রহিম সাহেব (ছদ্দ নাম) বাংলাদেশে একটা ইন্টারন্যাশনাল সংস্থায় জব করতেন। এখানে এসে so called কানাডিয়ান অভিজ্ঞতার গুরুত্ব বুঝতে পেরে শুধুমাত্র resume তে উল্লেখ করার জন্য একটা এজেন্সিতে ভলান্টিয়ার জব করছিল। হঠাৎ একদিন মেসেজ পেলো যে একটা ইউনিভার্সিটি তে রিসারচ এর জন্য কিছু লোক নেবে। তারা এমন কাউকে খুজছিল যারা অন্তত একটা সাউথ এশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ এ কথা বলতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। সাউথ এশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ এবং networking/communication এর কারনে সে জবটা পেয়ে যায়। জবটা অনেক ভাল ছিল কারন ভাল প্রতিষ্ঠান এবং কানাডা এর অভিজ্ঞতা অর্জন, ফলে তার আর ফিরে তাকাতে হয় নাই। আমার জানামতে এমন অনেকে আছে যারা শুধুমাত্র আরেকটা ল্যাঙ্গুয়েজ জানার কারনে এখানে সহজে জব পেয়েছে, তবে বিভিন্ন Resourceful ব্যক্তিদের সাহায্য ও সহযোগিতা তো ছিলই। আবার অনেকে মনে করে এর জন্য ভাগ্য ভালো থাকারও দরকার আছে।

আলাদা ভাষা জানা যে কি উপকারী তা আমরা সবাই জানি, বিশেষ করে কানাডা তে। আমার জানামতে অনেকে এখানে তাদের কাজ পেতে সুবিধা হয়েছে কারণ তারা ইংলিশ ছাড়া আরেকটা ভাষা জানে। বাস্তবিকে social service field (আমি এই field এ কাজ করি তাই জানি) আরেকটা ভাষা জানা একটা অতিরিক্ত সুবিধা হিসাবে কাজ করে, এটা আমি মনে করি অনেক জবই সুবিধা হিসাবে কাজ করে। তারপরও আমরা অনেকে বাচ্চাদের আরেকটা ভাষা শেখাতে অনীহা প্রকাশ করি। আমরা মনে করি বাংলা ভাষা শিখলে হয়ত আর ভালভাবে ইংলিশ বলতে পারবেনা। এখানে ভালো ইংলিশ বলতে না পারলে ভাল ফিউচার হবেনা। বিষয়টি বরঞ্চ উল্টো। কয়েকদিন আগে একটা নিউজ এ পড়লাম, তারা Research করে জানতে পেরেছে যে বাচ্চাগুলো একটার বেশি ভাষা জানে তারা তাদের তুলনায় যারা শুধুমাত্র একটা ভাষা জানে অনেক ভাল করে। বিষয়টি একজন মনোবিজ্ঞানী হিসাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মনোবিজ্ঞানীরা বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের বিকাশ বিষয়ে অনেক গবেষণা করেন। অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন একটা বাচ্চার প্রথম ৫ বছর এ যে বিকাশ ঘটে তা তার সারাজীবন ধরে চলতে থাকে। অর্থাৎ বাচ্চাদের প্রথম ৫ বছর টাকে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ এর জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে। ভাষা কিভাবে বাচ্চাদের উপকার করে তা নিয়ে অনেক Research হয়েছে এবং তা প্রমানিত।

কেন তাহলে আমাদের অনিহা, তা বর্ণনা করলে দাড়ায় অভিবাসিদের identity crisis ই আসবে এখানে। অভিবাসিরা যখন এখানে এসে তাদের প্রত্যাশা মতো ক্যারিয়ার করতে পারেনা তখন তারা তাদের এই এক্সপেকটেশন চেতন বা অবচেতন মনে বাচ্চাদের উপর চাপিয়ে দেয়। অনেকে এটাকে defense mechanism হিসাবে নেয়। আমরা অনেকেই mainstream culture এর সাথে নিজেকে মনে করে শান্তি পাই। এটাতে খারাপ কিছু নাই। অনেকে মনে করে আমি যেটা পারিনাই আমার ছেলে মেয়েরা যেন সেটা পুরন করতে পারে। এটা অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাদের উপর অনেক চাপ হয়ে যায়। আমি গবেষণা করার সময় অনেক সাউথ এশিয়ান বেশিরভাগ বাংলাদেশী ছেলেদের (১৮-২৫) এই বিষয়টা সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছিল বিভিন্ন Focus Group Discussion এ। তারা অনেকে মনে করে তাদের পিতা মাতার এই এক্সপেকটেশন তাদের মানসিক বিকাশে বাঁধা প্রদান করে। তারা মনে করে এমনিতেই তারা এই বয়সে অনেক ঝামেলার মধ্যে যায়, আবার এর সাথে যুক্ত হয় পিতামাতার অজাচিত এক্সপেকটেশন। এখানে অজাচিত এক্সপেকটেশন বলার কারন আমরা যখন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এর কথা চিন্তা না করে চাপিয়ে দিই, অথবা অদের এই সময়ে যে সাপোর্ট পাওয়ার দরকার ছিল তা পায়না, অথবা আপনি যেভাবে তাদের সাথে communication করার দরকার ছিল সেভাবে করতে পারেন না, কারন আপনার ব্যস্ততা অথবা অন্য কারনে। তবে আমাদের পিতামাতার যে একটা মানসিক দ্বন্দ্ব কাজ করে দুই দেশের culture এবং পলিসিগত ভিন্নতার কারনে তা অস্বীকার করা যায় না। ছেলে মেয়েদের কি ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা আরেকদিন আলোচনা করবো। তবে এটা যে সবার বা সব ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রে হয় তা কিন্তু নয়। অনেক সময় দেখা গেছে আমাদের অভিবাসিদের ছেলে মেয়েরা এখানকার তথাকথিত কানাডা এর ছেলে মেয়েদের তুলনায় ভাল করে।

তাহলে আপনি কি করবেন, আমি তো মনে করি অবশ্যই বাচ্চাদের আরেকটা ভাষা জানাতে উৎসাহিত করবেন। কানাডা এর মত দেশে যেটা অনেকের জন্য সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করবে। আমি অনেক সাদা লোকের আরেকটা ভাষা না জানার আপসোস শুনেছি। আবার এশিয়ানদের তো একটা আশা থাকে যে আমার ছেলে মেয়েরা আমরা বুড়া হলে কিংবা আমাদের পরিবারের সাথে একটা বন্ধন যুক্ত থাকবে যা একমাত্র মাতৃভাষাই দিতে পারে। আমাদের training এ একটা homework ছিল ছেলেদের জন্য। বিষয়টি এমন যে আমরা তাদের বলেছিলাম তোমরা যখন বাসায় যাবে তখন যে কোন একটা কাজ mindfully করবে। Mindfully মানে পুরো মনোযোগ দিয়ে (৩-৫ মিনিট) যে কোন একটা কাজ। বেশির ভাগই শেয়ার করেছিল তাদের ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে। অনেকে শেয়ার করেছিল যে আমার বাবার চুলগুলো যে সব পেকে গেছে তা কোনদিন খেয়াল করা হয়নি, যখন আমি আমার বাবাকে আজকে mindfully অবলোকন করলাম কিছুক্ষণ, তখন বুঝতে পারলাম আমার বাবা বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, উনি প্রতিনিয়ত আমাদের জন্য কত সংগ্রাম করে যাচ্ছে অথচ কখনও mindfully বসে একে অপরের সুখ দুঃখ শেয়ার করা হয়নি। আপনার ক্যারিয়ার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আপনি যদি আপনার পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তাহলে ছেলে মেয়েদের সাথে quality সময় অতিবাহিত করবেন আপনার ব্যস্ত জীবনের সময় থেকে। অবশ্য আপনার যদি পরিবার গুরুত্বপূর্ণ না হয় তাহলে কোন কথা নাই, কারন আমাদের একেক জনের কাছে একেক জিনিষের গুরুত্ব বেশি…।

বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটার একক কোন উত্তর নাই, ব্যক্তি ভেদে আলাদা আলাদা হতে পারে, আপনাদের মতামত পেলে আরও ভাল লাগবে।

চলবে…………………………

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন