এ দেশে অনেক মা-বাবা অবসর জীবনে আলাদা থাকে। ছেলেমেয়েরা বড়ো হলে কাজের প্রয়োজনে দূরদূরান্তরে চলে যায়, আবার বিয়ে করলে মা-বাবার সঙ্গে থাকা পছন্দ করে না। আমাদেরই এক প্রতিবেশীর একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই লেখা।

রোজকার মতো সকালে (৮টা বাজে) দরজায় কলিং বেল টিপছে এন্ড্রিয়ার নার্স মেলিসা ; কিন্তু এন্ড্রিয়া আজ কোনো সাড়াশব্দ করছেনা। মেলিসা হতবাক হয়ে বাহির থেকে কলিংবেল টিপছে, কেউ ভিতর থেকে সাড়া দিচ্ছে না। মেলিসা বাহির থেকে জোরে জোরে চিৎকার করে ডাকছে এন্ড্রিয়া, এন্ড্রিয়া ! শেষে সে সামনের দরজা থেকে ঘরের পেছনের দরোজায় গিয়ে জোরে জোরে আওয়াজ করছে আর ডাকছে এন্ড্রিয়া, এন্ড্রিয়া ! মেলিসার আওয়াজ শুনে নিকটতম বাসার লোকজন এসে জড়ো হয়েছে, ওরা দরজা খুলতে চেষ্টা করছে; আবার কেউ অ্যাম্বুলেন্স কল দেবে কিনা মেলিসাকে জিজ্ঞেস করছে। মেলিসা নিরুপায় হয়ে এন্ড্রিয়ার ছেলে নেথনকে টেলিফোন করে বলে,” আমি ঘরের ভিতর থেকে তোমার এন্ড্রিয়ার কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না। নেথন বলে মেলিসা,”আমি অ্যাম্বুলেন্স কল দিয়ে এক্ষন-ই আসছি। “ সে অ্যাম্বুলেন্স কল দিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে বাসায় এসে দেখে ততক্ষনে ফায়ার সার্ভিসের লোক দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে এন্ড্রিয়াকে বিছানার পাশে পড়ে থাকতে দেখে।

এন্ড্রিয়া দীর্ঘদিনের অসুস্থ্য; শরীরের ওজন (স্থূলতা )অনেক বেশি এবং হাঁটা- চলাফেরা করতে পারে না। সে রাত্রে এন্ড্রিয়া বেড থেকে বাথরুমে যাওয়ার চেষ্টা করে নিচে পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারে নি; তার শরীরের ওজন এত বেশি, নিজে নিজে উঠা সম্ভব হয় নি; এদিকে বাহির থেকে কলিং বেল এবং টেলিফোন ধরতে ও পারছে না।

কয়েক ঘন্টা এন্ড্রিয়া বেডের পার্শে পড়ে থাকে, বাসায় একা থাকার ফলে কেউ তাকে সাহায্য করতে পারে নি। তবে সে শরীরে সামান্য আঘাত পেয়েছে,তাছাড়া সম্পূর্ণ সুস্থ্য ছিল। অ্যাম্বুলেন্স (ফার্স্ট এইড )এবং নার্স তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এনেছে। পরে তার ছেলে নিজের বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু এন্ড্রিয়া ছেলের বাসায় ও স্থায়ীভাবে থাকতে রাজি হয় নি। তার ছেলেরা বলেছে,” তুমি আমাদের সঙ্গে না থাকলে সিনিয়র হোমে থাকো, আমরা ব্যবস্থা করে দেব। প্রত্যুত্তরে সে বলে, “তোমরা গিয়ে সিনিয়র হোমে থাকো, আমি আমার বাড়িতেই থাকবো। ” হা হা হা ! দুইদিন পরে সে আবার নিজের বাসায় চলে এসেছে এবং টুকটুক করে ঘর থেকে বের হয়ে ফুলগাছে পানি দিয়ে বাসার সামনে বসে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। সে বলে,এখানে এত এত লোক , আমি এখানে একা মনে করি না। আমার ছেলে এবং ছেলেবৌ বলে আমাকে সিনিয়র হোমে পাঠাবে, সে জন্য আমি রাগ করে বলেছি যে “তোমরা সিনিয়র হোমে গিয়ে থাকো, আমি আমার স্বামীর বাসায় থাকবো। ” প্রসেস ফুড রাখা থাকে, সে মাইক্রোওয়েভ এ গরম করে খেয়ে নেয়; তাছাড়া ফল/ ফ্রুটস( fruits) এবং সালাদ সবই টেবিলে সাজানো থাকে।প্রতিদিন সকালে পার্সোনাল সার্ভিস ওয়ার্কার (PSW ) এসে ওকে গোছল করানো থেকে শুরু করে সবই ঠিক করে রেখে দিয়ে যায়।
গত কবিড- ১৯ এর ফলে এ দেশে সিনিয়র হোমে অনেক লোক মারা গেছে ।


আমাদের প্রতিবেশী, একজন ভালো মনের মানুষ এই এন্ড্রিয়া; সে গত কয়েক বৎসরে তার স্বামী এবং বড় ছেলেকে ক্যান্সারে হারিয়েছে। তার বড় ছেলের সঙ্গে ছিল আমার সখ্যতা, আমার বাড়ি এবং গ্যারেজের দরজার তালা পরিবর্তন, প্লাম্বিং, খুঁটিনাটি কোনো সমস্যা হলে,একটু বললে সঙ্গে সঙ্গে হাসিমুখে ঠিক করে দিতো। তার মৃত্যুতে আমি socked । কোনোদিন তাকে আমি কাজের জন্য পারিশ্রমিক দিতে পারি নি। সে বলতো “আমি পয়সার জন্য তোমার কাজ করি না। ”

আমার ঘরের দরজা খুললে নজরে পড়ে ৮০-৮২ বৎসরের এন্ড্রিয়া । দরজা খুলে মিসকি হাঁসি দিয়ে বলে ” কেমন আছো ” ? আমি, আমার স্ত্রী বা ছেলেমেয়েরা যে যখন দেখে বলে ” ভালো “। এন্ড্রিয়ার বড় ছেলে ” ৭-৮ বৎসর হয় ক্যান্সারে মারা গেছে। এই ছেলে মায়ের সঙ্গে থেকে মাকে দেখাশুনা করতো। তার আরও দুই ছেলে উডব্রিজ এবং মিল্টন স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে নিয়ে কাজের সুবিধার্থে থাকে। কিন্তু প্রায়ই কেউ না কেউ আসা যাওয়া ও দেখাশুনা করে। এন্ড্রিয়ার শারীরিক অসুস্থথার জন্য স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না। সিটি হুইল ট্রান্সপোর্ট নিয়ে হাসপাতাল এবং শপিং মলে সে সময় সময় যাওয়া আশা করে এবং বাসায় PSW (Personal service worker)এর লোক এসে দেখাশুনা করে। আমি নিজেও তাকে দুই/একবার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি।

এ দেশে শীতে অত্যধিক বরফ পরে, প্রায়ই স্নো ব্লোয়ার দিয়ে স্নো পরিষ্কার করতে গেলে তার ঘরের দরোজার সামনে একটু পরিষ্কার করে না দেয়া পর্যন্ত আমার মনে হয় কোথায় যেন কিছু বাকি থাকলো । সে এমন ভাবে হাঁসি দিয়ে চেয়ে থাকে, যেন অনেক উপকার করেছি। শুধু কি তাই ? প্রতি বুধবার সিটির লোক গার্বেজ কালেকশন করে ;ভোরে ঘুম থেকে উঠে গার্বেজ, ফুড ওয়েস্ট (waste ), রিসাইক্লিং রাস্তার পার্শে রেখে দিতে হবে এবং এন্ড্রিয়ার কাজটুকুও করতে কর্পণ্যতা করি না। এই সামান্য কাজটুকুর জন্য সে কতটুকু খুশি, চেহেরা দেখলেই বুঝতে পারি। ওর ছেলের মৃত্যুর পর সে সামারে (summer ) গার্ডেনিং করতে পারে না। আমরা গার্ডেন করি এবং মাঝে মধ্যে তার পছন্দের সবজি , কিছু না কিছু দিতে ভুল করি না। তবে আমাদের বাংলাদেশী ডাঁটা শাক, পুঁই শাক বা আরো ও অনেক ধরণের সবজি সে পছন্দ করে না। মূলত এরা আমাদের দেশীয় তরকারি চিনে না।

অনেক বৎসর আগের কথা : নিউয়র্ক থেকে আমার এক বন্ধু, বেড়াতে এসেছিলো এবং যাওয়ার সময় আমার বাগানের ডাঁটা শাক নিয়ে কানাডা/আমেরিকা বর্ডারে ঝামেলায় পড়েছিল। এ দেশীরা ইন্ডিয়ান/ বাংলাদেশী সবজি চিনেনা বলে এই ঝামেলা হয়েছিল।


অনেকেই বলে থাকে যে পশ্চিমা দেশগুলিতে সিনিয়র পুরুষ /মহিলা কাজ থেকে অবসর নেয়ার পর শেষ জীবনে অসহায়ের মতো বৃদ্ধাশ্রমে থাকে; তার কারণ ছেলেমেয়েরা কাজের ব্যস্ততা এবং দূরদূরান্তরে থাকার ফলে মাবাবার দেখাশুনা করতে পারে না।

এ দেশে ১৮ বৎসর হলেই ছেলেমেয়েরা স্কুলের পড়াশুনা শেষ করে কলেজ/ইউনিভার্সিটিতে পা দিয়ে আর বাড়ির ধারে কাছে থাকে না। অনেকে পড়াশুনার নাম করে দূরদূরান্তরে চলে যায় যেমন কানাডা বা আমেরিকার বিভিন্ন শহরে পড়াশুনা বা কাজ করে ; কালেভদ্রে এসে মাবাবার খোঁজ নেয়। মাবাবা এত কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করে; শেষ বয়সে ছেলেমেয়েরা কেউ নিকটে থাকে না।

এটা সম্পূর্ণ ঠিক নয় , ছেলেমেয়েরা যেখানেই যাক না কেন; মাবাবার সঙ্গে বন্ধন ছেড়ে দেয় না। আমাদের দেশে ও আজকাল ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে দূরদূরান্তরে কাজ করে এবং মা-বাবাকে পূর্বের ন্যায় দেখাশুনা করতে পারে না।
ছেলেমেয়েরা বড় হলে , তাদের ঘর সংসার হবে, এটা মা-বাবার স্বপ্ন এবং দেখে সবাই আনন্দ পায়। আমার এক পরিচিত নিকোলাই ও তার স্ত্রী বৃদ্ধ বয়সে নিজের বাড়িতে থাকে। বাসায় ৩-৪টা বিড়াল পোষে ও (৯- ১০টা) মুরগীর ফার্ম আছে। নিকোলাই ৮০ বা ৮২ বয়স , হান্ডিম্যান, সব ধরণের কাজ জানে এবং এই বয়সেও কারও বাড়িতে কোনো কিছুর দরকার হলে এসে কাজ করে পয়সা নিয়ে যায়। তাদের বাসায় গেলে নাতি/নাতনি নজরে পড়ে । নিকোলাইর স্ত্রী নাতি/নাতনিদের স্কুলে দিয়ে এবং নিয়ে আসে। ছেলেমেয়েরা ভোরে কাজে যাওয়ার পূর্বে ওদের রেখে যায়, কাজ সেরে যাওয়ার পথে নিয়ে যায়। যখনই যাই মিয়াবিবি দুইজনকে বসে টেলিভশন দেখতে বা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখি।


এখানে কিছু বাংলাদেশী মাবাবা যারা সিনিয়র হোমে থাকে; জিজ্ঞেস করেছিলাম ছেলেমেয়েদের সঙ্গে না থেকে আলাদা থাকছেন কেন ? জবাবে বলেছিলো, আমাদের আলাদা সিনিয়র হোমে থাকতে ভালো লাগে; তার কারণ ২৪ ঘন্টা সিনিয়র হোমে ডাক্তার, নার্স, ও অন্নান্য সুযোগ রয়েছে । সরকার থেকে যে পেনশন পাই তা দিয়ে আমাদের কোনোরকমে চলে যায়। ছেলেমেয়েদের আলাদা জীবন, বাড়তি ঝামেলা করতে ভালো লাগে না। সিনিয়র হোমে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া, কমিউনিটি হলে নিউজ পেপার পড়া, ও অন্যদের সঙ্গে আন্তরিকতা এবং মাঝে মধ্যে বাসে সবার সঙ্গে শপিং ও বিভিন্ন স্থান দেখার সুযোগ রয়েছে যা বাসায় থাকলে সম্ভব না।এমন কি ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনি নিয়ে উইকেন্ডে বা অবসর সময় এসে মাজার মজার খাওয়া খেয়ে হইচই করে যায়। আমরা দেখতে গেলে খাওয়াদাওয়া ব্যাতিত আসা যায় না এবং এটাসেটা দিয়ে দেয় ।এরা খুবই আতিথিয়েতা পরায়ণ , গড়ে সপ্তাহে ২-৩ বার ফোনালাপ হয়। ওদের দুই ছেলে আলাদা থাকে এবং সময় অসময় এসে মাবাবার খোঁজখবর নিয়ে যায় ।


এন্ড্রিয়ার মতো আবার অনেকে বাসায় থেকে অভ্যস্থ এবং ৩-৪ কামরা বাসায় একা থাকে। আমার অপর প্রতিবেশী ওলগা, এঞ্জেলো এবং ডমিনিকের মতো ইতালিয়ান এবং অন্যান্য দেশের বহুলোক বৃদ্ধ বয়সে নিজেদের বাড়িতেই থাকে।
তবে অনেকেই সিনিয়র হোম ও থাকে। ইনকাম অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের সিনিয়র হোম (সাধারণ বা লাক্সারি) আছে;
ক) আমি যেই বাঙালি পরিবারের কথা উল্লেখ করলাম, তারা সুস্থ্য এবং সাধারণ ইনকামের আওতায় পড়ে; এরা যাদের সঙ্গে থাকে, তাদের বেশির ভাগ সুস্থ্য,তবে কিছু লোক শারীরিক অসুস্থ্য, দেখাশুনার জন্য PSW (পার্সোনাল সার্ভিস ওয়ার্কার) সাহায্য দরকার হয়; এমন কি ওরা রান্না করে খেতে পারে না, বাহির থেকে খাওয়া সাপ্লাই ও রুম পরিষ্কার এবং বেড ও কাপড়চোপড় পরিষ্কারের জন্য আলাদা লোক থাকে।


লাক্সারি সিনিয়র হোমে :
এ দেশে সিনিয়রদের জন্য অনেক বিলাসবহুল ব্যবস্থা ও রয়েছে । বিভিন্ন্য প্রাইভেট নার্সিং প্রতিষ্ঠান সিনিয়র ধনী লোকদের মোটা অংকের ডলারের বিনিময়ে সেবা দিয়ে থাকে । এই বিলাসিতাগুলির মধ্যে রয়েছে:
ক) রুম সার্ভিস/ইন-স্যুট ডাইনিং
খ) সুন্দর লাউঞ্জ সঙ্গে fireplaces
গ) বার এবং pubs
ঘ) অত্যাধুনিক খেলা রুম
ইনডোর এবং বহিরঙ্গন পুল
ব্যায়ামাগার এবং সুস্থতা কেন্দ্র
এ সব সিনিয়র হোমে গেলে মনে হয় না যে কেউ কোনো অসুবিধায় আছে; ডাক্তার, নার্স সহ সবধরণের সুবিধা আছে। মাসে তিন হাজার ডলার থেকে শুরু করে ৫-৭ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করে বিলাসী জীবন যাপন করে। এ সব লোক মাঝে মধ্যে বিংগো(Bingo ), ক্যাসিনো (Casino ) এবং প্রমোদ ভ্রমণে গিয়ে সময় অতিবাহিত করে ।


আমার অপর দিকে ওলগা এবং তার ছেলে সাবাতুরে থাকে। ওলগা এন্ড্রিয়ার চেয়ে ২-১ বৎসরের বড়ো হতে পারে। তার দুই মেয়ে নাতি/নাতনি নিয়ে একটু দূরে থাকে ; সাবাতুরে মায়ের সঙ্গে থাকে। ওলগা আমাদের পারিবারিকভাবে অনেক গনিষ্ট বন্ধু; সে আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে ভালোবাসে। সে ৮২-৮৩ বৎসর; কিন্তু প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে শপিং মলে যাবে, এমন কি প্রচন্ড ঠান্ডা আর বরফে ও হাঁটবে এবং আসা যাওয়ার পথে বাসা নক করে কুশল বিনিময় করবে। সে অতিথি পরায়ণ এবং কিছু না কিছু নিয়ে এসে দরজা নক করে দিয়ে যাবে; আমার ছেলেমেয়েরা ওকে খুব পছন্দ করে এবং সে সময় সময় বাসায় এসে ওদের সঙ্গে গল্প করতে পছন্দ করে।

সাবাতুরে হ্যান্ডিম্যান, পেইন্টিং এর কাজ করে। আমাদের দুই পরিবারের সামার গার্ডেন একত্রে এবং গার্ডেনে আসলেই গল্প শুরু হয়। সবজি বাগানে কখন কি করতে হবে, ওলগা পরামর্শ দাতা ।

ওলগার ভাবি এরিকা তার সামনের বাসায় থাকে । তার স্বামী দুরারোগে ভুগে কিছুদিন হয় মারা গিয়েছে; ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনি আমাদের দেশের মতোই আসাযাওয়া ও খোঁজখবর নেয় ।

এ দেশে জয়েন্ট ফ্যামিলি সিস্টেম (system )নেই বললেই চলে। ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা শেষ করে চাকুরী নিয়ে নিজ থেকে আলাদা বাসা নিয়ে যার যার মতো স্বাধীন ভাবে থাকে; সরকার যে পেনশন পয়সা দেয় তা দিয়ে সিনিয়র লোকেরা নিজেরা মোটামোটি চলতে পারে।আমাদের দেশের মতোই ছেলেমেয়ে, আত্মীয় স্বজন উইকেন্ড, ছুটিছাটার দিনে একত্রিত হয়ে খাওয়া দাওয়া, হইচই করে সময় অতিবাহিত করে। যেমন মাবাবার জন্ম দিনে এটাসেটা নিয়ে এসে খেয়েদেয়ে সময় কাটাবে। ছেলেমেয়েরা মাবাবাকে নিয়ে সামারে পিকনিক, নায়াগ্রা ফলস, এখানে সেখানে গিয়ে সময় দেবে ।

কানাডিয়ান ইতালিয়ান লোকদের শিকড় আমাদের দেশের মতো নিজেদের দেশে গিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে থেকে আসবে। এদের সামাজিকতা আমাদের বাঙালিদের মতো এবং এই সুদূর কানাডা থেকে ও নিজেদের দেশে যোগাযোগ রক্ষা করে ।


আমার বাসার পেছন দিকের দরজা খুলে বাগানে বা গ্যারাজের পেছনে গেলেই এন্টোনিও ঘরের জানালা দিয়ে হাত তুলে বা বের হয়ে এসে বলে ” ইসলা হাউ অরে ইউ ? “। ও আমার পুরা নাম উচ্চারণ করতে পারে না। আমি হেঁসে বলি ” ফাইন, হাউ অরে ইউ ? ” এন্টোনিওর বয়স ৮০ র অধিক, একা বাসায় থাকে। স্ত্রী বৃদ্ধজনিত নানাহ জটিল রোগে ভুগছে এবং অনেক দিন থেকে সিনিয়র হোমে রয়েছে। ছেলে ২০ /২৫ মিনিটের (ড্রাইভ) দুরুত্বে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েনিয়ে থাকে। ছেলে ও তার স্ত্রী এবং নাতি/ নাতনি ওকে বাড়ি বিক্রি করে ওদের সঙ্গে গিয়ে থাকতে বলে; কিন্তু সে একা থাকতে পছন্দ করে। সে বলে,” I don’t like to live with them ” ।

আমরা মাবাবা, ভাই বোন নিয়ে একত্রে যৌথ পরিবারে থেকে অভ্যস্থ; কিন্তু এ দেশে যৌথ পরিবারে কেউ থাকতে চায় না। লোকজন কঠোর পরিশ্রম করে বাড়িঘর করে, ব্যাংকে ডলার জমায় এবং অবসর জীবনে আরাম করে সময় কাটায়। এরা আমাদের মতো মেয়ে বিয়ে দেয়া হলো না, মেয়ে জামাইকে বাড়ি দিতে হবে, গাড়ি দিতে হবে, ছেলেদের ভালো শিক্ষা না দিলে ভালো চাকুরী পাবে না; এ সব চিন্তা ভাবনা করে না। ছেলেমেয়ে অ্যাডাল্ট, নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব নেবে, সরকার দায়িত্ব নেবে, টেনশন নেয় না।
অনেকে অবসর জীবনে লেখাপড়া এবং দেশ ভ্রমণ করে সময় পার করে।

সমাপ্ত

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন