মোশারেফ পরদিন  ভোরে  ধানমন্ডি থেকে ফার্ম গেট গিয়ে বাসে টঙ্গী শিল্প কার খানায়  পৌছে-ই বড়ো ধরনের  হোঁচট খায়। গেটের দারোয়ান তার পরিচয়  জানতে চায় । সে বলে,”  আমার নাম মোশারেফ, আমি কারখানার প্রধান কার্যালয় থেকে  নতুন চাকুরী নিয়ে  যোগদানের জন্য এসেছি।” দারোয়ান বলে আপনি এখানে দাঁড়ান আমি অফিসে খবর দিয়ে দেখি। সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে । কারখানার  শ্রমিক নেতা শাহাবুদ্দিন তার অন্যান্য শ্রমিক নেতাদের নিয়ে এসে বাধার সৃষ্টি করে, বলে  আপনি   কে ?  

সে বলে আমি মোশারেফ ।
আপনি কি জন্য এসেছেন ?
আমাকে হেড অফিস থেকে নতুন চাকরী দিয়েছে ।
হেড অফিস আমাদের মজুরী দিতে পারে না , এ দিকে আপনাকে চাকরী দেয় ।
সে ভয়ে কাঁপতে থাকে । কারখানার ম্যানেজার আতাউর রাহিম খবর পেয়ে গেটে এসে বলে দেখি কি হয়েছে?
গেটের দারওয়ান বলে স্যার, এই ছেলেকে বড়ো সাহেব পাঠিয়েছেন নুতন চাকুরী নিয়ে।
ম্যানেজার বলে তুমি ভিতরে এসো, এই বলে ওকে নিয়ে অফিসের দরজা বন্ধ করে দেয়।  

ম্যানেজার  মোশারফের কাগজ-পত্র দেখে হেড অফিসে টেলিফোন করে বলে স্যার, আপনি যে লোক পাঠিয়েছেন তাকে শাহাবুদ্দিন জয়েন করতে দিচ্ছে না । সে অন্যান্য শ্রমীক নিয়ে অফিস ঘেরাও দিয়ে রেখেছে এবং  শ্রমিকদের নিয়ে হৈ ছৈ শুরু করেছে।   শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয় নি ,  তাছাড়া শ্রমিকদের বর্ধিত ভাতা বন্ধ রয়েছে ,এ দিকে নুতন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। 

মাসুদ সাহেব বলেন শাহাবুদ্দিনকে টেলিফোন দাও। আতাউর রহিম বলে স্যার আপনি ধরেন আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি । সাহাবুদ্দিন সালাম দিয়ে বলে স্যার, আমাদের বেতন দেয়া হয় নি এবং গত এক বৎসর বেতন বাড়ানো হয় নি। এ দিকে আপনি নতুন  লোক নিচ্ছেন। মাসুদ সাহেব  বলেন, আমি তোমাকে এক ঘন্টা সময় দিলাম, এর মধ্যে এই ছেলেকে জয়েন করতে না দেয়া হলে  তোমার চাকরী টার্মিনেট করা হবে । সাহাবুদ্দিন বলে স্যার, আমি ওকে জয়েন করতে দিচ্ছি । আমাদের মজুরি  তৈরী করে পাঠিয়ে দিবেন।  মাসুদ সাহেব বলেন আমি দেখছি, ওকে জয়েন   করতে দাও। মাসুদ সাহেব রাগান্বিত স্বরে বলে, আতাউর রহিম  আমার হস্তক্ষেপ  ব্যতীত  তুমি  কোনো আজ সামলাতে পারো না , ওকে জয়েন  করতে দাও।  জ্বী , আচ্ছা । মাসুদ সাহেব টেলিফোন রেখে বলে চিফ একাউন্টেন্ট কে ডাক।

চিফ একাউন্টেন্ট দূর্গা বাবু গিয়ে বলে স্যার, আপনি আমাকে ডেকেছেন ?
মাসুদ সাহেব বলেন, গত মাসে কারখানার বেতন দেয়া হয় নি কেন?
স্যার, আপনি দেশের বাইরে ছিলেন এবং ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমান টাকা ছিল না । আমি যেখানে-ই থাকি আমাকে টেলিফোন করে বলেন নি কেন?
স্যার, আমি সেক্রেটারি কে বলেছি আপনার সঙ্গে আলাপ করতে। সেক্রেটারি কে ডাকেন । আব্দুর রশিদ সালাম দিয়ে বলে স্যার শ্রমিকদের মজুরি তৈরি করা হয়েছে। আমি বলছি ওদের মজুরি দেয়া হয় নি কেন?
স্যার, ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না, সে জন্য দেরি হয়েছে। মাসুদ সাহেব বলেন, আজ মাসের ৫ তারিখ, ওদের মজুরি দেয়া হয় নি, এটা ভারী অন্যায় । এখন-ই পাঠিয়ে দেন এবং এই মুহূর্তে আতাউর রহিমকে টেলিফোন করে বলেন দুই ঘন্টার মধ্যে মজুরি কারখানায় যাবে। জ্বী, স্যার।
মাসুদ সাহেব বলেন তেজগাও কারখানায় শ্রমিকের মজুরি কি দেয়া হয়েছে?
জ্বী, স্যার।
কারখানা শ্রমিকদের গত এক বৎসর মজুরি বৃদ্ধি হয় নি । দেখেন তো কত টাকা মাসে বাড়তি লাগে?
জ্বী, আচ্ছা

ঘন্টাখানেকের মধ্যে চিফ একাউন্টেন্ট মজুরি শিট ও  ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে টঙ্গী কারখানায় গিয়ে উপস্থিত হয় । শ্রমিক ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিন হাক- ডাক দিয়ে বলে,” চিৎকার না করলে মা  ও শিশুকে  দুধ দেয়  না” । অন্যান্য শ্রমিকদের চিৎকারে কারখানা মুখরিত হয়ে উঠে ” আমার নেতা, তোমার নেতা শাহাবুদ্দিন ভাই , শাহাবুদ্দিন ভাই  । শাহাবুদ্দিন ভাই যেখানে, আমরা আছি সেখানে, শ্লোগান দিয়ে যার যে মজুরী নিয়ে কাজে চলে যায়।  “

মোশারেফ ভয়ে ভয়ে উঁকি মেরে দেখে যা সে কোনোদিন ও জীবনে দেখে নি। এটা তার জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা।সে মনে মনে বলে, শ্রমিক  আন্দোলনের কথা শুনেছি, কিন্তু  কোনদিন দেখার সুযোগ হয় নি। কারখানা ম্যানেজার আতাউর রহিম মোশারফকে বলে ওদের দিকে তাকাবেন  না । নিজের কাজ করেন, ওরা আপনার কিছুই করবে না ।

বিকেলে সে কাজ থেকে বের হয়ে বাস স্টেশনে গিয়ে ভিড় ঠেলে বাসে উঠে দাঁড়িয়ে থেকে  ফার্ম গেট এসে টেম্পুতে গাদাগাদি করে বাসার কাছে এসে নেমে হেঁটে বাসায় গিয়ে ঢুকে। রেবেকা দেখে হেসে জিজ্ঞেস করে , তোমার  প্রথম দিনের অফিস কেমন লেগেছে  ? 

রহমান  বেড রুম থেকে এসে শুনে মোশারেফ কি বলে?

মামী, আর বলবেন না । কারখানায় ভয়াবহ অবস্থা ! শ্রমিক দল আমাকে গেট থেকে-ই বের করে দিতে চেয়েছিলো। রেবেকা বলে, তুমিতো অফিসে কাজ করবে শ্রমিক তোমার কি করবে,তুমি কি রকম কথা বল ? 

মোশারেফ বলে ওরা গত মাসের মজুরি  পায় নি, সে জন্য  আন্দোলন করতেছিলো।  শ্রমিক নেতা বলে কারখানা মালিক ওদের মজুরি দিতে পারে না, আবার নতুন লোক নিয়েছে   । কারখানা ম্যানেজার এসে আমাকে অফিসে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে হেড অফিসে টেলিফোন করার পর বড় সাহেব  শ্রমিক নেতাকে ধমক দেয়াতে শেষে ছেড়ে দিয়েছে।

তুমি কি জয়েন করেছো ?
হ্যাঁ, করেছি এবং কাজও করেছি তবে অনেক ভয় পেয়েছি।
রেবেকা বলে কাজ পছন্দ হয়েছে ?
হ্যাঁ।

রহমান  বলে সব কারখানাতে সমস্যা আছে । যেহেতু তোমাকে মাসুদ সাহেব কাজ দিয়েছেন,  কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না । মাসুদ সাহেব কারখানার মালিক এবং উনি যা বলবেন, তাই হবে। ঠিক আছে কাপড় ছাড় এবং হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খাও ।

রেবেকা ওকে চা -নাস্তা দিয়ে বলে খেয়ে বাহির থেকে ঘুরে এসো । ও খেয়ে হাটতে হাটতে রেস কোর্স  হয়ে  পাবলিক লাইব্রেরি গিয়ে  নিউস পেপার নিয়ে আজকের খবর দেখে। 

 রেবেকা রহমানকে   বলে, শুনো। রহমান এসে দাঁড়াতে-ই রেবেকা বলে সীমার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, ওর  আসা -যাওয়া অনেক কষ্ট হবে।  সে ইচ্ছা করলে কারখানা বিল্ডিং এ  থাকতে পারবে। ওখানে কোয়ার্টার আছে । আরও অনেকে মেস করে থাকে।  রহমান বলে ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো। এক সপ্তাহ থাকুক তার পর দেখা যাবে। রেবেকা বলে ঠিক আছে ।

মোশারেফ কিছু সময়  লাইব্রেরিতে বসে নিউস পেপার  ও  বই -পত্র ঘেটে বাহিরে আসার পথে আজিজের সঙ্গে দেখা । আজিজ বলে তুমি কি কাজে গিয়েছিলে? 

হ্যাঁ, আজ আমার প্রথম কাজ ছিল ।
কেমন লাগলো?
কাজ ভালো-ই , তবে শ্রমিক সমস্যা করেছিল,ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হ্যান্ডেল করেছে।
তুমি তো অফিসে কাজ করবে, ওরা কি করবে?
তা ঠিক ।

আজিজ বলে একটা রিক্সা নেই চলো । মোশারেফ বলে হাটতে ভালো লাগে। দুই জনে কথা বলতে বলতে চলে যাবো । বাসায় যাওয়ার পর রহমান জিজ্ঞেস করে তোমরা কোত্থেকে আসতেছো?

মোশারেফ বলে মামা আমি লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম এবং আসার পথে আজিজের সঙ্গে দেখা।

এই বাসার নিয়ম সন্ধ্যা ৮টা রাতের খাওয়া শেষ করে  রেবেকা একটু হাটা- হাটি, ও  চা খেয়ে বেডে যায় ।  ।  ছেলে-মেয়েদের খাওয়া টেবিলে রেখে দেয়  এবং ওরা খেয়ে দেয়ে সব গুছিয়ে রাখে। 

রেবেকার  জন্য সবার  সকালের নাস্তা তৈরি করা কষ্টকর। একে তো সকালে সবার নাস্তা খাওয়া, এবং দুপুরের জন্য  নিয়ে যাওয়া  । সে ভোর ৫টা বাজে ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে প্রার্থনা  শেষ করে রান্না ঘরে ঢুকে। এক দিকে রুটি বানানো, অপর দিকে ভাজি ও চা তৈরি করে টেবিলে দিয়ে, ভাগে ভাগে  সবাইকে দুপুরের খাওয়া দিয়ে,  নিজে  স্কুলে যায়।    এই করে-ই রেবেকা রহমানের  সংসার চালিয়ে আসছে। ওর শরীর দিনের পর দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। রহমান বা ছেলে-মেয়েরা যত-ই বলে, তুমি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ছো । কিন্তু সে বুঝতে চায় না । তাছাড়া বাহিরের লোক জন সদা সর্বদা  থাকে।   এতে রয়েছে বাড়তি ঝামেলা। ইদানিং সে একটা কাজের মেয়ে রেখেছে তাতে খানিকটা সুবিধা হচ্ছে । মেয়ে রাতে সব কিছু গুছিয়ে ঘুমুতে যায়।

মোশারফের জন্য টঙ্গী যাওয়া -আসা অনেক কষ্টকর । সে নিজ থেকে রেবেকার কষ্ট দেখে উপলব্দি করেছে যে মামীর অনেক কষ্ট হচ্ছে । দুই-তিন দিন যাওয়ার পর সে রেবেকাকে বলে ,” মামী, আমি টঙ্গী কারখানাতে চলে যাইতে চাই। এতে আমার আসা যাওয়ার সমস্যা ও টাকা পয়সা কম খরচ হবে। রেবেকা বলে তোমার যেভাবে সুবিধা হয় তাই করবে। পরে একদিন সে  টঙ্গী চলে যায়।

ছেলে-মেয়েরা উদ্বিগ্ন  মায়ের শরীর অনেক খারাপ । সে প্রায়-ই জ্বর, সর্দি, কাশি ও নানাহ  শারীরিক সমস্যায় জড়িত। ডাক্তার আজমল মাঝে -মধ্যে এসে দেখে যায় এবং বলে  তুমি কাজ ছেড়ে দাও এবং রেস্টে থাকো। কিন্তু রেবেকা কারো কথা শুনে না ।  সে সব সময় ছেলে-মেয়েদের জন্য চিন্তা করে। 

সাকিলা আজকাল রাফাতকে এড়িয়ে চলে।  গত কাল রাফাত   রাস্তার পার্শে দাঁড়িয়ে থেকে বলে ,” চলো, আমি তোমাকে কলেজে নিয়ে যাবো।” সাকিলার বড় ভাই মজিদ সে পথে বাড়ি থেকে সাকিলার পিছু পিছু আসতে ছিল এবং রাফাতকে দেখেছে। সাকিলা  রিকসা নিয়ে কলেজে চলে যায়।   মজিদ এসে রাফাতকে  জিজ্ঞেস  করে তুমি এখানে কি  জন্য এসেছো  ? 

সে মজিদকে দেখে হকচকিয়ে যায় এবং বলে আমি একটা কাজে এসেছি। মজিদ চুপ  থেকে ইউনিভার্সিটি চলে যায়। বিকেলে মজিদ সাকিলাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে, “সাকিলা, তুমি কি রাফাতকে পছন্দ করো?” 

সাকিলা বলে ভাইয়া তুমি কি সব বাজে কথা বলো। আমি ওকে পছন্দ করবো কেন?

  মজিদ  রেনুকে বলেছে রাফাত সম্পর্কে সাকিলাকে জিজ্ঞেস  করতে । মজিদ বলে তুমি সাকিলাকে বুঝিয়ে বল, আমরা তার বিয়ের ব্যবস্থা করবো । রেনু বলে , সাকিলা পড়াশুনা শেষ না করে কোনো দিন ও  বিয়ে করবে না । মজিদ রেবেকাকে বলে আম্মু, সাকিলা বিয়ে করবে না, আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু মানুষের  মনের কথা কিছুই বলা যায় না । সে জন্য ওরা সাকিলার কথা বিশ্বাস না করে ওর জন্য নানাহ দিকে ছেলে দেখা শুরু করেছে। 

সাকিলাকে বিয়ে দেয়ার জন্য পরিবারের সবাই উদগ্রীব হয়ে উঠেছে ।রহমান রেবেকার  অমতে কোনো কথা বলতে রাজি নয়। তবে সে মজিদের সঙ্গে বলেছে তুমি কি জানো সাকিলার মতামত কি? সে প্রাপ্তবয়স্কা  । তার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া কি ঠিক হবে? 

মজিদ বলে, আব্বু সাকিলার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া কাজ করছে। সে বলে রাফাতকে পছন্দ করে না । কিন্তু রাফাত তার পিছনে পিছনে আছে । আমরা সন্দেহ করছি যে সাকিলা সত্য কথা বলে না অথবা সে রাফাতকে তাড়াতে পারছে না। এ অবস্থায় ভালো ছেলে পাওয়া গেলে বিয়ে দিয়ে দিতে পারি। রহমান রেবেকা কে  বলে তুমি  সাকিলার  বান্ধবী রেনুকে জিজ্ঞাসা করো,  হয়তো সে  তার ব্যাপারে কিছু জানতে পারে। 

রেবেকা রেনুকে বলে তুমি কি সাকিলা ও রাফাতের ব্যাপারে কিছু জানো?

রেনু বলে আন্টি আমি  এমন কিছু খারাপ দেখছি না । সাকিলা এই মুহূর্তে বিয়ে করতে চায় না ।  সে বলে আমার দুই ভাই পড়াশুনা করেছে, এদিকে  আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য ওরা অস্থির। ঘরের মধ্যে দুই ধরণের নীতি কেন কাজ করবে ? 

রেবেকা বলে ওর বিয়ের বয়স হয়েছে । বিয়ে দিলে ও পড়াশুনা করতে পারবে। 

সাকিলা রেগে বলে আম্মু মেয়েদের বিয়ে দিলে আর পড়াশুনা হয় না । আমি মেয়ে দেখে, তোমরা আমার অমতে, আমাকে বিয়ে দিতে চাও । তুমি তো ভালো ছাত্রী ছিলে, আব্বুর সঙ্গে বিয়ে দেয়ার পর আর পড়াশুনা শেষ করতে পারো নি।  আমার ব্যাপারে কি ভাবে বলো যে বিয়ে দিলে পড়াশুনা করবো?

রেবেকা বলে, “ তুই আমার সঙ্গে মুখে মুখে কথা বলবি না ।” ঠিক আছে আম্মু তোমরা যা ভালো মনে করো তাই করো।  এই ব্যাপারে আমি আর কিছু বলবো না । 

আবিদ নামের একটা  এম এ   পাশ  ছেলের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে রেবেকার বান্ধবী সীমা । আবিদ  দেখতে শুনতে বেশ ভালো ছেলে । এই ছেলে ওদের জানা শুনা , মাসুদ সাহেবের ব্যবসায় কাজ করে। আবিদ ও তার মা একদিন এসে  সাকিলাকে দেখে ও  গেছে এবং তাদের  পছন্দ হয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু সাকিলার সামনে কোনো কথা বলতে কেউ সাহস পায় না ।

দেখতে দেখতে সাকিলার তৃতীয় বর্ষের অনার্স  পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং সে  এম এ শেষ পর্বে  ঢাকা উনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। সাকিলা বলে আম্মু ,আমার বাসায় পড়াশুনা ভালো হয় না, হলে থেকে পড়া শুনা করবো। রেবেকা আপত্তি করে নি । রেনু ও মাস্টার ডিগ্রির পরীক্ষা দিয়ে ফ্রি হয়ে এক স্কুলে কাজ করে। মাঝে মধ্যে রেনু এসে ওকে কিছুটা সময় দেয়  । 

রাফাত বিএ পাশ  করে ইলেক্ট্রিসিটির উপর ভোকেশনাল কোর্স করে একটা কোম্পানিতে কাজ করে । রাফাতের সঙ্গে সাকিলার এখনও যোগাযোগ রয়েছে। সে মাঝে মধ্যে এসে সাকিলাকে নিয়ে বাহিরে  ঘুরা ঘুরি করে।   রাফাত সাকিলাকে  বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে বলে আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছি না। তুমি যে টাকা বেতন পাও এ দিয়ে বাসা ভাড়া ও দু’বেলা খাবার ব্যবস্থা কি করতে পারবে? 

রাফাত বলে আমি  তোমাকে ভালোবাসি ।   সাকিলা বলে আমিও, তবে সব আশা পূরণ হয় না । 

রাফাত  যখন সাকিলার সঙ্গে কথা বলে তখন তার চোখের রং লাল এবং ধীরস্থির ভাবে না দাঁড়িয়ে একটার  পর একটা সিগেরেট খায় । সে    ষ্টার  সিগারেট খায় যা সাকিলা পছন্দ করে না । সাকিলা বলে যদি সিগারেট খাইবে, আমার আশা করবে না ।  রাফাত বলে তুমি কথা দিলে আমি সব কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করবো।  সাকিলা বলে সে দেখা যাবে।দেখতে দেখতে সাকিলার  এম এ  পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। সে সব কিছু গুছিয়ে বাসায় চলে এসেছে । কয়েক দিন রেস্ট নেয়ার পর সাকিলা ঢাকাতে একটা স্কুলে কাজ নিয়ে পরীক্ষার রেজাল্টের অপেক্ষা করে এবং সরকারি কলেজে চাকুরীর জন্য প্রস্তুতি নেয় ।

মজিদ ও আজিজ আবিদকে পছন্দ করেছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে ছেলে পক্ষ এসে  আংটি দিয়ে এনগেজমেন্ট করেছে। সাকিলা এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলে নি ।  পর দিন সে রাফাতকে বলে কাল আবিদ ও ওর মা এসে আমাকে এনগেজমেন্ট রিং দিয়ে গেছে, আমার বিয়ে ঠিক করা  হয়েছে। রাফাত অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে আমি এতো বৎসর তোমার পিছনে ঘুরেছি , আজ তুমি আমাকে এই কথা শুনাচ্ছো,  এই বলে হন হন করে চলে যায় ।  সাকিলা  এক দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে ।   

সাকিলা  মনে মনে বলে আমি কি করতে পারি?   

আম্মু অসুস্থ, তাঁকে কষ্ট দিয়ে  তাঁর মতের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারি না।  

আবিদ অফিসের কাজ শেষ করে বিকেলে এসে রেবেকাকে সালাম দিয়ে বলে  এ দিকে একটা কাজে আসছিলাম তাই আপনাদের দেখতে এলাম। রেবেকা বলে ভালো করেছো ,বস আমি চা পাঠাচ্ছি। রেবেকা চা নাস্তা তৈরি করে সাকিলাকে ডেকে বলে আবিদকে চা দিয়ে এসো । সে বলে আম্মু আমি পারবো না । তুমি গিয়ে দিয়ে এস এই বলে সে ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকে।  আর কি করা যাবে রেবেকা নিজে চা নিয়ে রহমানকে বলে তুমি গিয়ে ওর সঙ্গে চা খাও। রহমান ড্রয়িং রুমে গিয়ে বলে তুমি কেমন আছো?

আবিদ সালাম দিয়ে বলে আমি ভালো আছি। 

নাও চা খাও এই বলে ট্রে থেকে চা ও  চামচা   উঠিয়ে নিয়ে দুইজনে এই কথা সেই কথা বলে চা খায়। আবিদ কিছুক্ষন বসার পর বলে আংকেল সাকিলা বাসায় নেই ?

রহমান বলে কাজ থেকে এসেছে হয়তো ক্লান্ত, আচ্ছা বসো, আমি ডেকে দেই ।  রহমান সাকিলার রুমে গিয়ে দেখে সাকিলা শুয়ে আছে। রহমান বলে সাকিলা তুমি আবিদের সঙ্গে একটু বসে কথা বলো আমি বাহিরে যাবো এই বলে আবিদকে বলে তুমি বস, ও আসতেছে।    সাকিলা উঠে হাত মুখ ধুয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে সালাম দিয়ে বসে। রেবেকা এই সুযোগে দুই কাপ চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসে এই কথা সেই কথা  বলে  আবিদকে বলে,  তুমি বস রাতে খেয়ে যেও, আমি রান্না বসিয়েছি । আবিদ বলে না আমি আজ খাবো না ।  কিছুক্ষন বসে সাকিলার সঙ্গে আলাপ করে চলে যায়। সাকিলা  ওকে খানিকটা এগিয়ে দিয়ে গেট বন্ধ করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।  

রহমান খানিকটা   ঘুরে এসে দেখে আবিদ চলে গেছে এবং সাকিলা ঘুমিয়ে আছে। আজিজ বাহির থেকে আসার পথে আবিদের সঙ্গে দেখা এবং বলে চলেন বাসায় । ও বলে আমি তোমাদের বাসা থেকে আসতেছি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলে আবিদকে বিদায় করে আজিজ ঘরে ঢুকে।  

আবিদ সীমাকে বলেছে আন্টি আপনি সাকিলাকে একবার জিজ্ঞেস করেন । ওর মতামত জানার দরকার আছে ।  সীমা বলে কেন? 

আবিদ চুপ করে থাকে। সীমা বলে, আমি আলাপ করে তোমাকে জানাবো।

সে  এক দিন এসে রেবেকাকে জিজ্ঞেস  করে, সাকিলার মতামত কি নেয়া হয়েছে? 

রেবেকা বলে সাকিলা কোনো কিছুই বলছে না । সীমা  বলে তুমি ওকে জিজ্ঞাসা করে কথা বার্তা শেষ করো। শেষে এ নিয়ে যেন কোনো রকম হাসা হাসি না হয়। রেবেকা বলে আচ্ছা আমি ওকে জিজ্ঞাসা করবো।

ক্রমশ :  

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন