ধন্যবাদ Travelers of Bangladesh (Tob) .

সাম্প্রতিক বাংলাদেশী ভ্রমণবিষয়য়ক একটি অনলাইন গুরুপে, Travelers of Bangladesh (https://www.facebook.com/groups/mail.tob/) সদস্য হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। ব্যস্ততায় সবসমই সাইটটি দেখা হয় না, তবে যখনি সাইটিতে যাই তখনি ভালো লাগে। বাংলাদেশী পত্রিকা বা টেলিভিশনের থেকে ওই গ্রূপের পেজে সময় কাটতে ভালো লাগে, কারণ ওখানে কোনো রাজীনিত, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ বা একে ওপরের উপর কাদা ছোড়াছুরি নেই। আমি বাংলাদেশে থাকা অবস্থাতেতো নাই, বিদেশে আসার পরেও ভালো করে জানতাম না যে আমাদের দেশে এতো সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। আগেকার সংবাদ মাধ্যমগুলির মাধ্যমে শুধু গতানুগতিক খবর ছাড়া এই জাতীয় খবর খুব কমই পাওয়া যেত। আমার খুব ভালো লাগছে শত ঝামেলার মধ্যেও কিছু লোক আমাদের দেশের ভালো কিছু জিনিস তুলে ধরছেন। অন্তত সোশ্যাল মিডিয়াকে তারা পসিটিভ ভাবে বেবহার করছেন।

যাহোক আমার এই লেখার কারণ হলো তাদের কভার পেজের দেওয়া একটি বাক্য এবং এডমিনের নীতিমালায় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা। কভার পেজের ছবিটি একটি লেক বা সমুদ্রের পাড়ে, এবং পানিতে কিছু শূন্য প্লাষ্টিক বোতল ভাসছে। তার উপরে লেখা, ” আমরাই দায়ী”, ভ্রমণ হোক ইতিবাচক ও দায়িত্বশীল। তাছাড়া আমি লক্ষ করেছি তাদের এই উৎসাহের পরে সদস্যদের লেখার শেষে তারা অন্যদেরকেও পরিবেশ-সচেতন হতে বলছেন। আসলে কি এভাবেই হওয়া উচিত না, না কি সমস্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বা অন্য কাউকে দিয়ে নিজে কোনো দায়িত্বই পালন করলাম না। আমি দেশে গেলে প্রায়ই দেখি ডাস্টবিনের ভিতরের থেকে আসে পাশেই ময়লা থাকে বেশি, আবার যেখানে পানের পিক বা সিগারেটের বাট ফেলার জায়গা তার ভিতর শূন্য কিন্তু আসে পাশে ভরা। হা, যেই বেক্তি ওই ডাস্টবিন বা পাত্রটিকে শূন্য করে ময়লাগুলো নিয়ে যাবেন তার দায়িত্ত্ব কি আপনার পানের পিক বা আপনার গার্বেজ ডাস্টবিনের বাইরে থেকে তুলে ডাস্টবিন ভোরে তারপর সেটা পরিষ্কার করা। সিম্পলি ননসেন্স, sorry !

যাহোক ওই পরিস্থিতির মধ্যে এই গুরুপটির পরিবেশ সংরক্ষণের বেক্তিগত দায়িত্বের বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। আর এই বেক্তিগত দায়িত্ববোধ বা সচেতনতা না থাকলে যত আনিসুল হকই আসুক আর যত মিলিটারি পুলিশই লাগান না কেনো কোনো কাজ হবে না। আমি আর্মি কেন্টনমেন্টে গেলে চিত্র অন্য রকম দেখি, কারণ ওখানে পেদানি খাওয়ার সম্ভাবনা আছে তাই। আমরা কি আসলে বিবেক দ্বারা চালিত হতে জানিনা, নাকি পেদানি খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। আর সব কিছুই যে জন্মগত ভাবে হবে সেটা হয়তোবা ঠিক না। আস্তে আস্তে শিখতেও হয়, কিন্তু আমরা সেই শেখাটাও হয়তো ভুলে গেছি।

আমি বেক্তিগত ভাবে দেশে থাকা অবস্থায় একসময় ঐরকম ছিলাম কিন্তু সেটাতো বদলে ফেলেছি। এই বদলে ফেলার একটি উদাহরণ দেই। দীর্ঘদিন আগেই যেখানে সেখানে গার্বেজ ফেলা অভ্যেস ত্যাগ করেছি। অনেকদিন আগে টরোন্টোর কিছু উত্তরে একটি শহরে গেছি। গাড়ি চালাতে চালাতে আপেল খাচ্ছি। সাধারণত আমার গাড়িতে ছোট ছোট কিছু গার্বেজ ব্যাগ থাকে। ওখানেই টুকি টাকি গার্বেজ ফেলি, কিন্তু সেদিন কি মনে করে যেন আপেলটি খাওয়ার পরে মাঝখানের কোরটি গাড়ির জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। গাড়ি তখন সামনে লাল লাইটের কারণে আস্তে চলছিল। হটাৎ দেখি ডানদিকের গাড়িরই চালক জানালা খুলে আমাকে কি যেন বলতে চাছছেন। আমি আমার জানালা খুলাম সে আমাকে বললো ,”hey brother, don’t litter”. আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না সে কি বলতে চাচ্ছে। আমি বললাম “pardon me”. সে তখন বললো ”the apple core”. আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না। সঙ্গে সঙ্গে তাকে sorry বোলে জিনিষ্টি আমাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ দিলাম এবং নিজের এই অপকর্মের জন্য নিজেকে ধিক্কার দিলাম।

তবে যে বিষয়টি লক্ষ করার মতো ছিল তা হলো ছেলেটি ছিলো হয়তো ১৮/১৯ বছর বয়সের এবং কালো, হয়তো কোনো ইমিগ্র্যান্ট এর ছেলে। আমার তখন কানাডিয়ান মূল্যবোধের কথা মনে পড়লো, শুধু একটি পাসপোর্ট পাওয়াই একটি দেশের পরিপূর্ণ নাগরিক হওয়া নয়, সেখানকার সমাজের মূল্যবোধ বা সিভিল সেন্সটা থাকাও জরুরি। ছেলেটি এতো অঁল্প বয়সে পরিবেশের বেপারে সচেতন এবং অন্যকেও সচেতন করতে কোনো দ্বিধাবোধ করেনি। আমি তাকে এবং তার গাড়িকে লক্ষ করলাম, কালো একটি গাড়ি, মাজদা cfx ৭৮৯ নম্বর। গ্রীন লাইট আশায় আমি আর তাকে ধরতে পারলাম না, তাই হাইওয়েতে উঠার আগে তাকে উদ্দেশ করে একটি হঙ্ক দিয়ে হাত নাড়িয়ে তাকে আর একটি ধ্যনবাদ দিয়ে আমি আমার গন্তব্যে চলে গেলাম। তারপর অনেক বছর কেটে গেছে কিন্তু ভুলেও কোনোদিন ওই আকাজ করা হয়নি। গার্বেজ ফেলতে গেলেই ওই সাদা গেঞ্জি পরা কালো যুবকের কথা মনে হয়। এখানেও যে বোধহীন কিছু মানুষ নেই তা ঠিক নয় তবে সে সংখ্যা খুবই কম।

আজকে ঠিক Travelers of Bangladesh গুরুপের কভার পেজের লেখাটি দেখে ওই ছেলেটার কথাই মনে হলো এবং কিছুটা ভালোও লাগলো, কারণ আমাদের দেশেও কিছু সচেতন মানুষ আছে। যাহোক অনেক ধন্যবাদ Travelers of Bangladesh (ToB), আপনাদের এই সচেতনতামূলক কাজের জন্য, দেখুন আপনাদের ওই দুই লাইন লেখা আমাকে কত লাইন লিখতে উৎসাহিত করলো। তবে আশা করি আপনাদের ওই বক্তব্যকে অন্তরে ধারণ করে শুধু মাত্র ভ্রমনকারিরাই নয়, দেশের সবাই যেন যে যার জায়গা থেকে আমাদের পরিবেশকে রক্ষার দায়িত্ব নেন। পরিষ্কার থাকতে পয়সা লাগে না। তাছাড়া পরিষ্কার পরিছন্নতা তো ঈমানেরই অঙ্গ, তাই নামায রোজার মতো এটাওকি অপরিহার্য নয়। অন্যান্য ধর্ম বা সংস্কৃতিতেও পরিষ্কারের কথা ভালো করে বলা হয়েছে। আসুন আমরা সেটা মেনে চলি এবং পৃথিবীটাকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করি।

ধন্যবাদ।
মুকুল
টরন্টো, কানাডা

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন