তপ্ত রোদে পথ হাঁটছি। পায়ের নিচে ফুটছে বালি কী যে
হঠাৎ এল এক ফালি মেঘ। বিষটি নামে। মিষ্টি হাওয়ায় মনটা গেল ভিজে।

বেশ বুঝেছি – পথচলা তো সহজ কিছু নয়
পথে-পথে কত বিপদ বিঘ্নবাধা ছড়িয়ে নয়ছয়।

বাবার কথা উঠল বেজে কানে
উদ্দীপনা চলকে ওঠে প্রাণে –
বলছে বাবা, ‘পথ চলতে কেন এত ভয়?’

ঘন সবুজ ঘাসরা ধুসর ফিকে
ভাঙাচোরা নুড়িগুলো ছড়িয়ে চতুর্দিকে
কখনো পথ বিষম উঁচু। কখনো ঘোর নিচু
ডরজড়তার পিছুটানটা লেগে আছে পিছু।

পথ চলছি। পথ চলছি। এই তো পেলাম একটা বটের ছায়া
একলা আমি বসে ক্ষণে-ক্ষণে
খুব ভাবি আনমনে –
এমন ছায়ার মতোই মিঠে আমার প্রতি বাবার ছিল অপার স্নেহ-মায়া।

সামনে অগাধ নদী
বইছে নিরবধি।
দাঁড়িয়ে পাড়ে আমি
পাড়ি দেব। নৌকা কোথায়? থমকে থেকে ঘামি।
ঠিক তখনি বুঝতে পারি – ঝিরিঝিরি হাওয়ার সুরে বলছে বাবা, ‘খোকা,
তুমি ভীষণ বোকা!
সকল সময় তোমার পাশে আমি আছি। বুকে সাহস রাখো
স্বপ্নে অটল থাকো।
নদী এমনতরো
হোক-না যতই বড়ো
পাড়ি দেয়া মোটেও কঠিন নয়
জানতে হবে কেমন ক’রে নির্ঘাত হয় ভয়ের পরাজয়।’

নদীটাকে ডুবসাঁতারে পাড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলাম। সামনে দেখি বন
গহীন বনের পাতায়-পাতায় আলোছায়ার মায়াবি অঞ্জন।
এদিক ঘুরি। ওদিক ঘুরি। মনটা উড়ু-উড়ু
এবং দুরুদুরু।
আলটপকা আঁতকে উঠি। মালুম হল – বনের মাঝে এসে
দিক হারিয়ে গেছি আমি ফেঁসে –
কেবল ভাবি – কেমন ক’রে এ বন থেকে বেরিয়ে আমি যাব?
আমার পথের দিশে খুঁজে পাব?
চেয়ে দেখি – ডালপালাদের বহর ঠেলে ডহর এলোমেলো
পাতার ফাঁকে কেটে আঁকিবু্কি
রোদ দিচ্ছে উঁকি।
বাবার কথা পড়ল মনে। একান্ত এক কণ্ঠ ভেসে এল –
‘বলছি আমি তবে
যা-ই বিশ্বাস করবে তুমি অর্জন তা-ই হবে।
বিশ্বাসটা উঁচিয়ে রাখো মনের অন্দরে
ভীষণ যতন ক’রে।
দেখবে তুমি ঠিকই খুঁজে পাবে পথের দিশে।
ভয় বলো আর কিসে?’

প্রাণপণে বন গ’লে আমি খুঁজে নিয়ে পথ
চলে এলাম হলদে মাঠের হাট
কী দারুণ নিপাট!
মাঠ পেরুলাম। ঘাট পেরুলাম। আচমকা পর্বত
সামনে এসে হাজির হল যেই
হারিয়ে ফেলি খেই।

অবশ শরীর। বিবশ মনে আমি তো নিশ্চুপ
ভাবতে থাকি খুব –
দত্যিমতো ঘাড় উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড় অই
পেরিয়ে যাব কেমন করে? আমি মোটেও হারকিউলিস নই!
নিঝুম পাহাড় চিরে
ঝরনা নামে ধীরে।
যেদিক তাকাই জংলা অথই ঘের
নিশ্ছিদ্র ঢের।
করব এখন কী?
ঘুণাক্ষরেও আমি ভাবি নি –
পাহাড় হবে আমার পথের বিরাট বড়ো বাধা
আচম্বিতে পিছু নেবে মরণ গোলকধাঁধা।
এমন সময় বনফুলের মতো আলাপনে
বাবার কথা আমার মনের কোণে
মিষ্টি আবেশ ছড়িয়ে দিল, ‘হাল ছেড়ো না। এগিয়ে যাও। সফল হবেই হবে।
চেষ্টা ছাড়া সফলতা পেয়েছে কে কবে?’

পাহাড়টাকে কোনো মতে পাড়ি দিয়ে আমি তো ফুরফুরে
পথ হাঁটছি। পথ হাঁটছি। একটা মধুর উচ্ছলতা মনটা আছে জুড়ে।

পাড়ি দিলাম – কত গেরামপাড়া
ডোল দিগন্তে উছলে-পড়া নিতল অচিনপুর
গীতল হৃদয় উজিয়ে যায় সোনালি নীল রঙের সমুদ্দুর
দুধ শাদা কাশ। বাঁশের বাদাড়। পাতার পাথার মনটাকে দেয় নাড়া।

পথ চলছি। পথ চলছি। এ পথচলার নেই বুঝি আর শেষ
চিন্তা কী আর? আমার আছে সঙ্গে অমিত এক পাথেয় বাবার উপদেশ!

 

সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি:
অনিরুদ্ধ আলম (Anirudha Alam) পেশাগত জীবনে একজন ফ্রিল্যান্স উন্নয়নকর্মসূচি কন্সালটেন্ট এবং উন্নয়ন-যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি এ পর্যন্ত চল্লিশটিরও অধিক বই লিখেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: ২৪ অক্টোবর ১৯৭১ (উপন্যাসিকা), এইসব রাতদিন (কিশোর কবিতা), দূরের ডাক (ছড়া-কবিতা), তারপর তারপর (ছড়া), সকলের জন্যে পরিবেশ পরিবেশের জন্যে সকলে (ছড়ানাটিকা), পিঁপড়ে (সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস), অপারেশন ক্যালপি বত্রিশ (সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস), এবং ক্রিনোর অপেক্ষায় (সায়েন্স ফিকশন), তেইশশত দুই সালের এক জানুয়ারি (ছোটো গল্প), দু’ শ’ বছরের সেরা বাংলা কিশোর গল্প (সম্পাদিত গল্পের সংকলন), তোমাদের জন্যে বাংলা বানান (শিশুকিশোরদের জন্যে বাংলা বানান সংক্রান্ত বই), আমাদের কালো মানিক: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (জীবনী)।

2 মন্তব্য

  1. ‘পরবাসী ব্লগ’ সম্পর্কে বলার জন্যে আমি একজন সামান্য মানুষ। ইতিপূর্বে আমি ব্লগে কখনও লিখিনি। একটি ব্লগ যে, এতো সুন্দর ও নান্দনিক হয়, তা আমার জানা ছিলো না। হাফিজ ভাইর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন, আমার অনেক অনেক শ্রদ্ধার বোন ফারজানা নাজ শম্পা। হাফিজ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেও আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমি একটি কারাগারের মতো জায়গায় বাস করি। অনেক কিছু বলার থাকলেও আমি বলতে পারি না। সে সুযোগটা এখন আমার এসেছে।

    হাফিজ ভাই, আমি একটি জানালা পেয়েছি। আমার জানালাটির নাম পরবাসী ব্লগ। এই জানালা দিয়ে আমি একটি সুন্দর ও মানবিক প্রিথিবীকে দেখতে পাই।

    নিরন্তর শুভকামনা পরবাসী ব্লগে যুক্ত সবার জন্য।
    সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়-
    মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির
    বাংলাদেশ
    মোবাইল নং +৮৮০১৮৩২৮৩৭০৯৩

    • কবির ভাই ,
      পরবাসী ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। ব্লগের প্রতি আপনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একটি সুন্দর মন মানসিকতারই প্রতিচ্ছবি ।
      ব্লগে আমরা সমাজের সুন্দর আর ইতিবাচক বিষয়গুলিকেই তুলে ধরতে চাই, তবে তা যেন আমাদের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক না হয় (নীতিমালার বিস্তারিত ব্লগের “নীতিমালা” বিভাগে লিপিবদ্ধ আছে ) ।
      আপনাদেরকে সাথে নিয়েই আমাদের পথচলা। আগামীতে এই পথচলা আরো সুন্দর হোক, এই শুভ কামনা রইলো।
      আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন