একজন ব্রিলিয়ান্ট খোকনের কথা বলছি
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে একদিন
শেষ সম্বল জমি বিক্রির টাকায় পা রাখে বিমানে
পিছনে মা কঞ্চির বেড়া ধরে চোখ মোছেন
বাবার হুঁ হুঁ কান্নায় দাড়ি ভেজে
তবু স্বপ্ন দেখেন- ছেলে তাদের বড় হবে, নাম করবে-
বোবা কান্না বুকে চেপে প্রবোধ দেন নিজেকে।

খোকন সেই কবে এসেছে বিদেশে…
পড়া আর পার্টটাইম জব
এই দুইয়ে জীবন জেরবার, ঘুমানোর সময়টুকুও নেই
কখনো আড়ষ্ঠ চোখে এসাইনমেন্ট সামনে বসে পড়ে
অক্ষরগুলোর ওপর ভাসে মায়ের মুখ-
‘একটু ঘুমিয়ে নে বাবা
আমি তোকে সকালে ডেকে দেবো!’
মা মা ডাকে চিৎকার করে ওঠে খোকন-
ঝর ঝর অশ্রু ঝরে গন্ড বেয়ে
ইচ্ছে করে সব ফেলে ছুটে যায় মায়ের কাছে
কত্তদিন মায়ের মুখ দেখা হয় না তার।
এই যে লড়াই মাকে কি জানাবে সে?
না, এ কষ্ট জানলে মা কষ্ট পাবেন, নিবৃত হয় সে।

একদিন পড়া শেষে নেমে পড়ে জীবনযুদ্ধে
সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে ছুটতে ছুটতে
ক্লান্ত খোকন। চাকরি হয় না তার।
ততদিনে সংসার হয়েছে, বেড়েছে পরিধি
ব্যস্ত থেকে আরো ব্যস্ত হয় জীবন
যন্ত্রের মতো ছোটে খোকন।
এখন মাসে বা ছয় মাসে একবার কথা হয় মার সাথে
অথবা
অনেক পরে
হ্যাঁ, অনেক পরে কোনো এক ছুটিতে মার কাছে ফেরে
বাবা তাকে দেখে হাউমাউ কাঁদেন জড়িয়ে ধরে
বিচলিত খোকন, আবার তাদের ফেলে যেতে হয়
সময়ের কাছে পরাজিত খোকনকে ।

এভাবেই কাটে বছর ,
বছরের পর বছর।
একদিন খবর আসে- বাবা নেই
খোকনের বৃদ্ধ বাবা বেশ কিছুদিন
হাসপাতালের বেডে থেকে চলে গেছেন
না ফেরার দেশে
মুঠো ফোনে অপর প্রান্ত থেকে খবরটা শুনে
খোকন বসে পড়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ।
মানসপটে ভেসে যায় শৈশব, কৈশোর
বাবার সাথে হাত ধরে তার বেড়ে উঠা ।
বুকের মধ্যে জমে থাকা কষ্টগুলো
কান্না হয়ে ঝরতে থাকে অঝোর ধারায়।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন