সুন্দরী ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে যে গুন্ থাকা  দরকার – শুচিতার মধ্যে সবই আছে ।  সে ফর্সা ,৫ ফুটের  অধিক লম্বা ,ডান গালে তিলক- মিষ্টি করে হাসে , এক নজর দেখলে যে কোনো লোকই আর একবার ফিরে দেখে। শুচিতা অতি বুদ্ধিমতী, তার চলাফেরা  ও কথাবার্তার মধ্যে রয়েছে মার্জিত স্বভাব । ইউনিভার্সিটি জীবনের প্রথম বর্ষে তার বন্ধু – বান্ধবী (সুমিত,আজিজ,মনিকা ) গ্রুপ করে পড়াশুনা ও ল্যাব ওয়ার্ক  শেষ করে দেরি করে ঘরে ফিরে ।    শুচিতার স্বপ্ন ভালো রেজাল্ট করে এই প্রতিযোগিতার বাজারে কাজে যোগদান করা । ভোরে ঘর থেকে শুচিতা বের হয়, ক্লাস , লাইব্রেরি , ল্যাব শেষ করে ঘরে ফিরতে অনেক দেরি হয় । উইকেন্ড এবং ছুটির দিনে ও সে পড়া শুনা নিয়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখে । শুচিতার এ ব্যাস্ততা দেখে প্রীতম ও আভা খুবই আনন্দিত ।

শীতের রাতে মেয়ে ঘরে ফিরতে কষ্ট হবে ভেবে প্রীতম ও আভা আস্তে আস্তে বরফ ঠেলে ইউনিভার্সিটি পার্কিং লটে গিয়ে অপেক্ষা করে ।চারিদিকে সাদা তুলার মতো তুষারপাত ।  রাস্তা প্রতি নিয়ত স্নো ব্লোয়ার দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে । মাইনাস টেম্পেরেচারে অতি দ্রুত বরফ হয়ে পথ পিচ্ছিল করে দেয় । লবন না দিলে রাস্তায় হাঁটা ঝুঁকি হয়ে পড়ে । স্বাভাবিক জুতা পরে রাস্তায় বের হওয়ার প্রশ্নই উঠে না । বুট, উলেন কোট, মাথায় উলেন টুপি, মোটা  উলেন মৌজা, গলায় উলেন কাপড়, হাতে উলেন গ্লোভস  পড়ে বের হয়েছে  প্রীতম ও আভা। গাড়িতে হিট দেয়া হয়েছে ।  এই ঠান্ডার মধ্যে মা-বাবা গাড়িতে হিট দিয়ে একমাত্র অতি আদরের মেয়ের জন্য অপেক্ষা করে বসে তাকিয়ে আছে কখন মেয়ে আসবে আর ঘরে নিয়ে যাবে  । এ ভাবেই টরোন্টোর ব্যাস্ত জীবন কেটে যায় প্রীতম,আভা ও শুচিতার ।  প্রীতম ও আভার স্বপ্ন মেয়ে বড়ো হয়েছে , দেখতে সুন্দর , ভালো ছেলে দেখে, আনন্দ ও   হই- চৈ করে  বিয়ে দিয়ে নিজেদের দিয়ীত্ব শেষ করবে । তবে হ্যাঁ, মেয়েকে দূরে যাইতে দেবে না । সে একমাত্র আদরের মেয়ে , তাকে ছাড়া প্রীতম ও আভা কি ভাবে বেঁচে থাকবে!

দেখতে দেখতে চার বৎসর শেষ হয়ে গেলো । শুচিতা ইউনিভার্সিটি থেকে ভালো গ্রেড নিয়ে  গ্রাডুয়েশন করেছে । প্রীতম ও আভা বলে  তুমি স্কুল টিচিং জবের জন্য চেষ্টা করো, স্কুল জব রেস্পেক্টবল, আমরা  পছন্দ করি ।
শুচিতা বলে,আব্বু/আম্মু  আমি টিচিং জব পছন্দ করি না । আমি প্রাইভেট কাজ  নিয়ে শুরু করবো এবং পরে সরকারি চাকুরীর জন্য চেষ্টা করবো ।  মা-বাবা বলে,তুমি যা ভালো মনে করো । শুচিতার বান্ধবী মনিকা ও আজিজ সরকারি চাকুরী নিয়ে অটোয়া চলে গিয়েছে । ৬ মাসের মধ্যে তারই  ক্লাসমেট আজিজকে বিয়ে করে সংসারী হয়েছে । শুচিতা আমাদের একমাত্র মেয়ে , আমরা চাই না সে আমাদের ছেড়ে দূরে চলে যাক । আভা একদিন শুচিতাকে নীরবে ডেকে বলে – তোমার বাবা দুই বৎসরের মধ্যে অবসর নেবে । আমি ছোট খাটো কাজ করি ,তুমি প্রাইভেট বা সরকারি কাজ করো,টরন্টো থাকতে চেষ্টা করবে ।  শুচিতা বলে , আমি টরন্টো থাকতে চেষ্টা করবো –  তবে আমাকে বাহিরে পোস্টিং দিলে – আমি যাবো ।

শুচিতা, মনিকা  চলে যাওয়ার  ৪-৫ মাস পর সরকারি চাকুরী পেয়ে অটোয়া যাইতে চাইলে, প্রীতম ও আভা  তাকে বুঝাতে  চেষ্টা করে  ,তুমি অটোয়া চলে গেলে আমরা একা হয়ে যাবো । তুমি বরং এখানে কোনো সরকারি চাকুরী নিতে চেষ্টা করো । সে বলে , আব্বু-আম্মু  চাকুরী চাইলেই পাওয়া যায় না ।  শুচিতা চাকুরী নিয়ে অটোয়া মুভ করে। শুচিতা,মনিকা ও আজিজের অফিস এক বিল্ডিং,বাসা ১০ মিনিটের হাঁটার পথ ।  ওরা একই বিল্ডিং- এ  থাকে, পাশা-পাশি  এপার্টমেন্টে ।

এটা ডিসেম্বর মাস,  সে দিন   রাতে  শুচিতা আবহাওয়ার পূর্বাবাস দেখে নি ।  সকালে সামান্য তুষারপাত  শুরু হয়েছে , সে হেটে অফিস চলে গিয়েছে ।  সে বাহিরে খেয়াল করে নি । বিকেলে অফিস সেরে শুচিতা বাহিরে এসেই প্রচন্ড বরফ দেখে ভয় পেয়ে যায় ।  ভাবে কি ভাবে বাসায় পৌঁছবে ?  মনিকা ও আজিজ বাসা থেকে আজ কাজে আসে নি ।  ওরা অতিরিক্ত তুষারপাতের  পূর্বাভাস পেয়ে sick  leave  নিয়েছে ।  সে ট্যাক্সি ডেকে বাসায় এসে কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে মনিকাকে টেলিফোন করে বলে – তোমরা আজ কাজে যাও নি জানলে আমি ও যেতাম না ।  আজ অফিস খুবই কম এটেন্ডেন্স ছিল ।  মনিকা জিজ্ঞাসা করে ,তুমি কি খাবে ?

শুচিতা বলে ফ্রীজে কালকের খাবার আছে ,আমি হাত- মুখ ধুয়ে মাইক্রোওভে গরম করে   খেয়ে নেবো ।    মনিকা বলে তুমি হাত মুখ ধুয়ে তৈরী থেকো, আমি গরম গরম খাওয়া নিয়ে আসতেছি । শুচিতা বলে , আমার পুরানো খাওয়া আছে ,তুমি আবার পরিশ্রম করার দরকার কি ?
মনিকা চিকেন  কারি ও  বাসমতি চালের পোলাও,  নান রুটি এবং সালাদ নিয়ে বাসা নক করে –  তুমি অনেক কষ্ট করে অফিস থেকে এসেছো ।  বসে বসে টেলিভশন দেখো ও খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যাও । শুচিতা বলে ,আমি এত সকাল সকাল ঘুমাতে যাই না ।
শুচিতা বলে, তুমি কি খাওয়া দাওয়া  করেছো ?
না ,এখন পয্যন্ত করিনি ।    শুচিতা বলে , আমি আজ অফিসে  না গেলে ও হতো । মনিকা বলে,ঠিক আছে – কেউ না কেউ অফিস যাওয়া দরকার ।    কাজ বেশি করি নি, শুধু বসে বসে গল্প করেছি । বাসায় একা একা বসে বোর  হয়ে যেতাম ।  মনিকা বলে ,আচ্ছা. আমি যাই ,আজিজ খাবার জন্য বসে আছে ।
শুচিতা কে টরন্টো বাসা থেকে তার মা কল করেছে. শুচিতা ,  তুই  কেমন আছিস  ?
মা- ভালো ।
তুই কি আজ কাজে গিয়েছিলি ?
হ্যাঁ , আমি গিয়েছি  মা ।
তোমরা কেমন আছো ? বাবা কি করে?
ভালো. কি আর করবে- বসে বসে টেলিভশন দেখে । এত স্নোর মধ্যে না গেলে ও পারতে । কাজে তো অবশ্যই যেতে হয় ।তা বুঝলাম ।
তুই বড়ো কর্তব্য পরায়ণ ।
শুচিতা হা হা হা ।
কি রান্না করেছিস ?
না –মা, আমি আজ রান্না করিনি । কালকের খাওয়া আছে ,তা ছাড়া মনিকা গরম পোলাও , চিকেন ,নান রুটি  ,সালাদ  দিয়ে গিয়েছে ।    ঠিক আছে খাও ।
তোমরা কি খাওয়া – দাওয়া করেছো ?
আমরা তো সন্ধ্যা হলেই খেয়ে নেই ।     ঠিক আছে -মা ভালো থেকো ।    শুচিতা টেলিফোন রেখে দিয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে ।
আজ শুচিতার নামে  একটা চিঠি  এসেছে । প্রদীপ  মোম্বে, ইন্ডিয়া থেকে চিঠি দিয়েছে । শুচিতা মনে মনে ভাবে প্রদীপ  আমাকে অনেক ভালো বাসে । কিন্তু সুমিত  আমার ইউনিভার্সিটি  জীবনের বন্ধু ।  আমি কি করি স্যাম রাখি না কুল রাখি । প্রদীপ  আমাকে  ব্যবহার করে   কানাডা আসতে  চায় ।  আমাদের  পরিবারের সবাই চায়, আমি যেন প্রদীপকে বিয়ে করি । এতে আমার আত্মীয়তা বজায় থাকে । কিন্তু আমি প্রদীপকে ভালো বাসি না ।  আমি সুমিতকে   ভালোবাসি । সুমিত  আমাকে অনেক সাহায্য করেছে । আমি ক্লাসে ম্যাথ ও সাইন্স সাবজেক্ট গুলিতে ভালো ছিলাম না । সুমিত  অনেক ভালো এবং সে আমাকে সাহায্য করেছে । তা ছাড়া সে আমাকে অনেক ভালো বাসে । প্রদীপ অনেক সুন্দর লাভ লেটার লিখতে পারে । তার লিখা চিঠি অনেক আকর্ষণীয় । খাবার পর বেডে গিয়ে আরাম করে শুয়ে  চিঠি পড়বো ।

মা-বাবা আমাকে অনেক মিস করে ।বাবাকে বলেছি চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে  – বাড়ি বিক্রি করে এখানে চলে আসতে,তাতে  ওরা আমাকে আর মিস করবে না । মা-বাবা জীবনে অনেক কষ্ট করেছে । বাবা প্রথম জীবনে শিপে কাজ করতো ।  এখন ও কত কষ্ট, ১২ঘন্টা শিফটে ফ্যাক্টরিতে কাজ করে ।  মা রেস্টুরেন্টে পার্ট -টাইম কাজ করে ।
শুচিতা মনে মনে ভাবে , প্রদীপকে বিয়ে না করে, সুমিতকে বিয়ে করলে মা বাবা মনের দিক থেকে অনেক কষ্ট পাবে ।  কিন্তু, আমি কি করবো?, কি ভাবে আমি  সুমিতকে নিষেধ করবো?
নিষেধ করতে চাইলে ও সুমিত  এই কথা কিছুতেই মানবে না ।  তা ছাড়া প্রদীপকে যদি বিয়ে করি, তাকে স্পনসর করতে হবে ।  দুই থেকে আড়াই বৎসর তার কেস অপ্প্রভ করা এবং এখানে এসে আবার নুতন করে পড়া শুনা করা, চাকুরী নেয়া । এ বড়োই ঝামেলা জনক কাজ ।   প্রদীপ নিজের লাইনে কাজ পাইতে কম পক্ষে ২-৩ বৎসর সময় লাগবে ।

শুচিতা বেডে গিয়ে প্রদীপের   চিঠি নাড়া ছাড়া করে- পড়তে ইচ্ছে করে না । প্রদীপ বিনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছু লিখে । সারা দিনের ক্লান্ত শরীর ,  ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ে । প্রদীপের   চিঠি বেডে পড়ে থাকে এবং সকালে সে ঘুম থেকে উঠে তাড়া হুড়া করে অফিসে চলে যায় । মাঝখানে চায়ের বিরতির সময় ,  সে মনে  করে যদি চিঠিটা নিয়ে আসতাম, তবে ভালোই হতো এবং অবসর সময় পড়তে পারতাম ।
বিকেলে ঘরে এসে সে খাওয়া -দাওয়া সেরে চিঠি নিয়ে বসে । প্রদীপের   চিঠি পড়ে শুচিতার মন খারাপ  হয়ে যায় ।  সে অনেক দিন থেকে ভাবে প্রদীপকে খোলামেলা কথা বলাই ভালো ,তাতে সে অযথা আসা করে হয়রান হবে না । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাবাকে নিয়ে- বাবা কিছুতেই মানতে রাজি হয় না । নিজের আত্মীয় স্বজনকে একটু সাহায্য করতে কে না চায়?
বাবাকে কোনো মতেই বুঝানো যায়  না । আমি বড়ো হয়েছি, তা ছাড়া আমার নিজের পছন্দ তো অবশ্যই আছে । শুচিতা ভাবে ,প্রদীপকে পরিষ্কার করে বলে দেয়া – ই ভালো ।
শুচিতা টেলিফোন উঠিয়ে প্রদীপকে ডায়াল করে । হ্যালো ! আমি অটোয়া থেকে শুচিতা বলছি । প্রদীপ -তুমি কেমন আছো ?
প্রদীপ -শুচিতার টেলিফোন পেয়ে হকচকিয়ে যায় – বলে আমি ভালো আছি । শুচিতা ! তুমি কেমন আছো ?
আমি ও ভালো আছি ।
অটোয়ার আবহাওয়া  কেমন ?
এখানে অনেক ঠান্ডা এবং গতকাল প্রচন্ড স্নো পড়েছে ।  আজ টেম্পারেচার -১৫ সেলসিয়াস । প্রদীপ বলে প্রচন্ড ঠান্ডা !  শুচিতা বলে ,আমরা ঠান্ডার দেশে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি ।  প্রদীপ বলে তুমি কি আমার চিঠি পেয়েছো? হ্যাঁ ! পেয়েছি ।
শুচিতা প্রায় আধ ঘন্টা কথা বলে এবং পরিষ্কার করে বলে যে -আমি কাউকে অনেক দিন থেকে ভালোবাসি । এ অবস্থায় আমি তাকে ব্যাতিত কাউকে বিয়ে করতে পারবো না ।  তুমি আমার আত্মীয়, তোমার প্রতি আমার অবশ্যই আন্তরিকতা আছে ।  আমি জানি তুমি মনে মনে দুঃখ পাবে ।  কিন্তু আমার পক্ষে করার কিছুই নাই । আমি দুঃখিত আমি তোমাকে কোনোপ্রকার সাহায্য করতে পারলাম না। তোমার যোগ্যতা আছে,তুমি নিজের থেকে চেষ্টা করে এখানে আসলে আমরা যতটা পারি সাহায্য করবো ।.

অনেক দিন পর শুচিতা তার মা-বাবাকে বুঝিয়ে বলে , আমি প্রদীপকে বিয়ে করতে পারবো না – আমি সুমিতকে  ভালো বাসি । আমি সুমিতকে  বিয়ে করবো । মা-বাবা বলে সুমিতকে  বিয়ে করবে?
হ্যাঁ !
তুমি কি ভালো ভাবে চিন্তা করে দেখেছো ?
হ্যাঁ , আমি এ ব্যাপারে ভালো ভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি  এবং প্রদীপকে  বুঝিয়ে বলেছি । ও আমার অবস্থা শুনে মেনে নিয়েছে এবং ওকে আমি বুঝিয়ে বলেছি যেন ইম্মিগ্রাশনের জন্য নিজের থেকে চেষ্টা করলে এবং যতদূর সম্ভব আমরা ওকে সাহায্য করবো । প্রীতম ও আভা -শুচিতার কথা শুনে বলে ,এটা তোমার জীবন । তুমি যা কিছু করো -ভালো ভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবে ।
শুচিতা সুমিতকে বলে ,তুমি কাজ করো টরন্টো, আমি কাজ করি অটোয়া , এ অবস্থায় তো তোমাকে বিয়ে করে ছুটাছুটি করা আমার পক্ষে সম্ভব না । তুমি যে কোনো কাজ নিয়ে অটোয়া চলে এস এবং তার পরেই দেখা যাবে ।  প্রায় এক বৎসর চেষ্টার পর কোনো একটা কোম্পানিতে কাজ নিয়ে  সুমিত অটোয়া মুভ করে ।
শুচিতা  বাবা -মাকে  চেষ্টা করে তাদের টরোন্টোর বাড়ি বিক্রি করে অটোয়া একটা এপার্টমেন্ট খরিদ করে – বাকি ডলার ব্যাংকে ওদের নামে ফিক্সড ডিপোজিট করে ।  সুমিত সবে মাত্র কাজে যোগদানের পর  শুচিতাকে চাপ দেয়  বিয়ে করার জন্য ।  কিন্তু শুচিতা বলে ,একটু সময় দাও ,আমি মা-বাবাকে বুঝিয়ে ঠিক করতে হবে ।    এই করে তাদের এক বৎসরের ও বেশি সময় লেগে যায় ।   .

উইকেন্ডে শুচিতাকে নিয়ে সুমিত  ঘুরা ঘুরি করতে পছন্দ করে । শুচিতা অনেক ধরণের কোর্স নিয়ে ব্যাস্ত থাকে ।    শুচিতা ঘুরা ঘুরি করা থেকে বিরত থাকলে – সুমিত  বলে,  আগের চেয়ে তোমার অনেক পরিবর্তন হয়েছো ।    আগে ছিল তোমার উৎফুল্ল হাসি, আজকাল তুমি অতিরিক্ত কনসারভেটিভ । শুচিতা বলে ,তুমি আমার অসুবিধা বুঝতে চেষ্টা করো  ।    অফিসে আমার অনেক প্রেসার আছে, । . তা ছাড়া আমি অনেকগুলি কোর্স নিয়েছি । পাস্ না করলে আমার চাকুরীর রেকর্ড খারাপ হবে ।
সুমিত বিয়ের জন্য তাড়াহুড়া করে,  বলে ,  বিয়ে নিয়ে এত দেরি কেন করছো?
শুচিতা বলে মা-বাবাকে বুঝিয়ে নিতে হবে ।   শুচিতা আজ- কাল করে সময় নিয়ে মা-বাবাকে বুঝাতে চেষ্টা করে ।
পরে তারা  বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে দুই পক্ষের লোকজনকে একত্রিত করে বিয়ে করে নেয় । বিয়েতে সুমিত  তারা মা -বাবাকে দেশ থেকে চিঠি দিয়ে  ভিসার ব্যবস্থা করিয়ে নিয়ে এসেছে –  ওদের ইমিগ্রেশন কেস দিয়ে স্থায়ী ভাবে রাখার জন্য দরখাস্ত সাবমিট করেছে ।
সুমিত শুচিতাকে এ ব্যাপারে কিছুই বলে নি ।  দুই  কামরা বাসা ,মা-বাবা ও ভাই – বোন থাকার কোনো ব্যবস্থা না করে সুমিত  দায়িত্বহীনতার কাজ করে ওদের থাকতে দিয়ে সংসারে বিবাদের সৃষ্টি করেছে ।
শুচিতা এ নিয়ে তার বান্ধবী মনিকার সঙ্গে  আলাপ করে এবং সে সুমিতকে বলে এই ছোট বাসায় কোনো প্রকারে ও ৬ জন লোক থাকতে পারে না ।  ওপর দিকে সুমিতের   চাকুরী কোম্পানি থেকে কন্ফার্ম হয় নি ।  সে বেকার ভাতার জন্য দরখাস্ত করে পুনরায় চাকুরী খোঁজ করতে থাকে- এতে শুচিতার উপর বাড়তি চাপ পড়ে ।
শুচিতা ৫টা বাজে কাজ থেকে আসার পর দেখে কিচেন সিংক ভর্তি হান্ডি পাতিল-থালা বাসন, ঘরে শ্বশুর -শ্বাশুড়ি, দেবর- ননদ থাকে – কেউ পরিষ্কার করে না, ফেলে রাখে শুচিতার জন্য ।  সে চোখের পানি সম্ভরণ করতে না পেরে বাথ রুমে গিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে । সে রান্না করে টেবিলে খাওয়া দিলে সবাই খাওয়া শেষ করে থালা বাসন রেখে চলে যায় । সুমিত  ও আজকাল শুচিতাকে সহ্য করতে পারে না, তার কারণ শুচিতা খাওয়া দাওয়া  শেষ করে কিচেন পরিষ্কার করে কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়া শুনা করে ।  সুমিত চায় তার সঙ্গে বসে খানিক সময় দেয়া ।
সুমিত-  শুচিতাকে সাহায্য না করে বলে তরকারি লবন কম হয়েছে, এ নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলে । শ্বাশুড়ি বলে,  তুমি রান্না জানো   না ।    তরকারিতে লবন বেশি,  মসলা কম দাও,  যে জন্য রান্না ভালো হয় না ।
শ্বাশুড়ি আরতি সারাক্ষন টেলিফোন উঠিয়ে তাদের দেশীয় লোকজনকে বলে সুমিত এ কি বিয়ে করেছে?
লোকজন তাল মিলিয়ে কথা বলে যা শুচিতার কানে ও যায় । সে ঘরে এসেই মুখ কালো করে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে এবং আর কারো সঙ্গে কিছু বলে না । কমল  ও আরতি   শুচিতাকে অত্যন্ত ছোট ঘরের মেয়ে বলে প্রকাশ্যে লোকজনের কাছে নানাহ ধরণের কথা বলে ।  প্রীতম তো দেশে শিপে খালাসির কাজ করতো , এখানে এসে ও ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, ম্যানার  জানে না । শারোধী বলে আপনারা এত বড়ো ঘরের মানুষ – এত ছোট ঘরে ছেলেকে বিয়ে দেয়া কি ঠিক হয়েছে ?
আরতি বলে , সব-ই কপাল ।.    সুমিত পছন্দ করেছে , আমরা কি করবো ?
একদিন শুচিতা ঘরে এসে  শুনতে পায় যে আরতির গহনা হারানো গিয়েছে ।     ওরা  গোহনা হারানো নিয়ে শুচিতাকে সন্দেহ করে ।  শুচিতাকে বলে -আমি বাথরুমে গহনা রেখে ছিলাম ,তুমি কি নিয়ে রেখেছো?
শুচিতা বলে ,মা -আমি তোমার গহনা দিয়ে কি করবো?
আরতি বলে ,  দেখো কোথায় ও হয়তো ভুলে রেখেছো । শুচিতা সহ্য করতে না পেরে কেঁদে ফেলে ।  পরদিন শুনা গেছে যে গহনা গার্বেজ কন্টেইনার এর নিচে পেয়েছে- গত রাতে এ নিয়ে ঘরে মহা হুলুস্থল । আরতি বলে ,তুমি হয়তো মনের ভুলে নিচে ফেলে দিয়েছো । শুচিতা বলে মা- তুমি শুধু শুধু কেন আমাকে সন্দেহ করো?
সুমিত ও  তার মায়ের  পক্ষ নিয়ে বলে হয়তো ভুলে তুমি  সিঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে ফেলে দিয়েছো ।     শুচিতা এই কথা শুনে বলে তুমি ও আমাকে অবিশ্বাস করলে?
শুচিতা কেঁদে কেঁদে বলে তোমরা আমাকে এতটুকুই বিশ্বাস করো ?
সে সুমিতকে  বলে আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে চলে যাই ,তুমি  বা তোমরা  একটু ঘরটাও পরিষ্কার করো না । কিচেন সিঙ্ক ভর্তি থালা বাসন, তোমরা খেয়ে আমার জন্য রেখে দাও ।   তোমরা কি আমাকে এই ঘরের চাকরানী মনে করো ?
সুমিত বলে, আমার মা-বাবা,ভাই-বোন দেশে কোনোদিন কিচেনের কাজ করে নি – এ সব কাজ চাকর – বাকর করে । রান্না ও থালা বাসন পরিষ্কার করার কোনো অভ্যাস  আমাদের নেই । আমার মা বাবা ও ভাই বোন তোমার কাজ পছন্দ করে না । শুচিতা চোখের পানি ফেলে ।সুমিত- আরতি- কমল – ভাই বোনেরা কেউ একটি সান্তনার কথা ও তাকে শুনায় না ।

এই করে তাদের কলহের সংসারে এক নবজাত ছেলের জন্ম নেয় ।      নব জাত শিশুর জন্মের পূর্বে শুচিতা  মেটার্নিটি লিভ  নিয়ে  তারা মা-বাবার ঘরে চলে যায় ।  সুমিত   ও তারা মা- বাবা হই-  চৈ শুরু করে, তাদের নাতিকে নিয়ে শুচিতা নিজের খেয়াল খুশি মতো মা -বাবার সঙ্গে থাকবে । শুচিতা বলে আমি ও আমার শিশুকে কে দেখবে?
তোমরা কোনোদিন ও আমার বা আমার শিশুর ময়লা কাপড় পরিষ্কার করবে না ।  কাজেই আমার মা-বাবা একমাত্র ভরসা যারা আমার দুর্দিনে দেখা শুনা করবে ।
শুচিতার বাবা – মা বলে তোমার শ্বশুর -শ্বাশুড়ি এবং ছেলে মেয়ে দুই  কামরা বাসা এক ওয়াশ- রুম  , তুমি এই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে কোথায় থাকবে ?
তুমি এখানে থাকো, তুমি ও তোমার শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন । তুমি ওই বাসায় গেলে ওদের রান্না করে খাওয়াতে হবে ।  তুমি ও ছোট্ট শিশু অসুস্থ হয়ে পড়বে ।
একদিন বিকালে সুমিত  তারা মা -বাবা ও ভাই বোনকে নিয়ে এসে শুচিতা ও তারা মা-বাবার সঙ্গে তর্ক করে যে ওরা শুচিতাকে আলাদা থাকার জন্য পরামর্শ দিতেছে । প্রীতম  ও আভা  বলে শুচিতা অসুস্থ, ওকে তোমাদের বাসায় দেয়া যায় না । ও সুস্থ হলে বাসায় ফেরত যাবে ।
বাচ্চার বয়স যখন ৮ মাস । সুমিত সিদ্ধান্ত নেয় যে শুচিতা ও   ছেলেকে নিয়ে দেশের বাড়িতে বেড়াতে যাবে ।    শুচিতা বলে যে এই ছোট বাচ্চা নিয়ে আমি কোথায় ও যাবো না ।
এ নিয়ে শুচিতা ও সুমিত তর্ক -বিতর্ক করে ।  শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে সুমিত  শুচিতা এবং  সুমিতের  মা -বাবাকে নিয়ে একবার আলবার্টা বেড়াতে যাবে ।    সুমিতের  ভাই -বোনরা যেতে পারবে না- গাড়িতে একোমোডেশন  হবে না  ।  শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে বড়ো  গাড়ি নিয়ে সবাই যাবে এবং এক সপ্তাহ থেকে চলে আসবে ।    শুচিতা সুমিতের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ঠিক আছে- যাবো ।
ওরা এক সপ্তাহ আলবার্টা থেকে বাচ্চা নিয়ে আত্মীয় স্বজনকে দেখা শুনা করে ঘুরে আসবে । কিন্তু লম্বা জার্নি এবং অনেক জায়গায় তাদের অপেক্ষা করে শেষে মন্ট্রিয়েল এসে এক রাত্রি থেকে পর দিন সকালে  টরন্টো এসে  এক দিন থেকে  অটোয়া যেতে রাস্তায় গাড়ি সুমিত অনেক জোরে এক্সিলারেট করে কড়া ব্র্যাক দিয়ে এক্সিডেন্ট করে ।    সুমিত  ও কমল মারাত্মক ভাবে মাথায় ব্যাথা পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং পেছনে তারা মা ও ভাই বোন আঘাত পায় ।  শুচিতা হাতে ও মুখে আঘাত পেয়েছে – ছোট বাচ্চা বিনা আঘাতে বেঁচে যায় ।
সামনের ট্রাক স্লো গতিতে চালাচ্ছিল ।    সুমিত   গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে  নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ।    পেছন থেকে গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দিলে সে গাড়িতে ও প্যাসেঞ্জার আঘাত পায় এবং দুই গাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় । পুলিশ রিপোর্টে দেখা গেছে সুমিতের ভুলের জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটে ।
দুই গাড়ির প্যাসেঞ্জারদের স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয় ।    সুমিত ও তার বাবা কমল জ্ঞান আসলে বলে আমাদের কি হয়েছিল ?
সুমিতের মা আরতি সুমিতকে বলে তুই গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছিস ।  সে বলে কি ভাবে এক্সিডেন্ট করেছি ?
সে কিছুই স্বরণ করতে পারছে না । বাকিরা ফার্স্ট এইড ট্রাইটমেন্টের পর রিলিজ  হয় । শুচিতা বাসায় তার মাকে টেলিফোন করে এই দুর্ঘটনার খবর দিলে শুচিতার মা প্রথেমে জিজ্ঞাসা করে তুই ও বাচ্চা কি ভালো আছিস?
সে বলে আমরা পিছনের সিটে ছিলাম এবং ভাগ্যক্রমে ভালো আছি ।  তবে সুমিত ও আমার শ্বশুর কমল বড়ো ধরণের আঘাত পেয়েছে, এখন ও জ্ঞান ফিরে এসে নি ।  বাকিরা আঘাত পেয়েছে ,তবে সিরিয়াস না ।    শুচিতার বাবা শুচিতাকে বলে আমি কি ধরণের সাহায্য করতে পারি ?
শুচিতা বলে ,তুমি হার্টের রোগী  ,কোনো ফেরেশানী করবে না । হাসপাতাল সব কিছু ব্যবস্থা করবে এবং আমরা অটোয়া চলে আসবো ।
শুচিতা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলে বলে তোমার হাসব্যান্ড ও শ্বশুরের অবস্থা এ মুহূর্তে বলা যাবে না, বাকিরা রিলিজ হয়েছে । শুচিতা বলে তোমরা কি রোগীদের অটোয়া পাঠাতে পারবে ?
ডাক্তার বলে ৪৮ ঘন্টা  না গেলে আমরা কিছু বলতে পারবো না ।    ডাক্তার এক্স-রে করার পর রিপোর্ট দিয়ে বলে তোমার হাসব্যান্ডের অপারেশন লাগবে এবং আমরা এখানে কোনো অপারেশন করতে পারবো না ।    বরং ওদের অটোয়া হসপিটালে পাঠিয়ে দেব আমাদের রিপোর্ট সহকারে ।  তোমার শ্বশুর কমল সম্পর্কে অটোয়া হাসপাতাল বলবে ।
৪৮ ঘন্টা হাসপাতালে রাখার পর ওদের প্যারামেডিক দিয়ে অটোয়া পাঠিয়ে দেয় । অটোয়া রোগীরা যাওয়ার পর  সুমিতকে ব্রাইন অপারেশন করে এবং  তার শ্বশুরকে হাসপাতালে রেখে দেয় । শুচিতার বাবা প্রীতম ও তার মা হাসপাতালে এসে ওদের দেখে অনেক দুঃখ করে  ।  বলে ভগবানের কৃপায় তোমরা যে বেঁচে আছো  এর জন্য আমরা অনেক আশীর্বাদ করেছি ।  প্রীতম রাতে রোগীর ডিউটি করতে চাইলে শুচিতা বলে,  তোমার শরীরের যে অবস্থা ,তোমার রাত জেগে ডিউটি করার কোনো প্রয়োজন নাই । তাছাড়া এখানে ২৪ ঘন্টা ডাক্তার ও নার্স থাকে, বাহিরের লোক থাকার দরকার পড়ে না ।
তুমি বরং নিজের শরীরের দিকে নিজে দেখো । আমরা যারা সুস্থ আছি , রোগীর সেবা যত্ন করবো । সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রীতম মেয়ে ও বাকিদের জন্য খাওয়া নিয়ে আসে এবং বিকেলে আবার খাওয়া নিয়ে আসে । এভাবে দুই মাসের ও অধিক সময় সুমিত ও কমল হাসপাতালে থেকে রিলিজ হয় ।

এক বৎসর শুচিতা মেটার্নিটি লীভে থাকার পর কাজে যোগদান করে এবং তার ছেলের অযত্ন হবে ভেবে সে মা-বাবার সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে সুমিতকে বলে আমি তোমাদের সঙ্গে থাকলে আমার ছেলের অসুবিধা হবে এবং সে জন্য আমি মা-বাবার সঙ্গে থাকবো ।  এতে সুমিত অনেক  অসুন্তষ্ট হলে শুচিতা   বলে তুমি সম্পূর্ণ ভালো হলে আমি আলাদা বাসা নিয়ে থাকবো ।
তুমি বরং তোমার মা-বাবা,ভাই-বোনকে নিয়ে থাকো । মাঝে মধ্যে এখানে ও এসে   থাকতে পারবে ।  তুমি শারীরিক দিক  থেকে এখন ও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠো নি ।    তোমার নিজের ট্রিটমেন্ট নেয়া প্রয়োজন ।  সুমিত অনেক আপত্তি করাতে সে শেষ পয্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কিছু দিন তাদের সঙ্গে থেকে দেখবে ।

শুচিতা  তার মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে কিছু দিন ওদের ওখানে থেকে অফিস করবে ।   সে তার ছেলেকে নিয়ে ওখানে দাদির নিকট রেখে অফিস করতে যায় এবং ফিরে এসে দেখে যে  ছেলের ডায়পার সকালে পরানো হয়েছে বিকাল পয্যন্ত কেউ পরিবর্তন করে নি এবং ছেলেকে কেউ গোছল বা ঠিক মতো খাওয়া দেয়   নি ।    কাজের পর শুচিতা ঘরে আসে ছেলের ডায়পার পাল্টাতে হয় এবং ঘরের কাজ পূর্বের মতো করতে হয় ।অফিসে কাজ শেষ করে  ঘরে এসে   – ঘরের কাজ ও করতে হয় ।
সে দুই-তিন দিন থাকার পর একদিন বাসায় গিয়ে মা-বাবাকে বলে আমি চেষ্টা করেছি ।  কিন্তু এদের সঙ্গে থাকা সম্ভব নয় ।  কাজেই আমি এই উইকেন্ডে বাসায় চলে আসবো ।  সে এ নিয়ে তার বান্ধবী মনিকার সঙ্গে আলাপ করে ।  তারা বলে তুমি এ নিয়ে সুমিতের সঙ্গে কথা বোলো না কেন ?
শুচিতা বলে আমি সুমিতকে বলে কোনো লাভ হবে বলে মনে করি না । তথাপি তোমরা যখন বলেছো , আমি এ নিয়ে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখবো ।
উইকেন্ডে শুচিতা সুমিত ও তার বাবা-মা কে ডেকে বলে আমি কাজ থেকে এসে ঘর পরিষ্কার  ,রান্না করা ,ছেলের ডায়পার পরিবর্তন করা , ওকে গোছল করানো- আমার পক্ষে কঠিন ।   আমি এ ব্যাপারে তোমাদের সহযোগিতা চাই ।  সুমিত  অনেক অসন্তুষ্ট হয়ে বলে , তুমি ঘর থেকে চলে যাবার উছিলা খোঁজ করতেছো । আমি অসুস্থ ,তুমি দেখো , আমি কি ভাবে ছেলের যত্ন নেবো ।  তাছাড়া আম্মু- আব্বুও অসুস্থ,,কে ওর যত্ন নেবে? ওরা যতটুকু পারে করবে এবং তোমাকে  কাজ করতে হবে ।  তুমি বরং বাড়তি ছুটি নিয়ে ঘরে থাকো ।.
সে সব গুছিয়ে ছেলেকে নিয়ে একদিন বাবা-মার্ কাছে চলে আসে এবং টেলিফোন করে বলে আমি তোমাদের সঙ্গে থাকবো না ।  তুমি যদি আমাকে নিয়ে থাকতে চাও, তা হলে আলাদা বাসা নেবে । আমি ওদের সঙ্গে আর এক দিন ও থাকতে পারবো না ।
সুমিত বলে এটাই কি তোমার শেষ কথা ?
হ্যাঁ, এটাই আমার শেষ কথা ।    তুমি চিন্তা করে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে জানাবে ।  সুমিত এ নিয়ে তার মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করে । তারা বলে ,আমরা এমন কিছুই করছি না- যে জন্য তোমার সঙ্গে বিবেধ সৃষ্টি হতে পারে ।আমাদের ছেলে মেয়ে ছোট এবং পুরা ঘর অসুস্থ ।  এই সুযোগ নিয়ে শুচিতা সংসারে অশান্তির সৃষ্টি করতেছে ।  আমরা তোমার ছোট্ট বাচ্চাকে অনেক ভালোবাসি ।  যতটুকু পারি তার দেখা শুনা করি ।  শুচিতা আমাদের পছন্দ করে না ,তাই সে আমাদের এড়িয়ে চলে ।  সুমিত  বলে শুচিতাকে পাওয়া যায় না দিনের বেলা ,সে অনেক ব্যাস্ত থাকে অফিসের কাজ নিয়ে ।  একমাত্র উইকেন্ডে আমি গিয়ে দেখতে পারি যদি তাকে বুঝানো যায় ।  আরতি বলে এতটা তোষামোদ করার দরকার নাই ।  যদি না আসে , নাতিকে আমাদের দিয়ে দেবে ,আমরা ওকে নিয়ে নেবো ।
কমল   বলে , দেখো আমাদের ও অনেক দোষ ত্রূটি আছে যা থেকে বাহির হয়ে আসা দরকার । শুধু শুধু শুচিতাকে দোষ চাপিয়ে দিলে ঠিক হবে না ।  আমরা এতগুলি লোক খাওয়া দাওয়া করি , দুইটি পয়সা ও আমাদের রোজগার নাই ।  ওপর দিকে এক্সিডেন্ট করে ঘরে বসে আছি ।  এতগুলি লোক এক জনের  মাথার উপর, কেউ  পছন্দ করবে না । শুচিতার মা বাবার খোঁজ খবর আমরা কোনো দিন নেই না ।  আমাদের সঙ্গে ওদের কোনো দিন মিল হবার নয় । ওরা নিম্ন শ্রেণীর লোক ,আমাদের সঙ্গে চলা ফেরা বা কথা বার্তায় মিল হতে পারে না ।  সুমিত তাকে পছন্দ করার পূর্বে এ সব চিন্তা করতে হতো- পারিবারিক ভাবে আমাদের সঙ্গে তাদের মিল হবে কিনা ।  আরতি বলে,  আমরা শুচিতার নিকট নতজানু করতে যাবো না ।

সুমিত ও কমলের সব সময় মাথা ব্যাথা থাকে এবং পেইন কিলার নিতে হয় ।  ডাক্তার স্ক্যান করে বলেছে যে এই মাথা ব্যাথা অনেক দিন থাকবে এবং আস্তে আস্তে সেরে যাবে । তবে সুমিত কাজ করতে পারবে এবং ডাক্তার ফিটনেস লেটার দিলে ও সুমিত  কাজ করার মতো মনোবৃত্তি হারিয়ে ফেলেছে । সুমিত  অনেক দিন থেকে শুচিতাকে টেলিফোন করে ,কিন্তু শুচিতা তার টেলিফোনের কোনো জবাব দেয় না ।
কিছু দিন হয় শুচিতার কাজিন প্রদীপ ইমিগ্রেশন নিয়ে এসেছে – সে শুচিতাদের বাসায় এসে উঠেছে । প্রদীপ এখন পয্যন্ত অটোয়ার রাস্তা ঘাট চিনে নি ।  মাঝে মধ্যে সে শুচিতার কাছ থেকে কাজের জন্য পরামর্শ নিয়ে সে মতে নিজেকে তৈরী করে ।  প্রদীপ এখানে আসার পর তার আঙ্কল ও আন্টি তাকে শুচিতার দাম্পত্য জীবনের কলহ নিয়ে আলাপ করে । প্রদীপ অত্যন্ত চতুর ছেলে এবং কোনো মন্তব্য করে না -শুচিতার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে । সে সময় ফেলেই শুচিতার ছেলেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকে । ওকে অনেক ধরণের খেলনা এনে দিয়েছে । প্রদীপকে দেখা মাত্র  ছেলে দৌড়ে আসে এবং এটা সেটা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে ।  রাতে এই ছেলে ঘুম থেকে এসে দরজা খুলে প্রদীপের বিছানায় গিয়ে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকে ।  শুচিতা ওকে নিতে গেলে বাচ্চা কান্না করে এবং আসতে চায় না ।
এক উইকেন্ডে প্রদীপ কিছু কেনা কাটার জন্য শপিং মলে শুচিতার সঙ্গে গেলে অকস্মৎ সুমিতের সঙ্গে দেখা হয় ।    সুমিত শুচিতাকে অন্য এক অপরিচিতের সঙ্গে দেখে সন্দেহ করে,  বলে এই লোক কে ?
শুচিতা বলে এ আমার কাজিন প্রদীপ ইন্ডিয়া থেকে ইমিগ্রেশন নিয়ে সদ্য এসেছে । প্রদীপ শুচিতার স্বামীকে দেখে হাত মিলাতে চাইলে সুমিত হাত না মিলিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় । সুমিত বলে শুচিতা তুমি মলে কি জন্য এসেছো ?
শুচিতা জবাব না দিয়ে এড়িয়ে প্রদীপকে নিয়ে দোকানে গিয়ে কিছু কেনা কাটা করে বাসায় ফিরে না গিয়ে কোনো এক রেস্টুরেন্টে প্রদীপকে নিয়ে খেতে বসে ।  প্রদীপ বলে -শুচিতা আমি ভুল করেছি ।
শুচিতা বলে যেমন?   প্রদীপ বলে আমি জানতাম না তোমার স্বামীর সঙ্গে দেখা হবে । শুচিতা বলে , কে কি ভাবলো এতে আমার কিছু যায় আসে না ।
ক্রমশ :

পূর্ববর্তী নিবন্ধ“Elephant in the Room”
পরবর্তী নিবন্ধঅর্ধেক কাপ কফি
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন