অবশেষে অশেষকে চাকুরীটা ছেড়ে দিতে হলো। এ ছাড়া আর কোন উপায় অবশিষ্ট ছিলনা। ব্যবস্থাপণা পরিচালক সাহেব কোনভাবেই আর স্বাভাবিক আচরণে ফিরছিলেন না। অথচ তিনি সবসময় নিজেকে একজন মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে দাবী করেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তিনি একজন ভয়ংকর হিংস্র ধরনের মানুষ।

অশেষ কি করবেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা। কভিড-১৯ এর উত্তাল স্রোতের টানে বানভাসি মানুষের মতোই অশেষের বেঁচে থাকার সমস্ত অবলম্বনগুলো অন্ধকার গহ্বরের অতলে তলিয়ে যেতে থাকলো। বিশ বছরের চাকুরিজীবনের কতো স্মৃতি, কতো আনন্দ-বেদনা, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে অশেষের। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার সকল চেষ্টাই যেন শুধু মেকি এবং অভিনয়। বাইরে থেকে কিছু বুঝতে পারা না গেলেও বুকের ভেতরে অবিরাম ক্ষরণের রক্তের স্রোতের তাণ্ডবে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে অশেষ!
ভগ্নী সমতুল্য যে ভদ্রমহিলার বাসায় অশেষ থাকেন, তার ছোট মেয়েটি এবং অশেষ যাকে মা ব’লে জানেন, তিনি পথ চেয়ে থাকবেন। তাইতো ঘরে ফেরার তাড়া। তা-না হলে, ঘরে কে আছে অশেষের! সীমাহীন গন্জনা আর অত্যাচার, আজীবনের জন্য সঙ্গী হয়ে অশেষকে বেঁধে রেখেছেন।
অনেকের, অনেক কিছু থাকে। অনেকে থাকে। ঘর ভর্তি আপনজন থাকে, মায়া- মমতা, ভালোবাসার বন্ধন, অফুরন্ত সুখ থাকে। বেঁচে থাকার জন্য অশেষের তেমন কিছুই নেই। একটি নিষ্পাপ শিশুর অকৃত্রিম হাসি ভরা মুখ আর একজন বৃদ্ধার ভালোবাসা আছে। অশেষের মতো একজন পরিচয়হীন অনাথের জন্য এ-ও কম কি! ভিখারির মাথার রাজমুকুটের মতোই অমূল্য সম্পদের চেয়েও দামী এর সবকিছু। এতেই অশেষ তৃপ্ত।
ছোটবেলায় ‘সিন্ড্রেলার গল্প পড়ে অশেষের ভীষণ মন খারাপ হয়ে যেতো। বৈমাত্র মা এবং দুই বোনের হিংসা আর লোভের জালে জড়িয়ে, সিন্ড্রেলা, রাজকুমারী থেকে সামান্য গৃহপরিচারিকায় পরিণত হয়েছিল। অশেষ, হিংসা আর লোভের উত্তাপে শুধুমাত্র একজন সামান্য গৃহপরিচারক নয়; নেশাগ্রস্ত, দুশ্চরিত্র, লোভী, খুণী সহ আরো অসংখ্য বিশেষণ দ্বারা বিশেষায়িত হয়েছেন। এ-তো কিছুর পরও একটি সুন্দর দিন এবং শান্তিময় জীবনের জন্য অশেষ অপেক্ষমাণ রয়েছেন। আসবে কি একটি সুন্দর দিন এবং শান্তিময় জীবন অশেষের কষ্টের আগুনের তাপে পুড়ে ক্ষাক হ’য়ে যাওয়া মরুদ্যান সম ভুবনে?
(চলবে)।

১ মন্তব্য

  1. আমার লেখা ধারাবাহিক উপন্যাস। লেখাটি প্রকাশ করে পাঠকদের পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য পরবাসী ব্লগ পত্রিকা এবং হাফিজুর রহমান ভাইয়ের জন অফুরান ভালবাসা এবং শুভকামনা রইলো। একজন অশেষের মাঝে অগণিত অশেষের দুঃখ-গাথা রয়েছে, আমার লেখায়। সবাই পড়বেন, বিনীত অনুরোধ করছি। পরবাসী ব্লগ পত্রিকা হোক আপনাদের মনের খোরাক যোগানোর একান্ত সঙ্গী। সবার জন্য অবিরল ভালোবাসা এবং শুভকামনা।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন