বই পড়ার যে আনন্দ আর গল্পের বই এর পৃষ্ঠার যে  সুগন্ধ সেটা এই ওন লাইনে নাই তবে যদি কোন দিন সুযোগ আমায় ডাকে ইনশাআল্লাহ সেদিন পৃষ্ঠার সেই মহিমাময় সৌন্দর্য আর সুগন্ধ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারবো। দোআ রাখবেন আমার প্রতি।  ভালোবাসা আমার মায়ের এবং পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি  |||  💙

ছোট্ট করে লেখা গল্প আকারে

উৎসর্গ আমার ” মা ” কে ,

____________________________________

১ম…..

নিকশ কালো অন্ধকার। মাঝে মাঝে ময়লা হলুদ ছোপ ছোপ।ব্যাকগ্রাইন্ডে নীল মাঝে সাদা সাদা ছিটে।একটা আবছা ধোঁয়াশা অবয়ব। এই মধ্য রাতে জনশূন্য রাজপথ আর একলা আকাশের মাঝে মিতালীর সাক্ষী হয়ে মৃদু ছন্দে হেঁটে হেঁটে চলে যাওয়া এক পুরুষ ।কে জানে তার গন্তব্য কোথায়?

আচ্ছা পুরুষের একটা নাম দেওয়া যাক। ধরা যাক তার নাম ইনেশ। কিছুদিন ধরে নামটা মাথায় ঘুরপাক দিচ্ছিলো। যাক আমার গল্পেই সে হয়ে গেলো। চোখ তার আর দশটা ছেলে বা পুরুষের মতই।গাড়ো কালো তবে এক শান্ত মায়া আছে। যেখানে তাকালে সমুদ্রে ঝাপ দিতে মন চাইবে। ছিপছিপে গরন। লম্বা ৫ ফিট ৭ ধরা যেতে পারে। পরনে ধূসর টি-শার্ট এর উপর সাদা ধবধবে শার্ট, হাত গুটিয়ে খোলা রাখা। সাথে গাড়ো নীল জিন্স।

হাঁটছে তবে চোখের দৃষ্টি যে কোথায় ঠেকেছে তা বলা মুশকিল। মনে হয় সে আসলে কিছুই দেখছে না। হয়ত তার মনের মাঝে চলছে অজস্র স্বপ্নের আঁকিবুঁকি। মৃদুমন্দ হাঁটার ছন্দ আর চোখের অনিদৃষ্ট দৃষ্টি দিয়ে তার মনের খবর বোঝা ভার।

মাঝরাতে আলো – আঁধারের জেনো সঙ্গীহীন, বন্ধুত্বহীন দের মেলা বসে।একলা আকাশ, স্বজনহীন রাজপথ আর ধূসর গাছগুলো অদ্ভুত নীরবতায় বলে যায় তাদের মনের কথা। নিরবতার কথা শুনতে হলে ফাঁকা রাজপথে হাঁটতে হয়, শহরবাসী সব ঘরে ফেরার পর।আসতে হয় খোলা আকাশের নীচে। বসতে হয় বুড়ো কোন গাছের ছায়ায়। যেখানে বক্তাও এক, শ্রোতাও এক।এমনকি ময়লা হলুদ ছোপ ছোপ আলো বিলানো ল্যাম্পপোষ্ট গুলো। এদের সাথে এই একাকিত্ব ভাগাভাগি করে নিতে কেউ যদী আসে তখন ধরেই নেওয়া যায় এর তার থেকে নিঃসঙ্গ একাকী মানুষ আর নেই। ইনেশ এমনই একজন। যার সব আছে আবার কিছুই নেই।

একঘেয়েমির সূতা টানতে টানতেই সে নিজেই জানে না আজ সে পালাতে গিয়ে কি হারিয়ে কোথায় দাঁড়িয়ে। হাতাশা থেকে পালিয়ে আছে না হাতাশা তার দিকে আরোও ধেয়েপেয়ে এসে বিদ্রুপ হাসি দিচ্ছে। সত্যি কি পারছে ইনেশ নিজেকে দূরে রেখে নিজে ভালো থাকতে। নাকি রাতের আঁধারে একটি বার হলেও মন চাইছে চিৎকার করতে… না যা হচ্ছে তা ভুল, ঠিক করতে চাই।।।।

নাকি ভুলটাকেই লালন করে বাঁচতে চাইছে। কিন্তু ভুলতো ভুলই। হত্যা করে কি বাঁচতে পারবে ইনেশ?

কোথাও তো এর মাশুল তোমায় দিতেই হবে….. কারন সমাজের চোখে হয়ত তুমি ভালো মানুষ, হয়ত তুমি নীতিবান, হয়ত তুমি কোথাউ কারো পথপ্রদর্শক। কিন্তু কোন কারো কাছে তুমি হত্যাকারী। তুমি খুনী।

আর আজ তাই তুমি একাকীত্বের জাল বুনে যাচ্ছ আঁধারে। তুমি খুনী, প্রতারক।।।

®২য়….

সিঁদুরে লাল তার ভীষণ পছন্দের ।বাহ্ আজ আকাশও সিঁদুর লাল জমছে।কাকতালীয় ভাবে মিলেছে আজ সেও পড়েছে একই রঙের জামা সাদা সালোয়ার আর ওড়না।

ছাদে উঠতেই যে সারি সারি গাছের টব গুলি আছে ওদের দেখে মনে হচ্ছে একটু বৃষ্টি চায় তারাও। রক্ত জবায় কলি ফুটেছে।রক্ত জবা বলতেই মনে পড়লো অনেকদিন হলো কবরস্থান এ যাওয়া হয় না। মকবুল চাচার খোঁজ নেওয়া হয় না। বেচারা টাকার জন্য এই ৭২ বছর বয়সেও কবর খোড়ার কাজ করে যাচ্ছেন। গতবার দেখা হওয়ার সময় শরীরটা ভালো ছিলো না। বলেছিলাম পরের দিন আসার সময় পাউরুটি আর কলা নিয়ে আসবো। কাল সবাই যখন ঘুমুবে তখন পালাবো। ভোর বেলার নিস্তব্ধতায় এক অসাধারণ লাগে জায়গাটা।

রক্ত জবা অনেকদিন যবত ও কোন ফুল দেয় না আমাকে। এবার দিবে হয়ত। টকটকে রঙ্গনের লাল গাড়ো উজ্জ্বলতায় মনে হচ্ছে ভাটা পড়েছে রোদের আলোয়। পাশ দিয়ে রজনীগন্ধা আছে শুধু অপেক্ষায় সময়ের। সাদা টগর প্রতিদিনই নতুন নতুন উঁকিঝুঁকি মারে। আর বেলীর তীব্রতায় তাকিয়েই সময় চলে যায়। অন্য পাশে লতানো অপরাজিতা। তার পাশ দিয়ে নানাজাতের মরিচ ফুটে মৃদু বাতাসে দুলছে। কত জাতের মরিচ। কাগজি লেবুর খবর নাই গাছটি শুধু বড়ই হচ্ছে। দিন দিন সন্দেহ হচ্ছে লেবু দিবে তো! বৃক্ষ মেলায় সেবার নিজের কাছে থাকা কিছু টাকা কুড়িয়ে গুছিয়ে কিনেছিলো। প্রতিবারেই বৃক্ষ মেলায় কিছু না কিনলে ভীষণ কান্না পায় বৃহ্নলার। মনে সংশয়, ঠকিয়ে দিলো না তো! হঠাৎ চোখের শান্ত স্বভাবে আকাশে তাকালো। আকাশের ভাব দেখে মনে হচ্ছে আজ ঝড় উঠবে।

সিঁড়িতে বসে এলো চুলে ভাবছে আর আকাশে কিছু একটা খুঁজছে।বরাবরই চুলের ধরন তার সুস্বাস্থ্য নয়, অল্প বয়সেও খুব যে ছিলো তা নয়, তবে ছিলো। আজকাল আর আগের মতন নিজের যত্ন নিতে মন চায় না।নিয়ে কি হবে? ভালো লাগা গুলো যে শুকিয়ে গেছে। হঠাৎ মনে হলো দূর থেকে কেউ তাকে দেখছে,ডানেবামে তাকিয়ে পুরাদমে নিশ্চিত হলো যে, না চোখের আর মনের ভুল। আজ কাল প্রায়ই এমনটা হয় বৃহ্নলার।

ও হো পরিচয় করিয়ে দেই বৃহ্নলার আমার গল্পের একটি অতি সাধারণ চরিত্র। যার মাঝে বাস করে অনেক কিছু আবার কিছুই নেই।।।

সচ্ছ আকাশে ছিটেফোঁটা কালো মেঘ। সিঁদূরে ভাবটা কেমন ফ্যাকাশে হচ্ছে, মেঘের আড়ালেই হয়ত সূর্য কখন ডুবে গেছে বুজতেই পারে নাই।

হঠাৎ করে পুরানো স্মৃতির কিছু মনে পড়ে আবার হারিয়ে যায়। ইদানীং এটা তার হচ্ছে আলো আর আবছায়া অন্ধকারের মতন।

কি জানি এমনটা হচ্ছে কেনো ? না না তাহলে তো আমাকে কারো সহযোগিতা নিতে হবে। কিন্তুু সবাই তো বুজবে না। তখন???

———-

নিচ থেকে কার জেনো গলার আওয়াজ উফ্, কোথাও যেয়ে শান্তি নাই। কেনো???

আমি চুপচাপ থাকলেও ডাকাডাকি, আবার চোখের সামনে কিছু দেখলে যদী কিছু বলি বলবে, অতো মুখ চালিয়ো না অপয়া। শকুনের মত চোখের চাহনি দিয়ে মুখ চালায়।

সামনের ঐ বটগাছের সাথে যে কখন লটকাবো কে জানে?

****

এই বটগাছ তুই তো আমায় নিবি বল… বল না…

তোর সাথেনা কথা বলতে আমার বেশ লাগে। বেশ না বেশ না, হ্যাব্বি জোশ লাগেরে… কেনো জানিস… তুই আমার কথা শুনিস কিন্তুু বকিস না। তোর ডালের সাথে যদী সক্ষতা করি আপত্তি আছে??? নাই তো বল।।।

চুপ তবে কি এটা সম্মতির লক্ষ্মণ ……

ওহ্ উত্তর এর আশায় থাকলাম।

নীচে নামতে নামতে কানে হঠাৎ ফোনের আওয়াজ। কে দিলো ফোন আজ? ইনেশ!!!!

এই ফোনটার অপেক্ষায় -প্রতীক্ষায় চাতক পাখির মত আছে বৃহ্নলা। দৌড়ে যেতেই বোঝা গেলো ওটা অন্য কারো।হঠাৎ মনে পড়লো তাইতো আমায় ফোন দেওয়াতো বন্ধ করেছে সেই কবেই ——- মনে মনে ভাবতেই তাকিয়ে দেখে ভাড়ার টাকা দিতে এসেছে এনোনিমাস। খৃীষ্টান ছেলেটি। বয়সে যথেষ্ট ছোট শুধু গায়েপায়ে কেমন পরিনত পুরুষ ভাব। ছেলেটির চাহনিটা জেনো কেমন শান্ত তবে তীক্ষ্ণ। এক তাকাতেই মনে হয় জেনো গিলে খাচ্ছে। সব সময় এড়িয়েও বাঁচার উপায় নেই কোন না কোন ভাবে দেখা হবেই। বড্ড বাজে লাগে। মানুষ চোখ দিয়েও যে…অসহ্য… সামনে পড়েই গেলো।

শয়তানটার নাম নিয়ে শেষ করা যায় না সামনে এসেই যায়।

কেমন আছেন? হুম ভালো। বলেই সরতে পারলে বাঁচি।

আজ সোডিয়াম লাইটের আলোটা জ্বলছে না বাসার গেটের সামনে পাশেরটা জ্বলছে। তাতে কি না জ্বলেও কথা তো বলাই যায়…

কি হয়েছে মন খারাপ তোমার? আমার তো তুমি নেই। তাই তুমিই আমার তুমি। রাগ করেছ আজ আসতে, তোমার সাথে কথা বলতে দেরী হলো বলে? তুমিই যে আমার কথা শুনো,আমাকে হালকা করো, আমার আমিকে বের করো। আমাকে মনের…..

ভাবতে ভাবতেই মনে পড়লো।

মন দিয়ে কথা শুনতো তারপর তার নিজস্বটাই চাপিয়ে দিতো।কেনো এমন করতে???

আর আরেকজন ছটফট করা মানুষ ছিলো।অতি ছটফটের কারনেই বেশি দূর যেতে পারলো না। অনেক আগেই ভুলে যাওয়ার কথা মনে পড়লো কেনো আজ ? আজকে একই সাথে মনে পড়তে হলো। হায়রে মন তুই তো শুনিস না কোন বারণ।

এই বৃহ্নলা একা একা নীচের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কার সাথে বিড়বিড় করছিস শুনি!

না না কার সাথে বলবো আমি? কি যে বলো না মা। তোর আচরণ কিন্তু মোটেও ভালো লাগছে না আমার। বাসার সবাই তোকে নিয়ে বিরক্ত। এটা কি আপনার বোধগম্য হয় না ???

মা তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেনো?

ছিঃ তোর দাঁত বের করতে লজ্জা করে না???

মা এখানে লজ্জা র কি হলো???

তোর তো সব শেষ হলো, আর কি বাকি…

মা শুরু করো নাতো ভাঙা রেকর্ড;

আমি ভাঙা রেকর্ড! তোর আজ এমন হওয়ার পেছনে……

মা আবার দয়া করবে আমাকে ; থামবে! আর নিতে পারছি না…

ওনাকে দয়া করতে হবে অপয়া কোথাকার…. মা তুমিও !

সব দোষ তাহলে কি আমারই ? ??

আমি কি বলি? মরলেও বেচে যেতাম। শোন বৃহ্নলা সবাই বলে… সমাজ বলে, কোথায় পালাবি তুই???

নাহ্ তোর কপালের… আর আমি ভাবি অন্য… আরো কি কি বলতে বলতে ভিতরে চলে গেলো।সারাটাক্ষন এর মধ্যে থাকা ভালো লাগছে না।

এই দাঁড়িয়ে আছিস বটগাছ। নিবি আমায় ? তোর সাথেই…

এই ভাঙা রেকর্ড কমপক্ষে পনেরো মিনিট যাবত চলবে।

মনের সাথে সাথে বাইরেও এক দমকা হওয়া সহ বজ্রপাত শুরু হলো।

৷ কালো আর আবছা নীলের মধ্যে বৃহ্নলা নিজেকে লুকাতে চাইলো। মনে মনে বললো এই অন্ধকার তুমি কি পারো না আমাকে নীলকালো মিশ্রনের ডুবিয়ে দিতে। তুমি কি পারোনা আমায় তোমার কাছে একটুকুন জায়গা দিতে ??? যা কেউ পারে না।

তুমি কি পারো না আমায় তোমার কালোনীলের মিশ্রনে আমাকে সবার মাঝ থেকে অদৃশ্য করতে???

৷৷৷৷৷৷৷৷ পারো না তো!!!

তুমিও কি তবে ঐ মুখোশধারীদের দলে, মায়া বাড়িয়ে চলে যাও।নিজের অজান্তেই মুখটা লুকালো হাতে।।। মনের সবটুকু দিয়ে ফিরে আসো, ফিরে আসো। বটের ডালে সখ্যতার আগে ফিরে আসো।।।।

®৩য়….

কল্পনার জগত থেকে আজ হয়ত তুমি বাস্তবের জগতে ভীষণ ব্যস্ত। তাই আজ আর তোমায় দেখতে পাই না, তোমার কথা শুনতে পাই না। তোমাকে অনুভব করতে পারি না। ছুটির দিনে তোমার ঘুমের মাঝে চা নিয়ে কাছে আসতে পারি না।নানা অজুহাতে চুলগুলো হাতের মুঠোয় নিতে পারি না। হঠাৎ করে পেছন থেকে জাপটে ধরে বলতে পারি না পড়ে যাচ্ছিলাম। মনের সেই আশংকা নেই তুমি বাড়ি ফিরবে নাকি দেরি হবে। মনের কোন আংশকা নেই আজ কেনো রাত হলো সেই ভেবে। মনের কোন উত্তাল ঢেউ নেই তুমি কোথায় আছো ভেবে। মনের কোন উত্তাপ নেই কতদিন দেখিনা ভেবে। অজস্র ভাবনায় ডুবতে হয় না!

তোমার কি প্রিয় আজ করে সারপ্রাইজ দিতে হবে ভেবে। মোবাইলের টুংটাং শব্দের ধ্বনিতে আচমকা তাকানোটাও বন্ধ হয়েছে, জানি ওয়াটস এ্যাপ – ভাইবার এ কোন ম্যাসেজ আসবে না ভেবে।

তোমার শেষ স্পর্শ ভেবে নীল আকাশে তাকিয়ে ভাবি বাহ্ বেশ আছি তো। জানি তোমার কিছুই আসে যায় না, তুমি আর তুমি এখন নও হয়েছে এক অজানা ছায়াবৃত আমার।।।

যেখানে যখন ইচ্ছে স্পর্শ করি, যখন ইচ্ছে ছুড়ে ফেলি, যখন ইচ্ছে আগলে জাপটে ধরি আর যখন ইচ্ছে রক্তাক্ত করি।

আমার আমিতে বাস করি আর আমিতেই তোমায় খুঁজে মরি। তুমি জানতেও————– পারবেনা কখনও জানতে চাওনি, চেষ্টা করনি, আজই জানবে কি করে। সব যে বিচ্ছিন্ন করে আমায় শেষ করে মেরুদণ্ড ভেঙে আমায় রাস্তায় ছুঁড়েছ। চিন্তাও করোনি আমার কি হবে ? এ স্বপ্নের কি হবে ? আমাদের কি হবে ?

শুধু চেয়েছ ভবিষ্যত…. আর ভবিষ্যত….

মিথ্যে কেউ বলেনি তোমায় ছায়াবৃত। এটা তোমার আর তোমায় ঘিরে মাকড়সার জালদের এক অকল্পনার বন্দনা। আমি সত্যি ই বলেছিলাম আর তুমি আজ অস্বীকার করে অজুহাত ধরে বাতাসে ছাই হয়ে উড়ে যাচ্ছ মিলিয়ে। ঘুরেফিরে কানে বাজছে সেই ভবিষ্যতের অপবাদ।

আজ তুমি ব্যস্ততার ভিতরেও ব্যস্ত। ভাবায় না কতটা ব্যস্ত…. ভাবায় কতদূর ঐ গ্লানি বয়ে ভুলতে হবে তোমায় ছায়াবৃত….

বড় উদাসীন লাগছে আজ। বড্ড উদসীন। ডায়রীটা বন্ধ করে চোখের দুপাতা এক করে বৃহ্নলা। আজ তাকে জিততে হবে। আজ তাকে ঘুমুতে হবে। কিন্তু অভ্যেস যে খারাপ হয়ে গেছে তার। কি করবে সে?

একা একা বড্ড আজব লাগে। তাতে কি কিন্তু আজবটাকেই মানিয়ে নিতে যে হিমসিম খাচ্ছে বৃহ্নলা।

চোখের পাতা বুজে আসছে। ইনেশ….. আছো তো….

এখন থাকো। মনের আপ্রাণ চেষ্টায় বলছে ঘুম চাই ঘুম। আমায় ঘুম দাও।

®৪ র্থ….

অফিস থেকে ফেরার পথে ইনেশ অনেক দিন পর ড্রাইভারকে বললো, কবির ভাই গান চালান তো আর হ্যা এসিটা বন্ধ করেন। আমি গ্লাস খুলবো।

ঠোঁটে সিগারেট চেপে লাইটার হাতে নিয়ে আগুন ধরিয়ে তার ভিতর ডুবে যেতে যেতেই কানে ভেসে এলো….

আকাশেও অল্প নীল, ভুল হতো অন্তমিল

একা একা রং মিছিল ছিলে না যখন

মুঠোভরা মিথ্যে ফোন, ফিরে আসা ডাক পিয়ন

মিছিমিছি মন কেমন, ছিলে না যখন

ভালোবাসা দিন কতটা রঙিন, তা বুঝেছি তখন।।।

কন্ঠটা অরিজিৎ সিং এর বোঝাই যাচ্ছে। গানের কথাগুলো খুবই মন ছুঁয়ে যাওয়া।

কবির ভাই…… এই গান আপনি কোথায় পেলেন?

স্যার —- ম্যাডাম এই গানের সিডি কিনেছিলেন। কোথাও বের হলে এই গানটা ছাড়তে বলতেন। এর পরে কোন গান ছাড়া হয়নি বলে, গান দেওয়া মাত্র এটা বেজেছে।

ইনেশ কোন জবাব না দিয়ে একমনে সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে তাল মিলচ্ছে আর গানের লাইনগুলি শুনছে। আজ মন একটু অন্যদিকে নেওয়া দরকার। হোক না গানটা। চলছে চলুক। যা চাপ গেছে অফিস এ সাথে মাঝে যে বিধস্ত দিলগুলো পাড় করেছি তার থেকেও মন সরানোটা দরকার।

কবির ভাই……

জ্বী স্যার বলেন, কবির ভাই কিছুটা ভয়ে আছে। এই গানটা হঠাৎ বেজে উঠেছে। স্যার যদী রাগ হয়। স্যার তো সব মুছে ফেলেছে যতদূর দেখছে। আচ্ছা স্যার কি বাসার মধ্যে ও যা ছিলো সব ফেরত দিয়ে দিছে না কাউকে দিয়ে দিছে ? স্যার এমন মানুষ না, কিন্তু কেন এমন করলো?

কবির ভাই……

জ্বী জ্বী স্যার বলেন, শুনতেছি।

কি ব্যাপার সব ঠিকঠাক তো? বাসা ঠিক আছে? শুনেন বাসায় হোম মিনিস্ট্রি ঠিক না থাকলে সব সমস্যার শুরু হয়ে যায়।

জ্বী স্যার সব ঠিক। মনে মনে বলে…

(ধূর বেটা… ফাজিলের ধারি… নিজেরটা ঠিক রাখতে জানে না, পারে না। অন্যের উপদেশ দিবার আসে… যত্তসব ফালতু। শালা বেশি টাকা হলে এমনই হয়। )

…..

রাস্তায় কত মানুষ, সবাই ছুটছে যে যার গন্তব্যে। আবার এই রাস্তায়ই গভীর রাতে হয় অন্য রূপ। টুপুদের বাসায় যাওয়া হয় না বেশ কিছু দিন।

টুপুর ইনেশের ছোট বোন। ঝামেলা এড়ানো মানুষ। নামেই ছোট চলচলনে ভার আছে। টুপুরকে ছোট থেকে টুপু বলতে বলতে টুপুর বলে আর ডাকাই হয় না। গত শুক্রবার টুপু বাসায় যেতে বলেছিলো কিন্তুু ইচ্ছে করেনি। টুপুর মেয়েটাও অস্থির হয়ে আছে। এটাই হয় মামাকে দেখে না অনেকদিন। যাবো যাবো করে যাওয়া হয় না। এগুলো ও সামলাতো বেশ।

আচ্ছা টুপুকে বলতে হবে কিছুদিনের জন্য কোথাও বেড়িয়ে আসলে মন্দ হয় না। সময় পেলে গেলে ভালো না গেলে আমি নিজেই বেড়িয়ে পড়বো। একঘেয়েমি লাগছে যন্ত্রের মত….

শাহানাজ ভাইকে বলতে হবে আর ভাবীও বেশ মজার মানুষ। ওনারা দু’জনে পাখির মত উড়তে পছন্দ করে। সব কিছু তে তাদের ঝগড়া শুধু এই বাইরে ঘুড়তে যাওয়া বিষয় টা ছাড়া। উফফ এতো ঝগড়া করতে পারে ওরা আবার একজন আরেকজন ছাড়া এক সেকেন্ড ও না। কিছুক্ষণ পরপর কেউ না কেউ কারো খোঁজ নিচ্ছে। ১০/১৫ বছর ঝগড়া করেই কাটিয়ে দিলো। এ কেমন সংসার এমন ভাবতেই পারে না ইনেশ। ইনেশ এর মতে যা বলবা যুক্তি দিয়ে বলবা মেনে নিবে। যুক্তিহীন হলেই সে তার মত করে করবে।তাতে আরেকজন কষ্ট পেলে কি না তাতে তার কোন কিছু যায় আসে না / আচ্ছা এটা কি খারাপ দিক তার??হয়ত?কিন্তু সে তো পারে না।

মাঝেমধ্যে মনে হয় জেদটা বেশিই করে ফেলেছে। তাতে কি জীবনতো কারো জন্য থেমে থাকো না। জীবন আগেও থামেনি আজও তার জন্যে থামবে না, বরং আমার যে বিধস্ত করেছে তা আমি কাটিয়ে উঠেছি। আমি জিতেছি তুমি হেরে গেছো বৃহ্নলা। তুমি কোন ভ্যালু এ্যাড করতেই পারো নাই। ওর মতে একজন আরেকজন এর মধ্যে আবার কিসের ভ্যালু এ্যাড করা। কি জানি মতের মিল হয় না। কোনদিন হয় নাই।

তবে আমি জিতেছি। আমিই জিতেছি। তুমি হেরে গেছো। তুমি পারোনি। ……

স্যার,

স্যার বাসায় আসছেন তো নামবেন না?

ওহ্ চলে আসছি। যাক শুনেন কবির ভাই… কাল আপনার আসা লাগবে না। আমার দরকার হলে নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হবো। ওকে?

জ্বী স্যার।

মনে মনে বলে….

আমি আমার মত থাকতে চাই… আমি স্বাধীন… আমি স্বাধীন….

পাশের বাড়ির কুকুরটা ইনেশকে এতো দেখার পরও কেনো জানি দেখলেই ঘেউঘেউ… আর ইনেশও আছে ওকে দেখলেই ভেঙাবে।

কি ইনেশ সাহেব আজও রাত করে ফিরলেন?

আবিদ ভাই কাজ ছিলো।

বুঝি বুঝি বৌ বাড়ি না থাকলে এমনই হয়। ভাবীকে ফিরায় নিয়ে আসেন। আরে ভাই আপনি তো ঐ মেয়েটাকে নিয়ে সংসার করবেন। আপনার বাড়ির কথায় কান দিয়ে নিজের ক্ষতি নিজে কেনো করছেন?

আবিদ হচ্ছে পাশের ফ্ল্যাট এর বড় ভাইয়ের মতন। পরিচিত অনেকদিনের। নিষেধ ও করা যায় না, আবার এসব কথা বলতেও ভালো লাগে না ইনেশের।

আবিদ ভাই আমি ক্লান্ত। পরে কথা হবে।

আরে মিয়া তুমিখুব পিসলা আছো। আজ তোমার জন্য ই জেগে আছি মিয়া। তোমার বৌ কে শায়লা ফোন দিয়েছিলো। কথাও বলেছে। শুধু দায়সারা কথা নাকি বলেছে। ও শেষ বেলায় ফোন রাখার সময় নাকি আর কখনও জেনো তাকে ফোন না দেওয়া হয় সেটাও বলেছে।

আবিদ ভাই ঠিকই তো বলেছে। দেখেন আমি আসি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ইনেশ ভাবছে এতো কিছু হয়ে গেলো। আজ আর ঠিক হবে না। আর কিছু কিছু বিষয় আছে ঠিক করতে চাইলেও চারপাশ ঠিক করতে দেয় না। আর এটা ঠিক হবেও না। যতদ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। হবে না এ আর হবে না।

সিঁড়ির শেষে মনে হলো বাসা পাল্টে ফেলবে সে। ট্যুর প্লানটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।

আচমকা কেঁপে উঠলো পাহাড়াদারের বাঁশির ফুঁকে।এই আওয়াজ ছেলেবেলায় নিয়ে যায়। গুন গুন করে গেয়ে ওঠে ।

সবাই তো সুখী হতে চাই

তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না।

জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা? কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।।।

আমি জিতেছি, তুমি হেরে গেছো। হঠাৎ একটা ভয়ংকর হাসি দিয়ে আবার গুনগুন করতে লাগলো।

®৫ ম………

আকাশ তখনও পরিষ্কার হয়নি।ঝড়ের পড়ে কেমন জেনো একটা নিস্তব্ধতা মনে হয়। চারপাশটা অদ্ভুত এক ছড়ানো ছিটানো। গাছের ঝড়া পাতা পড়ে থাকে কিছুটা ল্যাপ্টেচ্যাপ্টে।গায়ে থাকে বৃষ্টির পানি, কাঁদা, ধূলা, ঝড়াপাতা মিলে হয় এক মৃদু মাদকতা।

সবাই ঘুমাচ্ছে। বের হতে গেলে এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। আচ্ছা আজান কি দিয়েছে??? নানা এখনওতো শুনিনি।তবে ঠাকুর ঘরে চৈতন্য দা আলো জ্বালিয়েছে।এই যদী এখন উঁলু আর ঘন্টা বাজায় তো শেষ।

দাঁড়া বেটা আগে আমি বের হয়ে নেই, তারপর তুই যা পারিস দে… কারন আজানের আওয়াজ আর উঁলুর ধ্বনি শুনলেই মা উঠে যাবে। আর আমার যে তার আগেই…………

ওমা ব্যাগে মাত্র ত্রিরিশ টাকা। কি হবে ?

ধূর বেড়িয়ে তো যাই। যা হওয়ার হবে। সামনে কুলসুমের মার চায়ের দোকান থেকে কিছু নিতে হবে।

বাহ্ শিউলি গাছের নীচে অনেক ফুল পড়েছে। গাছটা এমনভাবে অর্ধ্যেক বাইরে আর অর্ধ্যেক গেটের ভিতরে।বাইরের অংশটুকুতে অনেক ফুল পড়ে আছে।

ও ঠাকুমা কি করো ?

আরে বাবা, গাছটা টেনে ছিঁড়ে ফেলবে দেখছি।

তুমি কি বলোতো ???

ফুল নিবে নাও না কিন্তু টানছো কেনো ডাল। মনে হচ্ছে আমার প্রাণ ধরে টানছো…….

তুই খুব হিংসুটে বৃহ্নলা !

ধূর বুড়ী ……. বলেই হাটা শুরু করলো।

এতো সকালে কই যাস ? ঐ ????

তাতে তোমার শুনে কি হবে বুড়ী ? কথা লাগানো বুড়ী। এক নাম্বারের শাঁকচুন্নি। যাচ্ছি মরতে যাবি……..

…………..

গলির মাথায় আসতেই দেখি কেমন একটা নিরব শান্ত পরিবেশ। হাঁটতে হাঁটতে কতদূর চলে এসেছি, আসলে আরেকটু হাঁটলে কবরস্থান। হঠাৎ কেমন গা ছমছম করছে।আচ্ছা মকবুল চাচা আছে তো??? কই দেখছি না কেনো?

কি রে মা…. এমন ছটফট করছিস কেনো ?

কেমন আছো চাচা ?

ভালোরে….. শুধু বয়সের ভারে আর পারি না, চলছে না।

ওমা চাচা এদিকে দেখি নতুন কবর …..

হ্যারে গতসপ্তাহে তিনটা নতুন হয়েছে। আর তার আগে …..

চাচা থামোতো এবার। চলো… আসো তোমার ঘরে ঐ ঘরটায় চলো।

…………………অনেকদিন পর খুব ভালো লাগছে হাঁটতে। বাসায় ফিরেই একগাদা বকর বকর শুনতে হবে। ধূর তাও ভালো লাগছে চাচাকে খাওয়ায় রেখে আসছি। ইচ্ছে ঈদে পাঞ্জাবি কিনে দিবো দুজনকে। চাচাকে আর অন্ধ বাঁশিয়ালা দাদুকে।

হাঁটতে হাঁটতে প্রায় বাড়ির কাছে। এনোনিমাস কার সাথে জেনো কথা বলছিলো।দূর থেকে দেখেই মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো করে এদিকে আসছে।ছাগল…

এমন সময়… এই একটু শুনেন….

……. অগ্যতা দাঁড়ানো ছাড়া কি উপায়…….

আপনি আমাকে দেখলে সরে যান কেনো ? খুব সহজভাবে প্রশ্নটা করে উত্তর এর জন্য তাকিয়ে আছে।

বিরক্ত হয়েও হাসিমুখেই বললো

……. না না কেনো ? কই আমি তো….

কথা শেষ হওয়ার আগেই কথা কেড়ে নিলো…

নাহ্ আমি বুঝি। আপনি আমার সাথে কথা বলতে চান না কেনো ? আজ বলেই যেতে হবে আমাকে।

উফ্ অল্প বয়সি ছেলেদের মধ্যে এক ধরনের ছেলেমানুষী থাকে। যা ভালো লাগে কিন্তুু

ভালো লাগাকে পাত্তা দিলে মাথায় উঠে নাচে।

শুনো এনোনিমাস, তুমি ভুল ভাবছো।

তাহলে সঠিক কি ? আমার আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে আর আপনি এড়িয়ে যান।

আরে এ ছেলে বলে কি ? ?? নাহ্ এখন বুঝিয়ে কেটে পড়তে হবে। ওর চোখ দুটি কেমন ঠান্ডা লাল হয়ে উঠেছে। কিছু কি খেয়েছে ???

এনোনিমাস বাসায় চলো। আর….

আমি অনেক সকালে বেড়িয়েছি। আমাকে বাসায় দেখতে না পেলে সবাই খুঁজবে।

…………খুঁজতে দেন না…..

সব সময় তো আপনি বন্দি।আজ খুঁজুক।

বৃহ্নলা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর নিজের অজান্তেই মনে মনে বলে অপরিনত বয়স।।।

এই বৃহ…….

অনুর কন্ঠ, …… অনু কি করে এখন এখানে। পিছনে তাকাতেই সত্যি ই অনুরাধা।

বৃহ্নলা মুখ ফসকে বের হয়ে যায়…… অনু তুই এখন এখানে কেনো ?

কেনো আমার কি বাপের বাড়ি আসতে মানা ? বেশ রাগের স্বরে উত্তর পেয়ে বৃহ্নলা চুপ হয়ে যায়। কি বলবে এখন অনুকে সে……. আবার সামনে যে খাঁড়াপিড়ে দাঁড়িয় আছে তার সামনে কথা……..

এনোনিমাস তুমি যাও। আমি পরে আসবো।

………..না না সমস্যা নাই। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। আমার তেমন কাজও নাই। তুমি বরং কথা শেষ করেই আসো।তারপর আমরা…..

বৃহ্নলা কোন কথা না বাড়িয়ে অনু বাসায় যাবি?

….. না ….. এতটুকু উত্তর দিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

আচ্ছা শোন, তুই দাঁড়া, আমি যাবো আর আসবো।মাকে একটু বলেই আসি।

………………………..এদিকটায় এখনো বাড়ি ঘর তেমন হয়নি না—–রে অনু …… এখনো ভালোই লাগে। এদিকের এই বাঁশ ঝাড় গুলো…. অসাধারণ….

রাস্তার পাশের এক ছোট্ট পুকুর।

গাছের একটা ডাল বেশ কিছুটা নেমে পানি ছুঁই ছুঁই। ওরা দুজন তেমনটি একটা ডালের উপর বসে আছে।

………অনু চুপ……. আর

বৃহ্নলা অল্পস্বল্প কথা বলছে। হঠাৎ বৃহ্নলা বলে ওঠে আচ্ছা অনু এ জায়গাটার নাম মহীবাড়ি খালপাড় কেনো রে ? ? ?

অনু হঠাৎ নিজেকে সামলাতে না পেরে চিৎকার করে ওঠে…… তোর এই কিম্ভূতকিমাকার প্রশ্ন বন্ধ করবি বৃহ………

বৃহ্নলা অনুর দিকে তাকায় না কারণ আগেই দেখেছিলো যে অনুর চোখ চকচক করছে।কিছু যে একটা গরমিল আছে সেটা বুজতে বাকি নাই। শুধু কথা ঘুরিয়ে ওর মন হালকা করতে চেয়েছিলো। তবে এখন মনে হচ্ছে সেটা সম্ভব না। বিষয় টা গুরুতর।

বৃহ্নলা মনের কোণে কথা আসে নিজের অজান্তেই আমার থেকেও কি গুরুতর ?

বেশ কিছুক্ষণ চুপ দুজন।

……অনুরাধা বৃহ্নলার পুতুল খেলার সঙ্গী। বৃহ্নলা একমাত্র অনুরাধার সাথেই মিশতে পারে। স্কুলে ও কোন বান্ধবী ছিলো না তার। একাই বসে সময় পাড় করতো।আজ অনুর কি হলো…. ভাবতে থাকে বৃহ্নলা…….

……..অনু নিজেই সেই নিরবতা ভাঙে।

বৃহ বলে কাঁপা কাঁপা গলায় ডাক দেয় অনু…..

বৃহ্নলা অনুর দিকে তাকায় না, উত্তর দেয় না। বৃহ্নলা ছোট্ট পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে থাকে… আজ যে তারও বলার আছে কিছু …. আজ যে তারও সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে ।।।

বৃহ…. বৃহ… আমি আর ফিরে যাবো না।

বৃহ্নলা ও অস্ফুট স্বরে বলে আমিও…….

সেটা আর অনুর কান অব্দি পৌঁছায় না।

কোথায় জেনো গান হচ্ছে। দূর থেকে বাতাসে ভেসে আসছে…..

।।। হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে,

কুড়ায়ে ঝড়া ফুল একেলা আমি, তুমি কেনো হায় আসিলে হেথায়। সুখের স্বর্গ হইতে নামি।।।

®৬ ষ্ঠ ……..

এই শিবু, শিবু…. এ———ই

ও—-রে —–চোর —চোর —– চোর

ধূর বেক্কল চোর হলে কি তোর নাম ধরে ডাকবে? আর একবার চিল্লাইলে মুখ চেপে ধরবো… ফিসফিস করে বললো বৃহ্নলা।

বিলাই তুই এতো রাতে কেনোরে? কি রে কোন সমস্যা?

না।….

তাহলে? তাহলে আসছিস কেনো?

হায় ভগবান রাত ২ঃ৩০ বাজে। কি রে তুই…..

তোর কি কোন লজ্জা সরম নাই? আদৌ হবে না?

দেখ শিবু তোর কাছে আসতে আবার কিসের লজ্জা? কি পাগলছাগলের কথা বলিস / মাথামোটা….

বলে ঘরের জানালার কাছে গেলো বৃহ্নলা।

কি বললি তুই ? আমার মাথামোটা রাগে শিবু ফোঁস ফোঁস করছে।

শিবু খুব সাদাসিধা একজন। একটু ভবঘুরে। ঘর সংসারে তার মন বসে না। গানবাজনা তার জীবন মরণ। দেখতে শুকনো তালগাছের মত।কোঁকড়াচুল মাথা ভর্তি।মনে হয় জেনো কাকের বাসা। জগৎ সংসারে এখন শিবু একাই। একটা স্কুলের অংকের শিক্ষক। পাশাপাশি নিজেদের বাপ দাদার একটা হোটেল, এখনও রেখেছে সে। লোক রেখেছে তবে মেইন দেখাশুনাটা নিজেই করে।

প্রতীজ্ঞা জীবনে বিয়ে করবে না। মা বাবার ছাড়াছাড়ির পর তার এই বিষয়টি বাদে সব কিছুতেই মন আছে। না তার জীবনে কোন মেয়ে আসে নাই। তবে বৃহ্নলা কে সে ভীষণ রকমের পছন্দ করতো। এখনও করে। বৃহ্নলার ছোট থেকে নানান দুষ্টুমির সঙ্গী এই শিবু।

হঠাৎ বলে ওঠে বৃহ্নলা…..

এই শিবু কিরে বসে বসে এমন ফোঁসফোঁস করবি?

আর শোন, তুই কি রে দরজা ভেজিয়ে ঘুম? দরজা বন্ধ করতে হয় না? গর্ধব গায়ে পায়ে শুধু দামড়া হয়েছিস।ভুসকুমড়ো একটা..

তুই তো আছিস… কিন্তু তার আগে আমাকে বল তুই এতো রাতে আমার ঘরে কি করতে আসছিস ? আর কাকী মা দেখলে বা কেউ দেখলে কি বলবে বল তো বৃহ …. এমন পাগলামু করিস কেনো?

কি করতে আসছিস আমার এখানে? বড্ড আদুরে রাগের স্বরে জিজ্ঞেস করে শিবু বৃহ্নলাকে?

কি জানালায় কি? বল কথা….. রাত দুপুরে কি….

…..

চুরি করতে আসছি শিবু ….. বৃহ্নলার সোজাসাপটা উত্তর।

কি বললি? আবার বল। একটা থাপ্পড় দিবো বিলাই। আমার ঘরে দাঁড়ায় আমাকেই বলিস চুরি করতে আসছি ……

শিবুর প্রচন্ড রাগ হলে বৃহ্নলাকে বিলাই বলে ডাকে। ওর চুলগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে উল্টো হ্যাচকা টান মারতো সবসময়ই। বৃহ্নলা কখনোই চুলের টান সহ্য করতে পারে না ওমনি চিল্লাইতো। আর তখন থেকেই শিবু ওকে বিলাই বলে ডাকার সূত্রপাত। বিড়ালের লেজে হাত দিলে যেমন করে বৃহ্নলার চুলে কেউ হাত দিলে তেমনি ক্ষেপে যায়। সেখান থেকেই বিলাই…

শিবু রাগ হচ্ছিস কেনো ? আমি তো একা আসিনি।

মানে…. মানে কি?

আমি, অনুরাধা, সীমা দিদি, তরুর সাথে হিমিও এসেছে, এমনকি চৈতন্য, বৌ নেওটা যে কবির সেও এসেছে আর অমিত । সবগুলো নীচে দাঁড়ানো।

বলিস কি?

তবে অমিত এলো কোথা থেকে?

যাকগে, সবাই নীচে…..

হ্যা বাবা এবার তুই চল। ওরা কেউ সাহস পাচ্ছিল না তোকে ডাকতে। আমাকে পাঠিয়েছে এজন্যই। আর তুই…

আচ্ছা তুই আগাইতে থাক। আমি আসছি।

এই শিবু…..

আবার কি ?

টর্চ টা সাথে নিস বলেই বৃহ্নলা বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।

মনে যে একটু ভয় নেই তা নয়। ছোট বেলায় যা করা যায় বড় হয়ে গেলে মানুষ কথা রটায়। কেউ না দেখলেই ভালো। না হলে ছোট্ট পাড়ায় কথা ছড়ায় একাকার হবে।

*** কিরে বৃহ্নলা…. শিবু কই?

আসতেছে…

সব গুলা অনেকদিন পর এক হয়েছে। উদ্দেশ্য রেললাইনের ওদিকে যে রেল মাস্টার থাকে তার বাড়ি বাগানের ফল এবং বৃহ্নলার চোখে সুন্দর ফুল নজরে পড়লে সেটাও আজ চুরি করা হবে। চুরির অভিযান /

পাড়ার পাহাড়াদার ওদের হাতের মুঠোয়।

কিন্তু ওদিকের কি হবে? উৎকন্ঠিত হয়ে বলে ফললো বৃহ্নলা /

এমন সময় কবির বলে, সমস্যা নাই। আগের মত তো ফকির নাইরে আমরা, কিছু হাতে দিলে চুপ থাকবে। চল আজ মাথাটা ঝাড়তে হবে।

এমন সময় সীমা দিদি বলে উঠলো, হ্যারে কবির আজ বৌ ছেড়ে আমাদের দলে যোগ দিলি যে ?

দিদি আমি পুরা জ্যাম হয়ে আছি। আমার একটু তোমাদের সাথে পাগলামি করতে দাও।

শোনা মাত্র ই সবাই হেসে উঠলো।

কবির এক বৌ পাগলাটে। বউ তার অন্তপ্রাণ। তবে নিজের কাজের জায়গাটায় সে সফল নয়। এটায় তার এক ধরনের আফসোস, হতাশা।

তরু আর হিমি। তরু এদের বন্ধু ছেলেবেলাকার। হিমি ও আজ এদের মতই এদের বন্ধু হয়ে গেছে। দুজনের সবকিছু একই রকম। বলা চলে সুখী দম্পতি। ঠিক মানায় না। সুখী দম্পতি থেকে সুখী বন্ধুত্ব টা ভীষণ জরুরী। যা ওদের মধ্যে স্পষ্ট। হিমি আর তরুর মাঝে সব ঠিক কিন্তু হিমি চায় একা তরুকে নিজের মত আলাদা থাকতে। এটা নিয়েই শুধু বাকবিতণ্ডা হয়। তাছাড়া ওরা বলা চলে সুখী বন্ধুত্বের দম্পতি। ।

চৈতন্য ব্যবসা করে। মা, বোন বৌ আর দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার তার। তবে ভীষণ চাপা। বোঝা যায় না তার ভেতরের খবর। মায়ের শখ পূরণ করতে কঙ্কাকে বিয়ে করেছিলো। তবে সবাই জানে এখনও সে তার মন দিয়ে আছে সূর্য কে….

*******

(মাঝে মাঝে এমন সম্পর্কের কোন মানে বোঝে না বৃহ্নলা। মন দিবে একজনকে আর সঙ্গ নিবে আরেকজনের। এটা সে কোন ভাবেই মানতে পারে না। ভালোবাসা হতেই পারে। একটা সম্পর্ক শেষ হলে তখন না হয় হতে পারে। একই দুজনকেই মন, ভাবতেই পারে না।) ****

সীমা দিদি চৈতন্য এর একমাত্র বোন। পিঠোপিঠি ভাইবোন। বড় দিদির মতন সম্পর্ক না কখনওই। সব কিছুর সাথেই সে বরাবরই জড়িত থাকে। সীমা দিদির বিয়ের এক বছরের মাথায় দাদাবাবুর মৃত্যু হয়। হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। আর বাঁচে নাই। শ্বশুরবাড়ীর থেকেও বের করে দেয়। এখন আছে সে এখানে।

আর….

অনুরাধা বৃহ্নলার যে খুব কাছের মানুষ। পুতুল খেলার সঙ্গী। ওপার থেকে সব রকমের পাট চুকিয়ে চলে এসেছে বাপের বাড়ি। বর টি তার পরনারী আসক্ত। সহ্য করতে পারে নাই। রোজকারের ঝাগড়া, মারের হাত থেকে বাঁচার জন্যে একেবারে ফিরে এসেছে। চেষ্টা করেছে ফিরানোর হয় নাই।মার খেয়েও থাকতে চেয়েছে। তাও স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় নাই। পারে নাই একটা সময়।

বাকি থাকে অমিত…. অমিত ও এদের ছেলেবেলার বন্ধু। খুব ভালো বন্ধু।নিজে থেকেই নিজেকে হঠাৎ গুটিয়ে নিয়েছিলো। কেনো, কি জন্যে আজও কেউ জানে না..

বৃহ্নলা অমিতের দিকে তাকাতেই অমিত বলে উঠলো

ভালো আছো?

তুমি করে বলাতে খুব কানে বাজলো বৃহ্নলার। কিন্তু প্রশ্রয় না দিয়ে বললো তুই যে হঠাৎ….

বৌ কি বাবার বাড়ি গেছে?জিজ্ঞেস করে বৃহ্নলা,

তুমি জানলে কি করে বৃহ্নলা?

না মনে হলো তাই বললাম।

তুমি বোঝ কি করে? বরাবরের মতন মনের খবর পেয়ে যাও! এখনও এতোদিন পরেও।বৃহ্নলা চুপ করে থাকে। কি বলবে সে?

আমি ভাবিনি জানো,তোমার সাথে দেখা হবে?

বৃহ্নলা চট করে বললো, কেনো দেখা হয়ে কি ভারি অন্যায় হলো? কেউ আর কিছু টু শব্দ করলো না।

সবাই হাঁটছে রেললাইন এর উপর দিয়ে নিঃশব্দে।

সবাই আজ এক হয়ে মাস্টার বাবুর বাড়ির বাগানের ফল চুরি করবে।

হঠাৎ বৃহ্নলার জেনো কি হয়… বলে ওঠে

এই শোন তোরা….

সবাই থেমে যায় অবাক হয়ে, আমাদের এই বয়সে এসে এটা কি ঠিক হবে? মানে চুরি টা……

এমন সময় সবাই বলে ওঠে বুদ্ধি টা কার ছিলো ?

বৃহ্নলা চুপ থাকে।

অমিত এর সমাধান করে। আচ্ছা চল। ওকে বকিস না। যাই বলিস না কেনো আজ আমাদের সবাইকে কিন্তু এক ওই করেছে। চল পানির ট্যাংকি বেয়ে উপরে উঠি।

যেই বলা সেই কাজ, আকাশ দেখা আর গল্প করা। চল….

সবাই খুশি মনে রাজি হয়ে যায়….

সিঁড়ি বেয়ে সবাই একেবারে অনেক উঁচুতে।

সবাই মিলে যার যার মত নানান গল্প জুড়ে দেয়।

সেই আনন্দ, সেই ভালো লাগা, সেই ছেলেমানুষী। শুধু বয়সের একটু তারতম্য….. সব আজ মন খুলে যে যার জীবনের হিসেব নিকেষ ছেড়ে ক্ষনিকের কঠিন বাস্তবতা থেকে একটু ছুটি নিয়েছে। মানুষগুলো আবারও যার যার মত একটা সময় নিজস্বতায় আটকে যাবে। যেতে হবে… শুধু একটুকরা নিশ্বাস নিতে এসেছে নতুন উদ্যোমে বাঁচার লড়াই করতে। হঠাৎ একটা বিদ্ঘুটে আওয়াজ। আতকে উঠে সবাই কি হলো? কি হলো? অন্ধকারে স্পষ্ট বুজতে পারে না। সবাই একে অপরকে ডাকে। কি হলো জানতে চায়। সবার কন্ঠস্বর এর মাঝে একজন নিরব।

বৃহ্নলা চিৎকার করে ওঠে এই অনুরাধা কোথায়? শিবু তোর পাশেই না বসা ছিলো। অনু………..

অনুর বড্ড সাহস ছিলো। যা বৃহ্নলার আজও হয় নি।

😔

®৭ ম……

জ্যোৎস্নার আলো বারান্দার কোলে এমন ভাবে আঁচড়ে পড়েছে যেনো মনে হচ্ছে কোন নব বধূ তার প্রিয়তম এর বুকে আদুরে মাথা রেখেছে। কোমল হালকা বাতাসের দোলায় গন্ধরাজ দুলছে। সাথে তার উপস্থিতি যথেষ্ট ঘ্রাণে জানান দিচ্ছে। আমি আছি, আমি আছি তোমার সাথে অন্ধকার রাতে। সব গাছগুলা যত্নের অভাবে ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। বাকি আছে গন্ধরাজ। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ তার মনে পড়ে এই বেলকোনিতে কতই না গাছ ছিলো। সব যত্ন একাই করতো বৃহ্নলা। নামটা মনে পড়তেই চেহারায় এক বিরক্তির সুস্পষ্ট ছাপ অন্ধকারেও বিদ্যমান।

গাছ কেনা আর তার পিছনে যত্ন করাটা ছিলো তার শখ এবং ভালেবাসা। ভাবতে ভাবতে আনমনে সিগারেটের প্যাকেটে হাত দিয়ে দেখে একটাও নাই। সব শেষ। কিন্তু তার উঠতে ইচ্ছে করছে না আজ। বসে থাকবে বেলকোনিতে।

জ্যোৎস্না দেখবে…. এটার অভ্যেস ছিলো না, সেটাও বৃহ্নলার পিড়াপিড়িতে হয়েছে। জ্যোৎস্না ধূর এর আবার দেখার কি আছে? হা করে মানুষ কি যে দেখে?

এসব পাগলামি ভীষণ ছিলো বৃহ্নলা র শিরায় শিরায় পড়োতে পড়োতে। এগুলো ইনেশের পছন্দ না, ভালো লাগে না কিন্তু আজ তার যে ভালো লাগছে তাও নয় কিন্তু ভীষণ এক অবসন্নতা ঘিরে ধরেছে।

হঠাৎ এক রাতের কথা মনে পড়ে, কাজ থেকে ফিরেছে। ঠিক করেছে আজ টিভিও দেখবে না। প্রচন্ড কাজের চাপে পুরা দূর্বিসহ অবস্থা। খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বে। মনে ও নাই কাল বিবাহবার্ষিকী। ৪ বছরে পড়বে। বৃহ্নলা ও তাকে কিছু ই বলে নাই। হয়ত সেও ভুলে গেছে। যাকগে প্রতিবছরই নতুন নতুন পাগলামি করে। আজ না করলেই ভালো। পাগল থেকে একটু মানুষ হবে। বাবা গতবছরের পাগলামিটা ছিলো ভয়ংকর। রাত ৯ঃ৩০ রাতের খাবার খেয়ে সবে একটু হেলান দিয়ে স্পোর্টস চ্যানেলটা ধরেছে। এমন সময় হঠাৎ তাকিয়ে দেখে বৃহ্নলা সুন্দর সাদা আর গোলাপি মিলানো রংয়ের শাড়ি পড়ে, মাথায় আর হাতে বেলি ফুল দিয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

ইনেশের তো চক্ষু চড়কগাছ। সর্বনাশ এ মেয়ের পুরা মাথা খারাপ। বিয়ের আগে বুঝা যায় নি। পুরা পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে। বিয়ের পর থেকেই তার এটাই ধারনা। না কি এতোদিন হয়েছে বিয়ের, তেমন কিছু হয়নি বলে এমন পাগলামি। বিরক্তিকর।

কি হয়েছে? ভীষণ বিরক্ত এবং রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করে/

আমি রেডি। তুমিও রেডি হয়ে নাও না। উঠো উঠো না…. বলেই জোড়াজুড়ি করতে থাকে।

ইনেশও প্রচন্ড রাগারাগি করে। এতো রাতে এসব ভালো লাগে না। তোমার মাথায় যে গন্ডগোল আছে আগে জানলে….

বৃহ্নলা বুজতে পারে যে, সে যা করছে, তার কারনটা হয়ত ইনেশ না বুঝেই, না খুঁজেই তাকে কতগুলো বাজে কথা বলছে।

চল না এমন করো না প্লীজ। চল আমাদের ৩য় বিবাহবার্ষিকী টা আমরা অন্যরকম ভাবে পালন করি। ১২ঃ০১ মিনিটে আমরা ফেরিঘাটে থাকবো।কোন নৌকা নিয়ে আকাশের নীচে। চল না।

সেদিন রাগের মাথায় মুখে যা আসছে তাই বলেছিলো। ও অনেক কেঁদেছিল কিন্তু তাতে কি ? তার কিছু যায় আসে না। এমন কি তাতে তার কোন অনুতাপ নাই। কারন সে মনে করে পাগলের সাথে সেও পাগলামি করলে তাকেও পাগলই বলবে। সে তো আর এমন নয়।

আজও কি এমন কিছু করবে বৃহ্নলা ? নাহ্ এর সাথে থাকা সম্ভব না। কিন্তু আজ মনে হয় নিজেই ভুলে গেছে নয়ত নিজের ভুল টা সুধরায় নিয়ে ভদ্র হচ্ছে। মনে মনে খুশি হয় ইনেশ।

রাতে ঘুমিয়েও পড়ে ইনেশ।

হঠাৎ মনে হয় সারা ঘরময় আলো আর আলো। বিরক্তিতে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে বৃহ্নলা সেজেগুজে হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি পড়েছে। হাতের দিকে তাকাতেই দেখে তারই প্রিয় গাজরের হালুয়া বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সারা ঘর মোমবাতি জ্বালানো। চারিদিকে রজনীগন্ধা ফুল ফুলদানি দিয়ে সাজানো।

ঘুমের ঘোরেই বলে ওঠে এই মেয়েকে অবশ্য ই সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে নিতেই হবে। না যেতে চাইলেও হাত পা বেঁধে নিতে হবে। অসহ্য অসহ্য…

নিজের অজান্তেই বেলকনিতে বসে বলে ওঠে আসলেই অসহ্য। একটার পর একটা জীবনের ধাক্কায় মেয়েটা পাগল হয়ে গেছে। চিকিৎসা দরকার…….

যাক সে… কি করবে সে জানে, আমার জীবন আমি আবার নতুন করে ঠিক করবো।

যা হয় হোক আমি পারবো না চেষ্টা করেছি।

 

তুমি হেরে গেছো বৃহ্নলা, আমিই জিতেছি। তুমিই হেরে গেছো। তুমি পরাজিত…..

®৮ ম……..

ওওও ছোট আফু, ছোট আফুরে রে ওঠফেন না ….

কি হইলো, ছোট আফু বেলা তো পড়লো… এখনও বাসি বিছানায় গড়াগড়ি করতাছেন কেনে?

আম্বি বুয়া তুমি যাও তো বিরক্ত করো না…

খালাম্মায় রাগ হইতাছে যে…. আফু, উইঠেন না। আপনারে বোকলে আমার চোহে পানি আইসা যায়। উইঠেন না আফু…. খালাম্মা রাগ হইতাছে তো,

হোক তো…. যত পারে হোক।

আল্লাহ গো কয় কি?

আরে বুয়া তুমি কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান বন্ধ করবা?

আফু গো দেহেন, বাসি বিছানায় থাকতে নাই। অমঙ্গল হয় গো।

এবার চরম বিরক্তির পর্যায়ে যাচ্ছে বৃহ্নলা! এই বুয়া এটা তোমাকে কে বলেছে? হ্যা? শুনি? আর হ্যা অমঙ্গলের আর বাকি বা কি আছে আমার শুনি। বলো এখন চুপ কেনো?বলো…. সেই ছোট থেকে তুমি আমাকে দেখছো,আমাকে চিনো, জানো। আমি মিথ্যে কথা বলি? চুপ কেনো …..

ছোট আফু একখান কথা কই? আসলে কি, বলতি চাইতেছি যে, মাজারে যাইবেন? মানত করেন। পূরণ হইবো। আমাদের এলাকায় এক মাইয়ার কতদিন পর ………..

তুমি কি থামবে বুয়া? বের হও ঘর থেকে? আমায় রাগিয়ো না বলছি। আমি কিন্তু তুলকালাম কান্ড করবো,আমাকে রাগিয়ো না…

আচ্ছা চইলা যাইতেছি। ছোটবেলা থেকে পালছি তো কষ্ট হয়। তয় কই কি এবার উইঠা পড়েন। বাসি বিছানায় আর থাইকেন না গো আফু।

এই বুয়া তুমি সেই কখন থেকে বাসি বিছানা, বাসি বিছানা বলেই যাচ্ছো। আমাকে বলো দেখি বাসি বিছানা আর টাটকা বিছানার পার্থক্য কি? বলো!

বুয়া তো এবার ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আছে।

কি বলো? পারবে না তো বলতে….. তাই তো ?

তাহলে যাও আমায় যখন বলতে পারবে না তবে আর জীবনেও আমাকে বাসি বিছানার গল্প দিতে আসবে না। বুজলে? কি বুজলে তো? এখন যাও।

আম্বি কিছু না বুঝেই মাথাটা একবার উপর আর একবার নিচে করে ঘর মুছতে থাকলো।

একটু পরে আবার ও ছোট আফু…

আবার কি হলো? বুয়া তুমি যাও তো।

আফু মাস তো পড়ে গেলো…

এই বুয়া কেমন করে পড়লো বলো না? ধপাস করে?

ছোট আফু, কি বলেন… মনে মনে বলতে থাকে, হায়রে অনুদিদি যাইবার পর থেইকাই মাথাটা আরো খেপছে। কথায় আছে না ;

অতি বড় ছুন্দরী না পায় বর, আর অতি বড় ঘরনি না পায় ঘর। সবই হারাইলো। কপাল মাইয়ার

কি হলো চুপ করে কি বিড়বিড় করো? বুয়া…

আফু খালাম্মায় আমার বেতনডা এহোনো দেয়নাইকা /

***

তো আমি কি করবো? বৃহ্নলা বলে তাকিয়ে থাকে।

শুনো বুয়া, সোজা মার কাছে যাও আর বলো তোমার টাকা লাগবে। ব্যাস শেষ। আর এটা তো তোমার কষ্টের কাজের টাকা। অহেতুক বাড়তি তো আর চাচ্ছ না,

আফনে একটু বইলা দেন না আফু….

হুম দেখছি। তুমি তো তাও কাজ করো আর আমি তাও না, শুধু ই অন্ন ধংস্ব করি।

/ কারে কি করেন ?

বৃহ্নলা শুনে, শুয়ে শুয়ে হেসে দেয় আর বলে, সে-ই তো কারে…… কি…. করি……

***** বাহ্ সুন্দর কাউনের চালের পায়েস এর ঘ্রাণ। মা করছে। নাহ্ আর শুয়ে থাকা সম্ভব না।

এই বৃহ্নলা দেখ তো একটু কেমন হয়েছে?

মা আমি একটু আসছি তুমি এক মিনিট দাঁড়াও আমি দুই মিনিটে চলে আসবো, যাবো আর আসবো।

তবেই হয়েছে আমি তোকে চিনি না… বাথরুমে ডুকলেই তো শুরু হবে ভেড়া গলায় গান।

আয় তাড়াতাড়ি। টেবিলে দিচ্ছি খেয়ে আমায় উদ্ধার কর মা। আর জ্বালাস নে।

****

আমি কি জ্বালাই ? কই আমি তো বুঝি না। ও বাবা বলো না আমি কি জ্বালাই ? ও বাবা তুমি আমায় তোমার সাথে নিলে না কেনো…. বলো না, বলো না আমি কি খুব জ্বালাই? ****

বৃহ্নলা….. এই বৃহ……

ওরে মরণ…. দাঁত ব্রাশ করতে করতে বৃহ্নলা র কানে যায় ডাকটা। সর্বনাশ মেজো চাচি…. হায় কপাল আজ আমি শেষ। হাজারো প্রশ্নে আমায় ক্ষতবিক্ষত না করা পর্যন্ত ছাড়বে না। সাথে আবার ছোট চাচীর গলা না। পুরাই মিলিটারি। ওরে পালাতে হবে।

ইস্ পায়েস… পায়েসটা খাবো যে…. ধূর আর হয় না….

নাহ্ আগে জান বাঁচানো ফরজ। মাগো আওয়াজটা যে কাছে থেকে কাছে আসছে। বেলকানি টপকিয়ে পালাতে হবে। কোন ভাবেই সামনে আসা যাবে না। এরা পাকিস্তানি মিলিটারী… রাজাকার, আলবদর সব।

আজও পালাচ্ছ তাই না ??? আরের শালা,এই গিনিপিগ আবার এখানে।

এনোনিমাস আজকাল আবার তুমি করে বলা শুরু করেছে। মাঝেমধ্যে মন চায়,দেই কষে একটা চড়। ভাবটা এমন আমি জেনো ওর কত চেনা, কত আপন, ঘরের বৌ বা ভালোবাসার মানুষ। আহা শালা, যে দিকে বাঘের ভয় সেদিকে রাত পোহায়। মেজাজটাই খারাপ করলো। কি বলা যায়? ?? চিন্তা করছে বৃহ্নলা। এর মধ্যে হঠাৎ করে হাত বাড়িয়ে দেয়। তুমি আমার হাতটা ধরো। কোথায় যাচ্ছো তুমি? বৃহ্নলা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে চট করে আবার নিজেকে সামলে নেয়। মনে মনে বলে, মরণ আবার হাত আগায়….

এবার বৃহ্নলা প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসে বলে উঠলো,,,, না ভাইয়া হাত ধরতে হবে না। তুমি বলেছ আমি এতেই খুশি। আর আমার হাতে গোবর মাখা, মানে পালানোর জন্য সুবিধা হয়। বুজলে…

তুমি কি পালাচ্ছ? কেনো….?

হ্যা ভাইয়া কেনো , কোন সমস্যা?

হঠাৎ এমন কথায় কি বলবে কিছু খুঁজে পায় না এনোনিমাস।

আর মনে মনে বৃহ্নলা ঠিক করে আজ থেকে নিজেকে নিজেরই বাঁচাতে হবে। সব জায়গাতেই…

***সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না।*কেবলাকান্ত*

®৯ ম…..

ছবি তুলতে ভালো লাগার কারণ হলো কিছু কিছু সুন্দর মূহুর্ত ক্যামেরায় বন্দী করা যায়। আর সেটা করতে বৃহ্নলা একটুও সময় নেয় না। আজ সে প্রকৃতির সাথে সময় কাটাবে। সঙ্গী তার মোবাইল আর মোবাইল এর ক্যামেরা।

সরু গলি চারপাশে গাছ আর গাছ। চিকন গলির মাথায় ছোট্ট চায়ের দোকান। চারপাশের গাছগুলোর পাতার শনশনানি আওয়াজে মাতাল হবার জোগাড়। হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা বসা দরকার। চায়ের দোকানে তেমন ভিড় নাই। এক কাপ রং চা চেয়ে তাকিয়ে দেখে চা বিক্রেতার একটা হাত নাই, তার ছোটখাটো ফরমায়েশ গুলি পালন করছে ছোট্ট একটি মেয়ে। হঠাৎ বৃহ্নলার চোখে পানি চলে আসে। আহারে কি কষ্ট…

চোখ মুছে মেয়োটিকে ডাকে,

নামকি তোমার?

তুলি….

বাহ ভারি মিষ্টি নাম তো। কোথায় থাকো?

এই তো পিছে থাকি। কে আছে তোমার? ভাইবোন?

আমার কেউ নাই। এই বাবায় আমারে রাখছে। বাবাই আমার সব।

রাখছে কথাটা কানে লাগার মতন….

বাবায় আমারে রাখছে …. মানে কি ? কথাটার ভিতর কেমন একটা ফাঁক আছে ?

বৃহ্নলা মাঝে মাঝে যাকে তার ভীষণ ভালো লাগে তার কিছু কিছু বুজতে পারে। কিভাবে বলতে পারে না। এই ছোট্ট মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে মনে হয়েছে তার অতি কাছের, অতি চেনা, অতি প্রিয় কতদিন ধরে চিনে মেয়েটিকে। ভীষণ মায়া হয়, ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমার এই ভালোবাসার অনুভূতি কি আর ছোট্ট মেয়েটি বুজতে পারবে?

আচ্ছা তুমি আমার পাশে বসো।

না আমি দাঁড়ায় থাকি।

বৃহ্নলা আর কিছু বলে না। চোখ দিয়ে শুধু ভালো করে দেখতে থাকে। ছোট্ট মেয়েটি। বড়জোর বয়স ৯/১০ এমন। শুকনো টিংটিঙে। গায়ের রংটি শ্যামলা। শ্যামলা বরণ কন্যা… ইস্ মাঝে মাঝে মনে হয় এমন গায়ের রংটি দারুন। অদ্ভুত এক আকর্ষন থাকে। চুলগুলো ভীষণ রূক্ষ।তবে চোখ দুটি তার অসাধারণ। চোখের ভিতর থেকে এক অদ্ভুত মায়া আছে, যা সেই মায়ায় বৃহ্নলা কেমন আটকে গেছে।

চা নিজেও খেলো আর বাচ্চা মেয়েটিকে বিস্কুট, কলা খাওয়ালো।

এবার উঠতে হবে। এমন সময় আবার তার মনে পড়লো, এই বাবা আমারে রাখছে।

বৃহ্নলা চা বিক্রেতার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে হঠাৎ প্রশ্ন করলো মেয়েটিকে কোথায় পেয়েছেন?

চা বিক্রেতা কোন সংকোচ না করেই বললো, ওরে আমি ঐ ময়লার স্তুপ থেকে পাইছি। ওরে পাড়ারা লোকজন কয়ে দিছে কথাডা। আমি জীবনেও কইতাম না। আমি ওরে আমার কলিজা মনে করি। বিয়াও করি নাই। আরেক মাইয়া এসে যদী কখনও ওরে না বুঝে। আপনে আহনের একটু আগে ঐ ভিতকার এক কুটনি মহিলা এসে ওরে কয় কি এতো বাপের নেওটা তুই,

তুই কি জানোস এটা তোর বাপ না। তোরে আমরা কুড়ায়ে পাইছি। তাই মন খারাপ হয়ে আপনারে ওভাবে বলছে।

মেয়েটা ঝড়ঝড় করে কাদঁছে দাড়িয়ে। কোন আওয়াজ নাই। কেউ কাঁদলেও বুঝি এতো সুন্দর হয়ে ওঠে।

ভিতর থেকে ডাক দেয়… আয়রে মা তুই আমার মেয়ে। তুই শুধু ই আমার। আমার কাছে আয় বলে বুকে জড়ায় মাথায় হাত বুলাতে থাকে।

বাবা আর মেয়ের সম্পর্কটা বুঝি এমন ই হয়। শুধু কি বাবা আর মেয়ের হয়। মায়ের সাথে সন্তানের হয়। আবার প্রিয় মানুষ মানুষের সাথে হয়। হয় হয়ে যায়। ভালোবাসায় ভালোবেসে যায়….

আকাশ সমান, সমুদ্রের মত বিশাল….. রক্তের সম্পর্কের না হলেও হয় এমন… আবার রক্তের সম্পর্কের হয়ে ও হয় না।

****আজব এ দুনিয়া। কখন কি হয় কেউ বলতে পারে না…

ভালোবাসাটা তো পবিত্র। আত্মার সংযোগ। আত্মায় আত্মায় একত্রিত।

ভালোবাসা হতে হয় ই এমন। সব কিছু নিঃস্বার্থে। কোন লোভ নাই, লালসা নাই, শুধু নির্ভরতা, বিশ্বস্ততা, পাবার এক পবিত্র আকুলতা।

যার হাতটা ধরা যায় নির্ভয়ে চোখ বুজে।।। ধরা যায়? আসলেই কি ধরা যায় ???

সূর্য ডুবে আসছে। বৃহ্নলা তার গন্তব্যে যাবার জন্যে হাঁটছে। স্মৃতি ধরে রাখছে তার ছোট ক্যামেরায়।

গুনগুন করে গেয়ে ওঠে…

তোমারি পথে ফুল ছড়ায়ে,কাঁটাগুলি কে দিতো সরায়ে।হৃদয় ভরা মাধুরী নিয়ে,সাথে থেকে কে আশা জাগাতো।।

তোমারি নামে দিনেরও শেষে,দীপ জ্বালাতো কে ভালোবেসে…

ছিল জীবনে হাসি হয়ে কে

ব্যাথা হয়ে কে ব্যাথা রাঙ্গাতো।মনে করো যদী সব ছেড়ে হায়…….

®১০ ম…..

বৃহ্নলা এই শুনছিস তুই, সেন্ট জন স্কুল থেকে সিস্টার লিয়েনা এসেছে। বলে বৃহ্নলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে গেলো জ্যোতি। জ্যোতি তার চাচাত বোন। যথেষ্ট নম্র, ভদ্র, সাধারণ তবে একটু অহংকারী। দেখতেও খুবই সুন্দর। অনেকে টুইংকেল বলেও ডাকত। সবদিক থেকেই সে ঠিকঠাক। বৃহ্নলা জ্যোতিকে খুব পছন্দ করতো। কিন্তু কিছু বলতো না। একটু অহংকারী ছিলো। বোন হলেও তাতে কি ভাব নেওয়া মানুষের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না। তাই কিছু বলতোও না। *** শুধু বললো তুমি যাও…

আসছি আমি। আজ হঠাৎই নিজে এসে ডাকছে। কিছুটা অবাক হয়। সিস্টার লিয়েনা কেনো এসেছেন? নানান ভাবনা জড়োসড়ো করে মনের কোণে উঁকি দেয়।

গুড মর্নিং সিস্টার লিয়েনা… আপনি যে…

কষ্ট করে আসলেন কেনো? কাউকে বলে পাঠালেই আমি আসতাম।

না আসলে নিজের ই আসতে ইচ্ছে করলো তো। তাই আর কি ….

ও বেশ তো, তা বলুন কেমন আছেন? সেই আগের মতই ছোট করে বললো / ভালো।

সিস্টার লিয়েনা বর্তমানে সেন্ট জন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তবে তিনি আগে বৃহ্নলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে তার দক্ষতা অনেক। চর্চাও করতেন তিনি। প্রধান শিক্ষিকা যেমন যথেষ্ট রাগী, গম্ভীর এবং মুখের এক ভয়ংকর অবয়ব ধরে রাখে তেমনটি তার ছিলো না কখনোই। অতি সাধারণ ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ। কথাও বলেন ভীষণ ছোট ছোট আস্তে ধীরে।

স্কুলের ছাত্রীদের সাথে প্রধান শিক্ষিকার দেখাসাক্ষাৎ হয় বিভিন্ন নিদিষ্ট স্কুলের অনুষ্ঠানে। এসেম্বলিতে আর রেজাল্টের দিন। এছাড়া বাড়তি করে তেমন দেখা হওয়ার সম্ভবনা থাকে না।

বৃহ্নলার সাথে তার পরিচয়টা ভীষণ অদ্ভুত রকমের ছিলো। সেই পরিচয় তারপর থেকে বৃহ্নলা কে দেখলেই কথা বলার জন্য তার রুমে টিফিনের সময় ডাকতেন। সবাই যে অবাক হতো না তা নয়। কিন্তু কেউ কিছু বলতো না। বৃহ্নলারও ভালো লাগতো।কারো সাথে ঠিক মিশতে পারতো না। পাড়ার বন্ধুবান্ধবীদের সাথেই একটু সময় কাটাতো। যাক তার ভালো সময় যায় এখন একটু। ***

একদিনের ঘটনা… ক্লাস টিচার পঞ্চম বেঞ্চের সামনে এসে হাত ধরে নিয়ে হাটঁতে শুরু করলেন। হরহর করে হাত ধরে টেনে সিড়ি দিয়ে নামছেন। তারপর সোজা প্রধান শিক্ষিকার রুমে। আপা আসবো?

আসুন।

আপা একে ক্লাসে উঠানো সম্ভব না। অষ্টম শ্রেণীর ক্লাস টিচার সেলিনা আপা সেদিনের কথা খুব ভালো মনে আছে বৃহ্নলার। ছুটির প্রায় শেষ দিকে, প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে দাঁড়িয়ে বৃহ্নলা আর সেলিনা আপা। ঐ দিন সিস্টার লিয়েনা চশমার ফাঁক দিয়ে একটু, একবার বৃহ্নলা কে আরেকবার সেলিনা আপাকে দেখছে।

বেশ কিছু পর জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে ….

সেলিনা আপাও গরগর করে বলতে লাগলেন একে কোনভাবেই ক্লাসে উঠানো উচিত না আপা। দুবার ইংরেজি তে ফেল। আপনি বলেন একে কি করা উচিত। আপা ও বার্ষিক পরীক্ষা দিবে কিন্তুু ক্লাসে উঠানো হবে না। আপনি কি বলেন….

ঐ দিন তিনি কিছু বললেন না।

পরের দিন টিফিনের সময় বৃহ্নলার মন খারাপ স্কুলের পিছনে পুরানো বিল্ডিং এর সিঁড়ি তে বসে আছে।এমন সময় আয়া এসে বলে, এই মেয়ে হেড মিস্ট্রেস তোমাকে ডাকছে অফিসে।

বুজতেও আর বাকি নাই কি হবে। বৃহ্নলা ও চুপচাপ আয়ার পিছন পিছন রুমে যায়।

****** সামনের চেয়ারটায় বসো। আয়াকে চলে যেতে বলেন এবং দরজাটাও বন্ধ করে চলে যেতে বলেন। বৃহ্নলার প্রাণে তো আর পানি নাই। তাও শক্ত হয়ে বসে থাকে।

এমন সময় সিস্টার লিয়েনা তার সামনে বাৎসরিক ম্যাগাজিন ধরে বলেন আরো নতুন কিছু চাই বৃহ্নলা। তারপর আবার দুজনে নিরব। জেনো একটা পিন পড়লেও আওয়াজ হবে।

শুনো বৃহ্নলা….

ইংরেজিতে অনঃতত তেত্রিশ উঠাও। পারবে না? আর হ্যা ভূগোলেও… বাকিটা আমি দেখছি…..

এবার যাও তুমি ।

ঐ ছোট্ট বয়সে বৃহ্নলা কোন উত্তর খুঁজে পাই নি। আজও সেই উত্তর খুঁজে বেড়ায় কিন্তু মিলাতে পারে না কিছু…..

ঐ সেদিন থেকেই শুরু। টিফিনের সময় যখন সবাই হৈহল্লা করছে তখন বৃহ্নলা আর সিস্টার লিয়েনা দুজনে লাইব্রেরি তে নানান বাংলা বই নাড়াচাড়া করছে। শুরুটা তাদের এভাবেই। পরে একটা সময় সিস্টার লিয়েনার পাঠশালায় বাংলা পড়াতো। বাকিদিনগুলো নিজের স্কুল পড়া বিকালে পাড়ায় আড্ডা আর ছুটির দিনে বাচ্চাদের সাথে সময়। বিনা বেতনের ছোট ছোট বাচ্চারা পড়তে আসতো শুক্রবার সকালে। ভীষণ ভালো সময় কাটতো ঐ দিনগুলো।

আবার যদী এমন ফিরে আসতো। সেই ছোট্ট সময়।

কি ব্যাপার বৃহ্নলা….

নাহ্ তেমন কিছুই না। আপনার পাঠশালা টি কি বন্ধ করে দিয়েছেন সিস্টার?

একা মানুষ। বয়সও হয়ে যাচ্ছে। এবার ভাবছি ছুটি নিয়ে নিবো।

ও,,,,, বৃহ্নলা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে তারপর কি করবেন?

জানি না। আমার এখন ভালো লাগে না। ঈশ্বর বাচিয়ে রেখেছেন এটাই অনেক।

বৃহ্নলার কেনো জানি মুখে আর কোন কথা আসছে না। দুজনে চুপচাপ রং চা পান করে। এমন সময় সিস্টার নিজেই বলেন তোমার কাছে আসছি তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করেছিলো।

আপনি লোক পাঠিয়ে খবর দিলেই তো হতো সিস্টার।

আমি নিজেই যেতাম।

না তা নয়। তবে একটা কথা বলতে এসেছি।

বলেন,,,

আমার আশির্বাদ তোমার সঙ্গে সবসময় থাকবে। আমার কোন কারনে মৃত্যু হলে তুমি নিজে দ্বায়িত্ব নিয়ে আমায় রংপুর নিয়ে আমার কফিন সেখানেই দিও। এই ঠিকানা ধরো আর তুমি কিছু করতে গেলে কেউ বাধা যদী দেয় তবেই এই পেপার টি দেখাবে কেমন। আজ তাহলে উঠি। আমি খুব তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে পুরাদস্তুর ছুটি নিয়ে নিবো। আর তুমি একটু সময় করে করে আমার ওখানে এসো তো। গল্পের আড্ডা দিবো।

***

বৃহ্নলা ভীষণ ইচ্ছে করে এই মানুষটিকে কিছু বলতে। ইচ্ছে করে অনেক কিছু। কিন্তু কিসে জেনো তার আটকে আসে, গলা শুকিয়ে যায়। এটাও কি তবে ভালোবাসা ? ইচ্ছে করে তাকে জড়িয়ে ধরতে…. মন ভরে তার মায়া,স্নেহ, হাতের আদুরে পরশ নিতে….

বিদায় নিয়ে সিস্টার চলে যাচ্ছেন। আগের মতন সেই হাঁটা নাই তার। এখন খুব ধীরগতিতে ছোট ছোট পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন।

চোখ টা বন্ধ করে বৃহ্নলা ভাবে,,, কিছু কিছু ইচ্ছে পূরণ না করলেই বা ক্ষতি কি ? বুঝেও না বুঝে থাকলেও বা ক্ষতি কি ? ভালোবাসি কথাটা না বললেও বা ক্ষতি কি? যা হবার তা হবেই। বলবো না আমি, বলবো না। বলেই বা কি হবে?

থাক না সব যেমনতেমন…..

হাতের পেপারটা চোখের সামনে মেলে ধরে, তাতে লেখা তিনি চলে গেলে কোথায় কি করতে হবে, টাকা তুলে কোথায় কাকে দিতে হবে… আরো অনেক কিছু …. সব কিছু র দ্বায়িত্ব বৃহ্নলার নামে…. চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে…..

®১১ তম….

এই এই মেয়ে দাঁড়াও, তোমার ব্যাপারে জেনো কি কি শুনলাম….

তাই কিছু শুনেছেন।

হ্যা,শুনলাম তো কি সব? কি হয়েছে বলো দেখিনি মা।

রাগ হবে না কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। প্রচন্ড রাগ হলে কেঁদেই দেয় কিন্তুু রাস্তায় এই ভর দুপুরে এমন…. সামলাতেও পারছে না। কি করবে আজ ?

অনেক কষ্টে সামলিয়ে বললো, চাচীআম্মা আপনিতো শুনেছেন তবে আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছেন?

আর যা শুনেছেন সব সত্যি সবই…. আমার আরেকটু উপকার করেন পারলে পাড়ায় পাড়ায় বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে বলে আসেন। আমার কিছুতে কিছু যায় আসে না।

এই মেয়ের জেদ দেখো। কত বজ্জাৎ। এজন্যই তো এমন হলো। দু দুবার, ছিঃ… আবার যার সাথে খুব মেলামেশা তারও তো কিছুটা একই। মরেছে বলে বেঁচে গেছে পরিবারটা।

আপনি কি আমাকে মরার উপদেশ দিচ্ছেন চাচীআম্মা? আমি তো চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তুু কি পিছুটান হচ্ছে বারে বারে… কি করি বলেন তো।

এ মা এ মেয়েতো না… জেনো

তাহলে আমি কি?

ছিঃ এমন দজ্জাল বলেই কোণ চুলায় তোর জুটলো না।

হুম জানি তো….

ধূর…. বললাম তো বাড়িতে বাড়িতে জনে জনে বলেন। যান তো।

চলে যাচ্ছে দেখে মনে হলো,

ইস্ যদী বলতাম টাকা দিবো মাইক ভাড়া করার সেটা বললে কি বেশি বলা হয়ে যেতো? কেমন করতো / নাহ যার যা কাজ…. করুক না।

কি জানি…..

ভর দুপুরে রাস্তাটা কেমন ঘুম ঘুম থাকে। এই রে রাস্তার মোড়ে তিনটা কুকুর ঘেউঘেউ করছে। এখন কি করে যাই…. কুকুর যে ভীষণ ভয়ের লাগে।

তবে একমাত্র কুকুরই মনিব ভক্ত। বিড়াল কিছুটা মানুষের মত যতই ভালোবাসো না কেনো, আদর করে যত্ন করো না কেনো,

সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে। সুবিধাবাদী, সুযোগ সন্ধানী বলা যায়।

আচ্ছা,,,

হারিয়ে কি কেউ যায় ?নাকি নিজেকে গুটিয়ে নেয়। নাকি হারাবার জন্যে ই হারিয়ে যায়? মনটা বড্ড অস্থির আজ।

আজ কি একবার কথা বলবো? কিন্তু আমার ফোন তো ধরবে না তবে…. ভালো আছে তো? সুস্থ আছে? ঠিকঠাক খায় তো? টিফিন নেয় তো? আচ্ছা একবারও কি মনে পরে না ??? রাতে কি না খেয়েই ঘুমিয়ে যায় ? সত্যি ভালো আছে তো …. খাবারটা তো বেড়ে দেবারও কেউ নেই।

পালবাড়ির সামনে এসে মনে পড়লো, এখানে দীপ্ত ও তার অদ্ভুত কর্মে ধরা পড়েছিলো।

আর ইনেশ তার চারপাশের মাকড়সার জালকেই আঁকড়ে বাঁচার সিদ্ধান্ত নিলো।

বাহ্ বড্ড মানুষ চিনেছি তো ? আরো কত চিনবো কে জানে / সব এক… সবাই এক।সবাই একই পথের পথিক।

আর আমি কি? আমি কে ? কোথায় পথ আমার? রাস্তাকেই বেছে নিলাম…..

ক্ষতি কি? লাভ ও কি? হিসাবটা কিভাবে হবে? যোগায়ন্ত, বিয়োগান্ত কি হবে ফলাফল…. জানি না তো। উফ্ বড্ডই হাঁপিয়ে উঠছি আজকাল।

ও কাকু তেঁতুল চাটনি আছে… ? সাথে

আমড়া মাখা দেন ….

বাড়ির সামনে এসে মনে হলো আজ সে সাঁজবে। নিজের জন্যে

মাঝে মধ্যে সাজতে ইচ্ছে করে। সাজলে নাকি মন ভালো হয়। আদৌ কি ভালো হয় ? নাকি এক ধরনের বানোয়াট কথা। কি জানি…… আজ সারাটা রাত ছাদে থাকবে। সবাই ঘুমিয়ে গেলে সে ছাদে আসবে।

আজ কি সে সাজবে ? নাকি গভীর অন্ধকারের গভীরতায় নিজেকে গভীর ভাবে তলিয়ে নিবে….

আজ যে তার ভীষণ মন চাইছে আকাশের নীল কালো জামায় নিজেকে সমর্পন করতে। ।।। নেবে কি আমায় ???

®১২ তম…..

বিকালটা বেশ নিমজ্জমান। সন্ধ্যে গড়ায় পৃথিবীর কোলে ঢুলুঢুলু চাহনি দিচ্ছে।

মিসেস রাইতা মনোযোগ সহকারে তার হাতে মাটি নিয়ে অনেকক্ষণ যাবত নাড়াচাড়া করছেন কিছু একটা করবার জন্য। কিন্তুু তার মন মত হচ্ছে না বিধায় তার চেহারায় রূক্ষতার প্রকাশ যথেষ্ট। হঠাৎ গাড়ির হর্ণ এর আওয়াজ। পরিচিত হর্ণ। মনটা হঠাৎ ভালো হয়ে যায়।

কেমন আছেন মিসেস রাইতা ? ম্যাডাম কি ব্যস্ত না কি?

কথা শেষ করার আগেই উত্তর, এতোদিন পর আসলেন যে মিঃ….

বেশ ব্যস্ত ছিলাম ম্যাডাম। তাছাড়া ঝামেলায়ও ছিলাম বলতে পারেন।

এখন বুঝি ফ্রী সময়…..

এই টা ঠিক ধরেছেন, বলতে পারেন তা-ই। একেবারেই….

তবে তাই নইলে কি আর আমার এখানে আপনার পা পড়ে! !!

কি যে বলেন মিসেস, আসলে সত্যি মন পড়ে ছিলো আপনার এখানেই কিন্তুু সব মিলিয়ে হয়ে উঠছিলো না।

****

আশ্চর্য দাড়িয়ে আছেন কেনো?বসুন না ইনেশ সাহেব।

আপনি কি করছেন বলুন তো? বোঝার চেষ্টা করছি।শুধু ই তো মাটির কিছু একটা আকৃতি দেখছি।

নতুন কোন ভাষ্কর্য তৈরির চেষ্টা চলছে নাকি ম্যাডাম?

এই সব ভাব আমি বুঝি না।

মিসেস রাইতা বসতে বলে বেনসন এর প্যাকেট থেকে নিজে নিয়ে এগিয়ে দিলেন, চলবে নাকি ?

ইনেশ একটু হেসে বলে, চলবে মানে দৌড়ে যাবে।

বাইরে থেকে কাজের লোক কিছু শিক কাবাব, চাপ, মোগলাই এনে প্লেটে সাজিয়ে সামনের সেন্টার টেবিলে গুছিয়ে রাখলো।

মিসেস রাইতা কাজের ছেলেটিকে কিছু একটা কি বলতে যেয়েও বললেন না।

***

আপনার কি খবর বলুন মিঃ ইনেশ সাদমান ? আজ একা আসলেন…. আপনার মিসেস কোথায়? শুনলাম চলে গেছেন। ফিরবেন না….. নাকি ফিরাবেন না কোনটি ? বলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু খুঁজে রাইতা।

আপনি কি চাইছেন সে ফিরে আসুক? ইনেশ উত্তর এর জন্য তাকিয়ে আছে…

কেউ কিছু ই বলছে না, মনে হচ্ছে চোখেই সব উত্তর আদান প্রদান করছে দুজন। হঠাৎ মিসেস রাইতা বলে উঠলেন আচ্ছা আপনার সাথে

সবসময় তো মিঃ কিবরিয়ার আসেন। আজ যে তিনিও এলেন না….

ওমনি ইনেশের ঠোঁটের আগায় পাল্টা জাবাব, আপনি তবে আমার আসায় খুশি নন তাই তো….

ভারি আজব কথা বললেন কিন্তু মিঃ ….

আমি কি একবারও তাই বলেছি বলুন দেখি !

*বলেন নি তবে আবার ইঙ্গিত যে বলার মতন করছেন না, তাও তো নয় দেখছি ….

বলেই দু’জনে হেসে উঠলো।

আজ বোধহয় আড্ডার মেজাজে আছেন সাহেব ….

সে বোধ করি আছি।

আচ্ছা আপনার সমস্যা নাই তো কোন মিসেস রাইতা?

নাহ্ কোনই সমস্যা নাই। ভদ্রলোক টাকার নেশায় ছুটছে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, আফ্রিকা থেকে আমেরিকা….

***** তার ওতো সময় বা কোথায় বলুন?

তা ঠিক আপনাদের মতন রাঘোব বোয়ালদের সময় পাওয়া মুশকিল আছে কিন্তুু বুজলেন রাইতা আমাদের চুনোপুঁটি দের কিন্তুু ….. শেষ করতে দিলো না মিসেস রাইতা।

না না আপনিও ঐ দলের। আমি নই। আমি আমার শখ নিয়ে পড়ে আছি। মেয়েটি শান্তিনিকেতন এ আছে। যেতে হবে। সময় করেও উঠতে পারছি না। ক্লাবে যাওয়া, মিটিং সব মিলিয়ে হচ্ছে না। আর মিলশার বাবার তো আমি কোথায় আর মেয়ে কোথায় কোনটারই খোঁজ নেবার সময় নাই।

**** আচ্ছা আপনি যাবেন আমার সাথে ইনেশ ?

আপনার সাথেই তো যাবো…. নয়তো সব ছেড়ে আসি। একূল ওকূল সব। নিতে এসেছি।

***কিন্তুু আমার সংসার এ মায়া যে আমি ছাড়তে পারি না।

নিজেকে প্রশ্ন করেন মিসেস রাইতা এটা মায়া, না মোহ, নাকি শুধু এক চিলতে কর্তব্য …. না কি কোন ভয় ? প্রশ্ন ছুড়ে তাকিয়ে থাকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তারপর বলে ওঠে রাইতা আমি কিন্তু ,

আমি আমার কথা রেখেছি রাইতা ? বলে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।

তবে …..

এবার বুঝি আমার পালা … দু’জনেই ঘরময় এক অদ্ভুত হাসির ঝংকার তুলে।।।

®১৩ তম …..

চুপ করে সোজা যত দূর চোখ যায় তাকিয়ে থাকলে নাকি মন বিশাল হয়। এটা জেনো কার কাছে শুনেছিলাম, ইস্ মনে আসছে না কেনো? আজকাল যে কি হয় মাঝেমধ্যে…. মনে পড়ছে না কেনো? তবে সত্যি কি মন বড় হয়?

এটার কতটুকু সত্য আজ পযর্ন্ত জানা যায়নি। মানে সত্যি বলতে পরীক্ষা করেও এর সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কতক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় যতদূর চোখ যায়।

***

কিছু উদ্ভট জাতীয়মার্কা মানুষ নিয়ে বের হতে হয়েছে।

চারপাশে ও বিচিত্র মানুষের জমজমাট। নানান বিচিত্র কর্মকান্ড।

এমন এমন আছেন কেউ কাপড় চোপড় নিয়েই অস্থির। ঘন্টায় ঘন্টায় কাপড় পাল্টিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

এমন ভাব জেনো জমাট ময়লার ড্রামের পাশেও ছবি বা সেলফি তোলা বিশাল কিছু… আশ্চর্য /

****

দূর থেকে এসব তামাশা দেখছে বৃহ্নলা। কিন্তু কি বলবে কাকে / কিছু কিছু বিষয় আছে দূর থেকে উপভোগ করতে হয় কাছে গেলে লজ্জা পায়।দেখতে হয় তবে বলতে হয় না। ঠিক কিছুটা লজ্জাবতীর মত। দেখতে হয় ছুঁয়ে আদর করতে হয় না।

এই বৃহ্নলা তোকে কিন্তু জিন্স আর টি-শার্ট এ ভালোই লাগে…আজ পড়লি যে,,, কোথাও ঘুরতে গেলে তুই তোর বেশ পাল্টাস লক্ষ্য করেছি।

লক্ষ্য যদী করেই থাকিস তবে আবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কেনো?

আজ কি প্রথম দেখছো আমাকে দিপা?

একটু দাঁড়িয়ে থাকে তারপর

হঠাৎ কাছে এসে বসে।নিপাও এগিয়ে আসছে দেখে নিপার দিকে তাকাতেই নিপারও একই মন্তব্য। বৃহ্নলা ওদের দিকে না তাকিয়ে হাসে,,, প্রশ্ন ছুড়ে দেয় আকাশকে মনে মনে, জানতে ইচ্ছে করে,,, আমায় কেমন দেখাচ্ছে? পছন্দ হয় আমাকে? ভালোবাসবে আমায়? তোমার এই বিশালতায় আমার ছায়া হয়ে তোমার ভালোবাসায় মুড়িয়ে আগলে রাখবে?

****

হঠাৎ

দু’জনে ই এবার চুপ। কারন এমন মন্তব্য এর কোন মানে নাই…

দুজনেই মামাতো বোন। যথেষ্ট আধুনিক। কিছু কিছু আধুনিকতার বৈচিত্র্যময় হয়। সবাইকে মানায় না। কাউকে মানায়, আর কেউ জোর করে মানায়…

অনেকদিন পর বেড়াতে এসেছে। সেই সুবাদে বেশ কিছু দূরে ঘুড়তে বের হওয়া।

নিপা আর বৃহ্নলার বয়স খুব একটা আগে পিছে হয়। তবে দিপা ওদের থেকে পাঁচ বছরের বড়। মাঝেমধ্যে সেই সুবাদে বড়ত্ব ফলাবার চেষ্টাও যে করে না তা নয়। তবে সেটা কার্যকারী হয় না।

***

দূরে সজীব আর নীলা দাঁড়িয়ে কথা বলছে। সজীব কিছুটা বাউন্ডলে প্রকৃতির কিন্তু কেনো জানি নীলার বিষয় এ সে খুবই সিনসিয়ার। এটা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে না তা নয় তাতে তার আবার কিছুই যায় আসে না।

সজীব বরাবরই এমন। শুধু মাত্র নীলার কাছে সে অন্য এক মানুষ।

বৃহ্নলার চোখ আটকে যায় ওদের দিকে। অজান্তে কি নিশ্বাস বের হয়? এটা কি আক্ষেপ নাকি ইচ্ছে? নাকি অন্য কিছু?

হঠাৎ…

নিপা বলে ওঠে চল একটু হাঁটি। দিপাও তাতে সায় দেয়। বৃহ্নলা দৃষ্টি তখনও দূরে। সে বলে তোরা যা আমি এখানে আরো বসবো। দূর পর্যন্ত তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় মনে হয় পানি আর আকাশ আর আকাশ আর পানি মিলে গেছে। ভালোবেসে মিলে একাকার। এতোটাই মিলেশে যে আলাদা করা সম্ভব নয়। কি সাধ্য আলাদা করবার…. ওরা যে সুখের অজস্র উল্লাসে একাকার….

®১৪ ……

মিলশা কেমন আছো মা?

আমাকে কি আপনার মার মত মনে হয়? আমি কোন অর্থে আপনার মা হই? আর আপনি এসে হঠাৎ ই বা আমার গায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো???

এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা আচমকা কেঁপে উঠলো পরে তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে বললো না না, তুমি ছোট মানুষ বলে, হাতে হাত রাখতেই মিলশা এক ঝাটকায় তিক্ততা প্রকাশ এমনভাবে করলো যা চোখে মুখে কথায় সব বিদ্যমান।

———-

আসছেন মার সাথে, মার সাথেই ঘুরুন। আর আমি যথেষ্ট বড়। মার সাথে এসছেন বলে কিছু বলছি না, তবে আমার সাথে আপনার কিছু না, বুঝলেন?

কোন সম্পর্ক না এবং আরেকটি বিষয় হলো কোন আলগা ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টাও করবেন না , আমি মোটেও সহ্য করি না, দেখনাই কাজ করার নামে কাছে আসবেন না। So be careful…

মিঃ কি জেনো, ওহ্ ইনেশ সাদমান।

I think you understand what I’m saying! And by tha way, Don’t call me maa again. Ok? Mind it.

——-

মিলশা রুমে এসে ভাবছে কি সাহস লোকটার। কি অসভ্য… আর মা এখন এর সাথে …. ছিঃ এমন অধঃপতন।

——

সিগারেট হাতে নিয়ে অন্যমনস্ক, এমন সময় কানে এলো, কিছু মনে করবেন না ইনেশ। আমি আমার মেয়ের হয়ে দুঃখিত।

না না আপনি দুঃখিত হবেন কেনো? ছেলেমানুষ তো।

কি যে বলেন ছেলে মানুষ /

আসলে কি, ওর বাবার সাথে আমার সব সময় ঝগড়া দেখে এসেছে। ছোট বেলাটা এটা দেখেই কেটেছে সময় । রাগ হয়ে আমি কোন না কোন ক্লাবে বা বাইরে আর ওর বাবাও অন্য কোথাও। মেয়েটি থেকেছে বাসা বাড়ির লোকের কাছেই। পরে বেশ বড় হলে দেখেছি ঘর থেকে বের হয় না, চুপচাপ থাকে। আমাদের ঝগড়ার সময়টা সে গিটার বাজাত। অবাক লাগত ঐ সময়টাই সে গিটার বাজাত।

——

কি হলো বলুন চুপ হয়ে গেলেন কেনো রাইতা?

পরে আর কি আমরা চিন্তা করি ওকে বাসা থেকে দূরে বাইরে কোথাউ রাখি।সেখানেই পড়াশোনা করুক। এই তো…

মেয়েটিকে ইচ্ছে করে কাছে টানতে কিন্তু সে তার জগৎ নিয়ে ব্যস্ত।

——- মেয়েটি তার জগৎ নিয়ে ব্যস্ত হতে বাধ্য করেছেন আপনারা। যাকগে চলুন দুপুর হয়েছে দেখি কি মেনু আছে এদের?

—— আমি ঐ লোকটির সাথে এক সাথে বসে খাবো না / তোমার গেস্ট মা তুমি যাও। আমি এই টেবিলেই ঠিক আছি।

মিলশা এমন করে না ডিয়ার!

দেখো, আমি ভেবেছিলাম এতোদিন পর আসছো হয়ত তোমার আমার প্রতি টান হয়েছে। কিন্তু না তুমি আমার সাথে দেখার করার ছলে ঐ লোকটার সাথে অলিখিত হানিমুনে আসছো।

—–এমন কথায় হাত উঠতেই মিলশা দাড়িয়ে হাসতে থাকে। শুনো এখনও তোমাকে মা বলছি, কারন তুমি আমার মা। ঐ লোকটি আমার কেউ না। আমি তো জানি বাবা তোমায় কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। ঝগড়া করতো মাঝেমধ্যে গায়ে হাত তুলতেও বাকি রাখতো না। যে পুরুষ মানুষ গায়ে হাত তুলে, কথায় কথায় চড় মারে সে কেমন মানুষ মা ? তোমার দম বন্ধ হয়ে আসত জানি। কিন্তুু কিন্তুু…..

আমায় তো একটি বার বলতে পারতে মা। থাক…

—- হ্যালো, এক্সকিউজ মি,খাবার আমার রুমে পাঠিয়ে দিন। আর মা বিকালে আমি হাঁটতে বের হবো। আমার সাথে আসবার চেষ্টা করো না।

—- মিলশা চলে যাচ্ছে,,, রাইতা তার চলে যাওয়ার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে। মৃদু ছন্দে শরীর কাঁপছে। এটা হয়ত কান্নার কাঁপন। ইনেশ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাইতাকে, অস্ফুটস্বরে বলে ঠিক হয়ে যাবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি এতো ভেঙে পড়ো না, আমি তো আছি। আমিও তো সব ছেড়েছি তোমার জন্য। আমি আছি, আমি থাকবো….

বেশ কিছু পর….

হঠাৎ যে পথ দিয়ে মিলশার চলে যাওয়া দুজন দাঁড়িয়ে দেখছিল সেই পথেই আবার উৎকন্ঠিত ভাবে ফিরতে দেখে রাইতা মেয়ের কাছে এগিয়ে যায়।

—- মা ফোন এসেছিলো কাশেম দাদুর, বাবার অবস্থা ভালো না। বাবা বাথরুমে পড়ে গিয়েছিল নাকি। ওরা অনেক পরে বুজতে পেরেছে। নাস্তা নিয়ে কাজের ছেলেটা গিয়েছিল সম্ভবত তার পরেই জেনেছে। মা আমাদের হাতে সময় নেই। আমি সব ব্যবস্থা করতে বলেছি আমার এক বন্ধুকে। ও সব ঠিক করেছে। আমাদের এখনই ঢাকায় রওনা দিতে হবে মা।

—– মা কথা বলছো না কেনো?

মা,,,, তুমি কি যাবে না ? মা……

কিছু কিছু সময় ভালোবাসার ও পরাজয় হয়, জয় হয়ে যায় কর্তব্যের, মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে দ্বায়িত্বের আর এতোগুলা দিনের একসাথে থাকার মায়ার … এ যে এক অদ্ভুত টান…. বন্ধনের মায়া ……

®১৫ …….

বৃহ্নলা বাইরের ঘরে শিবু বসে আছে। নাস্তা পানি দিয়েছে আম্বি কিন্তু ও কিছু ই নেয়নি শুধু চা চেয়েছে। খুব অস্থির মনে হলো। দেখ তো কি হয়েছে ছেলেটার? বাপ মা কেউ নাই। কারো সাথে তেমন মেলামেশাও করে না। হ্যা রে বৃহন আজ দুপুরে ওকে খেতে বলি এখানে?

—- মা তোমার কি মনে হয় যে ও না খেয়ে আছে?

— আহ্ এমন করে বলিস কেনো তুই?

—- মা তুমি যাও। আমি আসছি।

—- কি হয়েছে তোর? ঘেটি ব্যাকায় বসে আছিস কেনো?মটর সাইকেল দাঁড় করালে যেমন ঘেটি ব্যাকায় লক করে তেমন করে আছিস। কি হয়েছে ?

—— শোন শিবু কোন প্রশ্ন করার পর উত্তর টা দেওয়াও একটা ভদ্রতা। কি এমন হয়েছে যে গাল ফোলা গোবিন্দের বাপের মত বসে আছিস।

—- কিছু তো হয়েছেই।

——- তো সেই কিছু তো হয়েছেটাই জানতে চাইছি গর্দভ।

—— নিউজ আছে। আমার বদলি হয়েছে সাতক্ষীরায়।

—— হুম তো ? এটা তো ভালো সংবাদ। পেঁচার মত মুখ করে আছিস কেনো?

—- আমি বদলিটা আটকানোর প্রাণপন চেষ্টা করলাম রে বৃহ , কিন্তু কোনভাবেই হলো না। যেতেই হবে।

—- সমস্যা টা কোথায় তোর ?

—- না সমস্যা হলো, আমার এই জায়গা ছেড়ে কোথাও মন টেকে না।

—– এমন কথা শুনে বৃহ্নলা কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। শুধু শিবুর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

—- এমন সময় শিবু বলে ওঠে, এ সপ্তাহের মধ্যে গুছিয়ে ফেলবো সব। বৃহ আরেকটা কথা ছিলো…

—- ঢোক না গিলে বলে ফেল,,, আমতা আমতা কথা শুনলে বিরক্ত লাগে।

—- অনিন্দ্য র মন ভীষণ খারাপ। আবার মনে হয় কিছু হয়েছে। গত সপ্তাহে এতো বকাঝকা করেছিস যে বেচারাকে….

——- তো আমার কাছে কি, তুই বল । ওর কাজকর্ম আচরণ মোটেও পূর্ণ বিকশিত মানুষের মত নয়।

—- নাহ বৃহ, বলছি কি চল তুই আর আমি মিলে একটু বুঝাই। এভাবে আর কতো বল তো ? একটার পর একটায়,ব্যর্থ হবে আর বলবে মরে যাবো।

—– তুই বল শিবু অনিন্দ্যর কি এই বয়সে এসে এসব মানায় ? সেই অল্প বয়স থেকেই পিছলা জাতের। শিবু আমার মনে হয় কি জানিস ১০০ পেরিয়ে গেছে…

—– ধূর কি বলিস /

—- না সত্যি গুনে দেখ।কবে যাবত প্রেম করছে। কিন্তু একটাও টিকে না। বিয়েও করে না। ও নাকি প্রেমিক পুরুষ। শালা প্রেম না করে নাকি বিয়েই করবে না।

যাক হোক এখন কোথায় ও?

—- চল না বৃহ ওর মনে হয় মন খারাপ। আমরা ই তো ওকে বুঝাবো বল। চল যাই।

—-তুই একটু বস আমি রেডি হয়ে আসছি।

——- বৃহ চল পার্কের ঐ কোনাটায় বাকি আছে চল দেখি আছে কি না।

—- এই তুই এখানে কি করিস? তুই কি কান্নাকাটি করিস….. ওমনি শিবু হেসে ওঠে বলে আর কত এসব তাল করবি মেয়েদের জন্য। মান সম্মান তো রাখলি নারে!

—–বৃহ হাত বাড়িয়ে বলে , নে ধর কান্নাকাটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কি না জানি না তবে কোথায় জেনো দেখেছিলাম, মানে পড়েছি যে,,,,,

———– কান্না মানুষের মানসিক কষ্ট প্রশমন করে। অবাক হওয়ার কিছুই নেই, এটিই সত্য। কান্না মানুষের মনের দুঃখ লাঘব করে। একদল গবেষক ডাক্তারদের গবেষণায় সাম্প্রতিক নাকি এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় একই জায়গা থেকে কান্না ও হাসির অনুভূতি আসে। হাসি যেভাবে রক্তচাপ কমায়, শরীরকে ঝরঝরে ও তরতাজা রাখে কান্নাও নাকি তাই করে।——

তুই কান্নাকাটি কর ভাই। আরো টিস্যু দিবো তোরে। তো এবারের টা ছুটে গেলো কেনো ? তুই আবার —

—— না না আমি বলছিলাম আমারে তো কেউ বুঝে না, আমি প্রেমিক মনের মানুষ। তো জানতে চাইলো আগের জন কেনো ব্রেকআপ করছে তো আমিও বললাম, যে আমার সাথে ঝগড়া এ সময় রাগে আমার মুখ চেপে হা করায় টিস্যু দিয়ে বলে আমারে এতো ভালোবাসো আমি বলতেছি টিস্যু খাও। আমিও চাবাই তারপর পানি দিয়ে ——

—— হায় আল্লাহ বলিস কি / এই বয়সে / ছি অনিন্দ্য তোর তো কোন লজ্জা ও নাই… এই বয়সে এসে এমন ছ্যাপলামি।

—– শিবু ওরে একটু বুঝা না, আমি তো ভালোর জন্যে করলাম। যাতে রাগটা কমে যায়।

—- তুই না একটা ছাগল অনিন্দ্য। এই শিবু তুই কি এই ছাগলের সাথে থাকবি? আমি চললাম।আমার না মাথার মধ্যে কেমন লাগছে। শোন অনিন্দ্য আমি যদী আর কিছুক্ষণ থাকি তাহলে চড় থাপ্পড় দিয়ে বসবো। ভাগ্যিস সীমা দিদি আসে নাই। আজ তোরে মেরেই ফলতো। আসলে আমারও মন চাইছে। এই আয়, বয় তোরে আমি নিজে হাতে গাড়ির সামনে ধাক্কা মারবো।

——

আর শোন অনিন্দ্য ছ্যাকা খাইয়া পুরা ল্যাটকায় থাক কোন সমস্যা নাই। তুই তো প্রেমিক, এসব প্রেমিক হলো লোকাল বাসের মত। যাত্রী উঠাইতে থাকে। পাইলে চলে,,, আর না পাইলে পরের স্টপেজ এ যায়। তুই করতে থাক। আর তুই মরিস বাঁচিস এই সব ফালতু কাজে আমি আসবো না।

—— এই বৃহ্নলা চললি কই একা একা। আমিও তো যাবো। ঐ দাঁড়া ———–

®১৬……

কি রে এন্ট্যিনা একা বসে কি ভাবা হচ্ছে?

এটা একটা বিশেষ নাম। বৃহ্নলা তার প্রিয় বোনকে ভালোবাসার আকিকা দিয়ে ডাকে তাকে।

—-বিটলু বাবু যাও তো সোনা নানু দেখো কি রান্না করছে। যাও বাবু…

—- আমার নাম বল্টু। বিটলু না।

—- ও বাবা বিটলু সোনার তো রাগও আছে দেখছি। এ দেখছি বাপের মত ছ্যাঁকানি রাগ জনা।

—- আর বলিস না, আমি দুটাকে নিয়েই বিরক্ত।

ওমনি একটা কথা কানে আসলো। দরজার কোণা থেকে। বল্টু বলে উঠলো। মা আমি আর বাবা আমরাও বিরক্ত / বুজলে ?

—– তবেরে ছেলে আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।

— আহ্ জনা, ছেলেমানুষ। তুইও এখন ওমনি থাকলি।

—— দেখ বৃহন, ভালো লাগে না। ওর বাপও জ্বালায়, ছেলেও তাই।

—– ভালো তো।

—- তুই এর কি বুজবি বলতেই জনা চেপে গেলো। সরি ইয়ার আমি আসলে, সরি বনু সরি।

—– আরে থাম তো কোন ব্যাপার না।

জনা বলতে গেলে মানুষ হওয়া বলতে যেটা বুঝায় বড় হওয়াটা তার মামার বাড়িতেই। বৃহ্নলা আর জনা একই বয়সি। দুজনের মতের অমিল হয়েছে খুব কম। একজন একটু বখাটে, রগচটা, ডানপিটে স্বভাবের। আরেকজন এগুলো সবই বিদ্যমান তবে তার তুলনায় কম। জনা বরাবরই এ সব গুলায় পারদর্শী। গ্রামে তার আলাদা পরিচয় আছে। সেটা তার মাতব্বর বাবার জন্য খুব একটা সুখকর নয়। বড়রা সবাই মিলে ঠিক করে জনাকে শহরে পাঠায় দিবে মামার বাসায়। সেই থেকেই বড় হওয়া একসাথে, বাদরামিও একসাথে, প্রেমেও একসাথে। বিষয়টা আজব তাই না….

আসলেই আজব। বিষয়টি হলো দুই বোনের কেউ ই কাউকে মন দেওয়ার ব্যাপারে সিরিয়াস ছিলো না। একজনকেই দুজন ঘুড়াতো। পরে দুজন মিলে টাইট দিয়ে ছেড়ে দিতো। এটাই ওদের মাস্টার প্লান।আর বেচারা আশিকরা ধরাটা খেয়ে দেবদাস হতো।পারায় কখনও খুব একটা ভালো নামডাক ছিলো না দুজনের কারোরই।

—– যাক সেই জনার বিয়ে হয়ে যায়। পাড়ি দেয় দেশি বিলেতি জামাই এর সাথে। বেশ আছে। এসেছে মাস দুয়েক হলো। এতোদিন শ্বশুর বাড়ী মধুর হাড়ির মধু খেয়ে অবশেষে মামা বাড়ি।

——জনা মনে আছে সব?

—- এগুলো কি ভুলে যাওয়ার মত বলতো?

এমন সময় ফুপুর গলা ভেসে এলো, এই তোরা সারারাত ছাদে গল্প করিস পরে, এখন একটু খেয়ে নে। রাত হলো তো অনেক।

—– ফোনের আলো জ্বলে উঠতেই জনা ফোনটা সরিয়ে রাখলো।

—- কি রে কলটা রিসিভ কর জনা!

—-ইচ্ছে করছে না।

মানে কি? এসব কি? হাসনাত ভাই ফোন দিচ্ছে এতো দূর থেকে আর তুই…. এসব কি জনা ? তোদের কি কিছু হয়েছে ?

—– না না কিছু না। তার কথা আমি আরো কিছু দিন তার বাপের বাড়ি থাকি। সে থাক সমস্যা তো নাই। আর মাত্র একমাস হাতে। এখানে মামা/ মামির কাছে থাকতে না পারলে হয়। তাছাড়া তুই ও আছিস। আমার তো তোর কাছে আসাটা জরুরি।

—– হ্যা বুজলাম কিন্তু,,,

—- কোন কিন্তু না, হাসনাত এর সাথে আমার কথাই ছিলো। আমি আমার মামার বাসায় থাকবো, এখানে সময় কাটাবো।তাছাড়া আমি তো ওর বাসায় সময় দিয়েছি।

—- আহ্ বাদ দে তো,,,এটা সাংসারিক একটা ফালতু বিষয়। শুধু সুবিধা চায়। তো হাসনাত ভাই আসবে না?

—– জানি নারে বিয়ের আগেই ভালো ছিলো। বিয়ের পর বজ্জাত হয়ে গেছে।

—– (হা হা হা ) বৈশিষ্ট্য… দেখ যে তোর নামেও কত অভিযোগ করছে….

ওটাই তো পারে।

—-বড় মামা আপনার শরীর কেমন?

— বস এখানে আমার কাছে। আছি আল্লাহ এর ইচ্ছে ভালো। এই এখন বেঁচে আছি। তোর মামীর যাওয়ার পর আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার শরীর।

—- বড় চাচা,,, চাচী যখন ছিলো তখন কিন্তু আমরা দেখেছি। সবসময়ই শুধু চাচীর পিছে লেগে থাকতে। আর এখন চলে যাওয়ায় বুঝি ভালোবাসা বেড়ে গেলো।বৃহ্নলা বলেই তাকিয়ে থাকে উত্তর এর জন্য…

জনা চোখে ইশারা দিচ্ছে বৃহন কে চুপ করার। কে কার কথা শুনে।

—– এমন সময় হেসে চাচা বলে ওঠে, এগুলো তোদের এই জামানায় বুঝবিনা। এভাবেই আমরা শেষ পর্যন্ত এক থাকি।

—– হ্যা থাকো। কোন সমস্যা নাই। কাল সকালে জনার সাথে কথা বলো। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়োতো।

—- হ্যা মামা আপনি ঘুমিয়ে পড়েন, সকালে কথা বলবো।

—-এই এই দাঁড়াও, আমি দাদুর সাথে ঘুমাবো।

—- বিটলু তুই।

—- এই বলেছি না বল্টু।।। তুমি কি বলোতো বৃহ মনি।

— ও— মা ছোটা বাবু ভেরি স্যাড।

ওমনি বল্টুও বলে বসলে, মেম সাহেব ভেরি ব্যাড।বুজলে? তাই বুঝি…

—– বিটলু, বিটলু, আমি এটাই বলবো। বুজলি।

আচ্ছা বলো,,, যতোপারো বলো। এখন তোমারা যাও তো। আমি আর দাদু ঘুমাবো।

—– ব্যাপারটা কি / মতলব কি তোদের…

— কোন ব্যাপার নাই যাও তো তোমরা।।।

এই বৃহ্নলা কোনটা তুই আর কোন টা আমি?

আজ অনেক দিন পর সেই খেলাটা মনে পড়লো।

— পশ্চিমে আমি আর পূর্বে তুই। আমার পাশের তারা নাই। জ্বলছে না কিছু জনা,সব অন্ধকার । দেখ, তোর পাশের তারাটি একটু দূরে হলেও জ্বল জ্বল করছে।

ভালো কথা জনা, হাসনাত ভাইকে চলে আসতে বল। তুই এখানে সে সেখানে ঠিক না। একা ঘোড়াঘুড়ির মজা কি বুঝি না। কি যে তোরা। কোথায় যা করবি একসাথে তা না। যত্তসব, শোন তুই কথা বল আমি একটু আসছি।এখননি কথা বলবি।

—– অন্ধকার এ আকাশটা খুব অচেনা লাগে তাই না রে…

—- জনা মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে বৃহ্নলা কি জেনো খাচ্ছে আর কথা বলছে। এই তুই কি খাচ্ছিস।

— উঁহু,,, বলবো না, নিজেই চেখে দেখ।

—- এমা কদবেল মাখা। তুই এখনও একই রকম রে বৃহ। কতদিন পর।

রাতটা এভাবেই দুবোনের নানান গল্পের জোনাকিরা সঙ্গী সাথী হয় আকাশ আর কদবেলএর মাঝেই ডুবে যায় । স্মৃতি আজ আবারও নতুন বাস্তবে এসে হিমেল হওয়ার ছুঁবো বলে হাত বাড়ায়।

#নীলিকা নীলাচল  ***

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন