কাপের অর্ধেকে নেমে এসেছে গরম কফিটা
উষ্ণতা হারিয়েছে স্বভাবতই-
যেমন হারায় আমাদের প্রথম বেহিসেবী ভালোবাসা, হিসেবের খাতায়
কফি স্বচ্ছ তরল নয়
প্রতিবিম্ব দেখা যায় না, বিজ্ঞানের কথা
মনোবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান?
এখানে যে নিত্য মানুষ খুন হয় ভালোবাসার বাসর ঘাটে!
কোন রক্ত ঝরে না, চিহ্ন থাকে না,
মৃত আত্মার বিলাপ থাকে নিরঙ্কুশ শব্দহীন-
এই বিজ্ঞান কি কোনদিন খবর পায় সে আততায়ীর!?

অর্ধেক পূর্ণ কফির কাপেও তাই আমি প্রতিবিম্ব দেখি
পরিস্কার প্রতিবিম্ব, ভেঙে যায় আবার গড়ে, সময়ের ঢেউয়ে
চাঁদের কলঙ্কের মতো দাগটা তবু মোছে না কখনো
কিন্তু পড়তে তো কোন অসুবিধে হয় না
একটা গোটা অতীত, একটা গোটা জীবনের প্রতিবিম্ব,
পরিস্কার আমি দেখতে পাই
মেঘের আকাশে পৃথিবীর দীর্ঘশ্বাসের মতো
ভবিষ্যৎ ও যে ছায়া ফেলে যায় সেখানে।

মানিয়ে নেয়াটাই কি সুখ, নাকি তা নেহায়েত বেঁচে থাকারই সুখ?
দ্বন্দ্বটা প্রায়শই আমার বিবেককে অবরুদ্ধ করে রাখে
এখন আর স্বপ্ন দেখতে পারি না, ভয় হয়
খুন হয়ে যাওয়া স্বপ্নের বধ্য ভূমিতে দাঁড়িয়ে
আবারও যদি আত্মস্থ করতে হয় মানিয়ে নেয়ার মন্ত্র!?
প্রতিটা মুহূর্তকে তাই আলাদা করে নিয়ে আমি বেঁচে থাকার চেষ্টা করি
প্রকৃতির হাজার শব্দারণ্যের ভীর থেকে
প্রতিটা শব্দকে আলাদা করে শ্রবণ করতে থাকি-
আর-
আমি নিজের মধ্যেই ভেঙে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে যাই
আমি সাগরের বুকে প্রতিবিম্ব দেখতে ভয় পাই!
আমি জানিনা, আমি সুখী হতে চাই
নাকি শুধু বেঁচে থাকতে চাই?

চাওয়াটাই তো শেষ কথা
কে আমাকে বেশী দিতে পারে?
জীবন-? না কি মৃত্যু-?
কেউ যখন আমার হৃৎপিণ্ডটাকে ছিঁড়ে নিয়ে যায়
তখনও যে আমি বেঁচে থাকি
ছিঁড়ে যাওয়া সেই হৃৎপিন্ডের বিদায়টাকে দেখার জন্যে!

ক’ফোঁটা চোখের জল ফেলে চলে গেলি তুই,
দু’দিনের দেখা পুরুষটির হাতে হাত রেখে
আমি মানিয়ে নিয়েছিলাম, জানিনা কার সুখের জন্যে?
কিন্তু-
চিৎকার করে বলতে পারিনি, এ হয় না-
এ হতে পারে না!
আজ বিকেলে আবার যখন দেখা হলো, অনাকাঙ্ক্ষিত রাস্তার মোড়ে
জানলাম বধু থেকে তুই এখন মা ও!
সময় খুব দ্রুত বদলে দেয় আমাদের জীবনের রং
বিস্মিত আমার চোখ, তোকে ঘিরে আমার আজন্ম উন্মাদ ভালোবাসা
নিশ্চিত বুঝতে পারলো, তুই আমাকে আর চিনতে চাচ্ছিস না!?
আমার খুব ইচ্ছে করছিলো, ভীষণ ইচ্ছে করছিলো
জিজ্ঞেস করি-
“তোর ডান উরুর সেই লাল তিলটি কি এখনো তেমনি আছে নীলু?
আমার সেই প্রিয় তিলটি!”
ইচ্ছে করছিলো তোকে জানিয়ে দেই-
“আমি এখনো নিমেষ গুনে বলতে পারি, তোর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
কতক্ষণ পরে থাকলে উপচে পড়ে আমাদের ভালোবাসার অমৃত পাত্র,
এ পৃথিবী হয় অপার্থিব!”
কিন্তু এবারও আমি কিছু বলতে পারলাম না!
আবারও মানিয়ে নিলাম সবকিছু-

জীবনের সবটাই যে আমার এই একই গল্প-
ট্রেনের টিকিটের লাইন, কর্মক্ষেত্র,
নির্ঘুম রাতের অসহনীয় মুহূর্ত, চারপাশের জীবন…
সর্বত্র-!
খুব বেশী ক্লান্ত এখন আমি নীলু!

কেউ কেউ দু’একজন হয়তো বলবে
খুব বেশী দ্রুত, খুব বেশী অসময়ে-!
কফির কাপে এমন প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতেই-
হয়তো কোন একদিন খুলে যাবে সেই–
নিশ্চিত জানি
সেদিন আর আমি কোন আক্ষেপ রেখে যাব না!

দ্বৈরথটা যে এখন শুধু নিজের সাথেই নিজের
জয় পরাজয়ের পার্থক্য সেখানে যে তাই কোন তফাৎ গড়ে না নীলু–!!

______ফরিদ তালুকদার… / নভেম্বর ২০, ২০২০

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন