আমার মা কখনো বেকার ছিলেন না। “মা তুমি এতো সুন্দর”

special mothers day quotes

মাকে স্মরণ করা, মাকে ভালোবাসা, মাকে কষ্ট না দেওয়া, মায়ের জন্য দোআ করা ইত্যাদি সন্তানদের নিত্যদিনের কাজ হলেও “মা” দিবসটি এই কাজগুলিকেই স্মরণ করিয়ে দেওয়া একটি দিন। কারণ বিষয়গুলি আমরা সকলে জানলেও জীবনের বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে উক্ত বিষয়গুলি থেকে বিচ্যুত হতে পারি তাই “মা’ দিবস আমার কাছে বিশেষ তাপপর্য বহন করে।

যাহোক আমি আমার নিজের মা এবং পৃথিবীর সমস্ত মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধার্থে শিরোনামের দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

আমার মা কখনো বেকার ছিলেন না। এ কথাটি যেমন সত্যি তেমনি পৃথিবীর কোনো মা ই কখনো বেকার নয় সেটাও সত্য। তফাৎ এই যে এদের অনেকেই বিনা বেতনে সারা জীবন কাজ করে জাস্ছেন এবং রাখছেন সংসার গঠনে এক অনবদ্ধ ভূমিকা। শুধু তাই নয়, তারা বাসার সন্তান লালন পালন, বয়সীদের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি কাজ করে বাবাদেরকে বাইরে পেইড কাজ করার সুযোগ দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছনে আমাদের অর্থনীতিতেও যদিও এই বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে অদৃশ। এ কারণই আমি বলেছি মায়েরা কখনো বেকার নয়। আর বলতে গেলে  মায়েদের কোনো উইকেন্ড বা টাইম off নেই। তাই আমরা তাদেরকে যদি তাদের যথাযত প্রাপ্য নাও দিতে পারি তাহলে অন্তত আমাদেরকে বিষয়টি স্বীকার করা উচিৎ। আমার মাকে প্রায়ই তার সন্তানদের দেখাশোনা করে এবং সংসারের সমস্ত কাজ কাম সেরে তারপর দুপুর আর বিকালের মাঝা মাঝি সময়ে লাঞ্চ করতে দেখেছি। কাজটি করে গেছেন আমৃত্যু। আমার মনে হয় আপনাদের অনেকের ক্ষেত্রেই বেপারটি কমন হবে। যাহোক আমি ফিরে আসি আমার শিরোনামের বিষয়ে।

আমি কানাডাতে ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম ফিনল্যাণ্ড থেকে। আমার এবং আরো কিছু প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য ভিসা অফিসার ইংল্যান্ড থেকে হেলসিংকি গিয়েছিলেন। আমার ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে ভিসা অফিসার একটু হেসে আমাকে আমার applicationএর একিট বিশেষ কলামে আঙ্গুলি নির্দেশ করে কিছু  বিশেষ শব্দের মানে বা সেগুলি লেখার কারণ জিজ্ঞেস করেছিলেন। শব্দগুলি  হলো “employed but no money”. আপনারা নিশ্চয় কানাডিয়ান ইম্মিগ্রাশনের ফরমটি পড়ে দেখলে দেখবেন কতৃপক্ষ যেখানে একটি জায়গায় আপনার মা বাবার কথা জানতে চেয়েছেন সেখানে তাদের পেশার কথা জানতে চাওয়া হয়েছে। আমাদের অধিকাংশই যাদের মায়েরা কোনো চাকরি বাকরি করেন না তারা সেখানে লেখেন “housewife বা homemaker”. কিন্তু আমার এই শব্দ গুলি পছন্দ হস্ছিলো না তাই লিখেছিলাম  “employed but no money” . যদিও unemployed এর অর্থনৈতিক দিকের মানে  “a person without a paid job but available to work”. আমার মায়ের কোনো চাকরি খোঁজার সময় বা অবসর কোনোটাই ছিল না। তার ৬ সন্তানের লালন পালনের কাজে তার বলতে গেলেই ২৪ ঘন্টা ব্যয় হয়ে যেত অথচ তাকে simply housewife বা homemaker বলতে আমার ইসছা করছিলো না এবং মনে হস্ছিলো ওই শব্দগুলি তার সারাজীবনের পাহাড়সমান দৈনন্দিন কাজকে simply ওই শব্দ দিয়ে বোঝানো যায় না। সে জন্যই আমার মনোভাব প্রকাশের কোনো ভালো শব্দ খুঁজে না পেয়ে “employed but no money” কথাগুলি লিখেছিলাম।

আমার উক্ত কথাগুলি লেখার কারণ সম্মন্ধে জেনে ভিসা অফিসার হাসতে হাসতে আমাকে employment আর unemployment ক্ষুদ্র একটি বর্ণনা দিয়ে ওখানে শব্দটি লেখার ঠিক বেঠিকের উপর জোর না দিয়ে মায়ের সমন্ধে আমার এই চিন্তা এবং ধারণার জন্য আমাকে appreciate করে বলেছিলেন, ““this is the first time I have seen someone wrote this way”. তবে হা, আমার ভিসা কিন্তু এই কারণে হয়নি বা এই কারণটা জন্য তাদের decision making এ কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে কিছুক্ষনের জন্য ইন্টারভিউ রুমের পরিবেশটা একটু হালকা হয়েছিলো। যাহোক ওই কথাগুলি আমি এখনো বিশ্বাস করি যে আমাদের মায়েরা পাহাড় সমান কাজ করে জাস্ছেন কিন্তু পৃথিবী এতো আধুনিক হওয়ার পরেও তাদের  এই কাজের যথেষ্ট মূল্যায়ণ এখনো হয়নি যদিও কিছু কিছু welfare state এ ব্যাপারে অনেক অগ্রসর। এখনো অনেক কাজ বাকি, তাই সেই কাজকে তরান্নিত করতে আসুন আমরা অন্তত বিষয়টির স্বীকৃতি দেই এবং আওয়াজ তুলি।

প্রত্যেকের কাছে তার মা সুন্দর এবং জীবনের সব ক্ষেত্রেই মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। যাহোক আমি এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করবো যেগুলির জন্য আমি আমার মায়ের কাছে চির ঋণী। বিষয়গুলি হলো tidyness, organization এবং alturism. এখনো যখন গাড়ি বেশ কয়েকদিন ভ্যাকুম করা না হয়, লন্ড্রি করতে যাই অথবা কাপড় আয়রন (press) করতে যাই তখনি তার কথা মনে পড়ে। আমার organization skills এর হাতে খড়ি আমার মায়ের কাছেই যেটা দিয়ে এখনো করে খসাচ্ছি। উনি সমস্ত জিনিস এমন করে গুছিয়ে রাখতেন যেন ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে অন্ধকারে ঠিক নিদৃষ্ট জায়গায় সেই জিনিসটি না দেখা গেলেও আন্দাজ করে পাওয়া যায়। আবার উনি কবে কার কাছ থেকে কিভাবে শুনেছিলেন তা জানিনা তবে ছোট বেলা থেকে দেখেছি উনি প্রতি শুক্রবারে ৫ জন দুস্থ, ভিকারী বা গৃহহীনদেরকে দুপুরে লাঞ্চ করাতেন।  আর এদিকে আমার বাবার শুক্রবারে বিশেষ বাজার করতে হতো। উনিও এতে অতিষ্ঠ হতেন না কিন্তু আমরা ভাইবোনেরা অনেক সময় অতিষ্ট হয়ে যেতাম কারণ উনি চাইতেন যতদূর সম্ভব এক এক শুক্রবারে নতুন নতুন লোকদের খাওয়াতে হবে তাই আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হতো অমন লোকদেরকে। এ কাজটি করে গেছেন আমৃত্যু। alturism এর উদাহরণ এর থেকে আর কি হতে পারে। আমার বর্তমান চাকরির ইন্টারভিউতে compassion আর kidness এর উদাহরণ দিতে গিয়ে এই উদাহরণ দিয়েছিলাম, বলেছিলাম এই বিষয়গুলি হটাৎ করে আমাকে শিখতে হয়নি বা এর জন্য বই পত্র পড়তে হয়নি, এগুলি প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে আর জানতে জানতে বড়ো হয়েছি।  উল্লেখ আমার চাকরিতে শিক্ষা, অভিজ্ঞতার সাথে সাথে এই বিষয়গুলির উপর অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। I am so proud to call her my mother. আমি বিশ্বাস করি আপনাদের প্রত্যেকেরই এমন উদাহরণ আছে এবং যাদের মা এখনও বেঁচে আছেন তারা এই বিষয়গুলি স্মরণ করে তাদেরকে appreciate করুন; তাদের ভালো লাগবে।

মা জিনিসটি যে কি তা উনি না থাকলে হয়তো পুরাপুরি বুঝতে পারবেন না। জন্মের পর থেকে যারা মাকে দেখে আসছেন তারা হয়তো বুঝতে পারবেন না মা কত সুন্দর। আমি তাই আমার শিরোনামের দ্বিতীয় বিষয়টির মাধম্যে জিনিসটি বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমার মনে হয়ত ৩০/৪০ বছর আগের কথা। বাংলাদেশে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসার জন্য একটি প্লেনে সার্ভিস দিসছিলো। সেখানে একটি সম্ভবত ১০/১২ বছরের জন্মান্ধ মেয়ের চক্ষু চিকিৎসা করানো হয়। যদিও তার সমস্যাটি খুব সাধারণ ছিল কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে তার বাবা মা তার চিকিৎসা করতে পারছিলেন না। যাহোক তার চোখ অপারেশনের পরে বেশ কিছুদিন চোখ ব্যান্ডেজ দিয়ে বাধা ছিলো। কিছুদিন পরে যখন তার চোখের ব্যাণ্ডেজ খুলে ফেলা হলো তখন তার বাবা মা তার পাশেই ছিলো, জীবনে প্রথম সে পৃথিবীর আলো দেখার পরে যে শব্দগুলি উচ্চারণ করেছিল তা হলো ” মা তুমি এতো সুন্দর, পৃথিবীতে এতো আলো” .

আমার মনে হয় মা কি? বা মায়ের মর্ম কি তা বোঝানোর আর কোনো কিছু বলার থাকতে পারে। তাই আগামী কালকে মা দিবসকে সামনে রেখে পৃথিবীর সমস্ত মাদেরকে জানছি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা। আর আমার লেখাটি পড়ে যদি পারেন; আপনার মা বেঁচে থাকলে তাকে একটি call  করুন, কাছে থাকলে তাকে জড়িয়ে ধরুন এবং বলুন how much you love her . বলবেন এটা আবার মুখে বলতে হবে, হা বলতে হবে কারণ it means a lot . আর আপনার মা বেঁচে না থাকলে তার জন্য আজকে একটু বিশেষ ভাবে দোআ করুন।

বাবাদের বিচলিত হওয়ার কারণ নেই, আসছে বাবা দিবসে তাদের জন্যেও কিছু লেখার আশা রেখে এখানেই শেষ করছি।

সবাই ভালো থাকবেন।

বি. মুকুল

টরন্টো থেকে

2 মন্তব্য

  1. মাকে নিয়ে চমৎকার লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ মুকুল ভাই

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন