আপনি কি হতাশ, বিষন্ন, কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না, জীবনের মিনিং খুঁজে পাচ্ছেন না, তাহলে আসুন আমার সাথে, দেখে নিন আমার যাত্রা।

আজকে ২৭সে মার্চ। বাংলাদেশিদের জন্য দিনটি মনে রাখার বিশেষ কারণ আছে, যা কিনা আমাদের স্বাধীনতার সাথে জড়িত। আমার জীবনে দিনটি আরো একটি বিশেষ কারণে তাপপর্যপূর্ণ। আজকের এই দিনে ২০১২ সালে আমার পাকস্থলীতে একটি সার্জারি হয়, যার নাম Wipple সার্জারি, এবং এটি মানব দেহের একটি জটিল ও বড়ো সার্জারি। সার্জারিটি জটিল হলেও মাত্র ২ বা ৩% লোক সার্জারির সময় মৃত্যুবরণ করেন, এবং আমার সার্জারি যিনি পরিচালনা করেছিলেন তার হাতে ২/৩ জন মৃত্যুবরণ করেছিল। এবং এই সার্জারির পরে মানুষের বেঁচে থাকার বা ভালোভাবে কোনো ধরনের কমপ্লিকেশন ছাড়া বেঁচে থাকার গড় হিসাব হচ্ছে মাত্র ২৫%. এবং সার্জারির পরে কমপ্লিকেশন ছাড়া বেঁচে থাকাটাও মাত্র ৫/৬ বছর। সার্জারিটি করা হয় সাধারণত প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সার দূর করার জন্য।

“Most pancreatic cancers (53 percent) are diagnosed after they have spread—and those have an exceedingly low survival rate, with just 1.8 percent of patients living for more than five years after diagnosis. (For all types of the cancer, the average five-year survival rate when diagnosed is only slightly higher at 3.3 percent.)”.. Scientific America.

স্টিভ জব, যিনি কিনা Applei এর জনক উনি উনার ডায়াগনসিস এবং সার্জারির পরে  ৮ বছর বেঁচে ছিলেন। তবে উনার হয়তো স্প্রেড করেছিল বেশি এবং উনার ক্যান্সারটি ছিল ভিন্ন ধরণের। যাহোক অর্থ, নাম-যশ সব থাকার পরেও মাত্র ৫৬ বছর বয়োসে বিদায় নিতে হলো। তবে হাঁ, উনি যে ৮ বছর সারভাইভ করেছেন সেটা কিন্তু উল্লেখযোগ্য, কারণ তার ক্যান্সারটি ছিল ভিন্ন ধরণের। বিশ্ববিখ্যাত ইতালির অপেরা গায়ক লুচিয়ানো পাভরতিও মারা যান এই ক্যান্সারে। এটি বলতে গেলে deadly ক্যান্সার।

যাহোক, আমার যে সমস্যা হয়েছিল সেটি ডাক্তাররা নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি যে সেটা ক্যান্সারাস ছিল কি না। তবে আমার সিম্পটোমগুলি ছিল সেই ধরণের। লিভার এবং পাকস্থলীর মাজখানে প্যানক্রিয়াটিকের মাথায় এমন ক্ষুদ্র একটি সিস্ট হয়েছিল যে ওটির দ্বারা বাইল-ডাক্ট বাধা প্রাপ্ত হয়ে লিভারে ফিরে আসছিলো। ফলে জন্ডিস জাতীয় উপসর্গ লক্ষ হলো, যদিও সেটি জন্ডিস ছিল না। এটি এতো ছোট ছিল যে, X-Ray বা আল্ট্রাসোনো করেও বোঝা যাচ্ছিলো না। অবশেষে কয়েকবার সিটি স্ক্যান করার পরে ডাক্তারা বুঝতে পারেন।  কিন্ত উনারা বুঝতে পারছিলেন না যে এটি ক্যান্সারাস কি না, নাকি পাকস্থলীর অন্য কোথাও ছড়িয়েছে। তবে উনারা কয়েকবার বোর্ড বসিয়ে বললেন যে সমস্ত আশংকা দূর করার একটা উপায়, সেটা হলো সার্জারি।  যদিও আমি তখন জানিনা যে, সেটি কত বড়ো ধরণের সার্জারি হতে পারে। আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম, এবং বললাম আমি কোনো ঝামেলা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। সার্জারি করতে গিয়ে যদি মরন থাকে তো হবে, সেটা তো আল্লাহর হাতে।

তবে আমি রক্ত পরীক্ষা না করলে বুজতেই পারতাম না আমার কোনো সমস্যা আছে কারণ আমি কোনোধরনের দুর্বলতা অনুভব করি নাই। শুধু খিদে কমে গিয়েছিলো। তাছাড়া আমি আল্লাহর রহমতে পাতলা গড়নের হলেও ছোটবেলা থেকে খুব সুস্থ। ধূমপান, কফি-চা, বা অন্য কোনো নেশাও আমার ছিল না বা নেই। এইজন্য কিছু বুঝতে পারি নাই। আর ডাক্তারদের মতে ওটি হওয়ার তেমন কোনো কারণও নেই, যে কারো হতে পারে। জিনিসটি আমার ধরা পড়ে অপেক্ষাকৃত কম বয়োসে। ওই সময়ে আমি নিয়মিত হাটাহাটি করি, সপ্তাহে ৩/৪ দিন ৩০০/৪০০ মিটার সাঁতার কাটি এবং স্বাস্থসম্মত খাওয়া দাওয়া করি। ডায়াগনসিসটা হওয়ার পরে একটু অবাকই হলাম।

যাহোক, আমার ভাগ্য ভালো ছিল যে আমার বাসার কাছে সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে Wipple সার্জারির একজন সার্জন ছিলেন। উনি তৎকালীন সারা অন্টারিওর মাত্র ৩ জনের একজন। এবং উনি আমাকে বেশ মাসখানেকের মধ্যেই একটি সার্জারি বাতিল হওয়াতে একটি ডেট দিলেন। ভাগ্যের কি খেলা যেই হাসপাতালে প্রায় ৩/৪ বছর ধরে ক্লায়েন্টদের নিয়ে বিভিন্ন কাজে যাই, সেখানেই আমাকে রুগী হয়ে যেতে হলো। সার্জন আমাকে বললেন, চিন্তা করো না তুমি ইয়াং আছো ভালো হয়ে যাবে এবং আমি তোমাকে টেক কেয়ার করবো। এর পর সে আমাকে তার রুমে রক্ষিত একটি মূর্তির পেটের মধ্যে দিয়ে দেখাতে লাগলেন আমার পাকস্থলী কিভাবে কাটবেন, কোন কোন অংশ ফেলে দিবেন কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। এবং পুরাপুরি রিকভারিতে কত সময় লাগবে।  ঠিক এর পরে উনি বন্ড সই করতে বললেন, এবং বললেন তুমি কি তোমার বৌ বা অন্য আত্মীয়ের সাথে আলাপ করে বন্ড সই করবা। আমি বলেছিলাম না, আমি এখনই সই করে দিবো। সই করে দিলাম।

কানাডাতে তখন আমার স্ত্রী, বড়ো ভাই এবং এক cousin এর পরিবার থাকে। তাদেরকে সার্জারির কথা বললেও, এর ভয়াবহতা বা মৃত্যুঝুঁকির কথা সেভাবে বলি নাই। তবে আমি বেঁচে থাকা এবং মরে যাওয়া দুই ব্যাপারেই প্রস্তুত ছিলাম, এবং সে অনুযায়ী মনে মনে কাজ শুরু করি। সার্জারির আগে যেহেতু কিছু সময় ছিল তাই আমার মৃত্যু ঘটলেও আমার স্ত্রীর কি কি করতে হবে সেই বিষয়ে সুন্দর করে লিখে এবং $৫০০০ ব্যাঙ্ক থেকে উঠিয়ে একটি খামে ভোরে আমার এক নন-বাংলাদেশী বন্ধুর কাছে সার্জারির আগের দিন রেখে যাই, এবং তাকে বলি আমি মারা গেলে যেন সে ওগুলি আমার স্ত্রীকে দেয় এবং সে মোতাবেক কাজ করতে বলে। ব্যাংক কার্ড এবং তার নাম্বারও রেখে যাই যাতে করে সে একাউন্টের টাকা ঝামেলা ছাড়া তুলতে পারে, এবং ওই $৫০০০ আমার ভাইকে দিতে বলি যাতে করে সে আমার দাফনের কাজ সম্পর্ণ করতে পারে। আমি চাই নাই আমার মৃত্যুর পরে আমার প্রিয়জনেরা তাদের আমাকে হারানোর দুঃখের মধ্যে আবার অর্থনৈতিক ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত হয়। বলেছিলাম, যদি বেঁচে যাই তাহলে ওগুলি আমাকে ফেরত দিতে।

২০১২ সালের ২৬ সে মার্চ বিকালে বাসা থেকে একটি কোরানশরীফ, চার্লস ডিকেন্সের ডেভিড কপারফিল্ড, সুনীলের পূর্ব পশ্চিমের শেষ পর্ব, আরো ২/১টি বই সহ একটি ছোট FM রেডিও নিয়ে রওয়ানা হই আমার বড়ভাই ভাবীর বাসা স্কারবোরোতে, যদিও হাসপাতাল আমার বাসা থেকে বড়োজোর ১৫/২০ মিন্টের পথ। উদ্দেশ্য ছিল সবাই মিলে ভোর বেলা একসাথে হাসপাতালে যাবো। তাছাড়া যদি মারা যাই তাহলে শেষ সময়টুকু প্রিয়জনদের কাছে কাটিয়ে যাবো। রাত ১২ টার পরে যেহেতু খাওয়া নিষেধ তাই রাতের খাবার খুব ভালো করে খেয়েছিলাম। এর পর নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমাতে ঘুমাতে মনে কিছুটা ভালো লাগা এবং খারাপ লাগে দুটোই কাজ করছিলো। ভালো লাগা এই ভেবে যে যদি মরেই যাই তাহলে তো অন্তত প্রিয়জনদের সানিধ্যে, ওযু গোসল, নামাজ কালাম পড়েই মরবো। কিন্তু খারপ লাগছিলো যে অল্প বয়োসে আমার স্ত্রী বিধবা হবে এবং আমার প্রিয়জনরা আমাকে হারাবে। যাহোক এই দুই চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম, শেষে ঘড়িতে ফজরের নামাজের অ্যালার্ম দিলো। গোসল এবং ওযু করে রেডি হয়ে সবাই মিলে রওয়ানা হলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। বাইরে বসন্তের হালকা ঠান্ডা এবং লেকের হওয়া খেতে খেতে পৌঁছে গেলাম সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে। প্রাথমিক চেক আপ সেরে চলে গেলাম একটি বিশেষ ঘরে। সেখানে শুধু মাত্র আমার ভাতিজা ছাড়া আর কাউকে যেতে দিলো না। আমি এপ্রোন পরে কিছক্ষন বসে ছিলাম।  তারপর একপর্যায়ে নার্স এসে আমাকে অপারেশন থিয়েটারের দিকে নিয়ে গেলেন। ভাতিজার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম। এরপর অপারেশন টেবিলে উঠলাম এবং হাতে ইন্ট্রাভেনাস একটা ইনজেকশন দিলো, তারপর আর কিছুই মনে নেই। এর পর ওরা আমার গলব্লাডার, পাকস্থলীর বেশ কিছু পরিমান নাড়ি, প্যানক্রিয়াটিকের মাথা এবং পিটার ভিতরের আরো কিছু জিনিস কেটে ফেলে দেয়।

হটাৎ চোখ খুলে দেখি আমাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে ICU তে নেওয়ার জন্য বের হয়েছে। বাইরে সূর্যের মিষ্টি আলোর সাথে কিছুটা নরম রোদের স্পর্শও আমার চোখে অনুভব করলাম, তবে দেহের আর কোথাও কোনো অনুভতি ফিল করলাম না। সার্জন আমাকে বললেন, Mr. Mukul, it is successful, and I am glad that it did not spread anywhere else. Let me go to pass the news to your relatives. ইতিমধ্যে কেটে গেছে লম্বা ৮ ঘন্টা।  এই দীর্ঘ সময় মনে হয় আমার আত্মীয়রা কখনো কাউকে অপারেশন থিয়েটারে রেখে অপেক্ষা করেনি। বুঝতেই পারছেন যে কি পরিমান অনিশ্চয়তার সময় তাদের কেটেছে। নিশ্চয় তাদের মনে হয়েছে তারা কি জীবন্ত দেখবে নাকি মরদেহ নিয়ে যেতে হবে। বসে বসে তারা শধু দোয়া দরূদ পড়েছে, এবং সেটি কাজে দিয়েছে।

এর পর আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো ICU তে। সেখানে যাওয়ার পর বিকালে শুধু মাত্র আমার ভাই এবং cousin কে এক নজর দেখার অনুমতি দিলো। আমি শুধু হাতের ইশারা দিয়ে বলেছিলাম, আমি ভালো আছি, কারণ আমার সারা শরীরে তখন অসংখ যন্ত্রপাতি, এবং একজন নার্স অনবরত তার সামনে রাখা স্ক্রিনে আমার হার্ট বিট এবং অন্নান্য রিডিং দেখেছেন। ২/১ দিন পরে আমাকে একটি সেমী কেবিনে নিয়ে যাওয়া হলো। তখন ভিসিটরদের নির্ধারিত সময়ে আমাকে দেখার অনুমতি দিলো। এই সময়ে এমন এমন লোক আমাকে হাসপাতালে দেখতে এসেছেন যে আমি তাদেরকে ঠিকমতো বলিও নাই। আমার নার্স বলতো, “You got big traffic man” আমি বলতাম এতো আমার সৌভাগ্য।

যদিও ডাক্তারা বলেছিলো ২ সপ্তাহ থাকা লাগতে পারে, কিন্তু মাত্র  ৯ দিনের মাথায় আমাকে ডিসচার্জ করে দেয়। ওরা বললো আশাতীত ভাবে ভিতরে সব জোড়া লেগেছে। এই ৯ দিনে খাওয়া দাওয়া তো দূরে থাক, পানি পর্যন্ত দিতো না। শুধু স্যালাইন। আমার বুকের ঠিক দুই পাঁজরের জয়েন্টের থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত কেটেছিল। মোট ৩২টা স্টেপল করা ছিল। পেটের দুই পাশে দুটি টিউব লাগিয়ে দিয়েছিলো পেটের ভিতরকার তরল জিনিস বের করার জন্য। ৯ দিনে আমার ওজন কমে যায় ১০ পাউন্ড আর আমি প্রায় ১ ইঞ্চি লম্বায় খাটো হয়ে যাই। ওজন এবং উচ্চতা ফিরে পেতে এক বছরের বেশি সময় লাগে।

এরপর ডাক্তার রেফার করলো এক Oncologist এর কাছে।  তিনি বললেন তোমাকে জিনিসটি যাতে ফিরে না আসে সে জন্য ৬ মাস প্রতি সপ্তাহে একবার কিমো থেরাপি নিতে হবে। শুরু হলো সেই যাত্রা। উনারা বললেন, সাইড এফেক্টের মধ্যে বড়ো ব্যাপার হলো তোমার চুল থাকবে না। এমনিতেই আমার চুল পাতলা। যাহোক আমি বললাম কোনো সমস্যা নেই চুলের কাজ (যদি ইচ্ছা করে) twig দিয়ে চালিয়ে নেবো, কিন্তু জীবনটা তো আর twig দিয়ে চালানো যেত না বা ফিরে পেতাম না। চুল প্রচুর পড়ে গেলেও একেবারে টাক্কু কিন্তু এখনো হইনি।

সার্জারির পরে যে সমস্যা হলো। সেটি হলো ৯ দিনে আমার পাকস্থলী কোনো কাজ না করে সে খাবার হজম করা ভুলে গিয়েছিলো তাই কোনো কিছু খেলেই প্রচন্ড কনস্টিপেশন হতো। এটি কাটিয়ে উঠতে প্রায় ৮/৯ মাস লেগে গেলো। তবে আমার এপেটাইট বেড়ে গেলো, শুরুতে এনার্জিও কম ছিল। নিষেধ ছিল ভারী জিনিস না তোলা, দৌড়াদৌড়ি না করা, বেশি টেনশনে না থাকা, গাড়ি না চালানো। এই সময় মাঝে মাঝে মনে হতো, আগের মতো কি আবারো সাঁতার কাটতে পারবো, দৌড়াতে পারবো, কাত হয়ে শুতে পারবো। জীবনটা কি আগের মতো হবে ইত্যাদি।

হাঁ, সব কিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং সার্জারির আগের থেকে অনেক ভালো, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু এই দীর্ঘ ৯ বছরে ছিল resilient এক যাত্রা। ওই সার্জারিটা অনেক কিছুই শিখিয়েছে। আর কতদিন বাঁচবো সেটা জানিনা , হয়তোবা বেশিদিন না, যদি গড় সারভাইভাল এর কথা ধরি; আর ব্যতিক্রম হলে হয়তো আরো বেশি কিছুদিন থাকতে পারি। তবে যদি আর বেশিদিন নাও থাকি কোনো অনুশোচনা বা রিগ্রেট নেই। জীবনটা ছোট হলেও এই তৃপ্তিটা আছে যে শত বাধা বিপত্তি, চারাই উৎরাই এবং সংকটের মধ্যে দিয়েও জীবনটা মিনিংফুল ছিল, এবং আল্লাহতালার কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা যে উনি জীবনটাকে মিনিংফুল করতে সাহায্য করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ! দুঃখ শুধু এটাই থাকবে যে আমার স্ত্রী আমাকে একটু কম সময় পাবে এবং আমার ভাইবোন সহ বেশ কিছু শুভাকাংখীর সাথে খুব বেশি সময় কাটানো যাবে না। তবে আমি এখন রেডি, যখন ডাক আসবে তখন চলে যাবো।

অবশেষে আমি যেটা বলবো তাহলো, এই জাতীয় একটি বড়ো এবং বিপদজনক অবস্থা পার করে জীবনকে মিনিংফুল করে তুলতে প্রগাঢ় মনোবল, আত্মীস্বজন এবং বন্ধুবান্ধবের অবদান অনেক। সাথে ছিল কিছু সুন্দর সুন্দর বই এবং আল্লালতালার সৃষ্ট প্রকৃতি। আজকে মরি বা কালকে মরি, জীবনে করার বা পাওয়ার কিছু কিছু জিনিষ হয়তো অপূর্ণ থেকে যাবে, কিন্তু তারপরেও যতটুকু পাওয়া হয়েছে সেটি আমার মতো মানুষের জন্য remarkeble. পৃথিবীর কোনো মানুষের প্রতি কোনো রাগ বা ক্ষোভ আমার নেই। কেউ যে কিছু করে নাই, তা ঠিক না তবে আমি মাফ করে দিয়েছি, এবং তাতে খুব ভালো ফিল হয়। রাগ-ক্ষোভ পুষে রাখলে আমার কষ্ট বাড়ে। আমার প্রতি কেউ অন্যায় করে থাকলে সেটি সৃষ্টিকর্তা দেখবেন।  যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ আমার সেফটি সেক্যুরিটির অন্তরায় না হচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করা বা ওই জাতীয় মানুষ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। চেষ্টাকরি অতি ক্ষুদ্র বা সাধারণ জিনিসের মদ্ধ্যে থেকে আনন্দ খুঁজে নিতে, আর আমার বাবা-মা, দাদা দাদি এবং ভাইদের আদর্শকে চলমান রাখতে।

ছোটবেলা আমি তখন কুষ্টিয়াতে।  আমার বাবা তখন ওই থানার SI. থানার পাশে আমি বাবার সাথে দাঁড়িয়ে। বাবা একটি পান কিনে দোকানদারকে টাকা দিলে সে ২৫ পয়সা ফেরত দিলো। বাবা সেটি তাকে দিয়ে দিলেন। আমি বললাম ২৫ পঁচিশ পয়সা তো বেশি।  উনি বললেন বাবা জীবনে ক্যাল্কুলেটিভ হতে হবে তবে অত বেশি নয়, মাঝে মাঝে কিছু ছাড় দিতে হয় আর সেটি যদি মানুষের জন্য হয় তাহলে তো কথাই নেই। সে জন্য এখনো যদি বাবা যে থানায় চাকরি করতেন সেখানে যাই তাহলে মানুষ তার কথা বলে চোখের পানি ফেলে, তার কথা স্মরণ করে। অর্থকড়ি তেমন রেখে যেতে না পারলেও এই জিনিষটির জন্যই তাকে বাবা ডেকে গর্ববোধ করি।

ঠিক তেমনি দেশে গেলে কখনো কখনো কোনো মানুষের সাথে দেখা হয় তখন তারা আমাদের বড়ো ভাইয়ের নাম করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, সে তার অফিসের পিওন থেকে শুরু করে অন্য কোনো অফিসারও। আর আমার এই ছোট জীবনে ছোট সামর্থে অন্যের জন্য কিছু করতে পেরেছি কি না, সেটার কথা আপনারা জানেন, তবে চেষ্টা করি যতটুকু পারি করতে।

আপনারা সবাই দোয়া করবেন যেন আর যে কটাদিন বাঁচি, সে কটাদিন যেন সবাইকে নিয়ে অর্থ্যাৎ collective চিন্তার মধ্যে দিয়ে আল্লাহতালা বাঁচতে দেন।

আর আপনাদের সকলের প্রতি অনুরোধ, আপনারা যেন কমুনিটির কাউকে stigmatized করবেন না। থাকতে পারে একজন মানুষের মানসিক সমস্যা, হতে পারে একজন মানুষ ডিভোর্স বা সিঙ্গেল মাদার, হতে পারে একজন মানুষ অটিস্টিক, হতে পারে একজন মানুষ অন্য ধর্মে বিশ্বাসী, হতে পারে একজন মানুষ ধর্মভীরু বা নাস্তিক। এরা যদি আপনার সেফটি বা সিকিউরিটির অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায় তাহলে কেন তাদেরকে অন্য কেউ ভাববেন, কেন তাদের দিকে অন্যভাবে তাকাবেন। এই সমস্ত মানুষগুলির DNA কিন্তু মাত্র ৪টি প্রোটিন দিয়ে তৈরী। মনে যত ভেদাভেদের চিন্তা বাদ দিবেন তাতো প্রশান্তি বাড়বে।

ডাক্তার আমার সার্জারি কেমন করে করেছিলো সেটি দেখার জন্য আমাকে নিচের লাইভ সার্জারিটির লিংক দিয়েছিলেন।  উনি বলেছিলেন তোমার ঐভাবেই সার্জারি করেছি তবে, তোমাকে এই ভিডিওর থেকে অনেক বেশি পেট কাটতে হয়েছিল। যাদের হার্ট দুর্বল তারা এটি দেখা থেকে বিরত থাকুন। অবশেষে আমার প্রিয় কোরানের একটি আয়াত এবং টেনিসনের Ulysses কবিতার কিছু লাইন দিয়ে শেষ করছি।

The Al Quran 3:139

Do not lose HOPE, nor be sad. You will surely be victorious if you are true in faith.

Ulysses:

 …’that which we are, we are;

One equal temper of heroic hearts,

Made weak by time and fate, but strong in will

To strive, to seek, to find, and not to yield.”

 

সবাই ভালো থাকুন।  আমিন।

বি. মুকুল

টরন্টো

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন