তমিজ উদ্দিন সাহেব ভয়াবহ বিপদে পড়েছেন। দলবলসহ বগুড়া শহরতলীর বনানী এলাকায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জ পশুর হাটে ভাগের কোরবানির গরু কিনতে এসেছিলেন। বয়েসে কিছুটা প্রবীণ বলে তার হাতেই টাকার ব্যাগ ছিল। ১৬ x ২২ ইঞ্চি সাইজের কালো চামড়ার ব্যাগ। এই মাত্র তিনি খেয়াল করলেন তার ব্যাগ কাটা। ব্যগের মধ্যের সাতাত্তুর হাজার টাকা পুরাটাই গায়েব।

তমিজ উদ্দিনের সাথে এসেছেন বগুড়া পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের লিটেরেচারের শিক্ষক জনাব সাইফুল ইসলাম, রহমান নগর মসজিদের মুয়াজ্জেন সাহেব মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, বগুড়া টি এন্ড টি অফিসের ক্লার্ক জনাব হাবিবুর রহমান এর জামাই ইমতিয়াজ, তমিজ উদ্দিনের আপন ছোট ভাই রুবেল এবং রুবেলের এক বন্ধু দেলোয়ার। রুবেল আর দেলোয়ারের দায়িত্ব ছিল গরু কেনার পরে গরুর দড়ি ধরে হেটে হেটে বাড়ি নিয়ে আসবে। এদের সাথে সঙ্গ দিবে ইমতিয়াজ আর মুরুব্বি হিসাবে থাকবে সাইফুল ইসলাম। এঁদের মধ্যে রুবেল আর দেলোয়ারের এক্সট্রা দায়িত্ব থাকবে কেউ গরুর দাম জিজ্ঞাসা করলে বিনয়ের সাথে দাম বলবে । তমিজ সাহেব মুয়াজ্জেন গিয়াসকে নিয়ে শেরপুরের দিক থেকে আসা কোনো বাসে করে অথবা রিকশায় বাড়ি ফিরবে কারণ পায়ের ব্যাথা জনিত কারণে তমিজ উদ্দিনের কোরবানির গরুর সাথে হাঁটার উপায় নেই। আর তা ছাড়া প্রত্যেকে যেখানে এক ভাগ করে দিয়েছেন সেখানে তমিজ উদ্দিন দুই ভাগ দিয়েছেন। মানি লোকের মান রাখতে হয়।

গিয়াস উদ্দিন এসেছেন রহমান নগর মসজিদ কমিটির চ্যেয়ারম্যান আলফাজ হোসেনের পক্ষ থেকে । গিয়াসের বাড়ি ফেনীতে। মুয়াজ্জিন হিসাবে আলফাজ হোসেনের বাড়িতে তিন বেলা গিয়াস উদ্দিনের খাবার ব্যাবস্থা । বরাবর গিয়াস উদ্দিন ঈদের মধ্যে ফেনীতে তাঁর বাড়িতে ফ্যামিলির সাথে কাটান, কিন্তু এবার ঈদেই বাড়ি যাওয়া হয়নি। তার এক মামাশ্বশুর এবার একজনের বদলা হজ করতে গিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী কুলসুম তার মামার পরিবারের দেখাশুনার জন্য তার ছোট দুই ছেলে সহ মামার বাড়িতেই ঈদ করবেন। তাই, গিয়াস উদ্দিন আর ঈদে বাড়ি না যেয়ে মসজিদের পাশেই ছাপড়া ঘরে থেকেই কোরবানির ঈদ উজ্জাপনের সিদ্ধান্ত নিলেন।

আজ তমিজ উদ্দিনদের সাথে কোরবানির গরু কিনতে আসার আগে রহমান নগর মসজিদের আসর নামাজ আর মাগরিব নামাজ এর আজান কে দিবে তা গিয়াস সাহেব ঠিক করে এসেছে বলে তাঁর কিছুটা হালকা লাগছে। শুধু হালকাই না, বগের মতো সাত পাঞ্জাবিতে তাঁকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে । তিনি জর্দা দিয়ে পান খেয়ে একটু পর পর পিক ফেলছেন আর গ্রূপের সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন, ভাইজানেরা টাকা পয়সার দিকে না তাকায়ে গরুর সৌন্দর্যের দিকে তাকান, যে প্রাণী আল্লাহতায়ালার নামে কোরবানি করা হবে তার পূর্ব শর্ত হচ্ছে সুস্বাস্থ ও সৌন্দর্য । হযরত ইব্রাহিম (আ:)-এর নিকট মহান আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে নির্দেশ এসেছিলো ‘তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কোরবানি করো।’

বগুড়া শহরের ফুড ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ সরাফত হোসেন পৌনে দুই লক্ষ টাকা দামি এক মাঝারি বিরাট ষাঁড় এর দরদাম করছেন। দরদাম আসলে উনি করছেন না। দরদাম করছেন তাঁর অফিসের পিয়ন ইবাদত আলী আর একাউন্ট্যান্ট ইদ্রিস । ইবাদত আলী শুরু করেছেন এক লক্ষ পনেরো হাজার থেকে। কিন্তু ষাঁড়টির মালিক চোখমুখ শক্ত করে জেদ ধরে আছে, পৌনে দুই লক্ষ টাকার এক কানা কড়ি পয়সাও কম হবে না । শেষ পর্যন্ত ষাঁড় টি কত টাকায় বিক্রি হয় সেটা দেখার জন্য উৎসুক ক্রেতা ও দর্শক সরাফত সাহেবের কাছে জটলা পেকে ধরেছে। সরাফত সাহেব ইদ্রিস আর ইবাদতের উপর গরু কেনার সম্পূর্ণ ভার দিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ভুসভুস করে সিগারেটের ধূমা ছাড়ছেন। হটাৎ করে সরাফত হোসেনের মনে হলো দুদুকের লোক সাদা পোশাকে আশেপাশে হয়তো ঘুরছে !

তমিজ উদ্দিন অত্যান্ত গোছালো ছিমছাম টাইপের মানুষ। অত্যান্ত নিষ্ঠার সাথে পোস্ট মাস্টার হিসাবে দীর্ধ পঁয়ত্রিশ বছর সরকারি কাজ করে রিটায়ার্ড করেছেন। রিটায়ারমেন্টের আগে শেষ তেরো বছর নিজ এলাকা বগুড়াতেই ছিলেন। তমিজ উদ্দিনের মেঝো ছেলে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে কর্মরত ডাক্তার রিয়াজ এবার কোরবানির ঈদ বাবদ বাবাকে বাহান্ন  হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। সেই টাকা থেকে দুই ভাগ কোরবানির জন্য বাইশ হাজার টাকা ব্যায় করা হবে। বাকি ত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে বাথরুমে কমোড ও টাইলস বসানো বাবদ খরচ করা হবে আর যা বাকি থাকবে তা ঈদের বাজারে খরচ করা হবে।

তমিজ উদ্দিন হাটু ভেঙে তাৎক্ষণিক বসে পড়লেন। দলের সবাই তাকে ঘিরে ধরলেন। ইমতিয়াজ বললো ‘ চাচা কি হয়েছে, কোনো সমস্যা ? তমিজ উদ্দিন উত্তর দিলেন না । তিনি দর দর করে ঘামছেন। পকেটে রুমাল বা টিসু প্যাপের নেই। পাঞ্জাবির কোনা দিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন। মিনিট দুয়েক পরে তিনি ইমতিয়াজকে বললেন, ‘জামাই সর্বনাশ হয়েছে, ব্যাগ কেটে আমাদের সব টাকা হাওয়া !!

মুয়াজ্জিন গিয়াস উচ্চস্বরে কোনো কিছু হারানোর দোয়া পড়তে লাগলেন :
বিসমিল্লাহি ইয়া হাদিয়াদ দ্বালাল, ওয়া রা-দ্দাদ দ্বাল্লাহ; উরদুদ আলাইয়া দ্বাল্লাতি, বিইজ্জাতিক ওয়া সুলতানিকা; ফাইন্নাহা মিন আত্বায়িকা ও ফাদ্বলিক।

তমিজ উদ্দিনের হারিয়ে যাওয়া সাতাত্তুর হাজার টাকার মালিক মোট ছয়জন। এর মধ্যে তমিজ উদ্দিনের দুই ভাগের জন্য বাইশ হাজার, বাকি পাঁচ ভাগ একেকটি এগারো হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে রহমান নগর মসজিদ কমিটির চ্যেয়ারম্যান আলফাজ হোসেন, রুবেলের বন্ধু দেলোয়ারের বাবা সাবের হোসেন, পাড়ার ঔষুধ ফার্মাসির মালিক খালেক, বক্সী বাজারের কাঁচামালের ব্যাবস্যায়ী জুবায়ের হোসেন এবং পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের লিটেরেচারের শিক্ষক জনাব সাইফুল ইসলামেরে কাছ থেকে।

তমিজ উদ্দিনদিনকে হাটের ম্যানেজমেন্টের ঘর থেকে একটি টুল নিয়ে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। ম্যানেজমেন্টের এক লোক লেবুর শরবত খেতে দিয়েছেন। তমিজ উদ্দিন কয়েক ঢোক খেয়ে চোখ বুজে বসে আছেন। জামাই ইমতিয়াজ ছুটেছে পুলিশে খবর দেয়ার জন্য। ব্যাগ কাটা পকেট কাটার টাকা টুথ পেষ্টের মতো টিউব থেকে একবার বের হলে আর ভিতরে ঢুকানো যায় না।

তমিজ উদ্দিন তাঁর দলবল নিয়ে কোরবানির গরু না কিনে দুঃখে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বগুড়ামুখী লোকাল বাসে করে বাড়ি ফিরছেন। লোকাল বাসে এতটুকু রাস্তার জন্য সিট্ পাওয়া যায় না। কিন্তু তমিজ উদ্দিনকে একটি উঠতি বয়সের ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে সিট ছেড়ে দিলো। তমিজ উদ্দিন জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখে সরাফত সাহেব দলবল নিয়ে একটি বিশাল ষাঁড় নিয়ে হাট থেকে ফিরছেন। একটি রোগামতো লোক সেই ষাঁড় এর দড়ি ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর এক স্বাস্থ্যবান টাইপের লোক পরম উৎসাহে চেঁচিয়ে মানুষের প্রশ্নের উত্তরে বলছে ‘ গরুর দাম এক লাখ একাশি হাজার টাকা। তমিজ উদ্দিন খেয়াল করলেন লোকটি যখন গরুর দাম বলছে ফুড ইন্সপেক্টার সরাফত সাহেবের চোখেমুখে বেশ প্রশান্তির ছাপ।

বাড়ি ফিরে তমিজ উদ্দিন কোরবানির ভাগের যারা যারা টাকা দিয়েছিলেন সবার সাথে দেখা করলেন, বিস্তারিত ভাবে টাকা হারানোর ব্যাপারটি বলে তাঁর কাছে ছেলের পাঠানো অবশিষ্ট তিরিশ হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা করে সবাইকে দিয়ে বললেন, ‘ভাইজান, এই টাকাটা রাখেন, আমার কাছ থেকে যেহেতু টাকা হারাইছে, আমি আপনাদের বাকি টাকাগুলি আস্তে আস্তে দিয়ে দিবো । এতে সবাই মোটামুটি বুঝলেন এবং তমিজ উদ্দিনের কাছ থেকে প্রত্যেকে ছয় হাজার টাকা হাট বাড়িয়ে নিয়ে পকেটে রাখতে রাখতে বললেন, ‘ তমিজ ভাই, এই টেকা দিছেন এডাই মেলা, বাকি টাকা আর দেওয়া লাগবি না । আপনে তো আর ইচ্ছা করে টেকা হারাননি, এডা হামাকারে কপালত আছলো, তাই হোসে, এডা নিয়ে আর মন খারাপ করেন না। এডা একসিডেন্ট।’ কিন্তু সাইফুল মাস্টার কিছুতেই তমিজ উদ্দিনের কাছ থেকে সেই ছয় হাজার টাকা নিলেন না। অথচ, যারা যারা তমিজ উদ্দিনকে কোরবানির ভাগের টাকা দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে আর্থিক ভাবে অসচ্ছল অবস্থায় আছেন সাইফুল মাস্টার।

সাইফুল মাস্টারের এগারো সদস্যের পরিবারে একমাত্র তাঁর রোজগারের টাকায় সংসার চলে। বড় মেয়ে বগুড়া মেডিকেল কলেজে পড়ে, বাকি ছেলেমেয়েরা কেউ প্রাইমারী স্কুল, হাই স্কুল, কলেজে পড়ে। সাইফুল ইসলাম স্কুলের মাস্টারির পরে বাসায় গুটিকয়েক ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ান। তবে, বিজ্ঞান শিক্ষকদের কাছে যেমন ছেলেমেয়েরা ঝাঁকে ঝাঁকে পড়ে তাঁর ওতো কামাই নাই, আজকাল বাংলা ইংরেজি ব্যকরণ শেখার আগ্রহ বা ডিমান্ড সমাজে তেমন নেই।

মুয়াজ্জিন গিয়াস উদ্দিন যথারীতি এবার নামাজের আজান দিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করে নামাজিদের মাঝে আজকের ঘটনাটি সবিস্তারে বর্ণনা করলেন, বেতের নামায পড়ার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পরে নিলেন। পরের দিন ঈদ, সে ও প্রথম তাঁর ফ্যামিলি ছাড়া এখানে ঈদ করছে। ঈদের দিন টা যেন ভালোভাবে কেটে যায় এই নিয়তে এই নফল নামাজ পড়া।

গিয়াস উদ্দিন উঠানা মানুষ। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষদের কোরবানির গরু ছাগলের জবেহ করার কাজটি মসজিদের ইমাম সাহেব করে থাকেন। এ জন্য ইমাম সাহেবকে বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়, যদিও আজকাল অনেকেই নিজেদের কোরবানি নিজেরাই করে থাকেন। তবুও, মুয়াজ্জেন গিয়াসের ক্ষীণ আশা ছিল তাঁর কাছেও গরু/ছাগল জবেহ করার প্রস্তাব আসবে, তাঁর পরে প্রতি জবেহ করার পরে একেকজন তাঁর হাতে পঞ্চাশ /একশো টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বলবে, ‘মুয়াজ্জেন সাহেব সময় করে বাসায় আসেন এক সাথে চারটা ডাল ভাত খাবো। গিয়াস তখন কাচুমাচু করে বলবে, কি যে বলেন, কোরবানি করা হচ্ছে সওয়াবের কাজ এর মধ্যে আবার টাকাপয়সা/খাওয়াদাওয়া কেন?’ মুখে এসব কথা বললেও গিয়াস উদ্দিন প্রতিটি বাসার ঠিকানা ও নাম ধাম ছোট্ট একটি নোটবুকে লিখে রাখবে। এ জন্য গিয়াস দোকান থেকে ছোট একটি নোটবুক ও একটি বলপেন কিনে রেখেছে ।

ঈদের দিন বেশ উত্তেজনা নিয়ে গিয়াস বড় ঈদগাহ মাঠে নামাজ পরে আসে পাশে অপরিচিত লোকদের সাথে কোলাকুলি করলেন, মুসাফা করলেন। তাঁর এলাকার দিকে হেঁটে রওনা দেওয়ার পথে তমিজ উদ্দিন সাহেবের সাথে, সাইফুল মাষ্টারের সাথে আরো অনেকের সাথেই দেখা হলো। গিয়াস সবার সাথেই কোলাকুলি করলেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ কোরবানি গরু/ছাগলের জবেহ করার কথা বলছে না। শুধু সাইফুল মাষ্টার তাঁকে বললেন , ‘মুয়াজ্জেন সাহেব, বাসায় আসেন।

একটি দোতালা বাসার সামনে জটলা দেখে গিয়াস উদ্দিন থমকে দাঁড়ালেন। বাসাটাই ফুড ইন্সপেন্টার সরাফত সাহেবের। বিপুল টাকা দিয়ে কেনা সরাফত সাহেবের ষাঁড় পা মচকে বসে পড়েছে, কিছুতেই উঠে দাঁড়াচ্ছে না। সরাফত সাহেব নিজে মোটর সাইকেল চালিয়ে সদর থানার পশু অফিসারের বাসা থেকে উঠে নিয়ে এসেছেন। মহাসমারোহে সেই ষাঁড়টির মোবাইল ইমার্জেন্সি কিটস চলছে। আশেপাশের লোকজন এসব চিকিৎসা দেখে মজা পাচ্ছে। ভিড়ের মধ্যে থেকে মুয়াজ্জেনের গলা শোনা যাচ্ছে, ‘ভাইজান, অসুস্থ গরু কোরবানি দেওয়া ঠিক না, কোরবানির দিন তো আর আজকেই শেষ হচ্ছে না, আরও দুই দিন আছে , তিন দিন কোরবানি দেওয়া যায়।’

মুয়াজ্জিন সাহেবের কথা কেউ শুনলো কি না বুঝা যাচ্ছে না তবে একজনকে বলতে শোনা গেলো, ‘আল্লার এডা বিচার আছে না, ঘুষের টেকাত নাম কেনার জন্য কোরবানি, এখন ঠেলা সামলাও।’

আলফাজ সাহেবের বাসায় খেতে এসে গিয়াস উদ্দিনের মনে হলো ফ্যামিলির সাথে ঈদ না করে এখানে ঈদ করার সিদ্ধান্ত আসলে ঠিক হয়নি। তার এই সিদ্ধান্ত তার কাছে মনে হলো সঠিক ছিল না।

গিয়াস উদ্দিন তিনি আশায় আশায় ছিলেন আলফাজ সাহেব মস্ত বড় সিন্ধি জাতের ষাঁড় কোরবানি দিবেন। কয়েক দিন ধরে চলবে সেই ষাঁড় কোরবানির গোস্ত রন্ধন প্রক্রিয়া। বেশি করে পিয়াজ রসুন দিয়ে কয়েকদিন ধরে কোরবানির গোস্ত জাল দিয়ে ভাজা ভাজা করা হবে। মুয়াজ্জিন হিসাবে তাঁকে সেই গরম গরম ভাজা গোস্ত পড়তে দিয়ে দেওয়া হবে, এক প্যারিসে থাকবে পিয়াজ কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজা ডিমের ওমলেট সে ধাঁধার মধ্যে পরে যাবে কোনটা আগে খাবে, গোস্ত না ওমলেট।

আলফাজ সাহেব যে এক ভাগ কোরবানি দিবেন এটি তার মাথাতেই আসেনি। এখন সেই এক ভাগের টাকা যখন মার গেলো আলফাজ সাহেব ছোট মতো এক ভেড়া কিনে এনে কোরবানি দিয়েছেন। আলফাজ সাহেব যে ভেড়া কোরবানি দিয়েছেন এই তথ্যটি গিয়াস জানতেন না। উঠানা লোক বলে আজকাল তাঁকে অনেক কিছুই গোপন করা হচ্ছে। আলফাজ সাহেব তাঁর ভেড়া কাকে দিয়ে জবাই করলেন গিয়াস জানে না।

আলফাজ সাহেবের বাড়ির সামনে লোকজন দ্রুত জবাই করা ভেড়া সাইজ করে একটি পলিথিন প্যাপারে বড় বড় টুকরা কেটে কেটে ছোট ছোট করে মাংশ , হাড্ডি, কলিজা এসব ভাগ করছেন। ইতিমধ্যে কিছু ভেড়ার গোস্ত আলাদা করে রান্নায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। রান্না ঘর থেকে সুগ্রান বের হচ্ছে। আলফাজ সাহেব গিয়াস কে দেখে বললেন, ‘মুয়াযিন একটু সবুর করো, আজ ভেড়ার গোস্ত দিয়ে তোমাকে পড়াটা খাওয়াবো। গিয়াস উদ্দিন শুখনা মুখে বললেন,’স্যার , আমি ভেড়ার গোস্ত খাই না। অগত্যা গিয়াসকে আলু ভাজি দিয়ে রুটি খেয়ে আলফাজ সাহেবের বাসা থেকে বের হতে হলো।

গিয়াস উদ্দিন মনে মনে ভাবলেন তমিজ সাহেবের সাহেবের বাসায় গেলে কেমন হয়। ভদ্রলোক এতগুলো টাকা হারিয়ে হয়তো মন খারাপ করে আছে। ওনার সাথে দেখা করাও হলো, দুটা ভালো মন্দ ঈদের নাস্তা খাওয়াও হলো, আলফাজ সাহেবের বাসায় নাস্তা খাওয়া তেমন জমেনি। তারপর, জোহর নামাজ পড়ে সাইফুল ভাইয়ের বাসায় যাওয়া যেতে পারে। ওখানেই দুপুরের লাঞ্চ সেড়ে ফেলা যেতে পারে । এই সাইফুল মাস্টার সাহেবের সাথে কথাবার্তায় তার খুব ভালো লাগে, সাইফুল সাহেব অনেক জ্ঞানের কথা বলেন শুনতে ভালোই লাগে।

কলিং বেল টিপে ড্রাইং রুমে পা দিতেই গিয়াস তমিজ ভাইয়ের বাসায় বেশ হৈচৈ শুনলেন , তার কাছে মনে হয় উনার আত্মীয়স্বজন এসেছেন। তমিজ সাবের বেড রুমে ভিডিও কলের আসর বসেছে। সবাই তমিজ সাহেবের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মেঝো ছেলে ইশতিয়াকের পরিবারের সাথে মহা উল্লাসে ভিডিও কলে কথা বলছেন। ইশতিয়াকের ছোট মেয়ে ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে কথা বলছে আর সবাই হেসে ফেটে পড়ছে। মিনিট ঢেকে অপেক্ষা করার পরে গিয়াস উদ্দিন কে শুখনো তিনটি রুটি, একতো ছোট প্লেটে মিষ্টি কুমড়া ভাজি , একটি ডিমের পোজ, ও এক বাটি সেমাই খেতে দেয়া হলো। গিয়াস উদ্দিনের আবারো মনে হলো এবাদের ঈদ তাঁর ফ্যামিলি ছেড়ে এখানে করার সিদ্ধান্ত আসলেই সঠিক হয়নি , কেউ তাঁকে সেরকম আপ্যায়ণ করছে না। 

 অনেক জোরাজুরি সত্ত্বেও সাইফুল মাস্টার তমিজ উদ্দিনের কাজ থেকে সেই ছয় হাজার টাকা কিছুতেই নেয়নি। তিনি কিছু জমানো টাকা দিয়ে ঈদের আগের দিন বিকালের দিকে রাজা বাজারে যেয়ে একটি মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ কিনে ঈদের বাজার সেড়েছেন। মফস্সল শহরে সবাই সবাইকে চেনে। সাইফুল মাস্টার যা ভয় করছিলেন তাই হলো। মাছ ব্যাগে ভোরাতেই এক ছাত্রের বাবা দেখে ফেলে বললেন , ‘ ভাই, শুনলাম আপনাদের কোরবানির টাকা পকেট মার হয়েছে। তো কোরবানি না দিয়ে মাছ কিনে বাড়ি যাচ্ছেন?

সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রাহেলা মাছ কূটতেই বুঝতে পারলেন এটি পচা মাছ। স্বামীকে এ নিয়ে আর কিছু বললেন না। মানুষটা শুনলে মন খারাপ করবে। রাহেলা ভালো করে কুটে বেছে তেল মসলা দিয়ে মেখে ম্যাচটি ফ্রিজে রেখে দিলেন, কাল ঈদের দিনে ভালো করে লেবুর পাতা দিয়ে রান্না করবেন।

গিয়াস  দুপুরে সাইফুল সাহেবের বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। জোহর নামাজ শেষে সরাসরি সাইফুল ভাইয়ের বাসায় যাবেন। দুটা ভালো মন্দ ঈদের খাওয়া খাবেন। এসব ভাবতে যেয়ে গিয়াস উদ্দিন তার মুয়াজ্জিন হিসাবে চাকরির ক্যারিয়ারের প্রথম ভুলটি করে ফেললেন। জোহরের আজান দেয়ার সময় হাইয়া আলাস সালা বলার আগেই দুবার হাইয়া আলাল ফালা বলে নিজেই জিভে কামড় দিলেন। মসজিদের মাইকের আজান। পাড়ার সবাই ইতিমধ্যে শুনে ফেলেছে। গিয়াস উদ্দিন দুই সেকেন্ড চিন্তা করে আবার নতুন করে আজাব দেয়া শুরু করলেন।

সচারচর সাইফুল ইসলাম সাহেবের বাসায় ছেলে মেয়ে সবাই এক সাথেই খেতে বসে, তারমধ্যে আজ ঈদের দিন। সবাই হৈচৈ করে দুপুরের খাবার খাবে। কিন্তু বাইরের মেহমান গিয়াস উদ্দিন হুট্ করে খাবার সময় এসে পড়ায় নিয়মের ব্যাতিক্রম হলো। মুয়াজ্জেন গিয়াস উদ্দিনকে বাড়ির ব্যাটাছেলেদের সাথে খেতে দেয়া হলো। গিয়াস উদ্দিন ঈদের খাবারের মেনু দেখে হকচকিয়ে গেলেন। খিচুড়ি, বগুড়ার লাল মরিচ দিয়ে করা এক বাতি আলু ভর্তা , ইলিশ মাছ, ও এক বাতি লাবড়া । গিয়াস উদ্দিন অবাক হয়ে খেয়াল করলেন মেনুতে কোনো মাংসের আইটেম নেই।

গিয়াস উদ্দিন ক্রমশ অবাক হতে থাকলেন। এই মাত্র ইলিশ মাছ মুখে দিতে বিশ্রী গন্ধ টের পেলেন । গিয়াস আরো অবাক হয়ে খেয়াল করলেন, সেই মাছ খেতে গন্ধ লাগছে কিন্তু সবাই মাছ খেয়ে বলছে খুব স্বাদ হয়েছে। শুধু সাইফুল মাস্টার বললেন, ‘ বুঝলেন মুয়াজ্জেন সাহেব আজকাল শিক্ষককদের কেউ সম্মান করে না, হারামজাদা কোন আক্কেলে আমাকে এই পচা মাছ ধরে দিলো বলেন দেখি ?

ডেজার্ট আইটেম দিয়ে কিছুটা পুষিয়ে দেয়া হয়েছে। লাচ্ছা সেমাই, জর্দা সেমাই, পায়েস, বগুড়ার দৈ ইত্যাদি । চেটেপুটে ডেজার্ট খেতে খেতে গিয়াস উদ্দিন মনে মনে পচা মাছ খাওয়ানোর জন্য সাইফুল ইসলাম সাহেবকে মাফ করে দিলেন। ডেজার্টের পরে জর্দা দিয়ে পানের ব্যাবস্থা।

আষাঢ় মাস। পশ্চিম দিকে মেঘ কালো করে এসেছে। সেমাই খেতে খেতে সাইফুল মাষ্টার আকাশের দিকে চেয়ে বললেন , ‘বৃষ্টি হওয়া দরকার মুয়াজ্জিন। রাস্তা ঘাটে কোরবানির গড় ছাগলের রক্ত , নাড়ি ভুরির আবর্জনা দিয়ে এনভার্নমেন্ট নষ্ট, বৃষ্টি হলে সবকিছু ধুয়ে মুছে যাবে। মুয়াজ্জেন এনভার্নমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমরা যত সভ্য হচ্ছি, গাড়ি ঘরে চড়ে তেল গ্যাস পুড়িয়ে এনভার্নমেন্টের বারোটা বাজাচ্ছি, বায়ু মন্ডলে গ্রিন হাউস তৈরী হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে আটলান্টিকের বরফ হবে গলে যাচ্ছে মুয়াজ্জেন।

বলতে না বলতেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। মাস্টারের রান্না ঘরের টিনের চালের উপর ঝমঝমবৃষ্টির শব্দ কানে এলো। রান্না ঘরের পিছনের দিক থেকে ভাবে বৃষ্টিতে ভেজা কোলা ব্যাঙ ক্রমাগত ডেকে যেন সাইফুল ইসলামের জ্ঞানের কথার কথার জোরালো সমর্থন দিচ্ছে। ব্যাঙের ডাকে গিয়াস উদ্দিন কিছুটা আনমনা হয়ে তাঁর নিজের গ্রামের বাড়ির কথা, তাঁর ফ্যামিলির কথা খুব মনে হতে লাগলো।

বর্ষার বৃষ্টি ছাড়ার কোনো লক্ষণ নাই। আসরের আজান দেয়ার সময় প্রায় হয়ে এলো। সাইফুল মাস্টারের দেওয়া ছাতা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে গিয়াস উদ্দিন বেড়িয়ে পড়লেন। বর্ষাকালে গিয়াস উদ্দিন ঘর থেকে বেরোবার সময় সঙ্গে ছাতা নিতে কখনো ভুল করেন না। কিন্তু আজ ভুল করলেন। আজ গিয়াস উদ্দিনের ক্রমাগত ভুল হচ্ছে। ভোরে গোসল করে পাঞ্জাবি পড়ার পরে দেখলেন উল্টা করে পাঞ্জাবি পড়েছেন, ঈদের মাঠে জামাতে নামাজ আদায়ের সময় অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের হিসাব এলোমেলো করে ফেললেন, জোহর নামাজের আজানের সময় মস্ত বড় ভুল করলেন। আজ এই ঈদের দিন তার মোটেই ভালো যাচ্ছে না। সাইফুল ইসলামের দেয়া ছাতা নিয়ে কিছুটা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নিজের ছাপড়া ঘরের দিকে যেতে যেতে গিয়াস উদ্দিন ভাবলো, আসলে ভুলটা সে অনেক আগেই করেছে, নিজের ফ্যামিলির সাথে মিলে মিশে ঈদ না করার সিদ্ধান্তটি ছিল তার বড় ভুল। যে যেখানে তাঁকে নিজ নিজ ফ্যামিলির সাথে সবার ঈদ পালন করা উচিত। ঈদ মানে হচ্ছে খুশি, নিজের ফ্যামিলির সাথে থাকার যে আনন্দ তাঁর চেয়ে খুশির ব্যাপার আর কিইবা থাকতে পারে! 

গিয়াস উদ্দিনের নিজের ফ্যামিলির কথা ছোট ছোট দুই বাচ্চার কথা খুব মনে হচ্ছে। মেয়েটি খুব ছোট তবে ছেলেটি ক্লাস টু তে পড়ে, কম কথা বলে কিন্তু বাবাকে পেলে মুখে কথার খৈ ফোটে। বাবা যেখানে থাকে সেই ঘরটি কত বড়, সেখানে খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্তা কী , বাবার জন্য তাঁর কত চিন্তা ! ছেলের সাথে ঈদের নামাজ পরে ছেলের হাতে বেলুন কিনে দিলে ছেলেটি কত খুশি হতো !! স্ত্রী কুলসুমের খুব শখ স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে যাবে, স্বামীকে তাঁর বাবার বাড়ির প্রিয় জায়গাগুলি ঘুরে ঘুইরে দেখাবে। গিয়াস উদ্দিন হাঁটতে হাঁটতে কেঁদে ফেললেন।

বৃষ্টি বেশ জোরেসোরেই পড়ছে। সাইফুল মাস্টারের দেওয়া ছাতা তেমন কাজ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বৃষ্টির সাঁটা গিয়াসের চোখেমুখে এসে লাগছে। এতে গিয়াস উদ্দিনের কিছুটা সুবিধা হয়েছে । বৃষ্টিতে তাঁর কান্না কেউ দেখতে পাচ্ছে না। গিয়াস উদ্দিনের শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। ফ্যামিলির উপর তাঁর যে এতো মায়া এত আবেগ পুষে রেখেছিলো গিয়াস উদ্দিন কল্পনাও করতে পারেনি। গিয়াস উদ্দিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলে আর কখনো সে নিজের ফ্যামিলিকে ছাড়া ঈদ পালন করবে না।

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধপদ্মার জয়
পরবর্তী নিবন্ধসেকাল ও একালের শিশু-কিশোর শিক্ষা
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

১ মন্তব্য

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন