১১ নভেম্বর বেতিয়ারা শহীদ দিবস। বেতিয়ারা হলো কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি গ্রাম।
ঢাকা -চট্টগ্রাম হাইওয়ের চৌদ্দগ্রাম এলাকার গাংরা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গ্রামটির নামই বেতিয়ারা। এখানেই শুয়ে আছে আমার প্রিয় ৯ জন সহযোদ্ধা, যারা ১৯৭১ সালে ১১ নভেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে সামনা-সামনি লড়াইয়ে শহীদ হন।
শহীদ এ ৯জনের সাথে আমাদেরও স্বদেশ অনুপ্রবেশের কথা ছিলো। হাই কমান্ডের সিদ্বান্ত পরিবর্তনের কারনে আর সেদিন হয়নি।
পরবর্তীতে আমাদের ইউনিট কোনাবন সীমান্ত দিয়ে, বহু ঝড় – ঝাপ্টা অতিক্রম করে, স্বদেশ অনুপ্রবেশ করে।
— — —
১৯৭১ সালের মে মাসের শেষ ভাগে ভারতের আগড়তলার রিক্রুটমেন্ট ( চূড়ান্ত নির্বাচন) শেষে আমরা ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধা আর্মস ট্রেনিং- এর জন্য আসামের তেজপুর যাই। সেখানে প্রশিক্ষনের পর বিশেষ ট্রেনিং-এর জন্য আমরা ৪৫ জন সিলেক্টেড হই এবং নেফা (NEFA– North Eastern Frontier Area) যাই।
নেফা হলো ভারত-চীন বর্ডার। সে যাহোক, প্রশিক্ষন ও বিশেষ প্রশিক্ষন শেষে আমরা (১ম ও দ্বিতীয়) ২ ব্যাচের ৪০০ জন মুক্তিযোদ্ধা আগরতলার বাইকোরা এস্ এস্ বি (SSB– Special Security Branch) ক্যাম্পে জড়ো হয়েছিলাম। ওটাই ছিল ভারতে আমাদের সর্বশেষ মিলন কেন্দ্র। তারপর দলে দলে দেশে ফেরা। কেউবা শহীদ কেউবা গাজী। কেউবা মন্ত্রী, কেউবা নেতা। কারওবা ছা- পোষা জীবন, নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
প্রতি বছরের মতো, ৪৮ বছর পর আবার সেই ১১ নভেম্বর আমাদের সামনে উপস্হিত। কেমন করে যে এতোগুলো বছর কেটে গেলো! বেঁচে আছি বলেই হয়তো লিখতে পারছি, বলতে পারছি। কত কথা কত স্মৃতি!
— —- —
১১ নভেম্বর শহীদদের স্মরণে বেতিয়ারায় একটি সুন্দর বেদী নির্মিত হয়েছে। বেদীর সামনে শ্বেত পাথরে লেখা আছে ৯ জন শহীদ সহযোদ্ধার নাম। বেদী সংলগ্ন গনকবরে শুয়ে আছে (১) নিজামুদ্দিন আজাদ, (২) সিরাজুম্ মুনির, (৩) জহিরুল হক দুদু, (৪) শফি উল্লাহ, (৫) আওলাদ হোসেন, (৬) কাইয়ুম, (৭) বসিরুল ইসলাম, (৮) মো: শহীদুল্লাহ এবং (৯) কাদের মিয়া।
— — —
*** ডক্টর মুহম্মদ আব্দুস সামাদ সিকদার : মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন মুক্তিযোদ্ধা, কবি- প্রাবন্ধিক ও গবেষক, বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যাঃ ১৩।।