Catullus-at-Lesbia's-large

Catullus-at-Lesbia's-large

কাতুলাস (Catullus) নামে একজন কবি ছিল রোমে।
রুশভাষায় বলে কাতুল, শব্দটি আঁতেলের মতই শুনতে ও দেখতে।
হাবা গোবা কাদা কাদা তুলতুল মন। অশ্লেষার কোন এক অবেলায় হঠাৎ দেখা হল তার নারীর সাথে।
নারী! নাম তার ক্লডিয়া ।
রােমের অসামান্য সুন্দরী।
তার একজন স্বামী ছিল আর ছিল গুচ্ছ কয়েক প্রেমিক। ভালোবাসতো সে নীধুবনে কাম-কেলী।
স্বামী হিংসা করতো, তাই একদিন সে স্বামীকে ভালোবেসে পরিবেশন করে ধুতুরার মধু।
বাঁধা দূর হয়ে যায়।

ব্যাঘ্র বনে রাত নেমে আসাই রীতি ছিল সেই কালে, যখন পথিক ছিল অগোছালো এবং যাত্রার সময় নিেয় উদাসীন। একটু
আগে রওনা করলেই যে বেলাবেলি ব্যাঘ্রবন পার হয়ে যাওয়া যায় সে জ্ঞান তখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
অঘাটে প্রেমে পড়ার ব্যাপারটাও তেমনি ব্যাঘ্রবনে ভ্রমনের মতই।
রোমে একজনই সুন্দরী নারী ছিল এমন ভাবার কারন নেই। তার উপরে বিবাহিতা!
তারপরে বহু মধুকরের যৌবন তৃষার মৌ-বন।
বন নয় ল্যাবিরিন্থ।
কাতুল তার প্রেমে পড়ে গেল আলোহীন গর্তে পড়ে যাবার মত।

কবির কাজ কুমোরের কাজ।
কুমোর মাটি থেকে তৈরী করে অনন্য মৃৎপাত্র, কবি শব্দের লীরে ঝংকার তোলে সুর ও ছন্দের।
ক্লডিয়া তার কবিতার অলংকার পরে হয়ে গেল অনন্য সুন্দর এক দেয়াসিনি।
কবির কল্পনার অদ্বৈত অবিনাশ।
লেসবিয়া” হল তার নাম, কেউ তাকে চিনতে না পারে।

আমাদের গ্রামে একজন ছিল এমন। সে তার প্রেমিকাকে ডাকলো নদী বলে, সেই নদীতীরে বুনে দিল অনেক অনেক হিজল
গাছ। কল্পনায় নিয়ত স্নান করতে লাগল সেই নদীতে।
আর অপেক্ষা, অপেক্ষা অবিরল হিজল ফুল ফোঁটার।
হিজল ফুঁটবে, মালা গাঁথবে এবং সেই মালা পরাবে নদীর গলায়।
বহু যুগ পার হয়ে গেল বৃক্ষ, বায়ু ও ব্রীহির জগতে, বহু বর্ষা ও বসন্ত।
সেই প্রেমিক হয়ে গেল বুড়ো।
তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এল, অবশেষে গাছে হিজল ফুঁটলো যেদিন, সে আর দেখতে পেলোনা।
তখন নদী গাল ফুলিয়ে বললো, “তুমি আমাকে আর ভালোবাসনা”
উত্তর দেবার কেউ ছিলোনা পাশে, ইকোর গলা ছিঁড়ে প্রতিধ্বনি হলো, “ভালোবাসনা”।

এখনও নদীর বুকে ঢেউ ওঠে মিলিয়ে যায়, জোয়ার আসে দুর্বার কামনার ঢল নিয়ে।
নদী একটু স্পর্শের কাঙাল হয়ে থাকে, মানবিক স্পর্শের!
কিন্তু তাকে যে ভালোবাসত সে স্পর্শের অতীত এখন।

লেসবিয়াও প্রেমে পড়ে “কিউট” কবি কাতুলের, তাকেও পান করতে দেয় তার যৌবন
-অলকানন্দার অমৃত বারি। কিন্তু সে বাস্তবতার বিত্ত বেসাতির নারী, কি করবে সে স্বপ্নচারী কবিকে নিয়ে?
কবি তো পাখী, গান গায় যখন ইচ্ছে হয়, চুপ থাকে যখন ইচ্ছে হয়না।
আর বনে যে পাখী, সে-ই খাঁচায় সও্বাহীন।
খাঁচার পাখী গায় না, ডানা ঝাপটায়।
খাঁচার পাখী, পাখী নয় – বিভ্রম।

যে পাত্রে সারা গ্রাম জলপান করে, একজন কবি সেই পাত্র ঠোঁটে ছোঁয়াতে পারে কত দিন?
লেসবিয়া বহুর ঠোঁটে পানপাত্র।
ঘৃনায় গা রি রি করে।
মন কাদার মত হলেও, প্রেম মানে কাদায় লুটোপুটি খাওয়া নয়।
প্রেম নয় সারমেয় মৈথুন!
বিক্ষত ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে শহর ছেড়ে চলে যায় কাতুল।
চলে যায় অনেক দূরে, লোকচক্ষুর আড়ালে।
বয়েস ত্রিশ বছরও হয় নাই।
সে অতিক্রম করে আরো কিছু নদী মরুভুমি, উপত্যকা, অধিত্যাকা, বন।
তারপরে অদৈব ও ইতর জগত ছেড়ে চলে যায় অন্য লোকে।
মন্দার, পারিজাত, সন্তানক, কল্পবৃক্ষ ও হরি-চন্দন গাছের ছায়া ব্যাপৃত অনন্য অরণ্যে, যেখানে শোনা যায় ঐশী পাখি
আর কিন্নর কন্ঠের গান।
যেখানে রম্ভা, ঘৃতাচী, উর্বশী, মেনকা সহ ৬০ কোটি অপ্সরা ও গান্ধর্বদের অদ্বয় নৃত্যাঙ্গন।
আর সুরভী গাভী ঘাস খায় সবুজের মাঠে মাঠে।
আর অলকানন্দা নদী বয় কুলু কুলু।

অথচ কাতুল এই অপূর্ব নন্দন কানন নির্দ্বিধায় অবহেলা করে চলে আসত যদি লেসবিয়া হৃদয়ের অন্ত:স্থল থেকে বলতো,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকেই শুধু”।
অথবা আমাদের গ্রামের সেই প্রেমিকের ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্ঠি খুলে যেতো নদীর জ্যোতির্ময় ভালোবাসায়।

ভালোবাসাই সবকিছু – যে ভালোবাসতে ভয় পায় – জড় সে পাষান।

”Gamble everything for love, if you’re a true human being.” -Rumi

 – শাহাব আহমেদ,  জানুয়ারী ২৭, ২০১৮

১ মন্তব্য

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন