দৈনিক আল আমীন পত্রিকার সুমন সরদারের কথা খুব মনে পড়ে। সুমন অত্যন্ত বন্ধুবৎসল, সাংবাদিক ও কবি। তিনি ঐ পত্রিকার সাহিত্যের পাতা দেখতেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ বেতারে প্রোগ্রাম করতে গিয়ে দেখা হলো সুমন সরদারের সাথে। এখন তিনি বেতারের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে জানালেন। এছাড়াও বাংলা একাডেমীতে সুমন সরদারের সাথে দেখাসাক্ষাৎ হয়৷

দৈনিক আল আমীন পত্রিকার   আরেকজন সাংবাদিক মনিরুল ইসলামের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন কবি আশম বাবরআলী। এছাড়া, ঐ পত্রিকা সম্পর্কে আর তেমন কিছুই মনে পড়েছে না। দৈনিক আল আমীন পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু  লেখা খুঁজে পেয়েছি। সেগুলো এখানে উপস্থাপন করলাম।

০১. ‘যদি দেখা হয়’ সামাদ সিকদারের কবিতার বই। ‘একুশের বই মেলা’ বিভাগে পুস্তক পর্যালোচনা। শিরোনাম ছিল, ‘বাঁশির সুরেলা আওয়াজে মুখরিত বাইরের চত্বর’। পর্যালোচনা করেছেন, নুরুল ইসলাম। প্রকাশের তারিখ, ১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬।

০২. ‘সুকান্তঃ কবি ও মানুষ’, সামাদ সিকদার রচিত গ্রন্থ। বইয়ের পরচিতি তুলে ধরেছেন, নুরুল ইসলাম। শিরোনাম, ‘বই আছে দর্শক আছে হতাশাও আছে ‘। প্রকাশের তারিখ, ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬।

০৩. ‘যদি দেখা হয়’, সামাদ সিকদারের কবিতার বই। দৈনিক  আল আমীন সাহিত্য পাতা। পর্যালোচনা করেছেন, আবুল কাওসার আহমেদ। প্রকাশের তারিখ ১৪ মার্চ ১৯৯৬, ০১ চৈত্র ১৪০২ বঙ্গাব্দ।

০৪. ‘এ কোন বাংলা’, সামাদ সিকদারের কবিতা। প্রকাশের তারিখ ২৬ মার্চ ১৯৯৬।

০৫. ‘লেখার খাতা’, সামাদ সিকদারের ছড়া। প্রকাশিত হবার তারিখ ০৮ এপ্রিল ১৯৯৬।

০৬. ‘নিরাশ্রয়’, সামাদ সিকদারের কবিতা। প্রকাশের তারিখ ০৯ মে ১৯৯৬।

০১. দৈনিক আল আমীন পত্রিকার   একুশের বইমেলা কলামে পুস্তক পরিচিতি। পুস্তক পরিচিতি তুলে ধরেছেন নুরুল ইসলাম। কলামের শিরোনাম ‘বাঁশির সুরেলা আওয়াজে মুখরিত বাইরের চত্বর ‘। মোট ০৩ টি বইয়ের পরিচিতি ও প্রচ্ছদ ঠাঁই পেয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ তারিখের এই পাতায়। তন্মধ্যে সামাদ সিকদারের কবিতার বই ‘যদি দেখা হয়’ও রয়েছে।

কলামের শুরুতেই নুরুল ইসলাম লিখেছেন, “শাহবাগ থেকে বই মেলার দিকে যেতে চারুকলা ইনস্টিটিউট পার হতেই কানে ভেসে এলো মিষ্টি বাঁশির সুরেলা আওয়াজ। একটু সামনে আসতেই তা স্পষ্ট হয়ে কানে বাজল। আজ পাশা খেলবরে শ্যাম – জনপ্রিয় এই গান বাজছিল বাঁশিতে। একটা নয়, দুটো নয়, বেশ কয়েকটি বাঁশির সুরে মুখরিত বই মেলার বাইরের চত্বর।”

চমৎকার শুরুর পর নুরুল ইসলাম তার কলামে পুরো মেলার বাইরের ও ভেতরের চিত্র তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে। তিনি আরও লিখেছেন, ” একটু সামনে যেতেই বাংলা একাডেমির গেট। ঢুকতেই হাতের বামে ‘বিশাকা প্রকাশনী’র ষ্টল। কবি-কবিতা-বই-আর বইপ্রেমিক দিয়ে মুখরিত এই ষ্টল। কবিরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খোশগল্পে ব্যস্ত। গতকাল সন্ধ্যায় এ আসরে ছিলেন ‘আগুন রঙের ডানা’ কাব্যগ্রন্থের সুমন সর্দার, ‘যদি দেখা হয়’ কাব্যগ্রন্থের সামাদ সিকদার, ‘জনাকীর্ণ জনপদ’র আব্দুল হক, ‘সমুদ্রে যাবো অবিচল এলোমেলো’র ফেরদৌস নাহার, নদী নারী মৃত্তিকা’র আতিয়ার রহমানসহ আরো অনেকে। বিশাকা প্রকাশনী প্রকাশ করেছে বইগুলো এবারের বই মেলায়।

০২. ‘বই আছে দর্শক আছে হতাশাও আছে ‘। এই শিরোনামে একুশে বই মেলার তিনটি বইয়ের পরিচিতি ও প্রচ্ছদ তুলে ধরা হয়। তন্মধ্যে সামাদ সিকদার রচিত ‘সুকান্তঃ কবি ও মানুষ’ গ্রন্হটিও রয়েছে। বইয়ের পরচিতি তুলে ধরেছেন, নুরুল ইসলাম। দৈনিক আল আমীন পত্রিকার ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ তারিখে এটি প্রকাশিত হয়।

নুরুল ইসলাম এই কলামের লেখাটা শুরু করেছেন এভাবে,”অবরোধ, হরতাল পেরিয়ে গতকাল ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তিনদিন একটানা ভাটার পর একটু আগেভাগেই এসেছিলেন প্রকাশক লেখকবৃন্দ একুশের বইমেলায়। হতাশার চিহ্ন ছিল সকলেরই চোখেমুখে।… দর্শক আসেনি আগের মতো। বিক্রিও হয়নি তেমন।”

নুরুল ইসলাম আরও লিখেছেন,

‘বিশাকা’র সামনে কথা হলো কবি সামাদ সিকদারের সাথে। মেলা সম্পর্কে হতাশা ব্যাক্ত করলেন। তার বই বেরিয়েছে দুটি। একটি কবিতার বই অন্যটি কবি সুকান্তকে নিয়ে লেখা ‘সুকান্তঃ কবি ও মানুষ’। প্রচ্ছদ এঁকেছেন আনওয়ার ফারুক। বইটির মূল্য ৬০ টাকা। প্রকাশ করেছে বস্তুু প্রকাশন, ঢাকা।

০৩. দৈনিক  আল আমীন পত্রিকার  সাহিত্য পাতায় আমার কবিতার বই ‘যদি দেখা হয়’ নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনা করেছেন, আবুল কাওসার আহমেদ। প্রকাশের তারিখ ১৪ মার্চ ১৯৯৬, ০১ চৈত্র ১৪০২ বঙ্গাব্দ।

বই আলোচনা
———
যদি দেখা হয়
সামাদ সিকদার
প্রকাশকঃ বিশাকা প্রকাশনী, ঢাকা
প্রচ্ছদঃ মাহবুব কামরান
প্রকাশকালঃ বইমেলা ১৯৯৬
মূল্যঃ ৩৫ টাকা।

আবুল কাওসার আহমেদ তার আলোচনার শুরুটা করেছেন এভাবে,
“কবি সামাদ সিকদার ‘যদি দেখা হয়’ কাব্যগ্রন্থে প্রকৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, দুঃখবোধ, আশা ইত্যাদি বিষয় অতি সহজ ও সরলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই কাব্যগ্রন্থের সবগুলো কবিতার ভাষা ও বিষয় সহজ বলে মনে হয়েছে। সহজ-সরল ভাষার আড়ালে কবি নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অন্তঃজ্বালা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দুঃখবোধের যন্ত্রণা।
কবি সামাদ সিকদার কাকে যেন খুঁজে বেড়িয়েছেন প্রকৃতির মাঝে। গ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘তোমাকেই খুঁজি’র শেষ ক’টি লাইন এরকম,
তবুও তোমার জন্যে / প্রতীক্ষা নিয়েছি বেছে / আবার আসবে ভেবে /প্রতি ভোরে এই দিন গোনা। / কুয়াশা সরিয়ে যেন, তোমাকেই খুঁজি /দুলে উঠে ‘গতদিন’ অশান্ত বাতাসে। (তোমাকেই খুঁজি, পৃঃ ৯)।  ‘অর্ধ শতাব্দীর কথকতা’ কবিতার শেষাংশেও কাউকে খুঁজে পাবার আর্তি মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে –
এ বড় দুঃসময়, আকাশে মেলেছে পাখা লোলুপ ঈগল / ভেঙে যায় বারে বারে বিশ্বাসের বিশুদ্ধ বলয় / এসময়ে হাতের কাছেতে চাই বিশ্বাসের খুঁটি, /তাই আমি তোমাকেই খুঁজে ফিরি সারা দিনমান / বিশ্বব্যাপী কল্পতরু ছায়ার একতা / প্রার্থণা করি যেন জন্ম হয় নতুন শিশুর / যে সত্ত্বার স্বপ্ন দেখে মানব সভ্যতা চিরকাল ৷ (অর্ধশতাব্দীর কথকতা, পৃঃ ২৪)। ”

বইটির আলোচনার শেষে আবুল কাওসার আহমেদ বলেছেন,
“সম্ভবত কবি কাকে খুঁজছেন তা উপরের কবিতাংশ পড়ে অনুধাবন করা যায়। এরপরও কবির সন্দেহ প্রবণতা কাটে না। ‘জীবন’ কবিতায় এমন আলামত পাওয়া যায় – ‘জীবন আর আমি কত কাছাকাছি, / পাশাপাশি হেঁটে চলি শীত গ্রীষ্ম বর্ষায় / তবুও পাই না কাছে তাকে / সে থাকে দুর বহুদুর। (জীবন, পৃঃ ৩০)।

গ্রন্থটির দুই রঙা প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব কামরান। ৪৮ পৃষ্ঠার এ কাব্য গ্রন্থেটি পাঠক হাতে তুলে নেবেন আশাকরি।”
— আবুল কাওসার আহমেদ

০৪. আমার কবিতার শিরোনাম  ‘এ কোন বাংলা’। দৈনিক আল আমীন পত্রিকায় এটি প্রকাশিত হয়েছে      ২৬ মার্চ ১৯৯৬। কবিতাটি উপস্থাপন করার লোভ সামলাতে পারছিনা।

পঁচিশ বছর আগের অস্থিরতা
তাড়া করে সহস্র মেঘের মাঝে
সূর্যলাল রক্ত আমার সোনালী প্রচ্ছদে –
সনাতনী শেকলে আবদ্ধ আমি
স্বপ্নে ভেসে যায় ভরা যৌবন,
কেবলই ক্লান্ত হই, ফিরে আসি ঘরে
একাত্তর আর ছিয়ানব্বই তো এক কথা নয়।

এতকাল পরও শান্তির ঠিকানা দেখি না
দেখি, দুর্ভিক্ষ মহামারী আর মৃত্যুরই সংবাদ
এ কোন বাংলাদেশ গড়েছি আমরা রক্তের বিনিময়ে?

এখন এই মুহূর্তে সেই বিপ্লবী যুবক কোথায়
কোথা সেই তেজদীপ্ত পুরুষ
জীবিত কি মুক্তিযুদ্ধা সামাদ সিকদার?
তেরোশত নদীর দেশে বঞ্চিত মানুষের হাহাকার শুনি,
শুনি, গোমতীর হৃদয় থেকে আর্তচিৎকার!
তাই বিষন্নতার হাটে
অন্তহীণ বিবর্ণ এ মাঠে প্রশ্ন আবার
এ কোন বাংলা গড়েছি আমরা
যাকে নিয়ে এক বুক গর্ব আমার!

০৫.  ‘লেখার খাতা’, শিরেনামে আমার লেখা একটি ছড়া দৈনিক আল আমীন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ০৮ এপ্রিল ১৯৯৬। এই ছড়াটি পরবর্তী সময়ে আমার ‘তিড়িং বিড়িং ভোঁদড় নাচে’ ছড়ার বইতে ছাপা হয়। ছড়াটা এরকম,
এইতো আমার লেখার খাতা
লিখে চলি যা ইচ্ছে তা।
এইতো আমার লেখার খাতা
ছিঁড়ি ফাড়ি কাঁঠাল পাতা।

০৬.  দৈনিক আল আমীন পত্রিকায়    ‘নিরাশ্রয়’, শিরোনামে আমার একটি  কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ০৯ মে ১৯৯৬। কবিতাটি আকারে খুবই ছোট। এটি পরবর্তী সময়ে আমার ‘অপেক্ষায় আছি ‘    কাব্যগ্রন্থে স্হান পায়। ‘নিরাশ্রয়’ কবিতাটি এরকম,

বারবার আমি তোমারই মনে
খুঁজেছি আশ্রয়
তিরস্কারে দূরে ঠেলে দিলে
করলে নিরাশ্রয়।

(চলবে)

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন