ফ্লোরিডা থেকে:-

আকবর বাদশা তার সাথে কৌটা ভরা ঔষধ রাখতো, ছোট ছোট সাদা সাদা পিল্। হাতের মুঠোয় অনেক গুলো নিয়ে সে মুড়ির মত গিলে ফেলত পানি ছাড়াই । আমি বেকুব বোধ করে প্রশ্ন করতাম ,”তুমি কিসের এত ঔষধ খাও ?”
ও বলতো ,”আমার একটা খারাপ অসুখ আছে (তোমাকে বলা যাবেনা ), ডাক্তার এই ঔষধ দিয়েছে।”
আমি জানতাম ও রাতের পর রাত সারা রাত জেগে থাকতে পারতো , তারপর দিনের পর দিন শীত কালীন ভাল্লুকের মত ঘুমাতো। আমার মত গরীব ঘরের ছেলের এমন ভাল্লুক রোগ মানাতো না , তাই রাত হলেই আমার ঘুম পেয়ে যেত আর মোরগ ডাকলেই ঘুম যেত চলে।

আমি সত্যিই বুদ্ধিমান ছিলাম কিন্তু তারচেয়েও আমি ছিলাম বেশী বিশ্বাসপ্রবন। বুদ্ধি ও বিশ্বাস পাশাপাশি যায়নি কোন কালে, আমার কালে ছাড়া । আমার কাছের বন্ধু আমার প্রশ্নের যে উত্তরটি দেবে আমি তা বিশ্বাস করবোনা কেন?

ঔষধ খাবার মিনিট ১৫ পরে আমি ওর ভেতরে কিছু অস্বাভাবিক ব্যবহার লক্ষ্য করতাম। এর আগে কখনও এধরণের ব্যবহারের সাথে আমি পরিচিত ছিলামনা , সুতরাং আমি জানতামনা সেটা কি ? বুঝতে পারতাম , কি যেন ঠিক নয় , কেমন যেন এবনর্মাল , আত্মসংযমহীন , অপরিচ্ছন্ন একটা অবস্থা , আমার ওকে কেমন অপরিচিত মনে হতো। অথচ ও ছিল আমার বন্ধু, খুব কাছের
এবং খুব দূরের……
অই দূরত্বটা আমি কোনদিন পরিমাপ করতে সক্ষম হইনি।

ওকে প্রশ্ন করেছিলাম, ” ঔষধ খাবার পরে তুমি কেমন যেন বদলে যাও, তোমার ব্যবহার অসংযমী হয়ে ওঠে, কেন?”

ও বলেছিল, ” সব ঔষধেরই কোন না কোন সাইড এফেক্ট থাকে , এটা আমার ঔষধের সাইড এফেক্ট, ডাক্তার আমাকে তাই বলেছে”
আমি তখন ডাক্তার ছিলামনা , এখন ডাক্তার ,এখন কত সহজে কত কিছু বুঝে ফেলি অথচ তখন আমার বন্ধুকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ ছিলনা।

অসম্ভব বড় একটা হৃদয় ছিল ওর অসম্ভব প্রশস্থ এক বুকে এবং খুব সহজে আপন করে নিতে পারতো। একবার আমি বুলবুলকে নিয়ে গিয়েছিলাম ওর কাছে, তখনও বুলবুল ওর অপরিচিত। কি নিয়ে কথা বলতে বলতে বুলবুল বললো সে চমচম পছন্দ করে। আকবর বাদশা উধাও । আধঘন্টা পরে সাইকেল চালিয়ে ২ কেজি চমচম নিয়ে উপস্থিত। বিষয়টি আসলে বড় কিছু নয়, ও যেটা না করলেও পারতো, তাই করেছে বন্ধুকে খুশী করার জন্য।

একবার রাস্তায় জন কয়েক বীর একজন কাপুরুষকে মারধোর করছিল , ও দাঁড়ালো যেয়ে শক্ত দেয়ালের মত । একা তিনজনের এট্যাক ফিরিয়ে রক্ষা করলো সেই একজন নির্যাতিতকে যে ছিল ওর সম্পূর্ণ অপরিচিত ।

ওর কিছু বড় লোকের মেয়ে বন্ধু ছিল। আমি গরীবের ছেলে, বড় লোকের মেয়েরা সচরাচর কোন প্রজাতির হয় আমার তা ছিল অজানা। যদিও বয়েসটাই ছিল এমন যে রাতে চোখ বুজলেই কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে হেসে কথা বলতো, চোখের ঝিলিকে করতো আলোকিত,এমনকি রোমাঞ্চকর ভাবে হাতে হাত ধরে হাঁটতো নিরবচ্ছিন্ন নিবিডতায়
কিন্তু দিনের আলোয় তো মেয়েদের তখন ভয়ই পেতাম ।
আর একজন তখন আমাকে দিনে রাতে সব সময় চোয়াল উচিয়ে হাঙরের মত তাড়া করতোই।
ছিল সে হাঙর , আমি বলতাম নদী। ভালো ছেলেদের মাঝে মাঝে সেই যুগে এমন ভুল হত। হাঙর ও নদীর তফাত চোখে পড়তোনা।
আমি ছিলাম ভালো ছেলে, তাই হাঙরকে নদী মনে হতো ।

চলবে

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন