সহজ নয় তাই এখন সময় এসেছে সেদিকে নজর দেওয়ার । আমাদের অফিসে আমাদেরকে প্রতি বছর কমিউনিটি সেফটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং একিই জিনিস, তাই একবার ইন্সট্রাক্টটরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এটা প্রতি বছর করতে হবে যেখানে crisis সব সময় ঘটে না, উনি বলেছিলেন তুমি যতই জানো যদি তোমার চর্চা না থাকে তাহলে যদি ৫ বছরে একবারও বিপদে পড়ো তখন তুমি ঠিক মতো বেবস্থা নিতে পারবে না তাই আমাদের উচিত আমাদের ছোটদের সাথেও মানুষত্ব এবং মূল্যবোধের টাইম তো টাইম চর্চা করা। আর নিউরোলোজির কথায় ছোট বেলায় বাচ্চাদের ব্রেইন এর সবগুলি নিউরোন সক্রিয় থাকে তাই কোনো কিছু ধারণ ক্ষমতাও এসময় শার্প থাকে, এজন্য এসময়েই এদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করা প্রয়জন। যারা এখানে ছোট বেলায় এসেছেন তাদেরকে এদেশের ভাষা শিখতে আমাদের মতো এতো কক্ট করতে হয়নি বা তাদের একসেন্টও আমাদের মতো না। আমাদের প্রয়জন আমাদের মনুষত্ব বৃদ্ধির একটি সামাজিক আন্দোলন এবং সে ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে। নিজের অস্তিত্ব-সঙ্কটে ভোগা থেকে বের হয়ে আসতে হবে , নিজের প্রতি আস্থা আনতে হবে এবং  নিজেকে ভালোবাসতে শিখতে হবে । অন্যকে সন্তুষ্টি করার জন্য না বেঁচে নিজেকে সন্তুষ্টির জন্য বাঁচতে হবে।

অবশেষে ঐ ঘটনায় নিহত সকল নিরপরাধ মানুষের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শেষ করছি।

মুকুল

টরোন্টো

৩ জুলাই, ২০১৬

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন