“শরীরের নাম মহাশয় যা সওয়াবে তাই সয়” প্রবাদটি আমার প্রয়াত দাদি এবং বাবার কাছ থেকে বহু শুনেছি, কিন্তু তখন খুব বেশি কেয়ার করি নাই, অথবা তেমন বিশ্বাসও করি নাই। তবে আমার ৫/৬ বছর আগে জিনিসটি নিয়ে একটা বাস্তব experiment পরিকল্পনা করে তাৎক্ষণিক শুরু করে দেই। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হলেও হাল ছাড়িনি, এবং টানা ২/৩ বছর একেবারে ভাত, রুটি, আলু, পাস্তা, চিপস, প্রক্রিয়াজাত চিনি ইত্যাদি না খেয়ে পার করে দিয়েছি। শুধু বেতিক্রম ছিল রোজার মাসে। এগুলি না খেলেও একেবারে কার্বহাইড্রেট যে খাই নি তা ঠিক না, তাছাড়া কার্বহাইড্রেট আপনার শরীরে দরকারও আছে। তবে আমার কার্ব ছিল অনেক অনেক কম। শাক-সব্জি, মাছ, সাদা মাংস, খুবই কম লালা মাংস ইত্যাদি খাবারের সাথে আমি ভাতে-রুটির পরিবর্তে বিভিন্ন ধরণের ছিমের বিচি, বিভিন্ন ধরণের ডাল ইত্যাদি খেয়েছি এবং খাই। এই ডালে এবং অন্য অনেক শাকসব্জি বা ফলে কিছু কিছু কার্ব থাকে, এবং সেটি আমার শরীরের জন্য যথেষ্ট। যেমন ভাতে Glycemic (causing glucose (sugar) in the blood) এর পরিমান ৮০ থেকে ৮৫র হলে কিডনি বিন বা চিকপিতে হয়তো ১৫ থেকে ২৫ (জাস্ট একটি রাফ এস্টিমেট).
আর চিনি যে একেবারে খাই না, তা নয় বরং ভালোই খাই, তবে সেটি প্রাকৃতিক অর্থাৎ বিভিন্নধরণের ফলের মধ্যে যে চিনি থাকে সেগুলি, তাতে করে চিনির সাথে উক্ত ফলে থাকা অন্য নিউট্রিশনগুলিও পাওয়া যায়।

ওই ২/৩ বছর আমি রেগুলার আমার রক্ত পরীক্ষা সহ অন্য পরীক্ষাগুলিও করেছিলাম। ২/৩ বছর পরে খাবারের সাথে সকালে এক পিচ whole wheat বা multigrain ব্রেড এবং সপ্তাহে ২/১ দিনে ডিনারে বা লাঞ্চে দুই/১ মুঠ ভাত অথবা মাসে ২/১ বার একপিচ পিঁজা অথবা একটি বার্গার খেয়ে আবার রক্ত পরীক্ষা করতে থাকি। এভাবে এক বছর পরীক্ষার পরে দেখা গেলো যে আমার বিগত ২/৩ বছরের একেবারে ভাত, রুটি, আলু, পাস্তা, চিপস, প্রক্রিয়াজাত চিনি ইত্যাদি না খাওয়া সময়ের থেকে আমার রেজাল্ট খুব একটা হের্ ফের হয়নি, অর্থাৎ সবকিছুই মোটামুটি লিমিটের মধ্যে ছিল, তাই তার পর থেকে মাঝে মধ্যে ২/১ মুঠো ভাত, ২/১ পিচ রুটি বা ২/১ পিচ পিজ্জা খাই, এবং তাতে কোনো অসুবিধে নেই। তবে প্রক্রিয়াজাত চিনি দিয়ে তৈরী মিষ্টি-মন্ডা জাতীয় জিনিস আর খাওয়া লাগে না। করোনা আক্রান্ত রুগীর মতো আমার যে স্বাদ একেবারে চলে গেছে তা ঠিক না, বরং স্বাদ এখন আরো বেশি পাই, তবে নিজের কাছে একটি কন্ট্রোল চলে এসেছে, যেটি জীবনে খুবই প্রয়োজন।
যাহোক, আমার ওই সময়ের এবং আমার এই কার্বলেস বা স্বল্প কার্বের খাবার সমন্ধে জানতে আমার ইতিপূর্বের লেখা আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

এবার হটাৎ মনে হলো, সেহরিতে একেবারে ভাত রুটি বাদ দিলে কেমন হয়। তাই, গত রাতের আগের সেহরিতে শুধুমাত্র সালাদ, বিভিন্ন ধরণের ফল এবং কিছু দুধ এবং সঙ্গে প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করে রোজা থেকেছি। আল্লাহর রহমতে কোনো অসুবিধা হয় নি। তাই আজকে ভোর রাতেও সেই ব্যবস্থা। তবে আপনার সালাদটি হতে হবে অনেক সমৃদ্ধ। আমার ইফতারও হয় অনেক সালাদ, সাথে ভাজির মধ্যে শুধু ছোলা ভাজি, তার সাথে মুড়ি এবং ফলমূল। প্লেইন yogurt কিছু পানি দিয়ে, হালকা লবণসহ কিছুক্ষন ব্লেন্ড করে ঘোলের মতো করে খাওয়া। এবং রাতের খাবারের সাথে হয়তো কিছু মাছ, মাংস, ২/১টি রুটি বা ২/১ মুঠ ভাত। মাছ মাংস আমরা mostly ওভেনে রোস্ট করে খাই, সময়ও বাঁচে আবার ফ্যাট কিছুটা কমে। তবে রোজার মাসে হয়তো ২/৩ দিন মাত্র শাহী ইফতার হবে।

যাহোক, সবার শরীর এক রকম না, এবং সবার সব ধরণের খাবার সহ্য নাও হতে পারে, তবে আপনি যদি প্র্যাক্টিস শুরু করেন তাহলে আপনার শরীরই আপনাকে গাইড করবে। আপনাকে একেবারে আমার মতো না হলেও চলবে, তবে আপনি যদি আপনার গতানুগতিক কার্বের মাত্রা, অর্থ্যাৎ ভাত রুটি কতখানি আর শাকসব্জি কতখানি খাবেন সেটি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেন তাহলে অনেক ভালো, এবং এই যে চলমান কোরোনাজাতীয় কোনো বিপদ আসলে আপনার শরীর অন্য অনেকের থেকে যুদ্ধের জন্য বেশি প্রস্তুতু থাকবে। সাথে সাথে অন্তত সপ্তাহে ৫দিন জাস্ট ৩০ মিনিটের জন্য হলেও শরীর চর্চা করার চেষ্টা করবেন। আর এই জাতীয় লাইফস্টাইল রপ্ত করতে পারলে আপনার কনফিডেন্স অনেক বেড়ে যাবে, এবং আপনি বেশি আতংকিত হবেন না, তাতে করে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট থাকবে, এবং সর্বোপরি মনও ভালো থাকবে।
আমার এই লেখাইর মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাদেরকে জানানো যে, আমাদের জীবনের অধিকাংশ সমস্যার সমাধান আমাদেরই হাতে, এবং আমরা এই সমস্যার অনেকগুলিই নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যদি আমরা ইচ্ছা করি। আমাদের কোরান হাদীছেতো আছে, আমরা ভালো কিছুর চেষ্টা করলে সৃষ্টিকর্তাও আমাদেরকে ভালো করেন। অন্য কারোর কথা জানি না, আমি আমার জবনে এর অনেক প্রমান পেয়েছি। জীবনে অনেক অনেক কঠিন, বাজে, অবর্ণনীয় এবং অনাকাঙ্খিত সমস্যায় পড়তে হয়েছে, কিন্তু কমবেশি কিছু সাফার করলেও সৃষ্টিকর্তা সেগুলি ঠিকই পার কর দিয়েছেন। সেই জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু চাওয়ার আগে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর অনেক বাকি রয়েছে এখনো। দোয়া করুন সেই কৃতজ্ঞতাটুকু যেন ঠিকমতো জানাতে পারি।
আসুন রোজার মাসের অছিলায় আমরা আমাদের জিহ্ববা সিয়ামের সাথে সাথে যেন আমাদের মনের সিয়াম পালনেও ব্রত হই। আমিন।
ধৈর্য ধরে যারা আমার প্যাচাল পড়েছেন তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।
মুকুল।
টরন্টো

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন