নতুন  অভিবাসী বা শরণার্থীদের জন্য কানাডার জীবন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ; কানাডা ব্যস্ত  জীবন, কেউ দিনে, কেউ রাতে কাজ করে বাসা ভাড়া ও রুটি রোজগারের পয়সা রোজগার করে। এখানকার কলকারখানা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এবং লোকজন বিভিন্ন শিফটে কাজ করে।  যে সব লোক রাতে কাজ করে, তাদের দিনে ঘুমাতে হয় এবং যদি স্বামী স্ত্রীর দুইজনই কাজ করে এবং দেখা যায় স্ত্রী দিনে এবং স্বামী রাতে কাজ করেন । যে পরিবারে ছোটছোট ছেলেমেয়ে আছে, ছেলেমেয়েদের দেখাশুনার জন্য খুবই অসুবিধা; মা বা বাবা রাতে কাজ করে দিনে না ঘুমালে  রাতে কিভাবে কাজ করবে? সে  ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের বেবি সিটার অথবা কারো কাছে রাখার ব্যবস্থা করতে হয় ; তাও পয়সা না দিলে কেউ কারো বাচ্চা দেখাশুনা করে না, যে সময় সে অন্যের বাচ্চা দেখাশুনা করবে,সে সময় ম্যাকডোনাল্ড, টিমহর্টন্স বা অন্য কোথায় ও কাজ করলে পয়সা পেতে পারে। কেন সে  ফ্রি কাজ করবে ?

কিছু ব্যক্তিগত জানাশোনা  লোকদের  অতীতের  ঘটনাবলী নিয়ে এই পর্ব লেখা:        

১৯৭১ এর স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে হামিদ ও তিন বন্ধুর এক গ্রুপ  কোনো এক দালালের মাধ্যমে ইন্ডিয়া, ইরান, তুরস্ক হয়ে বহু কষ্ট স্বীকার করে জার্মানি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সর্বমোট তিন মাস  সময় লেগেছে বাংলাদেশ থেকে জার্মানি পৌঁছতে। পথে যেখানে যা সম্ভব  বাস, ট্যাক্সি বা পায়ে হেঁটে, এমন কি এখানে সেখানে লুকিয়ে থেকে নিজেদের জীবন রক্ষা করে দালালের নির্দেশ মেনে আস্তে আস্তে এগিয়েছে। জার্মানিতে যাওয়ার পর তাদের প্রথম সমস্যা দেখা দিলো ওরা জার্মান ভাষা জানে না। বাহিরের লোক যে কোনো দেশে গেলে সে দেশের মাতৃভাষা না জানলে বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয় । ওরা চার জনে যে শরণার্থী ভাতা পেতো তা দিয়ে  এক বাসা ভাড়া নিয়ে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেছে। কাজ পাইতে অনেক কষ্ট; দিনের বেলা ফুল বিক্রি, কারো গাড়ি,বাড়ি পরিষ্কার, মালামাল উঠানামা করে যা পায় তা দিয়ে কোনো রকমে নিজেদের চলা ও কিছু সঞ্চয় করে দেশে মাবাবাকে দেয়ার চেষ্টা করে।  তাদের মাবাবা  ধার দেনা করে দালালকে টাকা দিয়েছে।  নতুন দেশ, এক দিকে ভাষা শিখতে হতো  এবং অপরদিকে কাজের পার্মিট না পেলে কোনো কাজ করা সম্ভব না। এদের চারজনের একজন পড়াশুনায় মাস্টার্স, বাকিরা কলেজে পড়াশুনা করেছে এবং হাতের কোনো  কাজ শিখে আসে নি।   চারজনই এ নিয়ে হিমশিম  খাচ্ছে যে কি করবে ?   কিছুদিন পর, এক  বাঙ্গালীর  মাধ্যমে ওরা রাতে  কাজের ব্যবস্থা করেছে ; তাও কোনোদিন কাজ থাকে, কোনোদিন থাকে না।  এছাড়া কাজ জানা শ্রমিকদের অর্ধেক ও পয়সা দেয় না।

দুই বৎসর জার্মান থাকার পর কারো কাছ থেকে  জানতে পেরেছে যে কানাডা শরণার্থীদের  বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। ওরা কানাডা হাই কমিশন গিয়ে জানতে পারে যে ভেলিড পাসপোর্ট থাকলে টিকেট কেটে   কানাডা এসে এয়ারপোর্টে শরণার্থী দাবি  করা যায়।  

ওদের কার্যকর পাসপোর্ট রয়েছে ,  ১৯৭৩ সনের কোনো এক দিন ৪ জনে টিকেট কেটে কানাডিয়ান এয়ারলাইন্স এর প্লেনে উঠে বসলো।  জার্মান থেকে কানাডা ৮-৯ ঘন্টার জার্নি, এক সময় টরন্টো পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পৌঁছে ইম্মিগ্রাশনে গিয়ে রিপোর্ট করে। ইমিগ্রেশন অনেক ধরণের প্রশ্ন করার পর ওদের ঐদিনের জন্য এয়ারপোর্ট ইম্মিগ্রাশনে রেখে দিয়ে পরদিন পুনরায় অফিসে নিয়ে এসে নিয়মানুযায়ী কাগজপত্র পূরণ করার পর এক হোটেলে পাঠিয়ে দেয়।  শুরু হলো কানাডার নতুন জীবন। 

টরন্টো শহর,সাবওয়ে, রাস্তা চিনতে চিনতে- ই  এক মাস অতিবাহিত হয়েছে।  বিভিন্ন এজেন্সী যারা অস্থায়ী কাজ দিয়ে থাকে,ওদের অফিসে নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়ে অপেক্ষা করে কাজের জন্য, শেষে নিরুপায়  হয়ে এখানে সেখানে ধর্ণা দিয়ে একদিন দুইদিনের ফ্যাক্টরি কাজ শুরু করে।  দুই মাস হোটেলে থাকার পর ওরা এক বাসার বেসমেন্ট ভাড়া নিয়ে উঠে। বরফ আর অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যে এক কিলোমিটার হেঁটে বাস ধরতে হয়; কতবার যে সিমেন্টের মতো শক্ত বরফে পড়ে চোখের চশমা ভেঙ্গেছে এবং মাথায় আঘাত পেয়েছে, একদিন তো পুলিশ রাস্তা থেকে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিত্সা  করিয়ে বাসায় দিয়ে গেছে। প্রতিদিন কাজ থেকে ফেরার পথে বাজার করে ঘরে এসে রান্না ছড়িয়ে দিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে টেলিভশন দেখা বা বাংলাদেশে টেলিফোন করে আপন জনের খোঁজ খবর নেয়া, খেয়ে বিছানায় যাওয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পড়া।  ঘড়িতে অ্যালার্ম দেয়া  থাকে ,ভোর হলে কাজে যেতে হবে বা এজেন্সিকে কল দিতে হবে। 

এই করেই প্রবাস জীবনের ছয়  বৎসর চলে গেলো।  কানাডার বৈধ কাগজ হওয়ার পর চার জন-ই  সিদ্ধান্ত নিলো যে দেশে গিয়ে মাবাবা, আত্মীয়স্বজন কে দেখে  বিয়ে করে  চলে আসবে । এক সময় চার জন দেশে গিয়ে ঘোরাঘোরি করে বিয়ে করে কানাডা এসে যার যার স্ত্রীকে স্পনসর করে দিয়ে অপেক্ষা করে।  দেড় থেকে দুই বৎসর সময়ের মধ্যে ওরা পুরাপুরি স্থির  হয়ে  কানাডার নাগরিকত্ব নিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করা শুরু করে।  এই চার পরিবার কঠোর পরিশ্রম করে  এক সময় টরন্টো এবং আশেপাশের শহরে বাড়ি কিনে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকে।  এ দেশে  বৈধ কাগজ এবং স্থায়ী জব থাকলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ  নিয়ে বাড়ি কেনা কঠিন নয় ; তবে জীবনভর ঋণের কিস্তি দিতেই থাকবে এবং শেষ হবে না।  

কানাডার দীর্ঘদিনের বসতির পর হামিদের পরিবারে  এক সময়  অভ্যন্তরীন কলহ শুরু হয়। হামিদ দেশ থেকে তার স্ত্রী রোকেয়া কে নিয়ে এসে দুইজনে কাজ শুরু করে, এদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে ; প্রথম দিকে ওরা মিলেমিশে দুইজনে কাজ করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সুখেই ছিল।দুইজনে কঠোর পরিশ্রম করে, সপ্তাহান্তে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বন্ধু বান্ধবের  নেমন্তন্য খেয়ে বা এখানে সেখানে ঘোরাঘোরি করে ভালোই সময় কাটতো ।   দেশের বাড়িতে উভয় পরিবারের মাবাবা ও ভাইবোন রয়েছে এবং মাঝেমধ্যে কিছু ডলার  দিয়ে সাহায্য করা স্বাভাবিক  ব্যাপার।  দুই/তিন বৎসর পর পর ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেশে গিয়ে মাবাবা, আত্মীয়স্বজনকে দেখে আসা এবং টুকটাক এটা সেটা কিনে নিয়ে যাওয়া; দেশ থেকে ঘুরে এসে ব্যাঙ্ক লোন পরিশোধ করা কঠিন কাজ, তবে যত অসুবিধাই হোক, দুইজনের মনের মিল ছিল।     

রোকেয়ার ইচ্ছা তার মা এবং বোনকে স্পনসর করে নিয়ে আসা।  হামিদের ও দেশে মাবাবা এবং ভাইবোন রয়েছে; রোকেয়ার সঙ্গে এ নিয়ে হামিদ কোনো সংঘাত করতে চায় না। রোকেয়ার ইচ্ছানুসারে  শাশুড়ি এবং শ্যালিকা স্পনসর করে এক সময় কানাডা নিয়ে আসে। সব মিলিয়ে ৬ জনের সংসার,নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা।  

দেশ থেকে হামিদের উপর চাপ,”তুমি তোমার শাশুড়ি  এবং শ্যালিকা কে স্পনসর করে কানাডা নিয়ে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছো,তুমি আমাদের কাউকে নাওনি, তাছাড়া  আজকাল টাকা পয়সাও পাঠাও না। ” আমাদের সংসারে অভাব, তোমার বিদেশ যাওয়া খরচ দিতে জমি বিক্রি করতে হয়েছে, তুমি টাকাপয়সা দেয়া দূরে থাকে,আমাদের খোঁজখবর ও নাও না।“    

সংসারে লোকজন এবং খরচ বেড়েছে।  হামিদ কি  করবে ? মাবাবার অভিযোগ ঠিক, রোকেয়া মেজাজি, হামিদ এ নিয়ে কোনোরকম সংঘাত করতে চায় না।৮ ঘন্টা ফ্যাক্টরি কাজ ছেড়ে দিয়ে রাতে ১২ ঘন্টা ট্যাক্সি চালানো শুরু করে কিছু বাড়তি আয়ের জন্য। রোকেয়া দিনের বেলা কাজ করে, হামিদ সারারাত জেগে রাস্তায় ট্যাক্সি চালায়,আজকাল দুইজনের মধ্যে কথাবার্তা বা দেখাসাক্ষাৎ বড়ো একটা হয় না। হামিদ সকাল ৭টার মধ্যে ঘরে ফিরে ,ততক্ষনে রোকেয়া কাজে চলে যায় এবং বিকেল ৬টার দিকে হামিদ ট্যাক্সি নিয়ে বের হয় , দুইজনের মধ্যে আজকাল স্বল্প সময়ের দেখা সাক্ষাৎ হলেও  কথাবার্তা হয় না। শাশুড়ি ও শ্যালিকা ঘরে থাকলে ও রান্নাবাড়া করে না, সারাদিন টেলিভশন এ বাংলা প্রোগ্রাম,গান ,নাটক ও সিনেমা  নিয়ে ব্যস্ত।  আগের দিনের বাসি খাবার  যা পায় খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।  ছোটছোট ছেলেমেয়েরা এসে বিরক্ত করে , হামিদ ঘুমাতে কষ্ট হয়।    

হামিদের নতুন সমস্যা  তার স্ত্রী রোকেয়াকে নিয়ে, কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি , রোজগারের পয়সা নিয়ে দুইজনের মধ্যেই টুকটাক লেগে  থাকে। হামিদ স্ত্রী রোকেয়ার মা ও বোনকে দেশ থেকে স্পনসর করে নিয়ে এসেছে।  কিন্তু তার নিজের মাবাবা  ভাইবোন  এ নিয়ে অসন্তুষ্ট।  নিত্য কিছু না কিছু নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।  শাশুড়ি ও শ্যালিকা রোকেয়ার পক্ষ টেনে কথা বলে।  

কিছু বলতে গেলে রোকেয়া ও তার শাশুড়ি এবং শ্যালিকা তেড়ে এসে তর্ক শুরু করে।   একদিন ঝগড়া চরমে পৌঁছে এবং সহ্য করতে না পেরে হামিদ চিৎকার শুরু করে।  রোকেয়া সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কল দিলে পুলিশ এসে হামিদকে ধরে নিয়ে যায়। অবশেষে ওরা কোর্টের মাধ্যমে আলাদা হওয়ার জন্য দুইজনই আইনজীবী নিয়োগ করে।  

এ দেশে আমাদের দেশের মতো হুট্ করে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় না।  এখানে কোর্টে গেলে দুই থেকে চার বৎসর কেস গড়াতে থাকে।  তাছাড়া  তাদের সংসারী জীবনে যা যা বাড়ি, গাড়ি, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স , এ দেশে  ও নিজের দেশে যা কিছু করেছে  তার কাগজপত্র কোর্টে জমা দিতে হয়।  শুধু কি তাই ? যদি ১৮ বৎসরের নিচে ছেলেমেয়ে থাকে  তার দেখা শুনার দায়িত্ত্ব কে নেবে ? তাছাড়া এদের খাওয়াদাওয়া, দেখাশুনা এবং পড়াশুনার দায়িত্ব ,  চুলচেরা হিসাব কোর্ট থেকে বেঁধে দেবে এবং উভয়কে মেনে চলতে হবে। যদি স্ত্রী ছেলেমেয়েদের থাকা ও ভরণপোষণ করানোর দায়িত্ত্ব পায়, স্বামীর কাজের থেকে প্রতিমাসে ডলার কেটে স্ত্রীর একাউন্টে পাঠিয়ে দিয়ে থাকে।  অবশেষে  হামিদ  ও রোকেয়া তাদের দীর্ঘদিনের সংসার ভেঙ্গে বাড়ি বিক্রি করে ভাগাভাগি করে দুইজনে আলাদা আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে উঠেছে।  

আমাদের দেশে বিয়ের পাঁচ বৎসরের মধ্যে যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা না হয়, তবে স্বাধারণতঃ বিয়ে টিকে যায়।  কিন্তু এ দেশে অনেকদিন একত্রে থাকার পর ও বিয়ে ভেঙ্গে যায় ; দেখা যায় ছেলেমেয়েরা কলেজ/ইউনিভার্সিটি তে পড়াশুনা করে, মাবাবা আলাদা আলাদা থাকে এবং ছেলেমেয়েরা সাধারণত মায়ের সঙ্গে থাকে। আমাদের দেশ থেকে বা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বহু পরিবার আলাদা হয়ে যায়, এ গুলি দুঃখ জনক ।  

এখানে কঠোর জীবন,স্বামীস্ত্রী  দুইজনই কাজ করে এত ক্লান্ত থাকে,কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না ; একটু কথাকাটাকাটি হলেই বলে ” I hate  you ” ; স্ত্রী ফোন উঠিয়ে পুলিশ কল দিয়ে কেবল বললেই হলো “আমার স্বামী আমাকে assault  করেছে ” সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে হাত কড়া লাগিয়ে নিয়ে যাবে। এখানে বহু বাংলাদেশী, ইন্ডিয়া,পাকিস্তান বা অন্য দেশের পরিবার বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে  আলাদা আলাদা থাকে , ছেলেমেয়েরা সাধারণতঃ মায়ের সঙ্গে থাকে, ফলে বয়স্ক মাবাবার  আর বিয়ে হয় না বা হলে ও স্থায়ী হয়  না।  

অন্যান্য দেশের মতো, কানাডায় বিবাহবিচ্ছেদের হার কম নয় এবং এই হার প্রায় ৩৮%শতাংশ । 

যদিও সঠিক কারণটি ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়, কারণ প্রতিটি দম্পতি একে অপরের থেকে আলাদা। যাই হোক, দম্পতিরা কেন এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিতে ঝোঁক অনুসরণ করে কিছু সাধারণ প্রচলিত কারণ রয়েছে।

অর্থ : 

এটি অবশ্যই একটি দম্পতির  পিছনে প্রধান কারণ। প্রকৃতপক্ষে, প্রায় সমস্ত পরিসংখ্যান এ দেখায় যে মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণে অভাব দম্পতিদের মধ্যে একটি বিশাল দ্বন্দ্বের দিকে পরিচালিত করে। কানাডা একটা উদ্বাস্তু দেশ (রেফিউজি কান্ট্রি), এখানে আসার পর কেউ-ই সহজে নিজেদের ফিল্ডে কাজ পায় না।  অনেকে মনে করে কানাডা গেলে রাতারাতি রোজগার করে কতকিছু করে ফেলবো ? এখানে দুইজনে কাজ করলে, একজনের পয়সা বাড়িভাড়ার পেছনে এবং অপরজনের পয়সা দিয়ে কোনোরকমে ডালভাত খেয়ে বাঁচা যায়।  পয়সা সংরক্ষণ  করতে হলে অতিরিক্ত পার্টটাইম  কাজ করতে হয়।  তাছাড়া দেশে ফেলে আসা দুই পক্ষের পরিবারের অভাবের চাহিদা মিটাতে গেলে কোনোরকমে সংসার চলে  ; এ নিয়ে সংসারে নিত্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে যা সমাধান করা কঠিন। 

অন্তহীন লড়াই: 

স্বামী স্ত্রী   যতই একে অপরকে ভালোবাসুন না কেন, যদি  দুজনেই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে একে অপরের সাথে ঝগড়া করেন তবে এটি বন্ধনের একটি লাল সংকেত হিসাবে বিবেচনা করুন। দুইজন-ই কঠোর কাজ করে কোনো রকমে একটা সংসার দাঁড় করায়  ; এখানে কাজের কোনো নিশ্চয়তা বা সন্তুষ্টি  থাকে না।  দুইজন-ই ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে , বাজার করা,ঘর গুছানো,রান্না করা, থালা বাসন পরিষ্কার করা, লন্ড্রি আরো ও কত কি কাজ থাকে যা  দুজনে একে অপরকে সহযোগিতা না করলে সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের দেখাশুনা এ সব নিয়ে ও টুকটাক ঝগড়া অনেক পরিবারে লেগেই থাকে।   

আপত্তিকর সম্পর্ক:

এটি মৌখিক বা শারীরিক যাই হোক না কেন – এটি স্বামী স্ত্রীর জন্য আরও একটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জিনিস,  এ দেশে আপন লোকজন কদাচিৎ পাওয়া যায়, কাজেই বন্ধু/বান্ধব নিয়ে সবাই সপ্তাহান্তে বা ছুটিছাটার দিনে কিছুটা সময় দিয়ে থাকে।  তাছাড়া ছেলেমেয়েদের জন্য নিজস্ব গন্ডির ছেলেমেয়েদের উঠাবসা হয়ে থাকে।  এই সম্পর্ক যদি পূতপবিত্র না হয়, সে ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।  অনেক পরিবারে এ নিয়ে মনোমালিন্য থেকে শুরু করে  চোখের দেখাদেখি ও শেষ পর্যন্ত হয় না  ।  

বাংলাদেশে ও আজকাল অহরহ বিবাহবিচ্ছেদ ঘটছে ; তার কিছু কারণ এখানে দেয়া গেলো : 

যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন : আমাদের দেশে যদিও আইন করে এই প্রথা উঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ;মূলতঃ আজ ও এই প্রথা উঠে নি।  আজকাল তো সমস্যা আরও বেশি, বরকে    বিদেশে পাঠানোর জন্য টাকা দিতে হবে ,না দিলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো আছেই।   

চাপের মুখে বিবাহিত : অনেক ছেলেমেয়েরাই হাঁসতে হাঁসতে প্রেম করতে গিয়ে শেষে বিপদে পড়ে ; শেষ পর্যন্ত বিয়ে টিকে থাকে না বা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী নির্যাতিত হতে হয়।  

সমাপ্ত

১ মন্তব্য

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন