(নবম পর্ব )

বংশাল টু পল্টন। কত কথা, কত স্মৃতি। লেখা ও পত্র-পত্রিকার কথা বলতে গেলে মূলত দৈনিক সংবাদের স্মৃতি-কথাই বেশি মনে পড়ে। এক সময়ে দৈনিক সংবাদের নাম শুনলেই মনে করা হতো, এটি একটি প্রগতিশীল ও অগ্রসর পাঠকের পত্রিকা। তখন বাংলাদেশে পত্র-পত্রিকা, বিশেষ করে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যাও ছিল হাতে গুনা কয়েকটি। দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক ও ইংরেজি The Daily Observer পত্রিকা ছিল পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে।

প্রায় ত্রিশ বছরেরও বেশী সময় আমি দৈনিক সংবাদের নিয়মিত পাঠক ছিলাম। তাই সংবাদের সাথেই ঘটনা, রটনা এবং স্মৃতির পরিমাণ বেশি। দৈনিক সংবাদ আমার প্রথম ভালো লাগার পত্রিকা। প্রথম ভালোবাসা। বলতে বাধা নেই, “শুরু থেকেই আমার ‘পত্রিকার সকল আগ্রহ’ চুরি করে নিয়েছিল ঐ দৈনিক সংবাদ। ”

অনেক আগেথেকে দৈনিক সংবাদে সপ্তাহে একদিন খেলাঘরের সাহিত্য পাতা বের হতো। কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের জিয়া ভাই ( চাচা গিয়াস কামাল চৌধুরীর ছোট ভাই) ,শাহেদ (অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ) ভাই, রুহুল ভাই, ঝরা ভাই এবং আরও অনেক দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গকে দেখেছি সপ্তাহের ঐ পাতাটিকে নিয়ে খুব ব্যাস্ত থাকতে। কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরে পত্রিকার পাতার জন্যে লেখা দিতে যেতাম। বেশি গিয়েছি পুরাতন ঢাকার হোসেনী দালান কেন্দ্রীয় খেলাঘর অফিসে। সেখানে তেজপাতার চা কেতলিতে বসানো থাকতো। জিয়া ভাই, শাহেদ ভাই, চা খাবো কি না জিজ্ঞেস করেই মগে ঢেলে দিয়ে আপ্যায়ণ করতেন। হা, সেই এক সময়! তখন ঐ তেজপাতার চা মনে হতো যেন অমৃত! মাঝেমধ্যে টোস্ট বিস্কিটও মিলতো।

দৈনিক সংবাদ অফিসে গেলেই দেখতে পেতাম সন্তোষ (সন্তোষ গুপ্ত) দা চুপচাপ একাকী বসে লিখে চলেছেন। মাঝেমধ্যে দেখতাম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে একমনে নিউজপ্রিন্ট কাগজে লিখে যাচ্ছেন।

সন্তোষ গুপ্ত ছিলেন একজন সাংবাদিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট । তিনি দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশকের সাংবাদিকতা জীবনে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। পাঠক মহলে সমাদৃত ছিল সন্তোষ গুপ্তের লেখা ‘অনিরুদ্ধের কলাম’। কবিতা, শিল্পকলা, চিত্রকলা, রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ১৪টি বই লিখেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ঊনাকে (সন্তোষ বাবুকে) আদাব দিয়ে টাল টাল নিউজপ্রিন্ট কাগজের গন্ধ শুকতে শুকতে একটু সামনে গেলেই দেখা হতো ভাইয়া
(বজলুর রহমান)’র সাথে। বজলুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন সাংবাদিক এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ২০১২ সালে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।

চুপচাপ স্বভাবের গোলগাল বজলু ভাই দীর্ঘদিন দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। তিনি খেলাঘরেরও ভাইয়া (পরিচালক) ছিলেন। আমি খেলাঘর করতাম। এছাড়া, তিনি মতিয়া আপা ( মতিয়া চৌধুরী )’ র স্বামী। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় দুজনকেই চিনতাম এবং ঊনারাও আমাকে জানতেন। সংবাদ অফিসে গেলেই ভাইয়ার সাথে কুশলবিনিময় হতো। হাতে কাম-কাজ কম থাকলে চা দিয়ে আপ্যায়ন করতেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পল্টনের জনসভায় প্রায়ই দেখা হতো বজলু ভাইর সাথে। তিনি পল্টন ময়দানের পশ্চিম দিকে হাঁটতে হাঁটতে বক্তব্য শুনতেন আর চিনাবাদাম চিবুতেন। সালাম দিয়ে সামনে দাঁড়ালেই বলতেন, নাও বাদাম খাও। এখন বজলু ভাইও নেই, সেই পল্টনের ময়দানও নেই।

সংবাদ অফিসে মাঝেমধ্যে সংবাদ সম্পাদক আহমদুল কবীর (মনু মিয়া)কেও দেখা যেতো। পরিপাটি করা সাদা চুল, ইস্ত্রি করা সাদা হাফ শার্ট ও ট্রাউজার, কালো রংয়ের বিশেষ ধরনের ফ্রেমের চশমা পরা আহমদুল কবীর সাহেবেকে খুবই স্মার্ট লাগতো। মনে হতো যেন ছবিতে দেখা সেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! সংবাদ অফিস ছাড়াও রাজনৈতিক কারণে ঊনার সাথে আরও অনেক জায়গায়ই দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। কেনো যে আহমদুল কবীর সাহেবেকে আমার নিকট শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মনে হতো তা আজও ভেবে পাই না।

আহমদুল কবির (মনু মিয়া)
ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবান এবং নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে।
আহমদুল কবির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর (১৯৪২-৪৩) প্রথম ভিপি। ১৯৬৫ সালে আহমদুল কবির ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আহমদুল কবির তদানীন্তন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি কৃষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

কখনো কখনো আহমদুল কবির সাহেবের স্ত্রী ‘স্মার্ট লেডী’ লায়লা কবীরকে ( লায়লা রহমান কবির)ও দৈনিক সংবাদ অফিসে দেখেছি। তিনি ছিলেন দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। উনাদের সাথে আমার পরিচয়ের কোনো ঘনিষ্ঠতা না থাকায় দুর থেকে শুধু সালাম বিনিময়ই হতো। তেমন কোনো আলাপ সদালাপ হতো না।

রণেশ (রণেশ দাশগুপ্ত)দা’কেও কয়েকবার দেখেছি। ঊনার সাথে যোগাযোগ এবং ভালো জানাশোনা ছিল। তাই যখন যেখানেই দেখা হতো সেই দার্শনিকরূপী মানুষটিকে খুবই আপনজন মনে হতো। রণেশ দাশগুপ্ত আমাকে বরাবরই লেখার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করতেন।

রণেশ দাশগুপ্ত ছিলেন একজন সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংগ্রামী রাজনৈতিক কর্মী ও দেশের স্মরণীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।

পরবর্তী সময়ে দৈনিক সংবাদ পত্রিকা অফিসে গেলে আমার সহযোদ্ধা জামান (মুনিরুজ্জামান) ভাই ও সোহরাব (সোহরাব হাসন) ভাইয়ের সাথে দেখা হতো। এখন আর পত্রিকা অফিসে যাওয়া হয়না। দেখাও হয়না কারো সাথে। সংবাদ অফিসে আরো অনেকের সাথে দেখা হতো, কথা হতো, ঘনিষ্ঠতাও ছিল। এখন আর কারো নাম মনে করতে পারছি ন। দেখা হলেও আমি কাউকে চিনতে পারবো না, আমাকেও ওদের কেউ চিনবে না।

আরেকজনের কথা বলতেই হয়। তিনি চক্রবর্তী বাবু। খাঁটি ব্রাম্মন। চক্রবর্তী বাবু ছিলেন দৈনিক সংবাদের পুরনো সিনিয়র প্রুফরীডার। ঊনার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্ধার। আমার বাড়িও সেখানে। ঊনার ছোট ভাই সুভাষ চক্রবর্তী আমার সহযোদ্ধা, ব্যাক্তিগত বন্ধু ও ছাত্র জীবনের রাজনৈতিক সহকর্মী। এসকল কারণে সংবাদ অফিসে দেখা হলেই চক্রবর্তী বাবু আমাকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করতেন ও
চা-নাশতা খাওয়াতেন । উনি আর এই জগতে নেই। চক্রবর্তী বাবুর আন্তরিকতা, সহযোগিতা, স্নেহ-মমতা ও আপ্যায়ণের কথা আজও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি।

শেষপর্যন্ত দৈনিক সংবাদের চিঠিপত্র কলামের লেখাই আমাকে পি-এইচ. ডি. ডিগ্রি এনে দিতে সহায়তা প্রদান করেছে । কেমন করে? শুনুন সে কাহিনী।

আমি ১৯৯৩ সনে ভারতের দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, জাতীয় জনসংখ্যা তহবিলের ( UNFPA) আর্থিক সহায়তায়,
জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ে PG. D.( Post Graduate Diploma on Population and Development) গ্রহণ করি। বাংলাদেশ থেকে যাবার পূর্বে ডলার, বিমান টিকেট, কাগজপত্র ও এতদসংক্রান্ত অন্যান্য কারণে ঢাকাস্থ UNFPA অফিসে যাই। গিয়ে দেখা হলো নুরুল আমীন ভাইর সাথে। তার সাথে আগেই ঘনিষ্ঠতা ছিল। নুরুল আমীন ভাই সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, লাখপতি হয়ে ফিরবেন৷ তখন ঊনার
কথা বুঝতে পারিনি। কী বলতে চাইছেন নুরুল আমীন ভাই?

ভারতে গিয়ে দেখলাম, আমাদের মাসিক বৃত্তির পরিমাণ একজন ভারতীয় সচিবের চেয়েও বেশি। এছাড়া, পুস্তক ভাতা, থিসিস ভাতা, ফিল্ডওয়ার্ক এবং অন্যান্য ভাতা সব মিলিয়ে অর্থের পরিমাণ মন্দ নয়। ইউ এন এফ পি এ ‘ র নুরুল আমীন ভাই জেনেশুনেই বলেছিলেন, “লাখপতি হয়ে ফিরবেন “!

আমাদের কোর্সটির Venue ছিল CDS ( Centre for Development Studies), Trivandrum, Kerala. ঐ কোর্সের শেষ দিকে কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত সরকারের বৃত্তি প্রাপ্তি সাপেক্ষে পি-এইচ. ডি. কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাই। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় আমার শিক্ষা ছুটি বৃদ্ধি না করায় আমাকে দেশে ফিরে আসতে হয়। তখন চাকরি ছাড়ার কথা খুব করে মাথায় এসেছিল। বহু চিন্তাভাবনা করে চাকরি ছাড়ার দুঃসাহস পরিত্যাগ করতে বাধ্য হই।

১৯৯৩ সনের মাঝামাঝি সময়ে, ভারত থেকে বিফল মনোরথ হয়ে দেশে ফিরে এসে চাকুরীতে যোগদান করি। কিন্তু পি- এইচ. ডি. করার কথা আর ভুলতে পারি না। আমার ইন্টারেস্ট ছিল জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ে। তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করি।

ঢাকা ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিখ্যাত গবেষক ও অধ্যাপক এম কবীর আমার সুপারভাইজর হতে পারতেন। হলেন না। ঊনার সাথে যোগাযোগ করলে ঊনি আমাকে বললেন, “Am I Competent Enough to Guide You? ” এ কথাটি এখনও আমার কানে বাজে। পি-এইচ.ডি. করার পর কবীর সাহেবের সাথে স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয়ের জাতীয় পর্যায়ের অনেক সভা সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি বসেছি। তখন তিনি ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক ও বন্ধুবৎসল। সেই বিষয়ে আর কোনো কথা হয়নি ঊনার সাথে । ঊনিও কিছু বলেননি, আমিও না।

পি-এইচ. ডি. করার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু নেশা ছাড়তে পারিনি। তাই ভগ্নহৃদয়ে
ইমেইল করতে ও চিঠি লিখতে শুরু করি বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সময়ে ইমেইল করা আজকের মতো এতটা সহজ ছিলো না। তারপরও অনেক কষ্টে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইমেইল পাঠালাম। ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও কানাডার অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আশানুরূপ সাড়াও ( অফার) পেলাম। কিন্তু টিউশন ফি অনেক বেশি। টিউশন ফি সহ ফরম পুরণ করে জমাদানের কথা বললো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। ততক্ষণে জেনে গেছি যে, আমার চাকরি থেকে শিক্ষা ছুটি পাওয়া যাবে না। চাকুরী ছেড়ে দেয়া , স্ত্রীপুত্রের ভরণপোষণ, টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ বাবত লক্ষ লক্ষ টাকা যোগার করা আমার জন্য পি-এইচ. ডি. ডিগ্রি লাভের পথে বিরাট এক অন্তরায় হয়ে দেখা দিলো।

কী আর করা! পি-এইচ. ডি. করার আশা একরকম ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে আছি। কিন্তু মাথা থেকে কোনমতেই পি-এইচ. ডি’র চিন্তা
যাচ্ছিল না। কেবলই ভাবছিলাম কী করি?

কিছুদিন পর ২৯-০১-১৯৯৪ তারিখের দৈনিক সংবাদের একটি উপসম্পাদকীয় আমার নজরে আসে। সৈয়দ আলী কবীরের লেখা উপসম্পাদকীয়ের বিষয় ছিল, ” এম ফিল কোর্সের প্রসারের পক্ষে “।

আমি ও আমার স্ত্রী সৈয়দ আলী কবীর সাহেবের লেখার সুত্র ধরে ০৩-০২- ১৯৯৪ খ্রীঃ তারিখে দৈনিক সংবাদের চিঠিপত্র কলামে ” এম ফিল কোর্স ” শিরোনামে একটি পত্র লিখি। পত্রে বলার চেষ্টা করি —

‘এই বিষয়টি বাংলাদেশে বড়ই উপেক্ষিত। এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার লোক এবং প্রতিষ্ঠানের বড়ই অভাব।… বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে হবে। সৈয়দ আলী কবীর-এর সাথে একমত পোষণ করে আমরাও বলি, গবেষণার জন্য বাংলাদেশ অকর্ষিত উর্বর ভুমি।… পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সবক’টি রাজ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখান থেকে এম. ফিল এবং পি-এইচ. ডি. ডিগ্রি প্রদান করা হয়। গবেষণার জন্য রয়েছে উন্মুক্ত দ্বার। বাংলাদেশেও কি অনুরূপ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে না? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি বিষয়টি ভেবে দেখবেন?’

কার দেখা কে দেখে! চিঠি লিখে বসে আছি। ভাবছি কতো চিঠি লিখে পাঠাই, ছাপা হয়, কাজ কী হয়? প্রায় ২ মাস পর ১৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪ খ্রীঃ তারিখে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায়
হঠাৎ দেখি ” ইন্স্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আই বি এস)ঃ একটি গবেষণা নিবেদিত বিদ্যায়তন” শিরোনামে একটি বিরাট লেখা। খুব মনোযোগ সহকারে লেখাটি কয়েকবার পাঠ করি। এটি লিখেছেন আই বি এস- এর অধ্যাপক ও একসময়ের পরিচালক ডক্টর প্রীতি কুমার মিত্র। পরবর্তী সময়ে তিনি ছিলেন আমার শিক্ষক ও ঘনিষ্ঠজন। মিত্র বাবু সংবাদ পত্রিকায় লিখেছেন,

“… সৈয়দ আলী কবীর ও সামাদ সিকদার যথার্থই বলেছেন। গবেষণার বিষয়টি বাংলাদেশে কিছুটা অবহেলিত। পত্রলেখক সামাদ সিকদার ও স্বপ্না সিকদার ( ২১শে মাঘ, ১৪০০) ভারতের মত আমাদের দেশে গবেষণামূলক শিক্ষার জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠান নেই কেন এ প্রশ্ন রেখেছেন।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহীস্হ আই বি এস -এর পক্ষ থেকে কিছু বলার তাগিদ অনুভব করছি। আই বি এস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে শুধু এম,ফিল ও পিএইচ,ডি প্রোগ্রামের জন্যই লেখাপড়া করা হয়ে থাকে।

… প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী -মার্চ মাসে একাধিক জাতীয় দৈনিকে নতুন গবেষক ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। মে মাসের দিকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে ফেলোশিপসহ ও ফেলোশিপ ছাড়া নতুন গবেষক নেয়া হয় এবং জুলাই মাস থেকে ক্লাস শুরু হয়। … আই বি এস-এর শিক্ষাপদ্ধতির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গবেষণা পদ্ধতিসহ এক বছরব্যাপী কোর্স ওয়ার্ক। …

খুব সীমিতভাবে হলেও আই বি এস নিরন্তর ও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে দেশ ও জাতির ঐসব জরুরি ও দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজন পরিপুরণের লক্ষে, যেগুলোর কিছু সংখ্যকের গুরুত্ব উচ্চারিত হয়েছে সৈয়দ আলী কবীরের বিশিষ্ট কলামটিতে ও তাঁর সমর্থকদের উদ্দীপ্ত পত্রমালায়।… রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস ‘ নামে আই বি এস-এর অনুরূপ আরো একটি গবেষণাকেন্দ্র কয়েক বছর আগে স্হাপিত হয়েছে। দেশে এরকম সম্পূর্ণ গবেষণা-নিবেদিত প্রতিষ্ঠান আরো স্হাপিত হওয়া দরকার। ”

হা, তারপর আমাকে আর ঠেকায় কে? আমার প্রিয় দৈনিক সংবাদ পত্রিকাই আমাকে শেষপর্যন্ত পথের সন্ধান দিল। সেই পত্র দেখার পরই প্রস্তুতি নিতে থাকি। কঠিনতর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে, আল্লাহ পাকের ইচ্ছা এবং প্রচুর পরিশ্রমের পর শেষপর্যন্ত পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করি। দৈনিক সংবাদের ঐ সুত্র না পেলে কী হতো জানি না। হয়তো কোনোদিন ডক্টরেট ডিগ্রি সম্ভবই হতো না। তাই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার প্রিয় শিক্ষক ডক্টর প্রীতি কুমার মিত্র এবং প্রিয় পত্রিকা দৈনিক সংবাদকে।

(চলবে)

০২-০৬- ২০২০,
রূপায়ণ টাউন, নারায়নগঞ্জ।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন