গতকাল আমাদের Ontario প্রদেশের প্রিমিয়ার Doug Ford এর জনগনের উদ্দেশ্যে দেওয়া রেগুলার আপডেট শুনছিলাম। তার নিজের ৯৫ বছর বয়োসী শাশুড়ি কোরোনা আক্রান্ত। Honestly Speaking, আমি কিছু আদর্শিক পার্থক্যের কারণে ভদ্রলোককে ভোট দেয়নি। কিন্তু কালকে তার কথাগুলি শুনে আমি অনেক সন্তুষ্ট। একটি দেশে গণতন্ত্র এবং সহনশীল রাজনীতি থাকলে এমনই হয়।
যারা জানেন না। উনি এখানকার কনসারভেটিভ পাটির নেতা এবং Ontario প্রদেশের প্রিমিয়ার। আর আমাদের ফেডারেল নেতা অর্থাৎ Justin Trudeau হলো আমাদের সারা কানাডার প্রধানমন্ত্রী। আমাদের ফেডারেল নির্বাচনের আগে Mr. Trudeau প্রকাশ্যে Doug Ford এর রাজনৈতিক নীতির সমালোচনা করেছেন, এবং বলতে গেলে এই Ontario প্রদেশই Trudeauর মাইনোরিটি সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে।
আমাদের এই প্রভিন্সের Long Term Care Home গুলি আমাদের স্বাস্থসেবার অন্নান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক ভঙ্গুর ছিল, যার কারণে কোরোনার প্রকোপ এই সমস্ত Long Term Care Home গুলিতে বেশি। এবং এটি সরকারের এক ধরণের ব্যার্থতা, এবং সেটি Doug Ford এবং Justin Trudeau দুজনেই স্বীকার করেছেন, এবং করোনা-উত্তর কালে এই খাতের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আমি নিজে এই সমস্ত Long Term Care Home গুলির অবস্থার কথা জানি, কারণ অনেক সময় অনেক ক্লায়েন্টকে ওখানে রেফার করতে হয়েছে। কালকে তার ভাষণে Doug Ford এই সিস্টেম broken এবং বর্তমান ক্রাইসিস সামলানোর পরে এটাকে ঠিক করবেন বলেছেন। কিন্তু একটি বারও বলেননি যে আমার পূর্ববর্তী লিবারেল সরকার একযুগ ধরে ক্ষমতায় থেকেও এই Long Term Care Home গুলির কোনো ভালো ব্যাবস্থা করে যায়নি, অথবা তারাই এগুলির এই ভঙ্গুর অবস্থার জন্য দায়ী। এবং এই Long Term Care Home গুলির ভঙ্গুর অবস্থার জন্য বিগত লিবারেল সরকার যে অনেকটা দায়ী সেটা অস্বীকার করা যাবে না। যাহোক আমার বক্তব্যের বিষয় সেটা না।
আমি বলতে চাচ্ছি সহনশীল রাজনীতিটা কি তা পৃথিবীর অনেক দেশের এখান থেকে শেখার আছে। Doug Ford বিগত লিবারেল সরকারের কঠোর সমালোচক এবং প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও বর্তমানে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে তার বিরোধী দলের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এটাই কি হওয়া উচিত না। উনি যে ধোঁয়া তুলসী পাতা সেটি বলছি না, বলতে চাচ্ছি একটি দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকলে এমনিই হয়, জাতির বিপদে এক অপরের দোষারোপ বা বদনাম না করে দলমত নির্বিশেষে কাজ করে যান।
অনেকগুলির মধ্যে, বিশেষভাবে আমি দুইটি ব্যাপারে আমার দ্বিতীয় দেশ কানাডাতে গর্ববোধ করি। এক নম্বর হলো একটি প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি এবং আইনের শাসনের দেশের নাগরিক হিসাবে এবং দুই নম্বর হলো এখানকার একজন গর্বিত ট্যাক্সপেয়ার হিসাবে। যখন নিজের কষ্টের কামানো বেতনের থেকে হাজার হাজর ডলার ট্যাক্সে চলে যায়, এবং জিনিসপত্র কিনতে গেলেও ট্যাক্স দিতে হয় তখন খারাপ কিছুটা লাগে বটে কিন্তু যখন দেখি সেই ট্যাক্সের টাকার যথাযত ব্যবহার হচ্ছে তখন খুব ভালো লাগে। যেমন ধরুন ওই ট্যাক্সের টাকা দিয়েই আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে, বিনা মূল্যে স্বাস্থ চিকিৎসা, চাকরিহীনদের সোশ্যাল এসিস্টেন্স, নিম্ন বেতনের পরিবারের বাড়ি ভাড়া এবং চাইল্ড ট্যাক্স বেনেফিট ইত্যাদি দেওয়া হয়। এবং বিশেষ করে বর্তমান দুর্যোগকালীনজাতীয় সময়ে জনগণকে বিশেষভাবে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। এগুলি দেখলে মন ভোরে যায়। মুসলমানের যাকাত পদ্ধতিতেতো এটাই বলা হয়েছে, যাদের আছে তারা বিপদে পড়া মানুষদের সাহায্য করবে, যদিও কয়টি মুসলমান দেশ সেটি করে জানিনা।
কোরোনার কারণে আমার বৌয়ের ক্যাজুয়াল চাকরিটি বন্ধ, কিন্তু এক্ষত্রে আমার চাকরি চলছে এবং বেতন আসছে তাই সে কিছুই পাচ্ছে না। যাহোক, এতে কিছুটা অসুবিধা হলেও আল্লাহর কাছে লাখ শোকর যে আমার অর্গানাইজেশন জরুরি স্বাস্থসেবা হিসাবে গণ্য হওয়াতে আমার চাকরি এখনও লে অফ হয়নি। অসুবিধা কিছুটা হলেও ভালো লাগছে এই ভেবে যে আমাদের মতো হাজার হাজার ছোট বড়ো ট্যাক্স পেয়ারদের অবদানে এখানকার দুস্থ মানুষ যেমন সেবা পাচ্ছে, তেমনি দুর্যোগকালীন সময়ে সরকার জনগণকে আর্থিক সাহায্য দিতে পারছেন। এবং এখানে নেতা নেত্রী বা দলের চেলা চামুন্ডের চুরি চামারীর কোনো কারবার নেই। তবে মাঝে মদ্ধ যে ২/১জন ওই কাজটি করে না তা ঠিক না, কিন্তু পার পেতে পারেন না। জবাদিহি করতে হয়, সেই প্রমান আমি আগের অনেক লেখায় লিখেছি। পৃথিবীতে কখনো স্বর্গ হওয়া সম্ভব নয়, তবে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশে থাকতে এবং আপনার মতের বা ভোটের মূল্য আছে সেই ভাবনাটা কিছুটা হলেও স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়।
আল্লাহতালা যেন পৃথিবীর প্রতিটি দেশে সহনশীল রাজনীতির উত্থানে মানুষকে তৌফিক দেন।
মুকুল।
টরন্টো।