রেনু সাদা ঘোড়াটা কি তুমি দেখছো? রেনু দোতালা থেকে বাবার আওয়াজ শুনে নিচে নেমে এল ।ঘড়িতে এখন রাত্র দুইটা ।.বাবা আপনি কি আমাকে ডাকছেন ? রহমান  সাহেব কাঁপতে কাঁপতে তার বৌ মাকে  বললো, রেনু তুমি কি সাদা ঘোড়াটা দেখছো ? কোথায় বাবা সাদা ঘোড়া ? ওই যে দাঁড়িয়ে আছে ঘরের পার্শে ? রেনু  মশারি উঠিয়ে তার শ্বশুরের কপালে হাত দিলো ।.উঃ! বাবা তোমার  প্রচন্ড জ্বর,গা পোড়া যাচ্ছে । রহমান সাহেব কাঁপতে কাঁপতে বললো, না মা আমার জ্বর নাইতো। বাহিরে সাদা ঘোড়াটা দাঁড়িয়ে আছে আমাকে নেয়ার জন্য ।.রেনু বললো, বাবা বাহিরে মুসুল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে,সে আওয়াজ তুমি শুনছ । বাবা তোমাকে  একটা  প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কি দেব? তোমার  অনেক জ্বর।না আমার জ্বর  নাই । তুমি শুনছো না বাহিরে সাদা ঘোড়াটার পায়ের আওয়াজ । না বাবা বাহিরে মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছে । সে হাঁটাহাটি করছে এবং অনেক সময় থেকে আমার জন্য অপেক্ষা করছে । রেনু কোনো কথার জবাব না দিয়ে হাসুকে বালতি দিয়ে    পানি নিয়ে আস্তে বললো । হাসু পানি নিয়ে আসলো। রেনু তার শশুরকে প্যারাসিটামল খেতে দিলো । রেনু হাসু ও আরুকে   বাবার মাথায় পানি দিতে বল্লো। রেনু মশারি সরিয়ে মাথায় পানি দেয়ার ব্যাবস্তা করলো । ভিজা গামছা মুড়িয়ে গা মুছে দিলো। এভাবে  দু’ঘন্টা পানি দেয়ার পর জ্বর কিছুটা নেমে আসে ।  রহমান সাহেবের জ্বর নামার পর ওরা ঘুমাতে গেল।  রহমান সাহেব স্ত্রী রেবেকার মৃত্যুর  পর গত তিন বৎসর বড় একাকী । রেবেকা একজন স্কুল শিক্ষয়িত্রী যার অবদান এই তিন ছেলেমেয়ে ।  রেবেকা ছেলেমেয়েদের নিজ ধাছে মানুষ করেছেন।  স্কুল থেকে অবসর নেয়ার পর সে ব্রেস্ট ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়।  প্রায় দুই বৎসর ভোগার পর মারাযান ।  রহমান সাহেব ও তার ছেলেমেয়েরা অনেক চেষ্টা করে ও তাকে বাঁচাতে পারেনি। রহমান সাহেবের কাস্টম অফিসার হিসাবে অনেক সূক্ষাতি ছিল।  তার বিরুদ্দে দুর্নীতির কোন রেকর্ড ছিলোনা ।    কাজ থেকে অবসর নেয়ার পর স্ত্রীকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পরে।  একমাত্র রেনু ও কাজের লোক তার দেখা শুনা করে ।  রেনু ভোরে শ্বশুরকে আবার দেখতে এলেন ।  কিছুটা কমলে ও এখন পয্যন্ত তার জ্বর রয়েছে ।  সকালে ডাক্তার ডাকানো হলো ।  মিস্টার   আজমল  তাদের পারিবারিক ডাক্তার।সে প্রতি সপ্তাহে একবার করে এবাড়িতে আসে এবং রহমান সাহেবকে দেখে যায়। আজ সকাল সকাল চেম্বার এ যাওয়ার আগে সে এসে কড়া নাড়তেই   হাসু দরজা খুলে দিলো । ঘরে ঢুকেই সে বল্লো আবার কি হয়েছে  মিস্টার রহমান ? রহমান সাহেব বল্লো তেমন কিছু হয়নি ।রেনু ঘরে ঢুকে  সালাম দিয়ে বল্লো বাবার অনেক জ্বর । কবে থেকে? আজ কয়েকদিন দিন থেকে ।  দেখি দেখি রহমান তোমার কি হয়েছে। এই বলে ডাক্তার আজমল রহমানের কপালে,মাথায় হাত রাখলেন,জিহবা ও চেস্ট পরীক্ষা করলেন।জ্বর তো ৩৮ এর উপর। ওকে কোনো ঔষধ দেয়া হয়েছে কি । রেনু বল্লো বাবাকে গত দুইদিন প্যারাসিটামল খেতে দিয়েছি ।বেশ বুদ্ধিমান মেয়ে, বুদ্ধি   করে সঠিক মেডিসিন দিয়েছো ।  ডাক্তার আজমল রহমানকে প্যারাসিটামল,অরেঞ্জ  জুস ,সূপ ও বেশি বেশি করে পানি খেতে বল্লেন । তাছাড়া ঘন ঘন মাথা ধুয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বিদায়ে নিলো। আমি কাল একবার আসে দেখে যাবো ।তবে বেশি খারাপ হলে আমাকে ডাকবে ।

রহমান সাহেব তার নাতনি দিনাকে  গত একসপ্তাহে  দেখেনি । দিনা রোকেয়া হলের রেসিডেন্সি । রেনু ভোরে আরুকে দিয়ে  মেয়েকে খবর পাঠালো। আরু সকাল ৮টার দিকে হল গেট এ উপস্থিত । দিনা ক্লাসে যাবার আগে আরু হল গেট এ উপস্থিত।  দিনা ওকে দেখামাত্র অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো , আরু তুমি কি জন্য এসেছো? বাসার সবাই কি ভালো! না,  দাদার গত কয়েক দিন থেকে প্রচন্ড জ্বর ? ডাক্তার ডাকানো হয়নি ? ডাক্তার আজমল এসেছিলো এবং মেডিসিন দিয়েছে । কিন্তু,জ্বর ছাড়েনি। দিনা ক্লাসে এ না গিয়ে আরুকে সঙ্গে নিয়ে নিউমার্কেট গিয়ে কমলা,লেবু কিনে  বাসায় দাদুকে দেখতে এল। ঘরে ঢুকেই দাদুকে বলে, দাদু তোমার কি অনেক জ্বর ! এই বলে কপালে হাত রাখলো । ও দাদু  তোমার প্রচন্ড জ্বর!  দীনুকে দেখে রহমান সাহেব নড়ে চড়ে বসলো । হাসি হাসি মুখ করে বলে নাতো আমারতো কোনো জ্বর নাই । দাদু, তুমি বুঝতে পারছোনা । তোমার অনেক জ্বর । রেনু এদিকে বার বার ডাক্তার আজমলকে টেলিফোন করে শেষ পয্যন্ত পাওয়া গেল । ডাক্তার আজমল টেলিফোন ধরেই বললো আমি এক্ষনি আসছি এই বলে টেলিফোন রেখে দিলো । কিছুক্ষনের মদ্ধেই ডাক্তার আজমল দরজার কড়া নাড়লো এবং সঙ্গে সঙ্গেই দিনা গিয়ে দরজা খুলে দিলো ।ডাক্তার আজমল হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো । আবার কি হলো মিস্টার রহমান ? আমি ভালো আছি । তাহলে আমাকে কেন ডাকা হলো এই বলেই সে রহমানের গায়ে,মাথায় হাত দিলো ।না! এখনো জ্বর আছে । ডাক্তার বললো জ্বর সারতে আরো কয়েকদিন লাগবে । আমি ঔষুধের কোনো পরিবর্তন করবোনা । আরো ৫ দিন দেখার পর প্রয়োজনে পরিবর্তন করবো । দিনা তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে? দিনা কোনো জবাব না দিয়ে চা নিয়ে ডাক্তারের দিকে এগিয়ে এল । ডাক্তার আজমল এ পরিবারের অনেকদিনের বন্ধু । মা রেনু ও দিনা ডাক্তার আজমলকে গেট এ গাড়ি পয্যন্ত   পৌঁছে দিতে গেল ।ডাক্তার বললো ভয়ের কোনো কারণ নাই ।দুইজনে গাড়ি স্টার্ট দেয়া পয্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন ।দিনার আজ কোনো কাজ নাই । শুধু দাদুর কাছে বসে থেকে নিয়মিত ঔষধ,পথ্থ ও দেখাশুনা একমাত্র কর্তব্য । দাদু সুন্দর সুন্দর গল্প করতে ভালোবাসেন । কিন্তু আজ তাঁর শরীর ভালো যাচ্ছেনা ।কোনো গল্প শুনা যাবেনা ।বারবার তাঁর মাথায় পানি দেয়া ,ভিজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেয়ার জন্য ডাক্তার বলেছেন ।কিন্তু দাদু আনাড়ি,কারো কথা শুনতে চায়না । দিনা একটু পর পর দাদুকে অরেঞ্জ ,লেবু ও সাগু খেতে বলতেছে । দাদুর খাবার রুচি নাই এবং দুই তিন বার তাঁর বমি হয়েছে,কাজেই জোর করে খাওয়ানো যাবেনা বরংযেটুকু নিজের ইচ্ছায় খাবে তাই যথেষ্ট । রেনু তাঁর মেয়ের পছন্দের মাছ রান্না করেছে । বার বার দিনাকে ডেকে ও খাওয়াতে পারেনি ।বেলা ৩টা বাজে,কিন্তু দিনা তার দাদুর বিছানার পার্শে বসে দাদুকে এতক্ষন গল্প সুনাচ্ছে । দাদুকে রুটি,সবজি ও চা খাইয়ে সে খেতে গেল ।দিনার বান্ধবী মারুফা ক্লাসে না দেখে বাসা থেকে টেলিফোন করেছে ।হ্যালো দিনা ! তুমি আজ ক্লাসে আসোনি কেন?  দাদুর শরীর খারাফ, বেশ কয়েকদিন থেকে জ্বর । ডাক্তার কি বলে ? ঔষুধ দিয়েছে এবং বলেছে সেরে যাবে ।কিছুক্ষন কথা বলার পর  দিনু দুকাপ চা নিয়ে দাদুর বেড এ বসে ।দাদুকে লেমন চা ও নিজের জন্য এককাপ রেগুলার চা নেয় ।দাদু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে।দিনা চায়ের কাপটা আস্তে সরিয়ে  নিলো যাতে ঘুমের কোনো ব্যাঘাত না হয় ।পার্সেই একটা ছোট্ট টেবিল ও চেয়ার নিয়ে নিজের হোমওয়ার্ক এ নজর দিলো।দাদু ঘুমের ঘোরে কি যেন কি বলতেছে।দিনা আস্তে করে কান পেতে শুনতে চেষ্টা করছে।আস্তে করে কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার দেখলো,গা সামান্য গরম;ডাক্তার বলেছে  আরো ৪/৫ দিন লাগবে জ্বর সারতে।দাদু আমাকে অনেক আদর করে।আর করবেনা কেন ? আমি ছাড়া দাদুর নিকটতম আর কেইবা আছে ? গতবৎসর  সে এবং তার বান্দবী মারুফা সহ   যমুনা রিসোর্টে গিয়ে সারাদিন কাটিয়েছে।দাদু তার জীবনের কত অভিজ্ঞতার কথা তাদের শুনিয়েছে।  কিনা কষ্ট করেছে সারাজীবন।   বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি ,মাজেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।মারুফার বাবা আঙ্কেল আফজাল কাজথেকে আসার পর মারুফা ও আন্টিকে নিয়ে এসে দাদুকে দেখে যাবে।দাদু কি যেন কি বলছে,দিনা বার বার কানের কাছে গিয়ে শুনতে চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুই বুঝা যায়না।দাদুকে কি ডাকবো ? না,রেস্টের প্রয়োজন আছে।রেনু তার ঘর থেকে এসে একবার খোঁজ নিয়ে গিয়েছে।এদিকে বাবা মজিদ রাজশাহী থেকে আসার কথা।কিন্তু দাদু না করেছে আসার জন্য।ওর ছুটিছাটার ব্যাপার।তথাপি উইকেন্ডে আসার কথা।এদিকে আঙ্কেল আজিজ শিকাগো থেকে বার বার টেলিফোন করে দাদুর  সঙ্গে কথা বলতেছে ।দাদুকে দুইবার এয়ার টিকেট ও ভিসার রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। কিন্তু দাদু আমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাইতে চায়না।  দিনা তোমার চাচা শিকাগো থেকে টেলিফোন করেছে এবং তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায় ।হ্যালো চাচু ,তুমি কেমন আছো? ভালো.তোমার দাদুর অবস্থা কি?এখনো জ্বর আছে । আমি কি কথা বলতে পারবো?দাদু ঘুমাচ্ছে ,তবে তুমি ধরো দেখি দাদুকে দেয়া যাই কিনা।দাদু,চাচু  শিকাগো থেকে টেলিফোন করেছে,তুমি কি কথা বলতে পারবে? দাও .হ্যালো আজিজ ,তুই কেমন অচিছিস। আমরাতো ভালো আছি,কিন্তু তুমি কেমন আছো? আমি ভালো। কি বোলো ভালো,সবাই বলে তোমার জ্বর কমছেনা।
ক্রমশ :

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্বাস
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব এখন স্তব্ধ
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

১ মন্তব্য

  1. চমৎকার লেখা নজরুল ভাই, পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন