লাউ বাংলাদেশীদের একটি জনপ্রিয় পুষ্টিকর সবজি। টরন্টোতে লাউয়ের চাষ খুব সহজেই করা যায়। এখানকার মাটিও লাউ চাষের উপযোগী। ঠিকমত করতে পারলে ফলনও হয় প্রচুর। সমস্যা হলো এখানকার আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্প কম থাকায় বীজ খুব শুকিয়ে থাকে ফলে বীজ গজানো মুশকিল হয়। তবে কিছু নিয়ম মেনে চেষ্টা করলে বীজ গজানো সহজ হবে।
লাউএর চারা উত্পাদনের জন্য বীজ পানিতে ভিজিয়ে দিন। প্রথম দিকে বীজ পানিতে ভাসবে। বীজ ভিজলে পানিতে একটু গন্ধ হয়। সম্ভব হলে প্রতিদিন পানি বদলিয়ে দিন। ৭/৮ দিন এভাবে রাখলে একসময় বীজ পানির নিচে চলে যাবে। এখন ভিজানো বীজ পানি থেকে উঠিয়ে কোন পুরাতন কাপড় বা পেপার তোয়ালেতে ভিজানো অবস্হায় পেঁচিয়ে, কোনো একটা স্বচ্ছ পাত্রে মুখ আটকিয়ে রেখে দিন। এভাবে অপেক্ষাকৃত একটু গরম স্থানে ৬/৭ দিন রাখার পর বীজ গজিয়ে যাবে। এই গজানো বীজ চারা করার পটে পটিং মাটি দিয়ে ১ ইঞ্চি নিচে বীজের গজানো দিকটা নিচে দিয়ে পুতে দিতে হবে। ৩/৪ দিন পরেই চারা মাটির উপরে উঠেয়ে আসবে। মে মাসের ২০ তারিখের পর চারা মাঠে লাগানোর আগে একটু একটু করে ঠান্ডা ও রোদ সহনীয় করতে নিলে ভালো হয়। তবে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে এবং আপনার জমি তৈরী থাকে তাহলে গজানো বীজ সরাসরি জমিতে পুঁতে দিলেই হয়।
অবস্য মে মাসের আগেও লাউএর চারা তৈরী করে নেয়া যায়। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় লাউ এর চারা প্রস্তূত করে একটু বড় হলে আলোবাতাস আছে এমন জায়গায় চারা রোপন করে যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, আলো-বাতাস এবং তাপমাত্রা, লাউয়ের ভালো ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। লাউ পানিপ্রিয় সবজি। তাই লাউয়ের ভাল ফলন পেতে হলে প্রচুর পরিমাণ সার আর পানির প্রয়োজন হবে। লাউগাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। তাই নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ দেয়া, মাটির চটা ভেঙে দেয়া, বাউনি দেয়া, মাচা দেয়া ও গাছের গোড়ার শাখাগুলোও ভেঙে দেয়া বাঞ্ছনীয়। জমির আগাছা পরিষ্কার করার সময় মাটি আলগা করে দিতে হয়। তার ফলে গাছের গোড়ার মাটি নরম এবং ঝুরঝুরে থাকে। এতে গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস সহজে প্রবেশ করে গাছের খাদ্য গ্রহনের কাজটা ভালো হয়।গাছ যত বাড়ে ফলন তত বৃদ্ধি পায়। তাই যখনই মাটিতে রসের অভাব দেখা দেবে, তখনই বিকালে গাছের গোড়ায় পানি সেচ দেয়া উচিত।
লাউ গাছে ফুল আসলে পরাগায়ন করাটা অতীব জরুরী। পরাগায়ন হলো স্ত্রী ফুলের (যে ফুলের গোড়ায় লাউ থাকে) সাথে পুরুষ ফুলের সংযোগ। এটা অনেক সময় পাখি পংখী বা বাতাসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তবে যে কেহ ইচ্ছা করলে নিজেও করতে পারেন। এ জন্য একটি পুরুষ ফুল ছিড়ে ফুলের সাদা পাতা গুলি সতর্কতার সাথে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। পরে ঐ কান্ডটি খুব আস্তে আস্তে এবং সতর্কতার সাথে স্ত্রী ফুলের সাদা পাতার মধ্যে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানা তার সাথে ঘষে দিতে হবে। সমগ্র প্রক্রিয়াটি খুব ধীরে ও সতর্কতার সাথে না করতে পারলে লাউএর ফুলই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাজেই পরাগায়ন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
পরাগায়ন প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারলে আল্প দিনের মধ্যেই লাউয়ের ফলন শুরু হবে। এইবার জাঙ্গলার ব্যবস্হা করুন আর নীয়মিত পরিচর্যা করুন।