রহমানের বড়ো বোন আলেয়ার একমাত্র ছেলে মোশারেফ ফেনী কলেজ থেকে বি এ পাশ করেছে। আলেয়া একটা দীর্ঘ চিঠি দিয়ে রহমানকে বলেছে তার ছেলেকে চাকুরি না দেয়া পর্যন্ত তার বাসায় রাখতে। আলেয়া কিছু পিঠা তৈরি করে বাসায় পাঠিয়েছে। রেবেকা রান্না ঘরে, মোশারেফ এসে সালাম দিয়ে বলে মামী কেমন আছেন?
রেবেকা বলে ভালো ।
তুমি কোত্থেকে এসেছো?
মামী, আমি বাড়ি থেকে এসেছি।
কি খবর তোমার ?
আমি সবে মাত্র বি এ পাশ করেছি। রেবেকা বলে ভালো ।
রেবেকা বলে যাও তুমি হাত -মুখ ধুয়ে গিয়ে মজিদ ও আজিজের রুমে বস। মোশারেফ ওদের রুমে গিয়ে কাপড় পাল্টিয়ে হাত মুখ ধুয়ে বসেছে । সাকিলা গিয়ে সালাম দিয়ে বলে ভাইয়া তুমি কেমন আছো?
আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?
ভালো।
ফুফা- ফুফু কেমন আছেন?
সবাই ভালো আছে। তুমি কি এখনও পড়াশুনা করো ?
না, আমি বি এ পাশ করেছি। খুব ভালো ।
তুমি কি আরও পড়াশুনা করবে ?
না , আমি চাকরী খোঁজ করবো। ভালো, তাহলে তুমি অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পুর্ণ হয়ে যাবে এবং ফুফা ও ফুফুকে অনেক অনেক টাকা নিয়ে দিলে কতো-ই না খুশি হবে।তবে ঢাকা শহরে কাজ করলে তোমার টাকা পয়সা সেভ হবে না।
কেন?
ঢাকা শহরে কাজ করলে আমাদের সব সময় চাইনিজ খাওয়াতে হবে এবং তোমার সব পয়সা শেষ হয়ে যাবে। মোশারফ হো হো করে হেসে উঠে । সাকিলা, তুমি অনেক হাসির কথা শিখেছো । রেবেকা রান্না ঘর থেকে এসে বলে ‘তোমরা কি নিয়ে এত হাসা হাসি করতেছ?’
মোশারফ বলে ‘মামী সাকিলা বলে আমি ঢাকা চাকরি করলে ওদের চাইনিজ খাওয়াতে-ই সব পয়সা শেষ হয়ে যাবে । ‘ রেবেকা বলে, ঢাকা বাড়ি ভাড়া ও খাওয়া খরচ অনেক বেশি । মাসের শেষে কিছুই থাকে না ‘ hand to mouth’ চলতে হয়। দেখো’ না আমাদের অবস্থা, কোনো রকমে বেঁচে আছি। ওদের কথার মাঝ খানে রহমত কাজ থেকে এসে ঘরে ঢুকে। রহমতকে দেখে মোশারেফ সালাম দেয় । রহমত বলে তুমি কখন এসেছ ?
মামা, আমি এই মাত্র আসলাম ।
তোমার মা-বাবা কেমন আছে?
ভালো আছে । কি খবর তোমার পরীক্ষার ?
মামা আমি পাশ করেছি। বেশ ভালো খবর। এই বলে রহমত ঘরে ঢুকে । কাপড় পাল্টিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘরের বারান্দায় আয়েশী চেয়ার -এ বসে পত্রিকায় চোখ বুলায় । রেবেকা চা তৈরী করে নিয়ে সবার জন্য চা , পিঠা এবং নিজে ও এক কাপ চা এনে বসে। রহমত মোশারফকে বলে বাড়ি থেকে পিঠা এনেছ?
জী মামা । মোশারেফ বলে মা বানিয়ে দিয়েছে। রহমত বলে শহরে এ সব পিঠা বানানো ঝামেলা। আমরা গ্রাম থেকে কেউ আসলে এ সব পিঠা দেখি। শহরে কোনো কোনো স্থানে সকালে গরম গরম পিঠা তৈরী করে বিক্রি করে। ও সব খাওয়া হয় না ।

রাতের খাওয়া -দাওয়ার পর রহমত বসে সংবাদপত্র খুলে সংক্ষিপ্ত খবরা খবর দেখে । মোশারেফ তার মায়ের হাতের লেখা একটি চিঠি এনে রহমতের হাতে দিয়ে বলে,মামা মা আপনাকে চিঠি দিয়েছে । রহমত চিঠি খুলে পড়ে :
ভাই:
আমার সালাম নেবেন। আমি ছেলে -মেয়ে নিয়ে এই অভাবের দিনে কোনো রকমে বেঁচে আছি। মোশারেফ বি এ পাশ করেছে ।এটাই একমাত্র খুশির খবর। আমি কোনো দিন আপনার নিকট কিছু চাই নি ।
বাড়ির জমি বিক্রি করে আপনি ঢাকা বাড়ি করেছেন । বাবার জমির মালিক আপনার আর এক ছোট ভাই রফিক ও আমি রয়েছি । আমাদের বাবার জমি তে হক আছে। ছেলে -মেয়ে নিয়ে সুখে আছেন । কিন্তু আমাদের জন্য কোনোদিন ও চিন্তা করেন নি। আমরা যেখানে দুই বেলা খেয়ে বাঁচার চিন্তা করি, সেখানে আপনি বিলাসী জীবনের কথা ভাবেন। সে যাই হোক মোশারফকে একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিবেন।

ইতি
আলেয়া

চিঠি পড়ার পর রহমতের সারাদিনের কাজের পর একটু বসে আরাম করবে তা আর হলো না । উঠে বেডে গিয়ে চোখের চশমা টেবিলে রেখে শুয়ে পড়লো। রেবেকা বুঝতে পারে যে রহমত অসন্তুষ্ট আলেয়ার চিঠির উপর । সে কিছু না বলে রান্না ঘর গুছিয়ে সুইচ অফ করে ঘরে এসে বলে আমি কি আলেয়ার চিঠি পড়ে দেখতে পারি?
রহমত কিছু না বলে চিঠি রেবেকার হাতে দিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকে।

রেবেকা চিঠি পড়ে রহমতকে কিছু না বলে বাগানে গিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে কিছু সময় বসে থাকে। পরদিন রহমত রেবেকা বা মোশারফকে আলেয়ার চিঠির ব্যাপারে কোনো কিছুই বলে নি । অফিসে গিয়ে কাগজ পত্র নিয়ে নাড়া-চাড়া করে , কিন্তু কাজ করতে ইচ্ছা করে না। মোশারেফ পাশ করেছে খুশির সংবাদ। কিন্তু চাকুরী চাইলে-ই পাওয়া যায় না। এর জন্য অনেক কাঠ-খড়ি পোড়াইতে হয়। অফিস বা কল কারখানায় দৌড়াতে দৌড়াতে কয়েক জোড়া জুতা শেষে হয়ে যাবে, শত শত দরখাস্ত দিতে হবে বা ইন্টারভিউ দিতে হবে । ভাগ্য ভালো হলে হবে, না হয় বৎসরের পর বৎসর ঝুলতে থাকবে।

তাছাড়া রহমত মনে মনে বলে আমি বাবার সব জমি বিক্রি করি নি। ভাই বোনদের পাওনা হিস্যার জমি জমা আমি বিক্রি করি নি । আমি কাজ করি , রেবেকাও কাজ করে এবং সে স্কুলের কাজের পর প্রাইভেট ছাত্র-ছাত্রী পড়ায়,দুই জনে মিলে কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছি। আমি ভাই বোনদের প্রতি অন্যায় করছি না । ওরা এ নিয়ে আমাকে কিছু বলার নেই ।
রেবেকা স্কুল থেকে বের হওয়ার পূর্বে তার বান্ধবী সীমা মাসুদকে টেলিফোন করে বলে আপা সালাম । সীমা কোনো দিনও রেবেকার কাছ থেকে টেলিফোন আসা করে নি । সীমা হকচকিয়ে যায় এবং বলে কি খবর ভালো আছেন । ছেলে মেয়েরা ভালো আছে ?
হ্যাঁ। বলেন কি করতে পারি?
রেবেকা বলে আপা আপনাকে একটা অনুরোধ করতে চাই। বলেন কি উপকার দরকার এবং যদি সম্ভব হয়।
গ্রাম থেকে আমার এক ভাগিনা সদ্য বি এ পাশ করে আমার বাসায় এসেছে। তার একটা ছোট খাটো কাজ দরকার । ভাইকে বলে দেখবেন যদি সম্ভব হয় কোথায় ও লাগিয়ে দেয়া যায় কিনা। আচ্ছা আমি দেখবো। এই কথা সেই কথা বলে সীমা টেলিফোন রেখে দেয়।

মোশারেফ সকালে প্রাতরাশ সেরে ঘর থেকে কোথায় গিয়েছে কেউ বলতে পারে না । সে দুপুরে বা বিকেলে ও ঘরে ফিরে নি। সে হেটে হেটে সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল গিয়ে ঘুরে হেটে গুলিস্তান হয়ে রমনা পার্কে ঢুকে। অনেক সময় বসে থেকে আস্তে আস্তে বাসায় ফিরে আসে। রেবেকা ওকে দেখে বলে তুমি কোথায় ছিলে সারাদিন ? মামী, আমি হেটে হেটে অনেক জায়গা ঘুরেছি। রেবেকা ওকে খাওয়া দিয়ে বলে আমরা কেউ ঘরে থাকি না দিনের বেলা। তুমি ঘরে এসে নিজে নিজে খেয়ে নিও। সে বলে ঠিক আছে মামী। বিকেলে সে আবার ঘর থেকে বের হচ্ছে ।রেবেকা বলে কোথায় যাচ্ছো?
মামী, বেশি দূরে যাবো না । বেশি দেরি করো না । রহমত কাজ থেকে ঘরে আসলে রেবেকা বলে ‘আমি সীমাকে টেলিফোন করে বলেছি যদি ওকে সাহায্য করতে পারে। রহমত কিছু না বলে রেবেকার দিকে চেয়ে থাকে। রেবেকা বলে এ নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না । আমরা এক সপ্তাহ দেখবো যদি কিছু হয় ওকে মেসে পাঠিয়ে দেব । আর যদি কিছু না হয় বলে কহে বাড়ি পাঠিয়ে দেব। রহমত বলে তুমি যা ভালো মনে কর ।

পর দিন সীমা খবর পাঠিয়েছে যে ওদের কোম্পানি তে আপাতত কোনো ওপেনিং নেই । ভবিষ্যতে হলে ওরা খবর দেবে। এক সপ্তাহ মোশারেফ থাকার পর রেবেকা ডেকে বলে আমরা কয়েক জায়গায় খবর নিয়েছি । কোথায় ও কোনো ওপেনিং নেই । তুমি বরং কাগজ পত্র রেখে যাও। যদি কোনো ওপেনিং থাকে তোমার মামা তোমার পক্ষে দরখাস্ত করবে। এক সপ্তাহ ঢাকা থাকার পর মোশারেফ বাড়ি গিয়ে আলেয়াকে বলে মা, ঢাকা গেলেই কাজ পাওয়া যায় না । মামা বলেছে চেষ্টা করে দেখবে যদি কিছু হয় খবর দেবে।

মোশারফকে গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আলেয়া তার ভাই ও ভাবীর প্রতি অনেক অসন্তুষ্ট এবং তার ভাবি রেবেকাকে দোষ দিয়েছে । সে বলে তার ভাইয়ের পরিবারে কারও কোনো কথার মূল্য নেই । সব কিছু রেবেকা নিজ হাতে নিয়ন্ত্রণ করে। সে জানতো মোশারফকে পাঠিয়ে দেবে। রহমতের ছেলে-মেয়েরা ও রেবেকার কথার বাহিরে কোনো কিছু বলে না। রেবেকা যা কিছু বলে, সব-ই ওরা শুনে । মোশারেফ বলে মা, তুমি অযথা মামীর দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছ। মামী নিজে সীমা আন্টিকে অনুরোধ করেছে তাদের কোম্পানি তে আমাকে নেয়ার জন্য। ওরা বলেছে এই মুহূর্তে কোনো কিছু নেই । মামী আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে। আরে তুই রেবেকার কথা শুনছিস । আমি রেবেকাকে চিনি, কোনো দিন ও তোর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবে না। মা তুমি এ সব বল, মামী শুনলে অনেক রাগ করবে আমার উপর। বলবে, আমি তোমাকে কিছু বলেছি।

সীমা এক বিকেলে এসে বলেছে , রেবেকা তুমি তোমার ভাগিনার জন্য বলেছো, আমি মাসুদকে বলেছি , সে বলে এই মুহূর্তে একাউন্টিং অফিসে ওই লাইনে পড়াশুনা করা লোক দরকার। তাছাড়া ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার নেয়া হচ্ছে। মোশারেফ বি এ পাশ ছেলে ওকে ফ্যাক্টরিতে দেয়া যাবে না । অপেক্ষা করতে বলেছে, ওর যোগ্যতার সঙ্গে মিলিয়ে কিছু পাইলে জানাবে। তাছাড়া ওকে বলেছে অন্যত্র দরখাস্ত করতে। জানাশুনা কেউ হলে বলে দেবে। রেবেকা বলে আমি ওকে জানিয়ে লিখবো।

রহমত অফিস থেকে আসার পর রেবেকা বলে সীমা এসে বলে গেছে যে তাদের অফিসে একাউন্টিং এর লোক দরকার এবং কারখানা শ্রমিক নেয়া হবে । মোশারফের একাউন্টিং পড়াশুনা নেই এবং কারখানা শ্রমিকের কাজ দেয়া যায় না । তুমি ওকে ভালোভাবে বুঝিয়ে লিখো। রহমত বলে আচ্ছা, আমি লিখবো।
পরদিন রহমত আলেয়াকে চিঠি লিখেছে:
আলেয়া :
মোশারেফ তোমার লিখিত চিঠি নিয়ে এসেছে। তুমি অনেক অভিযোগ করে আমাকে চিঠি দিয়েছো। আমি রেবেকা বা ছেলে-মেয়েরা কেউ তোমাদের অবজ্ঞা করি না । তোমার দৃষ্টিতে আমি বা আমার ছেলে -মেয়েরা অনেক ভালো আছি।
কিন্তু আমরা কোনো রকমে সংসার চালিয়ে বেঁচে আছি। রেবেকা অনেক দিন থেকে অসুস্থ। এই অসুস্থ অবস্থায় ও সে কাজ করে এবং আমাদের সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। আমার ভয় হয় সে যদি সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে পড়ে , আমাদের দেখার মতো কেউ থাকবে না। আমি কারো জমি জমা বিক্রি করি নি। কাজেই তোমরা আমার উপর অসন্তুষ্ট হতে পারো না ।মোশারেফ চাকুরীর জন্য এসেছে। চাকরি চাইলে ই পাওয়া যায় না। রেবেকার বান্ধবী সীমা জানিয়েছে যে তাদের কোম্পানি তে এই মুহূর্তে মোশারফের যোগ্যতা অনুযায়ী কোনো কাজ নেই । আমরা দেখবো যদি কোনো কিছু করা যায়।

ইতি
রহমত

রহমত গ্রাম থেকে জমি বিক্রি করে এবং হাউসিং লোন নিয়ে থাকার মতো ব্যবস্থা করে কলা বাগানের ভাড়া বাড়ি থেকে নিজের বাসায় উঠেছে। ছেলে -মেয়েরা নিজেদের জায়গায় যাওয়াতে অনেক খুশি হয়ে মন খুলে বাসার চারিদিকে ফুলের গাছ লাগানো শুরু করেছে। রহমত ও কাজ থেকে এসে টুকটাক বাড়ির কাজ করে এবং নিজেকে ব্যস্ত রাখে।

মোশারেফ বাড়ি চলে যাওয়ার পর আলেয়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। সে মোশারফের কথা বিশ্বাস না করে পুনরায় বিনিয়ে বিনিয়ে এ কথা সে কথা লিখে চিঠি দিয়েছে এবং বলেছে তাকে যে কোনো একটা কাজ দিয়ে সাহায্য করতে। রহমত এই চিঠি পেয়ে রেবেকাকে দেখিয়েছে । রেবেকা বলে , ওকে চিঠি দিয়ে বলো ফ্যাক্টরিতে কাজ পাওয়া যাবে।
পর দিন রহমত মোশারফকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ,রেবেকা সীমাকে অনুরোধ করেছিল তোমার জন্য। তাঁরা জানিয়েছে ফ্যাক্টরিতে কাজ আছে । আমি তোমার জন্য ফ্যাক্টরি কাজ অনুমোদন করি না । তুমি ভেবে দেখতে পারো। আমার মতে তুমি আরও কিছু দিন চেষ্টা করে দেখো।

মোশারেফ বাড়িতে বসে থেকে কি করবে বুঝতে পারছে না । কাজে-ই সে মায়ের সঙ্গে আলাপ করে বলেছে যে যাই কিছু করি ঢাকা থাকলে এখানে সেখানে দরখাস্ত করে চাকরি পাল্টানো যাবে। কাজেই সে মামার চিঠি পেয়ে পুনরায় ঢাকা এসে রেবেকার সঙ্গে আলাপ করে, ” মামী ,আমি বসে থেকে কি করবো? বরং ফ্যাক্টরিতে কাজ নিয়ে এখানে সেখানে দরখাস্ত করি। এতে আমার সময় ভালো যাবে। ” রেবেকা মোশারফকে নিয়ে সীমা মাসুদের সঙ্গে দেখা করে বলে এ আমার ভাগিনা । মাসুদ সাহেবকে বলে ওকে যেখানে সম্ভব লাগিয়ে দিলে খুশি হই। সীমা বলে আমি মাসুদকে বুঝিয়ে বলবো।

দুই -তিন দিন পর মাসুদ সাহেব ওকে তাঁর হেড অফিস গিয়ে দেখা করার জন্য বলেছে। মোশারেফ পর দিন সকাল সকাল মতিঝিল তাঁর অফিসে গিয়ে মিস রুবিনা, এসসিটেন্ট এক্সেকিউটিভ অফিসারের অফিসে গিয়ে সালাম দিয়ে বলে, বড়ো সাহেব আমাকে দেখা করতে বলেছেন । রুবিনা বলে আপনি বসেন এবং রিসেপশনিস্টকে বলে এক কাপ চা দেয়ার জন্য। রিসেপশনিস্ট চা দিলে ও বসে বসে চায়ের পেয়ালায় মুখ দিয়ে নিউসপেপার দেখে। কিছুক্ষন পর মাসুদ সাহেব ওকে ডেকে পাঠায়। মাসুদ সাহেবের অফিস অত্যন্ত জাঁকজমক পূর্ণ । মোশারেফ সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । মাসুদ সাহেব জরুরি টেলিফোন ছেড়ে বলে, তোমার নাম কি ?
স্যার, আমার নাম মোশারেফ।
তোমার কাগজ পত্র কোথায় ?
সে কাগজ পত্র সামনে এগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মাসুদ সাহেব বলে তুমি বস। কাগজ দেখার পর বলে, তুমি কাল থেকে আমার টঙ্গী ফ্যাক্টরীতে অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করবে। মাসুদ সাহেব কাগজে লিখে দিয়ে টেলিফোনে সেক্রেটারি আব্দুর রাশিদ সাহেব কে ডেকে বলে ওকে এপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে টঙ্গী আমাদের ফ্যাক্টরিতে পাঠাবেন, কাল থেকে কাজ করবে।

রাশিদ সাহেব মোশারফকে বলে আপনি বসুন চিঠি নিয়ে যাবেন। চিঠি টাইপ হলে রিসেপশনিস্ট দিয়ে বড়ো সাহেবের অফিসে দস্তখত করার জন্য পাঠায়। বড়ো সাহেব সঙ্গে সঙ্গে চিঠি দস্তখত করে পাঠিয়ে দিলে রাশিদ সাহেব এক কপি মোশারফকে দিয়ে বলে কাল সকাল ৮টার দিকে অফিসে গিয়ে রিপোর্ট করবেন।
মোশারেফ রশিদ সাহেবকে সালাম দিয়ে চিঠি নিয়ে বাসায় গিয়ে রেবেকাকে দেখায় এবং বলে আমাকে অফিসের কাজে নিয়োগ করেছে। রেবেকা বলে তোমার মামাকে দেখাবে । বিকেলে রহমত কাজ থেকে ঘরে আসলে মোশারেফ ওর চাকুরীর চিঠি দেখিয়ে বলে মামা আমি অফিসে কাজ পেয়েছি। রহমত চিঠি দেখে বলে বেশ ভালো অফার পেয়েছ। কখন কাজে যোগ দেবে ?
মোশারেফ বলে ,বড়ো সাহেব আমাকে বলেছেন কাল সকালে টঙ্গী গিয়ে যোগদান করতে। রহমত বলে ঠিক আছে , ভালো কাপড় পড়ে সকাল সকাল চলে যাবে। মোশারেফ একটা শার্ট ও প্যান্ট দোকান থেকে ইস্ত্রি করে সকালের জন্য তৈরী করে রেখে বাহিরে গিয়ে মিষ্টি নিয়ে ঘরে আসে। রেবেকা বলে তোমার টাকা পয়সা নাই, কেন মিষ্টি আনতে গেছো?
সাকিলা বলে, খুব মজা মোশারেফ ভাইয়ার চাকুরী হয়েছে এবং শুধু মিষ্টি খাইলে চলবে না । চাইনিজ খাওয়াতে হবে। রেবেকা বলে চুপ কর , তোর জিব্বা অনেক বড়ো ।
ক্রমশ:

পূর্ববর্তী নিবন্ধBGGT Trading and Services এর শুভ সূচনা
পরবর্তী নিবন্ধলজ্জা এবং দুই কান।
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন