অতুল আলম অপুর
একগুচ্ছ কবিতা

প্রলেতারিয়েত

বিকেলের দোয়েল লেজ নাড়ালে বারকয়েক
প্রলেতারিয়েতের কোন এক মাকে মনে পড়ে
আঁকিবুঁকি লেখা কবিতা
আঁকাবাঁকা পথ চলি– জীবন যেখানে যেমন চলে যায়
যেমন বাতাস বয়ে যায়
ঠাণ্ডা বাতাসের টাটকা অক্সিজেন গ্রহণ করে খেঁটে খাওয়া মানুষ
চেষ্টা নেই রোগবালাই থেকে দূরে থাকার অথবা স্বাস্থ্যবান হওয়ার
যেখানে এখনও বৈশাখী ঝড় বয়ে যায়
মেঘের গর্জনে জ্বলে ওঠে আগুনের ফুলকি
আমি চেয়ে দেখি সবুজ গাছের দিকে
গরুর পাল আর সবুজ টাটকা ঘাস
খাঁটি জীবনের মতো করে ভাবতে ভালো লাগে
অথচ আমি তোমাদের কর্মকাণ্ডের কথাগুলো মনে-মনে বুঝে উঠতে পারি নি।

কবি

ভয় করি না কবিদের মতো জীবন-চলচ্চিত্রের কাহিনী
দেবদেবীরা সব কী যে ক’রে ফেরে
আমাদের বয়সগুলো হয় যখন-তখন
পাকা ফলের মিষ্টি রসের মতো
আবিষ্কাররত জ্ঞানী মানুষগুলোর অনেক বেশি
আনাগোনা আমাদের এই পৃথিবীর বুক জুড়ে।
নীরবতার মধ্যে গড়ে ওঠে বসতিগুলো
উঠুক-উঠুক। উড়ুক-উড়ুক। নাচুক বাঁচার তালে
ভয়ের যে-সীমা অপরিসীম সীমানায় দাঁড়িয়ে
যে সৈনিকগণ এখন যোদ্ধার মতো যুদ্ধরত থেকে বিরত থাকতে চায়
যুদ্ধ করে না যুদ্ধরত সৈনিকদের মতো করে।

চাঁপা

কাঁঠালচাঁপা আর দোলনচাঁপার গন্ধে-ভরা
চাঁপা বাগানের মতো করে বেড়ে-ওঠা
কত ফুলবাগানের মালার মতো করে সেজে-থাকা
চাঁপা ফুলের গন্ধে ভরা এ-হৃদয়
বাগানবাড়ির কোনো কোণে লুকিয়ে থাকতে চায়
পারা যায় কিনা সকল চাপাচাপির মধ্যে
জীবন-চলা নয়তো– নাকি অন্য কিছুর মতো করে বেড়ে-ওঠা
জীবন-চলার পথে বাঁধা হয়ে না-দাঁড়ায়–
ঠিক যেমনটি চাঁপা ফুলের বাগানের হয়
কোনো এক-কবির মতো করে লেখা এ-কাহিনী
রহস্য-কাহিনীর চরিত্রের মতো কোনো এক-পৃথিবীতে বেঁচে থাকা।

যে-কবির নাম নেই

লিখে চলে সে ডাইরির পাতাগুলোয়
পাতা-ভরা লেখা তার স্বকীয়তার মাঝে
মধ্যখানে খানিকটা সময়
চুপচাপ বসে থাকে নিরন্তর কবির মতো ক’রে
কবিতা হিসেবে চিরন্তন বাণী
অনেক বাণী চিরন্তন
জীবনের বাণীর মতো জ্ঞানের সাগরে বিচরণরত থাকে
জীবন এখন যেখানে যেমন বয়ে চলে
সে-জীবনে ক’টি থাক খাঁটি কথার মালা।

রাবার

যে-স্বপ্নের বিপ্লবী দিনগুলোকে মুছে দেয় স্মৃতি রাবারের ভূমিকায়
থাকতে পারি কিনা ভূমিহীনদের ভূমিকায়!
আমাদের আর কিছু হবে নাকো
আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে?
দিনগুলো তো হারিয়ে গেল অন্য-কোনো
সুন্দর এক-পৃথিবীর বুকে
এ-পৃথিবীর বুকে থেকে মাঝে-মাঝে মনে হয়–
তোমার আমার চিন্তাগুলো কথাসাহিত্যের
আংশিক মুছে-যাওয়া পাণ্ডুলিপি।

পৃথিবী

পৃথিবী আর আমাকে কখনই বুঝবে নাকো
কখনই চিনবে না
না-চেনা অচেনা জীবনের বুক চিরে
বসবাস করতে-থাকা আমার নগরীতে
করতে-থাকা শুধু বসবাস পোকামাকড়ের বসতিতে
চেনা-চেনা গ্রামগুলো হারিয়ে যায় পৃথিবীর বুক থেকে।

ঠিকানা

একা-যে থাকি নি আমি কখনো
ভালবাসি শুধু মরার ডালপালা
আগুন লাগে শুকনো গরম পাতায়
মনে হয়– মৃতসাগর খুঁজেছি সবসময়ের জন্য
হায় আমার হৃদয় ভাঙবে যে, বলে গেল সূর্যের মতো নরম তারা
ঠাণ্ডা হওয়া যেন কঠিনতর ঘটনা!
তোমাকে ক্ষমা ঘোষণা করল রাতের নীল গগনের আলো
এ-পৃথিবী কিছু বুঝে ওঠার আগেই হয় ধ্বংসপ্রাপ্ত-পৃথিবীতে পরিণত
তখন নিরন্তর কথাগুলো খুঁজে পায় নিজের আসল ঠিকানা
হায়! কেঁদে যায় আমার হৃদয়ের করুণ ঠিকানাগুলো!
কোথায় গেল হারিয়ে আমার ভাঙা হৃদয়ের ঠিকানাগুলো
তবুও আমি আমার এই ঠিকানা খুঁজে পাব
মরে যাব আমার এ-পৃথিবীর বুকে!

জীবন

হতেও পারে কোনো মরীচিকাবিহীন মরুভূমি
যে-ভূমিকায় ভূমিহীন জীবনযাপন
এখনো তো মরুভুমির বুক চিরে বয়ে বেড়ায় কতশত লু'হাওয়া
হয় না আমার কাজ
জীবন গড়ার মেশিন না-বানিয়ে
করব না আর অন্যকোনো চলাফেরা!

মরীচিকা

লোকালয়ের গাড়িগুলো ছুটে চলে পথেপ্রান্তরে
মনে হয় শুধু ধুধু মরীচিকা
বালির ব্যথা আর মনের অন্যায়ের কথা
কিসের বাণী?
ভালবাসার মতো করে বেঁচে থাকা
আমাদের এ পৃথিবী!
পৃথিবী যে কোনো দিনই আমাদেরকে
আর ধোঁকা দেবে না মনের মতো করে!

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন