(গল্পের চরিত্র ও ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ কাল্পনিক হলেও বিষয়বস্তু বাস্তবধর্মী)

তিথি তমালের ভাবসাব ঠিক বুঝে উঠতে পাচ্ছে না, মাঝে মাঝে এজেন্সি থেকে কাজে না ডাকলে তমাল মুখ পাকস্থলীর মতো করে বসে থাকে। একটু পর পর বাহিরে যেয়ে ভুস ভুস করে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে আসে। মুখে সারাক্ষন এ দেশ নিয়ে বদনাম করে বলে, ‘বুঝলে তিথি প্রবাসে পরগাছা হয়ে থাকার কোনোই মানে হয় না, তার চেয়ে চলো দেশের ছেলে দেশেই ফিরে যাই। একবার মনে হয় এদের ইমিগ্রেশন মিনিস্টারের পাছায় লাথি দিয়ে বলি, শালা চাকরি দিতে পারবি না তো এনেছিলি কেন? খালি একবার কোনোরকমে কানাডিয়ান পাসপোর্ট হাতে পাই, তারপরে পগার পার।’ তমালের এই স্টেজ হচ্ছে ডিপ্রেশন এপিসোড।

আবার এজেন্সি থেকে পর পর কয়েকদিন ডাকলে, শুক্রবার এজেন্সি থেকে পেমেন্ট নিয়ে এলে সেদিনই সন্ধ্যায় পাড়ায় পিজ্জা স্টোরে অলিভ, টমেটো, মাশরুম টপিং দেওয়া এক্সট্রা লার্জ সাইজের পিজ্জায় কামড় দিতে দিতে তমাল বলবে, তিথি বুঝলে, আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর মধ্যে বেহেস্ত বসায়ে রাখছে, বেকার ভাতা, চাইল্ড বেনিফিট, মন চাইলে কাজ করো, মন না চাইলে ঘরে বসে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখো, দুধে এক ফোটা ভেজাল নাই, রাস্তা ঘাটে গাড়ির হর্ন নাই, হেলথ কার্ড দেখিয়ে ফ্রি চিকিৎসা, কপালগুনে এসব দেশে এসেছি তিথি, একবার যখন এখানে এসেছি এখানকার মাটি কামড়ে পরে থাকবো। বয়স কতইবা হয়েছে চাইকি আরোও দুই একটি বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে নিবো, এদেশে একেক বাচ্চা মানে সোনার ডিম, কাড়ি কাড়ি চাইল্ড বেনিফিটের টাকা। আমরা ভালো চাকরি পাবো না তো কী হয়েছে, আমাদের তিতাস দেখবে ঠিক ঠিক পড়াশুনা শেষে এখানকার সাদা মেমসাহেব বিয়ে করে এদেশেই সংসার পেতে থাকবে, তখন দেখবে এদেশ ছেড়ে আর যেতে ইচ্ছা হচ্ছে না। এসব হচ্ছে তমালের আরেক রকম এপিসোড।

কানাডা সম্পর্কে তিথির দৃষ্টিভঙ্গি তমালের মতো এমন এপিসোডিক স্টাইলের না, তমালের মতো কানাডা বিষয়ে চিন্তা চেতনা উঠা নামা করে না, তিথি মনে করে, কিছু পেতে হলে ত্যাগ করতে হয়। আর সেই ত্যাগের কথা বার বার ভেবে মনে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হতে পারে না। সব জেনে শুনে অটিস্টিক ছেলে তিতাসের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উন্নত জীবন যাপনের কথা ভেবে ওরা এদেশে এসেছে, ধৈর্য ধরে থাকলে একটা না একটা কিছু হবেই, এখানে এতো মানুষ করে খাচ্ছে তাদের হবে না কেন ? জীব আর জড়ো পদার্থের মধ্যে অনেক পার্থক্যের অন্যতম একটি হচ্ছে অভিযোজন (Adaptation ), যার মানে হচ্ছে পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া। নিউকামারদের এটি মেনে চলাই হওয়া উচিত মূল মন্ত্র।

তমাল ও তিথীরা নতুন করে বাসা ভাড়া খোঁজা নিয়ে খুবই বিপদের মধ্যে আছে। যে কয়েকটি বেজমেন্ট ভাড়ার খোঁজ পেয়েছিলো বাড়িওয়ালারা যেই শোনে সোশ্যাল এসিস্টেন্টের কথা অমনি এটা ওটা কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে যায়। কদিন আগে এক বেজমেন্ট প্রায় ঠিক হয়েছিল। বাড়ি ওয়ালা আফ্রিকান বংশোভূত। সারা বাড়ি কেমন যেন একটা বিশেষ বোটকা গন্ধ। তমালরা সেটাও মেনে নিয়েছিল, কিন্তু বাড়িওয়ালার চাহনি ভালো ছিল না, কেমন যেন ড্যাব ড্যাব করে তিথির দিকে সারাক্ষন তাকিয়ে ছিল। তিথি বললো, ‘মরে গেলেও এ বেজমেন্টে থাকবো না।’ তমাল তিথির কথা ভেবে আর এগোয়নি।

এদিকে, হাতে সময় নেই, ফেব্রুয়ারির এক তারিখ থেকে সোবহান সাহেবের এই বেজমেন্ট ছেড়ে দিতে হবে।  বাড়ির সামনে ইতিমধ্যে ‘Sell’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রত্যেক দিনই দুই একজন ফ্যামিলি বাড়ি কেনার জন্য বাড়ি দেখতে আসছে। এ আরেক বাড়তি ঝামেলা, ঘর বাড়ি পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখতে হয়। অবশ্য, বাড়ির যে একশচুম্বী দাম হয়তো দুই এক দিনেই বিক্রি হয়ে যাবে। বাড়ি বিক্রি করে লাভের টাকা পয়সা নিয়ে সোবহান সাহেবরা মহা আনন্দে মেয়ের বাড়ি ফ্লোরিডাতে পাকাপাকি ভাবে থাকার জন্যে চলে যাবে। সমস্যা যত হবো নিউ ইমিগ্রান্ট তমালদের।

তবে, ভালো খবর হলো, সোশ্যাল এসিস্টেন্টের অফিসের কেস ওয়ার্কার মহিলা মিশেলের সাথে ডিটেলস আলাপ করায় গতকাল মিশেল ফোন করে বললো, ‘তোমাদের জন্য সুখবর আছে, আমাদের ডিরেক্টর তোমাদের নতুন জায়গায় বাসা ভাড়া বাবদ Discretionary Benefits থেকে moving cost হিসাবে ছয় শত ডলার এবং Housing  Stabilization Fund (HSF ) থেকে এক কালীন এক হাজার ডলার অনুমোদন করেছে।’ তমাল টেলিফোনে মিশেলকে থাঙ্কস জানিয়ে ভাবতে থাকে তার স্বপ্নের ইমিগ্রেশন নিয়ে এই কানাডাতে আসার পর চাকুরী না পেয়ে মোহভঙ্গ হয়ে এদেশের সরকারকে কতইনা গালমন্দ করেছে, অথচ এসব দেশে সরকার থেকে আর্থিক অসচ্ছল মানুষদের জন্য কত সুবিধাই না দিয়ে রেখেছে যা বাংলাদেশের সাথে তুলনাই করা যায় না।

গত মাসে তিথি তার বাবাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে সারাক্ষন কেবল মন মরা হয়ে থাকে। তিথির মন ভালো রাখার জন্য তমাল মাসে মাসে দশ ডলারের চুক্তিতে আই পি ডিজিটাল বক্স নিয়েছে, এতে করে বাংলাদেশ, ভারতের অনেক জনপ্রিয় চ্যানেল দেখা যায়। তিতাসও খুশি, এই ডিজিটাল বক্সের কল্যানে ক্রিকেট খেলাও দেখা যায়। ওদিকে বাবা মারা যাওয়ার চল্লিশ দিনও হয়নি তিথির ছোট ভাই মন্টু বাড়িতে ডেভেলপার ডেকে নিয়ে এসে কি সব মাপজোখ করে গেছে। তিথির দুঃখ, এসব খবর সে শুনেছে মায়ের কাছ থেকে, অথচ বড় বোন হিসাবে মন্টু তাকে একটি কথা বলা প্রয়োজন মনে করলো না। বিয়ের পরে ভাই বোনের সম্পর্কগুলি এমনিতেই কেমন যেন ফিকে হয়ে আসে, তারমধ্যে আবার বিদেশ গেলে তো কথাই নাই।


আজ সকাল থেকে তমাল প্রচন্ড ব্যস্ত। তমালের বাল্যবন্ধু পরাগের তিন বেডরুমের এপার্টমেন্টে আজ বিকালেই তোমালদের উঠার কথা। তমালদের আর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। গত পরশুদিন তমালের বন্ধু পরাগ তার স্ত্রী বকুলকে নিয়ে তমালদের বাসায় এসেছিল। পরাগ তমালদের এই পরিস্থিতিতে নিজেদের সাথে সাবলেটে থাকার প্রস্তাব দিয়ে বললো, ‘দোস্ত তোদের যদি অসুবিধা না হয় আমাদের দুই বেড রুমের কন্ডোমিনিয়ামে উঠে পর। মনে কর, সোশ্যাল এসিস্টেন্টে  থেকে বাসা ভাড়ার জন্য যে এমাউন্ট পাবি ওখান থেকে আমাদের পাঁচশো ডলার দিস, ওতেই হবে, তোদের ছেলেকে কষ্ট করে লিভিং রুমে থাকতে হবে, পারবি না?’ খুশিতে তমালের মুখ চিক চিক করে উঠলো, ‘দোস্ত পারবো না মানে, তুই আমাদের জন্য যা করে যাচ্ছিস এসব যে কীভাবে শোধ দিবো, এ জনমে বোধহয় আর হবে না রে।’ পরাগ সঙ্গে সঙ্গে বললো, ‘এভাবে বলছিস কেন, আমি তো আর তোকে মাগনা থাকতে দিচ্ছি না আমরাও দুটা পয়সা পেলাম, তোদেরও একটু সুবিধা হলো দুই বন্ধুর জন্যই WIN-WIN ব্যাপার।’ পরাগ হয়তো ঠিকই বলেছে, কাছের মানুষের সাথে একই ছাদের নিচে বসবাস করা একরকম ভাগ্যের ব্যাপার। তাই দুই বন্ধু এই প্রবাসে এক সাথে পরিবার নিয়ে ভাগাভাগি করে থাকার সুযোগ আনন্দ চিত্তে সম্মতি হয়েছে। বোকা বন্ধুরা জানে না এতে করে দুই বন্ধুরই আর্থিক যতটা না সাশ্রয় হবে তার চেয়ে ঢের ক্ষতি হবে বন্ধুত্বের।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তমাল, তিথি বাড়ি ছেড়ে দেয়ার গোছগাছড়া করে যাচ্ছে। তমালদের সাথে ওদের বর্তমান বাড়িওয়ালা সোবহান সাহেবও প্রচন্ড রকম ব্যাস্ত। সোবহান সাহেব উনার সবুজ রঙের ডজ ক্যারাভ্যান গাড়ির ছাদে তিথিদের দুইটি ম্যাট্রেস নাইলনের দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিচ্ছেন। তিথিদের স্বল্পকালীন সময়ের সংসারের সামান্য আসবাবপত্র এটা ওটা সংসারের দরকারি জিনিস সোবহান সাহেবের ও বন্ধু পরাগের গাড়িতে ইতিমধ্যে লোড করা হয়েছে। সোবহান সাহেবের স্ত্রী রাহেলাকে জড়িয়ে ধরে বিদায়ী কথাবার্তা বলছেন। ‘মা, এই অল্প কয়দিনে তোমাদের সাথে মেলামেশা করে যা বুঝতে পেরেছি, তোমরা অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু আল্লাহর এই দুনিয়া খুব অদ্ভুত রে মা, আল্লাহ পৃথিবীতে ভালো মানুষদের অনেক পরীক্ষা নেন। আমার বিশ্বাসঃ তোমরা এই প্রবাসে সব কষ্টের পরীক্ষায় পাশ করবে, তোমরা দুই জন্যেই শিক্ষিত, দুই জনেরই একটা কিছু হয়ে যাবে, শুধু সময়ের ব্যাপার। মন শক্ত করে কোনোরকম বছর দুয়েক পার করে দাও দেখবে সব ঠিক ঠিক গুছিয়ে নিয়েছো, দেখবে অস্তে অস্তে দেশের মায়া কেটে যেয়ে এদেশ ছেড়ে যেতেই ইচ্ছা হচ্ছে না।’

কিন্তু সোবহান সাহেবের স্ত্রীর ভবিষদ্বাণীকে অগ্রাহ্য করে পরাগদের বাসায় উঠার সপ্তাহ খানিক যেতে না যেতেই তিথি তমালেরা বুঝে ফেলেছে বন্ধুর সাথে সাবলেটে থাকার সিদ্ধান্তটা সঠিকছিলো না। বন্ধুত্ব বা সুসম্পর্ক টিকে রাখতে হলে বাউন্ডারি মেইনটেইন করে চলতে হয়। খুব কাছে ক্রমাগত থাকলে মানুষের যাবতীয় দোষ গুনের বিষয়াবলী প্রকাশিত হয়ে নতুন করে বন্ধুত্বের মাঝে বা সম্পর্কের মাঝে ঝামেলা তৈরী হয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানাবিধ কমিটমেন্ট ও দায়িত্ববোধের তাড়ণা থেকে সেই দোষ ত্রুটি গুলি মানিয়ে চলার সামাজিক রীতি থাকলেও বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝে তা অনেক অনেক উঁচু দেয়াল তৈরী করে, যেমনটি ঘটলো এই প্রবাসে দুই বন্ধু তমাল ও পরাগের সম্পর্কের মাঝে।

যেদিন ওরা প্রথম এসেছিলো সেদিন রাতে পরাগ অনেক সময় নিয়ে হট শাওয়ার নিয়েছিল। শাওয়ার কার্টেইন ঠিক মতো ছড়িয়ে না দেয়ায় বেশ খানিকটা পানি বাথট্যাবের বাহিরে সিটকে পরে একাকার অবস্থা। সেই পানি গড়িয়ে নিচের এপার্টমেন্টের ছাদ চুঁয়ে চুঁয়ে নিচে পড়ে নিচের এপার্টমেন্ট থেকে কমপ্লেইন এলো। পরে পরাগ রিপিয়ারিং এর খরচ দেয়ার কথা বলে বিল্ডিং এর ম্যানেজমেন্টের কাছে যেয়ে ব্যাপারটি নেগোশিয়েট করে এসে রাতে বন্ধুকে ডেকে বললো, ‘দোস্ত, বাথরুমে পানি টানি একটু সাবধানে ইউজ করিস, বেজমেন্টে ছিলি সেখানে সমস্যা হয়নি, কিন্তুই এসব হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে একটু পানি মেঝেতে পড়লে নিচে গড়িয়ে পরে, তাই একটু সাবধানে থাকিস, আমারই ভুল হয়েছে, আগে থেকে সাবধান করে দেয়া উচিত ছিল।’

পরের সপ্তাহে আরেক ঘটনা ঘটলো। তমাল ইন্ডিয়ান গ্রোসারি থেকে হাতে বানানো ফ্রোজেন রুটি নিয়ে এসেছিলো। তিথি সকাল বেলা সেই রুটি সেঁকতেই ক্যালেংকাৰী কান্ড বেঁধে গেল। চুলার আচ একটু বেশি ছিল। একেবারে স্মোক ডিটেক্টর বেজে সারা ফ্লোর হৈচৈ অবস্থা। ভাগ্য ভালো পরাগরা বাসায় ছিল, পরাগ, বকুল তাড়াতাড়ি জানালা খুলে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বাতাস দিতেই সব ঠান্ডা। বকুল তিথিকে বললো, ‘আপা, মনে কিছু করেন না, সকাল বেলা পিক আওয়ার তো, তাই বলছিলাম রুটি টুটি না খেয়ে পাউরুটি খেলেই হয়, ইলেকট্রিক বিল কিছুটা সাশ্রয় হলো , এই আরকি। এর উত্তরে তিথি শুধুমাত্র ‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে তাৎক্ষণিক রুটি ভাজা বাদ দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো।

সপ্তাহ দুয়েক পরে পরাগের এপার্টমেন্ট আরেকটি ঘটনা ঘটলো। তমাল পরাগের এখানে সপরিবারে সপ্তাহ দুয়েক হলো থাকা শুরু করেছে। ব্যাঙ্ক, কাজের জায়গা সব খানে এখানকার ঠিকানা দেয়ায় তমালদের নামে সব চিঠিপত্র এখানকার ঠিকানাতেই আসে। সেদিন সোশ্যাল এসিস্টেন্টের অফিস থেকে পরাগের নামে একটি চিঠি এসেছিলো, পরাগ সেটি পরে রান্না ঘরেই ভুল করে ফেলে এসেছে। চিঠিতে তমালের নামে ইস্যু করা এক হাজার এক শত একানব্বই টাকার চেকের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে $697 হচ্ছে বেসিক নিড বাবদ এবং $৪৯৪ হচ্ছে সেল্টার বাবদ। সমস্যাটি হয়েছে চিঠিটি পরাগের স্ত্রী বকুল পড়ার পরে স্বামীর সাথে ঝগড়া, ‘এই দেখো তোমার বন্ধু সরকার থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ এতগুলি টাকা পাচ্ছে অথচ তোমাকে দিচ্ছে মাত্র পাঁচশো টাকা, এটা কি ঠিক, সবারই তো সংসার আছে, দুইশো ডলার তো অনেক টাকা, তুমি কালকেই তোমার বন্ধুকে বলে দাও যেন বাড়ি বাড়া সাতশো করে দেয়, আমরাতো আনজুমানে মফিদুল ইসলাম খুলে বসিনি, টাকা পয়সা সবারই দরকার আছে।’

পাশের ঘর থেকে তমাল, তিথীরা সব শুনতে পাচ্ছে। পরাগ ফিসফিস করে বলছে,’ আস্তে কথা বলো, ওরা শুনতে পাবে, এমনতো না ওরা ফ্রি ফ্রি থাকছে, এখন ক্রাইসিস সময় যাচ্ছে পরে না হয় বাড়িয়ে দিবে।’ পাশের ঘরে তমাল ও তিথি পাশ ফিরে শুয়ে দীর্ঘ নিঃস্বাস ছাড়লো।

তবে সর্বশেষ যা ঘটলো তা আগের সব ঘটনাগুলিকে ছাড়িয়ে গেল। ঘটনাটি ঘটেছে মাত্র দুইদিন আগে। এখানে আসার পর থেকে বকুল তাদের প্রায় সাড়ে চার বছরের বিভাকে আর পাশের বিল্ডিংয়ে ডে কেয়ারে দেয় না। যেহেতু তিথি মোটামুটি সারাদিন বাসায় থাকে তাই, তিথিকে দায়িত্ব দিয়ে বকুল সকালে কাজে যায়। ক্রিস্টমাসের ছুটিতে স্কুল এমনিতেই বন্ধ। তিথির দায়িত্ব হইয়াছে বাচ্চাটিকে দেখাশুনা করা, খাবার দেওয়া ইত্যাদি। সেদিন তমাল কি কাজে যেন বাহিরে গেছে। বাসায় তিথি ও বুকুলদের বাচ্চাটি ছাড়া আর কেউ নাই। তিথি ফোনে মায়ের সাথে দেশে কথা বলছিলো। ওদিকে দরজা খোলা পেয়ে বাচ্চাটি একা সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাহিরে যেয়ে জ্যাকেট ছাড়া ঠান্ডার মধ্যে বরফ নিয়ে খেলছে। বাচ্চাটিকে এ অবস্থায় দেখে কেউ একজন নাইন ওয়ানে ফোন করে পুলিশে খবর দেওয়ায় পুলিশ এসে পড়েছে। হটাৎ করে তিথি জানালা দিয়ে বাহিরে এম্বুল্যান্সের শব্দ পেয়ে তাকাতেই দেখে বিভাকে এম্বুলেন্স করে নিয়ে যাচ্ছে। তিথি কেঁদেকেটে তাড়াতাড়ি তমালকে ফোনে জানালো।

পরে, চিলড্রেন্স এইড সোসাইটির (CAS ) এর সাথে অনেক ঝামেলা করে পরাগরা বাচ্চাটিকে ফিরে পেলোও পরাগ বকুলদের সাথে সাবলেটে থাকার পর থেকে ক্রমশঃ ইন্সিডেন্ট এর ঘটনাগুলির কারণে পরাগের নিউ ইমিগ্রান্ট বন্ধু তমালদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটি অনেকটাই ফিকে হয়ে এলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ“রেইকি” – স্পর্শচিকিৎসা-পর্ব ১
পরবর্তী নিবন্ধ“রেইকি”-স্পর্শচিকিৎসা-পর্ব ২
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন