সকাল থেকেই আম্মার ডাকাডাকি । আম্মা উঠছি .. বলে ঘুম। হাতে ব্রাশ ধরিয়ে দিয়ে উঠ বাবা উঠ বলে আম্মার যন্ত্রণা শুরু। ব্রাশ হাতে নিয়ে আবার ঘুম। যত ঘুম ঈদের দিন সকালেই যে কেন হয় বুঝি না। চোখ মেলে তাকাতে পারি না। রান্নার ব্যস্ততা সেরে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। নিজ হাতে গোসল করাবেন। ছেলে যে বড় হয়েছে , একটু যে লজ্জা হয়েছে, এসব তারে বলে লাভ নাই। শরীরের কোথাও কোনো ছেড়া কাটা দেখলে আর রক্ষে নাই। এটা কবে হয়েছে , কেন হয়েছে , আমাকে বলিস নি কেন ? গোসলের ফাঁকে চলতে থাকে মা ছেলের খুনসুটি। শ্যাম্পু কপাল বেয়ে চোখে এসে ভর করছে , আম্মা শরীর ধোয়া মোছার কাজ করেই যাচ্ছে , চোখ বন্ধ করে আমি স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে থাকি। তার জমানো সব কথা গোসলের সময় বলতে থাকেন।
নাস্তা করার সময় শুরু হয় আবার যন্ত্রণা। তার প্রতিটা আইটেম খেতে হবে। নিজ হাতে খাবার শেষ করে আম্মার হাতের খাবার খেতে হবে। কোনো কিছুতে না করার উপায় নাই। নতুন পাঞ্জাবীর বোতাম লাগাতে কষ্ট হয় এটা জেনেই পাঞ্জাবি নিয়ে দাড়িয়ে থাকবেন। নিজ হাতে পাঞ্জাবি পড়াবেন ,বোতাম গুলো লাগিয়ে দিবেন। সূরমা দানী নিয়ে প্রস্তূত। শিশুদের কাজল দেয়ার মতো করে চোখে সূরমা দিবেন। কখনো মোটা হচ্ছে কখনো হালকা হচ্ছে , যতসময় না তার পছন্দ হচ্ছে ততবার মুছবেন আর দিবেন। সারা পাঞ্জাবীতে আতর লাগিয়ে দিবেন। একটুকরা তুলায় আতর নিয়ে কানে লাগিয়ে দিবেন।
আম্মারে সালাম করে সেলামি নিয়ে বাবার হাত ধরে ঈদ গাহের দিকে যাত্রা করার সময় আম্মাও আমাদের সাথে সাথে আসবেন বিদায় জানাতে।নামাজ শেষে বাসায় ফিরে দেখবো আমার স্মার্ট আম্মা নতুন শাড়ি পড়ে সেজে গুজে বাইরে দাড়িয়ে আছেন আমাদের বরণ করে নিতে। যেন কোনো যুদ্ধ জয় করে ফিরছি। সব মায়েদের গল্পই মোটামোটি একই রকম। আম্মাদের কাছে সন্তানেরা কখনই বড় হয় না। বড় হতে নেই। তাদের কাছে সারাজীবন ছোট হয়ে থাকতেই যে ভালো লাগে। প্রবাসী হওয়ার আগে এটাই ছিল আমার ঈদ রুটিন। এছাড়া আত্বীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডাবাজি তো আছেই। আজকে এসব শুধুই স্মৃতি। সব আছে তবু যেন কিছুই নেই। আছে নিজের প্রাণের মানুষগুলোর অনুপস্থিতি। কেমন জানি খুব অসহায় লাগে। কেউ প্রবাসী না হওয়া পর্যন্ত এ কষ্ট অনুভব করা সম্ভব না। আপন জনদের রেখে ঈদ করা যে কতটা কষ্টের, ব্যথাতুর এটা একমাত্র প্রবাসীরাই বুঝে।
প্রবাসে স্বদেশী মানেই সজ্জন। এক্ষেত্রে আমরা বাঙালিরা আরো এক ধাপ এগিয়ে। পরম প্রিয় মমতা দিয়ে আগলে রাখি। পরিচিত কাউকে ডেকে এনে না খাইয়ে গল্প গুজব না করে শান্তি নাই । এভাবেই ঈদের দিন দুঃখ-কষ্ট ভালবাসায় কেটে যায়। এ বারের ঈদে আগে থেকেই পাভেল ভাই বলে রাখছিলেন একসাথে নামাজ পড়তে যাব। নামাজ শেষে পাভেল ভাই আর শ্যায়ানের সাথে কুলাকুলি করে চারদিকে পরিচিত মুখ খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা। কোথাও কেউ নেই। বুক চিরে দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে ভাবলাম আমি তো ভিনদেশি। পাভেল ভাইয়ের বাসায় এসে সাবরিনা আপুর বানানো অসাধারণ নাস্তা খেয়ে, গল্পগুজব করে বাসায় ফিরছি। এখনো অনেক ভাই বোনের বাসায় যেতে হবে। ফাইন আপুর স্পেশাল রান্না বান্না তো রয়েছেই। মনে হচ্ছে দিনটা খুব একটা খারাপ যাবে না। এছাড়া ভার্চুয়াল খুদে বার্তার শুভেচ্ছা বিনিময় তো চলছেই। ফিকে অনুভূতিকে একটু জলরং দিয়ে রঙিন করার চেষ্টা। শুধু ভয় আম্মার ফোন নিয়ে। যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো। সকালে ৩০ সেকেন্ডে কথা বলে শেষ করেছি। বেশি কথা বললে সেও কাঁদবে আমাকেও কাঁদাবে।
দোয়া করি ঈদ সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা আর অনেক অনেক শুভ কামনা !!
আমরা প্রবাসীরা সবাই একই পথের পথিক।
আপনার লেখাটা প্রবাসে ব্যচেলর জীবনের কথা আরো একবার মনে করিয়ে দিল।
ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখার জন্য।
ধন্যবাদ হাফিজুর ভাই , ভালো থাকুন শুভ কামনা সবসময় !!
ধন্যবাদ লিটন ভাই খুব সুন্দর একটি লেখার জন্য.জীবন নদীর অনেক টুকু পাড়ি দিলেও মা বাবার কাছে এখনো ছোটই রয়ে গেছি. ঈদের দিনে ফোন দিলে এখনো মা জিগ্যেস করেন কি খেয়ে ঈদের নামাজে যাচ্ছি. মায়াভরা, স্মৃতি ঘেরা এই দিনগুলি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আবার ও অনেক ধন্যবাদ.
ধন্যবাদ সায়িদ ভাই , ভালো থাকুন সবসময় !!
লিটন ভাই, অনেক দিন হলো আপনার কোনো লেখা দেখিনি. আশা করি ভালো আছেন.