এক:
সন্ধ্যার দিকে মজিদ  ও তার স্ত্রী রাবেয়া মিসেসাগা  গো ট্রেন স্টেশন থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে ওয়াকার ঠেলে ঠেলে   বাস স্টপের দিকে রওয়ানা দিলো  । স্টেশন থেকে তাদের বাসা ১০/১২ কিলোমিটার দূরে, বাসে ভিড়ের মধ্যে বড়ো জোর এক ঘন্টা লাগতে পারে। ।  সারা দিনে ওয়াকার ঠেলে ঠেলে   উভয়ই ক্লান্ত শরীর নিয়ে এগোচ্ছে।  ।  সকাল ৬টা বাজে ঘর থেকে বের হয়েছে দুজনে। বাস,গো ট্রেন করে তিন ঘন্টা লেগেছে টরন্টো ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টে  পৌঁছতে। মজিদ ও স্ত্রী রাবেয়া বেগমের  দাঁতের সমস্যা যা ডেন্টিস্ট দেখানো  শেষ হয়েছে দুপুর ১২:৩০ মিনিটে । ডেন্টিস্ট শেষ করে রাবেয়া বলে সব সময় টরন্টো আসা হয় না, বাসায় বাংলাদেশি মাছ, তরকারি ও মসলা নাই।  মজিদ বলে চলো যাই।  বাস ও সাবওয়ে করে ভিক্টোরিয়া পার্ক ও ডেনফোর্থ  এরিয়া গিয়ে ঘরোয়া খাবার দোকান দেখে মজিদ বলে “চলো ভিতরে গিয়ে কিছু খেয়ে নেই ।”  রাবেয়া বলে আমরা ঘর থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসেছি। মজিদ বলে ,আজ ঘরের খাবার রেখে দাও ,এখানে গিয়ে দেখি কি আছে ? ছোট্ট রেস্টুরেন্ট ,বসার মতো জায়গা নেই। তাই দুজনে হাটতে হাটতে সরকার ও মারহাবা গ্রোসারি দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করে পাশে “কান্ট্রি স্টাইলে” বসে নিজেদের খাওয়া ও দুইকাপ চা নিয়ে খেয়ে ওয়াশরুম সেরে পুনরায় বাসার দিকে রওয়ানা হলো । মজিদ বলে  ওয়াকার নিয়ে ঠেলা ঠেলি আর ভালো লাগে না।  স্ত্রী রাবেয়া মজিদের দিকে তাকিয়ে বলে ,”তোমাকে কে ড্রাইভ দেবে ?” মজিদ দীর্ঘ নিঃশাস ছেড়ে বলে তাতো জানি।  দু’জনে ভিক্টোরিয়া পার্ক সাবওয়ে থেকে ইউনিয়ন স্টেশনে এসে গো ট্রেনে মিসেসগা  গিয়ে বাহিরে এলো । ওরা বাস স্টপে  না গিয়ে ভুল করে গাড়ি পার্কিং লটে ঢুকে  এদিক সেদিক তাকাচ্ছে, বুঝতে পারছেন না কোথায় গেলে বাস পাওয়া  যাবে।  সন্ধ্যা হয় হয়, ক্লান্ত শরীর , ওয়াকার  ঠেলে ঠেলে আর এগোনের মতো শরীরে এনার্জি নাই।

পার্কিং লটে অসংখ গাড়ি রেখে লোকজন টরন্টো,ও অন্যান্য শহরে ট্রেনে  যাতায়াত করে ।  ট্রেনে দ্রুত গন্তব্য স্থলে পৌঁছা যায়,  তাই এখানে পার্কিং করে যাত্রীরা দূরের শহরে অফিস করে ফিরে এসে গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে যায়।  মজিদ ও তাঁর স্ত্রী দু ‘একজনকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছে। ব্যাস্ত জীবন , কারো সময় নাই । সবাই  কাজ থেকে ফিরে বাসায় যাওয়া   নিয়ে ব্যাস্ত। মজিদের    দুই ছেলে, ও দুই মেয়ে দুই শহরে থাকে এবং সময় সময় আসে খোঁজ নেয় ,তবে মা বাবাকে সার্ভিস দেয়ার মতো সময় কোথায় ?  তারা  চুপ করে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে যদি কোনো সুহৃদ ব্যাক্তি একটু সাহায্য করে এবং তাদের বাস স্টপ দেখিয়ে দেয়।

শেষে মনে মনে বাসের চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে ভাবছে গো স্টেশনে গিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে বাসায় যাওয়াই উত্তম।  মজিদ তার স্ত্রীকে বলে,” চলো এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে গো স্টেশনে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে যাই। ” তারা আস্তে আস্তে ওয়াকার  ঠেলে ঠেলে গো স্টেশনের দিকে ফিরে  যাচ্ছে।  এমন সময়  ৩০/৩২ বৎসরের এক  মেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে ,আমি কি তোমাদের কোনো সাহায্যে করতে  পারি ? মজিদ বলে,”আমরা বাস স্টপ খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি কি আমাকে বলতে পারো এখানে নিকটতম বাস স্টপ কোথায় ? মেয়েটি একটু চুপ থেকে  বলে তোমরা কোথায় যাবে? মজিদ পকেট থেকে কলম বের করে তাকে কাগজে এড্রেস লিখে দেখালো ।  মেয়েটি বলে আমি ওই দিকে যাচ্ছি।  আমি কি তোমাদের নিয়ে যেতে পারি?  মজিদ ও রাবেয়া বেগম বলে  ,”তুমি এত কষ্ট করবে?” মেয়েটি বলে  ,কষ্ট কিসের ? এই এড্রেস আমি বাসায় যাওয়ার পথে। তোমরা কিছু মনে না করলে আমি তোমাদের পৌঁছে দিতে পারি। মজিদ  অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে  বলে ,” তুমি সারা দিনের কাজের শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরছো , আমরা তোমার সাহায্য আসা করা ঠিক হবে কি ? “ সে বলে ,কোনো অসুবিধা হবে না। এস  আমার গাড়ির নিকট। ড়িতে ওয়াকার ঢুকিয়ে ওদের দুই জনকে ভিতরে বসিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে ? মজিদ বলে ,”তুমি এত বড়ো উপকার করলে,তোমার নাম ও দেশের বাড়ি কোথায় জানতে কি পারি ?” মেয়ে বলে আমার নাম শুচিতা । আমি কানাডিয়ান,আমার বাবামা ভারতীয় ।  মজিদ বলে আমরা বাংলাদেশি।  শুচিতা বলে আমার দাদা ও বাবা বাংলাদেশে জন্ম । সে হাসতে হাসতে বলে তাহলে আমি তোমাদের  নিয়ে এসে একটা ভালো কাজ করেছি  ।  মজিদ বলে, তুমি কি বাংলাদেশে কখন ও গিয়েছো ? হা, আমি মা বাবার সঙ্গে এক বার বাংলাদেশে গিয়েছি। ওখানে তোমার কেকে আছে ?ওখানে আমার দাদার দিকের আত্মীয়স্বজন আছে যাদের সঙ্গে আমার বাবার যোগাযোগ রয়েছে। তুমি কি জানো বাংলাদেশে কোথায় তোমার দাদার বাড়ি ? আমি যতটুকু জানি ,ওদের বাড়ি ফরিদপুর। আমার বাবা মা বাঙালি ও বাংলা বলতে পারে। মজিদ বলে আমরা তোমাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। এই কথা সেই কথা বলতে বলতে সে  তাদের বাসার নিকট এসে বলে  এটাই কি তোমাদের বিল্ডিং ?  মজিদ বলে তুমিতো খুব তাড়াতাড়ি  চলে আসলে।  তুমি গাড়ি পার্কিং করে আমাদের বাসা দেখে যাও ,এতে তুমি তোমার মাবাবাকে নিয়ে আবার আসতে  পারবে।   শুচিতা তাদের কথায়  রাজি হয়ে তাদের সঙ্গে উপরে উঠে বাসায় যায়।  মজিদ ও রাবেয়া বেগম বলে ,তুমি তো এখন আমাদের নাতিন ।  না খেয়ে কোথায় যাবে? বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসো, আমাদের সঙ্গে যা উপস্থিত আছে খেয়ে যাও।   শুচিতা বলে ,দাদি আজ না।  অন্য একদিন মা বাবাকে নিয়ে এসে খেয়ে যাবো।  মজিদ ও রাবেয়া বেগম বলে  তোমাকে আজ আমাদের সঙ্গে খেয়ে যেতে হবে।  তুমি আমাদের যে উপকার করলে তা অসীম। তুমি সাহায্য না করলে আমরা কখন বাসায় আসতাম এবং আমরা দুজনই অসুস্থ রোগী কি হতো বলা যায় না।  খাওয়া সবই তৈরী বলতে বলতে রাবেয়া বেগম খাওয়া মাইক্রোওভে গরম করে টেবিলে দিলো । শুচিতা বাসায় টেলিফোন করে বলে, “মা আমার একটু দেরি হবে ,তোমরা আমার জন্য চিন্তা করবে না। ” তার মা বলে ,” তুমি কোথায় এবং কতক্ষন লাগবে আসতে ? ” শুচিতা বলে ,আমি পাশেই সিনিয়র হোমে একটা পরিবারকে  দেখতে এসেছি। আমি বাসায় এসে সব কিছু তোমাকে বলবো। তার মা বলে  ,আচ্ছা ঠিক আছে। শুচিতা বলে তোমরা কত দিন এ দেশে আছো ? মজিদ বলে আমরা প্রায় ৪০ বৎসর হয় এ দেশে এসেছি।  তোমার কয় ছেলেমেয়ে ? আমাদের দুই ছেলে দুই মেয়ে তারা সবাই আলাদা থাকে।  আমরা আলাদা থাকতে ভালোবাসি  এবং ছেলেমেয়েদের বিরক্ত করতে চাই না।  রাতের খাবার পর শুচিতা মজিদ ও  রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিতে গিয়ে মনে মনে বলে ” আমি আজ একটা ভালো কাজ করেছি এবং দুইজন অসহায় মানুষকে যেভাবে সাহায্য করলাম তা অনেকদিন মনে থাকবে। “মজিদ ও রাবেয়া গাড়ি পয্যন্ত শুচিতাকে  বিদায় দিতে গিয়ে বলে ,”তুমি মাবাবাকে নিয়ে আবার আসবে। ” বাসায় গিয়ে মাবাবাকে এই গঠনা বলাতে ওরা অনেক খুশি হয়ে বলে,আমরা একদিন ওদের দেখতে যাবো।

দুই :
শুচিতা স্ট্যাটিসটিক্স কানাডা,অটোয়া সরকারি চাকুরী পেয়েছে এবং যাওয়ার জন্য তৈরী। মাবাবা তাকে টরন্টো ছেড়ে যাওয়ার জন্য নিষেধ করে যাচ্ছে। তারা মেয়েকে একা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে না। শুচিতা বলে এটা সরকারি চাকুরী ,আমি কেন যাবো না বাবা?  এই চাকুরীতে সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি।  বাবা মা বলে তুমি আমাদের ছেড়ে গেলে আমরা একা হয়ে যাবো।   তুমি বরং সার্ভিস অন্টারিও বা অন্য কোনো সরকারি চাকুরী দেখো যার অফিস টরোন্ট রয়েছে। শুচিতা বলে বাবা চাকুরী চাইলেই তো আর পাওয়া যায় না। সে কোনো প্রকারেই মা বাবাকে বুঝাতে পারছে না। শেষে সে কাজ থেকে মজিদ দাদাকে টেলিফোন করে বিস্তারিত সব কিছু বলে এবং দাদা বলে তুমি তোমার মা বাবাকে নিয়ে এসো  আমরা  বুঝিয়ে দেব। এক বিকেলে শুচিতা তার  মা বাবাকে নিয়ে মজিদের  সিনিয়র হোমে আসে এবং এ কথা সে কথা বলে রাতের খাওয়া শেষ করে নানা ধরণের আলোচনায় বসে।

শুচিতা মা বাবার একমাত্র মেয়ে ,তার দাদা  শ্যামল দত্ত  খ্রিস্টান ও  দাদি আভা দত্ত   হিন্দু ধর্মের বিশ্বাসী ছিল । তার দাদার আদি বাসস্থান ফরিদপুর,অবিভক্ত ভারত যা পরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামে  পরিচিতি লাভ করে ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সনে।  ।  ১৯৪৭ দেশ ভাগ হওয়ার পর ওর দাদাদাদি ছেলে মেয়েদের নিয়ে কলিকাতা ,ভারতে চলে যায়।  তাদের আত্মীয়স্বজন ভারত ও বাংলাদেশে রয়েছে। তার দাদা শ্যামল দত্ত ইন্ডিয়ান রেলওয়ে তে চাকুরী করতো। দাদিমা আভা দত্ত  হাউস ওয়াইফ ছিল।  দাদা শ্যামল দত্ত ভারতে migrate  করার  দুই বৎসরের মধ্যে কলিকাতা মুসলিম হিন্দু দাঙ্গায় মারা যায়, যদিও দাদা একজন খৃস্টান ধর্মের অনুসারী ছিল।  দাদা কাজ থেকে আসার পথে দাংগায়  পড়ে অকাল মৃত্যু হয়।  দাদা একজন সাদাসিদে মানুষ ছিলেন।  উনি কারো সঙ্গে কোনো কথা কাটাকাটি করতে পছন্দ করতেন না। দাদা  মারা গেলে বাবা অল্প বয়সে সংসারের  দায়িত্ব নেন। তার প্রথম চাকরি কলিকাতা পোর্টে ক্লার্ক এবং অভাবী সংসার চালাতে না পারলে কাজ ছেড়ে দিয়ে বিদেশি শিপে চলে যান। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ দেখার নেশা তার ছিল।  প্রতি বৎসর একবার ছুটিতে গেলে এক থেকে দুই মাস করে দেশে থাকতেন।  সংসারে তারা দুই ভাই ও দুই  বোন ছিলেন ।  ফরিদপুরের জমি ও বাড়ি অন্যদের কাছে বিক্রি করে দাদা  কলিকাতা চলে যান।  দাদা মারা গেলে দাদি সামান্য  বিধবা ভাতা পেতেন তা দিয়ে কোনো রকমে ও সংসার চালাতে  পারতেন না।  দাদি ১৯৮১ সনে মারা যান ।

শুচিতা বলে আমরা ভারতে  বেড়াতে গেলে এখানে সেখানে ঘুরতে ঘুরতে ছুটি শেষ হয়ে যায়।   ফরিদপুর, বাংলাদেশ একবার গিয়েছি  । ওখানকার আত্মীয়স্বজন আমাদের যে ভাবে আতিথিয়েতা করেছে তা ভুলার নয়।  ওরা আমাদের অনেক কাপড় ও গহনা দিয়েছে এবং বারবার বলেছে  আবার বেড়াতে যেতে। কিন্তু আমাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।
শুচিতার বাবা প্রীতম দত্ত  বলে তোমরা কত দিন এ দেশে এসেছো ? মজিদ বলে আমরা  অনেক দিন এদেশে আছি ।  তোমার কয় ছেলেমেয়ে এবং ওরা কি কাছাকাছি থাকে ? না, ওরা কাছাকাছি থাকে না।  আমাদের দুই ছেলে দুই মেয়ে তারা সবাই  আলাদা থাকে।  সিনিয়র হোমে সব ধরণের সুবিধা রয়েছে। সপ্তাহে একবার ডাক্তার এসে রোগী দেখে যায়। পাশেই শপিং প্লাজা এবং যখন যা দরকার নিয়ে আসতে পারি ।  এখানে থাকতে থাকতে আমাদের অনেক বন্ধু হয়েছে এবং আমরা একাকিত্ব মনে করি না।  ছেলেমেয়ে নাতি নাতনিরা এসে খোঁজ খবর নিয়ে যায় এবং বড়ো ধরণের  গ্রোসারি কিনে ফ্রীজে ভর্তি করে রেখে যায়।  আমাদের কোনো কিছুরই অভাব হয় না।  প্রীতম দত্ত বলে দেশে কি যাওয়া হয় ? মজিদ বলে বাংলাদেশে অনেক দিন পর পর এক বার গিয়ে আত্মীয় স্বজনদের দেখে আসি ।

মজিদ বলে তোমরা কবে এবং কি ভাবে এ দেশে আসলে ?  প্রীতম  দত্ত বলে আমি এ দেশে ১৯৮৪ সনে এসেছি।  আমি বিদেশি শিপে কাজ করতাম এবং হ্যালিফ্যাক্স ,কানাডা  শিপ আসলে আমরা কয়েকজন শিপ থেকে নেমে পড়ি ও রাজনৈতিক আশ্রয় নেই। কথা প্রসঙ্গে সে বলে , শিপে অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল না।  অনেকে কাজ না করে তাদের কাজ আমার উপর চাপিয়ে দিতো । এ নিয়ে উপরস্থ লোকদের নিকট অভিযোগ করে ও কোনো কাজ হতো না।  এর জের ধরে অন্যরা আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করতো । প্রীতম  দত্ত বলে এ সব করুন কাহিনী ।ইতালি শিপ নিয়ে গেলে কিছু লোক smuggling  মালামাল নিয়ে ধরা পড়লে আমাকে ও ষড়যন্ত্র করে বিপদে ফেলে এবং দেশে পাঠিয়ে দেয় । কোর্টে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে ফাঁসাতে চেষ্টা করলে ও ভগবানের কৃপায় পারে নি।  জজ আমাকে বেকসুর খালাস দেয়।  কেস থেকে খালাস পাইলে আমি আর এ শিপে না এসে অন্য শিপে কাজ নিয়ে চলে যাই । আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, যে করেই হোক আমেরিকা ,কানাডা অথবা অস্ট্রেলিয়া শিপ গেলে নেমে পড়বো।  শিপ হ্যালিফ্যাক্স ,কানাডা আসলে অন্যদের সঙ্গে কানাডায় আশ্রয় নেই ।  কানাডায় কাগজ হওয়ার পর দেশে গিয়ে বিয়ে করে স্ত্রী কে নিয়ে আসি । জীবনের কিছু করুন কাহিনী তোমাদের বললাম।  মজিদ ও রাবেয়া শুনে বলে সবার জীবনেই কিছু না কিছু দুঃখের কাহিনী থাকে ।

প্রীতম বলে  আমাদের অতি আদরের একমাত্র মেয়ে শুচিতা তাকে ছাড়া আমাদের আর দেখা শুনা করার কেউ নেই। শুচিতা ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা করে কোন  একটা প্রতিষ্ঠানে সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করে।  সে কিছু দিন হয় তার লাইনে সরকারি কাজ পেয়েছে তবে পোস্টিং  অটোয়া ।  এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে মতের গরমিল  , আমরা বাবামা তাকে দূরে পাঠাতে  চাই না। সে তোমাকে দাদা বলে ডাকে এবং কাউন্সেলিং করার জন্য আমাদের এনেছে। মজিদ বলে আজকাল মেয়েরা অনেক দূরে একা গিয়ে কাজ করে।  আমার তিন নাতিন রয়েছে যারা মা বাবার সঙ্গে থাকে না।  একজন আমেরিকা , একজন অটোয়া ও একজন হ্যামিলটন কাজ করে ।  শুচিতা মজিদকে  দাদা বলে সম্ভোদন করে,সে বলে আমি প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর টরন্টো তোমাদের দেখতে আসবো। অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে শুচিতা অটোয়া যাবে এবং ভালো কাজ পেলে টরন্টো চলে আসবে।  শুচিতা  বলে দাদা ভালো চাকুরী সব সময় পাওয়া যায় না।  আমি বুঝি মাবাবা একাকী হয়ে যাবে এবং সে জন্য আমাকে দিতে চায় না।  কিন্তু সুযোগ সব সময় আসে না।  মজিদ বলে এটা তোমার মাবাবা ও তোমার সিদ্ধান্ত ,আমরা এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না।  তবে আমার ছেলে মেয়ে কেউ আমাদের কাছাকাছি থাকে না। আজকাল  টেলিফোন, ফেসবুকের যুগ, সবই মনে হয় নিকটে।  মজিদ বলে তোমরা কি বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখো ? শুচিতার বাবা প্রীতম  দত্ত বলে যে ফরিদপুর ,বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়স্বজন রয়েছে ওদের সঙ্গে তাদের নাড়ির টান রয়েছে।  ওরা যাওয়া আসা না করলে ও যোগাযোগ রয়েছে।  আমরা সব সময় টেলিফোন করে খোঁজ খবর নেই ।
পরের সপ্তাহে শুচিতা তার নুতন চাকুরীতে যোগ দিয়েছে এবং টেলিফোন করে মজিদ ও তার স্ত্রীকে জানিয়েছে যে তার অফিসে কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধু পেয়েছে যারা তাকে বাসা গুছানোর কাজে অনেক সাহায্য করেছে। শুনে মজিদ ও তার স্ত্রী অনেক খুশি।
ক্রমশ:

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবনের খেরোখাতাঃ এলোমেলো পংক্তিমালা-পর্ব ২০
পরবর্তী নিবন্ধজাদুঘর থেকে বলছি-পর্ব ১৪
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন