চারিদিকে শুধু ভয়, আতঙ্ক, হা-হুতাশ এবং আশার থেকে নিরাশার কথাবার্তায় বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সাথে সাথে hope বা আপনার আশাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। যেমনটি পবিত্র কোরানে আছে “My mercy encompasses all things” [Quran 7:156]. আল্লাহতালার দয়া আমাদের কল্পনারও বাইরে তাই যত বিপদই আসুক উনার দয়ার সামনে সেটি কিছুই না। আবার যদি পার্থিব জগতের কারো কথা শুনি, মহাত্মা গান্ধীর সেই বাণী “In the midst of darkness, light persists.” অথবা আমাদের কানাডিয়ান বিখ্যাত সংগীত শিল্পী, কবি এবং লেখক লিওনার্ড কয়েনের কথায়, there is a crack in everything that is how the light gets in”. আবার ২৬সে মার্চের কালো রাত্রে পাকিস্তানী আক্রমণের মাধ্যমে যেই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, কেউকি ভেবেছিলো মাত্র ৯ মাসের মাথায় সেটি শেষ হয়ে জন্ম নিবে একটি নতুন দেশ।

আমি কদিন আগে লিখেছি, এই পরিস্থিতি যদি কালকেও শেষ হয় তারপরেও অনেক ক্ষতি অলরেডি হয়ে গেছে, এবং আরো ক্ষতি হতে পারে। আর সেই ক্ষতির কথা চিন্তা করে মাথাটাকে জ্যাম করে আমরা কিছুই করতে পারবো না, বরং মনে মনে একটি কন্টিনজেন্সী প্লানের মতো করে রাখলে সেই ক্ষতির শিকার হলেও আমরা সেটিকে সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবো। আমার নিজের জীবনে ঢাকার রাস্তায় হলের পাশের রাস্তা দিয়ে বস্তির পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া এবং দেড় টাকার বাটার বন খেয়ে দিন কাটার ইতিহাসও আছে, আবার যে সেই জাতীয় কোনোকিছু হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, তবে আল্লাহ ভরসা সেই পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়া যাবে, এবং ওই সৃষ্টিকর্তা বলেছেন “My mercy encompasses all things”,অতএব আশাহীন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

যাহোক শুরুতে যা বলেছি সেটা নিয়ে কিছু বলি। আমরা মার্চ মাসের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ থেকে আসার পর থেকেই আস্তে আস্তে কানাডাতে ভাইরাসের বেশি বেশি ভিসা ছাড়া আগমন ঘটতে থাকে। আমাদের ৯ বছরের ভাগ্নে রাজ্ এসময় তাদের ইস্কুলের মার্চ ব্রেকের বন্ধে বেড়াতে আসে। ব্যাস, এর পরেই শুরু হয়ে গেলো ঘর বন্ধি জীবন, যা এখনো চলছে। ছোট মানুষ, তার ছুটি পন্ড হলো, বন্ধুদের সাথে দেখা হলো না, বাইরে ঘুরতে যাওয়া হলো না। তার সাথে সাথে আমাদেরও খারাপ লাগে। যাহোক নিচের ছবিতে আমরা এই ঘরবন্ধী জীবনের কিছু কর্মকান্ড তুলে ধরছি। তার স্বাস্থ একটু বেশি ভালো, তাই সেটিকে কমানোর একটি প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে, সে যেহেতু বাসা থেকে কোনো বইপত্র আনতে পারেনি তাই এই সুযোগে তাকে বাংলা অক্ষর শেখানো, নিয়মিত নামাজ পড়ার অভ্যাস করানো, তাকে মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস করা ইত্যদি প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে, এবং মাশাল্লাহ কাজ হচ্ছে ভালো। এর সাথে সাথে তাকে নিয়ে লুডু খেলা, বিভিন্ন ধাঁধার প্রতিযোগিতা করা, কিছু কমেডি শো দেখা এবং আমার কিছু কিছু বই পোড়ানো চলছে। আর সাথে সাথে বাংলাদেশে আমার অন্নান্য ভাগ্নে ভগ্নীদের সাথে তার নিয়মিত আলাপ চলছে তার ভাঙা ভাঙা সুন্দর বাংলায়।

তো, যেটা বলছিলাম মন্দের ভালো। হয়তো এই বন্ধি জীবন না হলে উপরক্ত কিছু জিনিস তাকে নিয়ে করা হতো না। আমারও কিছু পজেটিভ কাজ হচ্ছে। যেমন অর্ধেক পড়ে রাখা কিছ বই শেষ করার সুযোগ হচ্ছে, কিছু কিছু নতুন স্বাস্থ্যকর খাবারের রেসিপি তৈরী করার সুযোগ পাচ্ছি। বেশি বেশি বাংলাদেশে ভাইবোন বা ভাগ্নে ভাগ্নিদের সাথে কথা বলতে পারছি, এবং এই যে সব কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু লেখার চেষ্টা করতে পারছি। এগুলি করার কারণে দুঃশ্চিন্তা বা আতঙ্ক কাছে আসার সুযোগ কম হচ্ছে। আপনারাও আপনাদের সময়টাকে ভয়, আতঙ্ক বা হতাশার পিছনে বেশি ব্যায় না করে কিছু পজেটিভ খাতে ব্যবহার করুন, দেখবেন ভালো থাকবেন। সৃষ্টিকর্তার দয়ার কোনো সীমা নেই।
সবাই ভালো থাকবেন।
মুকুল
টরন্টো

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন