কৃতজ্ঞতার আর কোন শেষ নেই আমার জীবনে–!

ঐ তালিকায় আজ নূতন করে যোগ হলেন ফ্যাক্টরির পরিচালক বোর্ডের সদস্যগণ।
বিকেলে আমাকে দু’মিনিট সময় দেয়ার জন্যে।

বোর্ড রুমে ডেকে নিয়ে বললেন—
তোমার দুর্ঘটনাটা ইচ্ছাকৃত নয়, তাই তোমার চাকরিটা এখনও থাকাছে!
তবে তোমার মাসোহারাটা একটু কমে যাবে!
আমরা যে ভাবে হিসেব করেছি তা হলো—
মস্তিষ্কের জন্যে তোমাকে প্রতিমাসে দেয়া হতো ২০০০ টাকা
প্রতি হাতের জন্যে ১৫০০ করে ৩০০০ টাকা
প্রতি পায়ের জন্যেও একই হিসেবে মোট ৩০০০ টাকা
আর তোমার শক্তিশালী পেশীর জন্যে ৫০০ টাকা বোনাস,
সব মিলিয়ে ৮৫০০ টাকা।
বোনাসটা এখনো থাকছে তবে, একটা হাত নেই বলে–
পূর্বের বেতন থেকে তুমি এখন প্রতিমাসে ১৫০০ টাকা কম পাবে
অর্থাৎ, এখন থেকে তোমার সর্বমোট মাসিক বেতন হবে ৭০০০ টাকা
আর হ্যাঁ– এখন থেকে তো তুমি আর মেশিনে কাজ করতে পারবে না,
তাই তোমাকে ফাইলিং ডিপার্টমেন্ট এ ট্রান্সফার করা হলো।

আমি কিছু একটা বলতে গিয়েও কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে চোখে জল এসে পড়লো!
শুধু বললাম আপনারা যা ভালো বুঝেন স্যার–
শহীদ স্যার বললেন ঠিক আছে তাহলে এখন তুমি আসতে পারো
আর কাল থেকে ফাইল সেকশনে আকবর সাহেবের সাথে কাজ করবে।

আমি বেরিয়ে আসলাম!
বহু বছরের পরিচিত রাস্তা ধরে হাঁটছি—
সবই সেই আগের পুরনো,
তবু অজ্ঞাত কোন কারনে সব কেমন অপরিচিত লাগছে!?
মনে হচ্ছে এ পৃথিবী আমি আগে কখনো দেখিনি, সব নূতন!
মনটা খুব বেশী এলোমেলো, অনেকটা শংকিত ও!
সেই ছোট বেলা থেকেই–
কতো উছিলায়, ছুতো ছাতায় ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এসেছি–
হাতটা কাটা পড়ে, কিন্তু জীবনটা বেঁচে যাওয়ায় ও—
তার কাছে কৃতজ্ঞতার আমার কোন শেষ নেই-!
তারপরও মনটা বেশ বিক্ষিপ্ত, জীবনের ব্যবচ্ছেদটা কি এভাবেই—?

বাড়ী ফেরার পথে যে বৃক্ষটির ছায়ায় প্রায়শঃই ক্লান্ত শরীরটাকে জুড়িয়ে নিতাম,
অনেকটা অজান্তেই তার নীচে এসে বসি
আজ প্রথম মনে হলো,
এই এতোটা বছর—
আমি শুধু নিয়েই গেছি এই বৃক্ষের কাছ থেকে
কিন্তু কোনদিন কোন কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিনি তার কাছে!
সেই সব কৃতজ্ঞতা একত্রিত করলে আজ অংকে তার মূল্য কতো হবে!?

মনটা আবার অস্থির হয়ে ওঠে খুব,
উঠে পড়ে শহরের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকি—
খেলার সরঞ্জামাদি বিক্রি করে এমন একটা দোকান খুঁজে বেড় করতেই হবে
জীবনে একবার অন্ততঃ যাচাই করতে চাই—
‘এই মাথার সাইজ একটা ফুটবলের মূল্য ২০০০ টাকার বেশী কি-না!?’

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন