ফেডারেল ইলেক্শন একদম নাকের ডগায় – সেপ্টেম্বরের বিশ তারিখ। শুরু হয়ে গেছে সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার প্রচারণা, রাজনৈতিক ইশতেহারও ঘোষণা করেছে সব দলগুলো।
বিশ্ব মহামারীর এই সংকটময় মুহূর্তে কানাডার হঠাৎ নির্বাচনের পাশাপাশি আচমকা যুক্ত হয়েছে আফগান রেফিউজি সংকট। আফগানিস্তানে তালিবান শাসকদের প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে ট্রুডো সরকার ইতোমধ্যেই বিশহাজার আফগান রেফুজিদের কানাডায় নিয়ে এসে তাদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়েছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিনে ৩৭০০ আফগানদেরকে কানাডা বিমানযোগে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে আরো আফগান শরণার্থী নিয়ে আসার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

কানাডার এইরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশটির ইমিগ্রেশন পলিসি ফেডারেল নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কানাডা দিন দিন অভিবাসীদের উপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই কম, উপরন্তু বয়স্ক লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে অনেক বেশি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী দরকার হয়ে পড়েছে। বিশাল বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারকে স্বাস্থ্য খাতে অনেক অনেক খরচ করতে হচ্ছে। কারণ আপনারা জানেন কানাডার স্বাস্থ্য খাতের সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করে। আর সরকারের এই অর্থের যোগান হয় জনগণের দেয়া ট্যাক্স থেকে। করোনা মোকাবিলায় এবং দেশটির অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে ডাবল ভ্যাকসিনেটেড করার ব্যাপারে কানাডার সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্ব মহামারীর সময়ে কানাডার লং টার্ম কেয়ার হোম গুলোতে যে পরিমান প্রাণ হানি ঘটেছে এবং সেখানে জনবলের যে কত অভাব তা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব মহামারীর সময়ে কানাডিয়ানদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালানোর জন্য কানাডায় জনবলের যে কি অপ্রতুলতা তা ভীষণ প্রকট ভাবে ধরা পড়েছে। আর তাই কানাডা প্রতি বছর কমপক্ষে চার লক্ষ দশ হাজার নতুন ইমিগ্রান্ট আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করেছে। কানাডার ইতিহাসে এযাবতকালের সবচেয়ে বেশি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এটি। একমাত্র ১৯১৩ সালে কানাডাতে ৪ লাখ ১ হাজার ইমিগ্রেন্ট আনা হয়। । কানাডিয়ানদের স্বাস্থ্য সেবা সহ ইনফরমেশন টেকনোলজি, ফুড সেক্টর, এগ্রোফুড এবং ফার্মিং সহ অন্য সব ক্ষেত্রেই কভিড -১৯ এর ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে কানাডার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, নতুন জব সৃষ্টির জন্য বেশি বেশি সংখ্যায় ইমিগ্রান্ট আনা ছাড়া কোনো উপায়ই নেই।

মহামারী পরবর্তী কানাডার চলমান ইমিগ্র্যাশন প্রক্রিয়াকে আরো বেশি ফলপ্রসূ করার জন্য নতুন ইমিগ্রান্টদের চাকরি পাওয়া এবং সেটেলমেন্ট এর জন্য বিশেষ সহযোগিতা করতে হবে- ইমিগ্র্যাশন এন্ড রেফিউজি কাউন্সিল,সেটেলমেন্ট অর্গানাইজেশন, গবেষক, ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মিউনিসিপাল, প্রভিন্সিয়াল এবং ফেডারেল গভমেন্ট এসব ব্যাপারে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নারী, শিশু এবং রেফুজিদের জন্য আরো অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা তৈরী হওয়া দরকার। বিসনেস ইমিগ্র্যাশন ঢেলে সাজানো দরকার- দুই হাজার চৌদ্দ সালের পরে কোনো আধুনিক বিসনেস ইমিগ্র্যাশন প্রক্রিয়া না থাকায় এবং কুইবেক ইনভেস্টর প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় , ফেডারেল স্টার্ট আপ ভিসা বা বিসনেস এন্ট্রেপ্রেনিউর ভিসার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কানাডা অনেক বিসনেস ইমিগ্রান্টদের হারাচ্ছে। এক্সপ্রেস এন্ট্রি তে পিএনপির মতো ইন্ডাস্ট্রি এন্ড অকুপেশন স্পেসিফিক ড্র হতে পারে। স্পাউসল এন্ড ফ্যামিলি স্পনসরশিপ প্রক্রিয়াকে তরান্নিত করা প্রয়োজন, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এবং টেম্পোরারি ফরেন ওয়ার্কারদের ভিসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা জরুরী। বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগান রেফুজিদের নিয়ে আসার এবং পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

কানাডার ইমিগ্র্যাশন সিস্টেম প্রতিনিয়ত আধুনিক এবং পরিবর্তিত হচ্ছে। এক্সপ্রেস এন্ট্রি এবং মাল্টিইয়ার ইমিগ্র্যাশন প্রক্রিয়া চালু করে কানাডা বেশি সংখ্যক ইমিগ্রান্ট আনার সদিচ্ছারই প্রমাণ রেখেছে। বিশ্ব মহামারীর এই সংকটকালে কানাডা যেভাবে তাদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া চালু রেখেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
কানাডিয়ান ভিসা এবং ইমিগ্র্যাশন সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে বা যে কোনো ধরণের ভিসা এবং ইমিগ্র্যাশন প্রসেসিং এর জন্য আমাকে ইমেইল করুন। বাংলাদেশ যাতে স্টুডেন্ট ডাইরেক্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে সহজেই কানাডা আসতে পারে সেজন্য আমরা কানাডা থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাঁরা বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা, এক্সপ্রেস এন্ট্রি বা পিএনপি , ভিসিট ভিসা, ফ্যামিলি স্পনসরশিপ, বিসনেস ইমিগ্রান্ট, এডোপশন, রেফিউজি ক্লেম মসজিদ, মন্দির , গীর্জা সহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিভিন্ন পদে কাজ করার জন্য, কেয়ারগিভার সহ আরো বিভিন্ন বৈধ পন্থায় কানাডা আসতে চান তাঁরা আজি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বিভিন্ন এজেন্সীর ধোঁকাবাজির শিকার হবেন না, কানাডা আসার জন্য নিজেদের তৈরী করুন, সহজ পথে আইএল্টস ছাড়া, জব অফার নিয়ে কানাডা আসার সহজ পথ না ধরে সঠিক পথে কানাডিয়ান লাইসেন্সড বৈধ রিপ্রেসেন্টেটিভের মাধ্যমে কানাডা আসুন।
ভালো থাকুন সবাই, ভালো রাখুন সবাইকে। ধন্যবাদ সবাইকে লেখাটি পড়ার জন্য।

(লেখিকা , মাহমুদা নাসরিনপ্রিন্সিপাল কনসালট্যান্ট, ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস  , ২০৫/৩০৯৮ ড্যানফোর্থ এভেনিউ, টরেন্টোশিক্ষক সমাজকর্মী। সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কিং খালেদ বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব। [email protected])

১ মন্তব্য

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন