পর্ব ১ এ আমাদের গত বছরের উত্তরের শহর ফ্রেঞ্চ রিভার ক্যাম্পিংএর যাত্রা এবং প্রথম দিনের কর্মকান্ড নিয়ে কথা বলেছিলাম, এবং অসংখ রিকোয়েস্ট আসে পরবর্তী দুই দিনের কর্মকান্ড জানার জন্য। আজকের পর্ব সেই বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো। এই পর্বে লিখবো আমাদের গলফিং এবং বিশেষ করে মাঝ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে অনেক দূরে চলে যাওয়া এবং হটাৎ করে হারিয়ে যাওয়া। লিখবো কিভাবে আবার পথ খুঁজে পেলাম, কি কি জিনিস শিখলাম, কি কি জিনিস কাজে লেগেছিলো ইত্যাদি নিয়ে। এবং একটি চ্যালেঞ্জকে কিভাবে ফানে রুপান্তরীত করা যায়।
আগের পর্বে বলেছি দীর্ঘক্ষণ লং ড্রাইভ, মাঝ ধরতে যাওয়া, সুইমিং করা, লেকের পাড়ে ডেকের উপর বসে ডিনার করা এবং রাত্রে টেন্টের মধ্যে বই পড়া মুভি দেখা ইত্যাদি কাজ করে সবাই মিলে বেশ একটা শান্তির ঘুম দেই। সকালে পাখির ডাকে চোখ খুলতেই টেন্টের মধ্যে থেকে সকালে সোনালী সূর্যের মিষ্টি রড এসে পরে চোখে। আমি এবং টোকন ভাই একটু আগেই উঠে যাই। ভাতিজারা বেশি রাত পর্যন্ত তাদের ল্যাপটপে মুভি দেখে আর গল্প করে কাটিয়েছে তাই তারা খুব বেশি সকালে উঠে নাই। যেহেতু তাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সারারাত বঞ্চিত রেখেছি তাই একটু বেশি ঘুম নিয়ে আর কোনো কথা বলা হয়নি। আমরা হাত মুখ ধুয়ে ভোরের হাওয়ায় আসে পাশে বনজঙ্গল আর নদীর পাড় ধরে কিছুক্ষন হাটা হাটি করে ফিরে এলাম ক্যাম্পসাইটে। হাটা হাটির সময় প্রাত ভ্রমণে বের হওয়া মানুষের সঙ্গে সঙ্গে কিছু বন্য প্রাণীরও দেখা মিললো। মনটা এবং শরীরটা বেশ ফ্রেশ হয়ে গেলো কিন্তু পেটটা একটু খালি হয়ে গেলো। তাই সাইটে ফিরে শুরু করে দিলাম সকালে নাস্তার আয়োজন।
ক্যাম্পে গেলে আমরা সাধরণত খাওয়ার প্রস্তুতিতে খুব বেশি সময় ব্যয় করি না। তাই এমন জিনিস নিয়ে যাই যেটা প্রস্তুত করতে বেশি সময় লাগে না। তৈরি হলো ডিম্ পোজ, সবজিসহ পাস্তা। নাস্তা একটু ভারী করার কারণ আমরা ১৮ হোল গল্ফ খেলবো তাই একটু বেশি ফুয়েলের দরকার ছিল। সঙ্গে নিয়ে গেলাম হোমমেড বার্গার এবং ঠান্ডা পানীয়। ভাতিজাদের সহ নাস্তা সেরে চলে গেলাম পার্শবর্তী লোকাল একটি রেস্তোরায় কফি পান করতে। কফিটি ক্যাম্পে না করে ইচ্ছাকৃত ওখানে গেলাম কারণ লোকাল লোকজনের কিছুটা সান্নিদ্ধ পেতে। কফি পান করে, ওখানে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে রওয়ানা হলাম ওখান থেকে ৪০ মিনিটের পথ একটি গল্ফ কোর্সের উদ্দেশ্য। আসে পাশে গল্ফ কোর্স ছিল কিন্তু আমি আগেই বলেছি আমরা সস্তা ফেশানের লোক তাই একটু দূরেই গেলাম। অবশ্য ৪০ মিন্টের যাত্রা হলেও মনে হয়েছে খুব কম সময় কারণ উত্তরের উঁচু নিচু গাছপালা ঘেরা সবুজ গ্রামের মধ্যে দিয়ে গান শুনতে শুনতে আর গাড়ির জানালা খুলে গ্রীষ্মের মলিন হাওয়া খেতে খেতে সময় কখন পার হয়ে গেলো বোঝা গেলো না।
পৌঁছে গেলাম গল্ফ কোর্সে। আমাদের সঙ্গে দুটি গল্ফ ক্লাব সেট ছিল তাই ভাতিজাদের জন্য আরো দুটি ভাড়া করে চলে গেলাম খেলতে। একেবারে middle of nowhere সুন্দর একটি কোর্স। ভাতিজা রিশাদের জন্য এটি ছিল গলফের প্রথম হাতে খড়ি তাই সে খুব এক্সসাইটেড ছিল। আমি নিজেও একজন novice. আমার ওস্তাদ টোকন ভাই। যাহোক এক এক করে পুরো ১৮ হোল খেললাম। খেলা শেষে সাথে নিয়ে যাওয়া বার্গার দিয়ে হালকা লাঞ্চ সেরে ফেললাম। রওয়ানা হলাম ক্যাম্পের দিকে। এবার গাড়িতে উঠে রড থেকে খেলে এসে, বার্গার খেয়ে বেশ ঘুম ঘুম লাগলো। যাহোক ৪০ মিনিটের মধ্যে চলে আসলাম ক্যাম্পসাইটে। এবার আমাদের মজুদে থাকা হোম মেড পিজ্জা গরম করে খেয়ে নিলাম। সবাই মিলে একটি সুইমিং করে নিলাম। এই সময় তখন ভাই তার টরোন্টোতে কাজ থাকায় আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে চিলি গেলেন।
আমি এবং দুই ভাতিজা মিলে মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে বোটে করে রওয়ানা হলাম নদীতে। আমাদের বোটটি ৪ সিটের ৪ stroke এবং ২৫/৩০ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন বিশিষ্ট ছোট একটি বোট। ভাড়া খুব রিজনেবল তাই এটি নেওয়া। নদীর মোহনা পেরিয়ে চলতে থাকলাম মাঝ নদীর দিকে। ভাতিজা রিশাদ আর মুগ্ধ ম্যাপ দেখে দেখে যেই দিকে মাছ থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে সেই দিকে আমাকে তারা ক্যাপ্টেন এর ভূমিকা নিয়ে আমাকে নির্দেষ দিতে থাকলো, আর আমি মাঝির মতো বোট চালাতে থাকলাম। বেশ করা রোদ ছিলো তাই মাঝে মাঝে নদীর পানি গায়ে ছিটাতে বেশ ভালো লাগছিলো এবং গা ঠান্ডা করার জন্য মাঝে মাঝে মুভিতে পুলিশের দস্যুকে ধাওয়া করার মতো করে দ্রুত গতিতে চালাতে থাকলাম। ওরাও মজা পাসছিলো। এক জায়গায় কিছুক্ষন এঙ্কর করে ছিপ ফেলে, তার পর আবার কিছুক্ষন চালিয়ে অন্য জায়গা।
এই সময় ঘটে গেলো এক কান্ড। এইবার এঙ্কর তুলে যখন বোট চালানো শুরু করলাম তখন হটাৎ করে ইঞ্জিনটি একটু স্লো হয়ে প্রপেলার আর ঘুরতে পারলো না। আমি ইঞ্জিন বন্ধ করে বেপারটি ইনভেস্টিগেট করে দেখলাম। কারণ খুঁজেও পেলাম। ভাতিজা রিশাদ মাছ ধরার রডটি বোটের পাশে রেখেছিলো কিন্তু বড়শি এবং সুতা পানিতে ঝুলছিলো। বোট আগাতে থাকলে ওই সুতা পিছনে গিয়ে ইঞ্জিন বেঁধে জড়িয়ে যাই প্রপেলারের গোড়ায়, ফলে প্রপেলার ঘোড়া বন্ধ হয়ে যায়। যাহোক সমস্যা উদ্ঘাটন করার পরে লেগে গেলাম প্রব্লেম সলভিংয়ে। ইঞ্জিন উপরে তুলে দেখি প্রপেলার আর ইঞ্জিনের সংযোগের মাঝে রডের সব সুতাই জড়িয়ে গেছে। মহা সমস্যার একটি ক্ষুদ্র ইঙ্গিত। আমরা একেবারে নদীর মাঝখানে, পানি অনেক গভীর। প্রথমে লাইফ জ্যাকেট এবং বৈঠা সহ সমস্ত সেফটি equepment চেক করলাম। সব মোটামুটি ঠিক আছে অতএব একান্ত ইঞ্জিন ঠিক না হলে বিকল্প বেবস্থা করা যাবে। শুরু হলো ইঞ্জিন ঠিক করার কার্যক্রম। ভাতিজাদের নদীতে ছিপ ফেলতে বললাম, ওরা সেদিকে ব্যস্ত হয়ে গেলো। সবাই একসাথে উদ্বিগ্ন থাকলে প্রব্লেম সল্ভিংয়ে বেঘাত ঘটে।
ইঞ্জিন এর প্রপেলারের মাঝ খানে সুতাগুলি এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে ওগুলি হাতে ধরে যে টেনে untagle করবো তা করা জাসছিলো না। হটাৎ মনে হলো আমার ২০ বছর আগে ফরাসি বনধু মেক্সনসের দেওয়া ম্যাকগাইভার টাইপ ওপিনাল চাকুটির কথা। কোমরে রাখা হোলস্টার থেকে চাকুটি বের করে চেষ্টা করলাম সুতা কাটার কিন্তু সুতাগুলি দুই মেটালের মাঝখানে থাকায় পোজ দেওয়া জাসছিলো না তাই শত চেষ্টাতেও ব্যর্থ হলাম। সঙ্গে রাখা ঠান্ডা পানি পান করে কিছুক্ষন ঠাডা মাতায় চিন্তা করলাম কি করা যায়। ইঞ্জিনটা আবার উপরে তুললাম। বড়শির সুতা প্লাস্টিকের দেখে ছোট বেলায় দেখা ম্যাকগিয়েভার ছবির কথা মনে পরে গেলো। চিন্তা করলাম জড়িয়ে যাওয়া সুতার দুই পাশের মেটালে যদি চাকুটি ঘষি তাহলে চাকুটি এক পর্যায়ে গরম হয়ে যাবে এবং সেটি সুতোর উপর সোজাসুজি ধরলে পোজ না দিতে পারলেও সুতা পুড়ে যাবে। শুরু করলাম ঘষা ঘষি। হা, কাজ হলো। হটাৎ করে আগুনের স্পার্ক হলো। সঙ্গে সঙ্গে ধরলাম প্লাস্টিকের সুতোর উপর। সুতো পুড়ে একটি মুখ বের হয়ে আসলো এবং সেটি ধরে খুলে ফেললাম সমস্ত সুতা। ইউরেকা বলে ইঞ্জিন স্টার্ট দিলাম , কাজ হয়ে গেলো। ভাতিজাদের এবার ছিপ তুলে বোটের উপর উঠাতে বলে আর এক দিকে চললাম। এই ছিল ম্যাকগাইভার টিপসের কাহিনী।
এভাবে চলতে থাকলো কিন্তু আজকে মাছ পাওয়ার ভাগ্য ভালো ছিল না। প্রায় ২/৩ ঘণ্টা ব্যয় করা এবং অনেক দূরে চলে যাওয়ার পরেও যখন মাছের দেখা মিললো না তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের গত কালকের স্পটে গিয়ে বরং ছোট খাটো মাছ ধরার কথা। বোট ঘুরিয়ে রওয়ানা হলাম আমাদের গন্তব্যের দিকে। ফেঞ্চ রিভারটি অনেক বড়ো, এর মধ্যে মধ্যে আবার ছোট ছোট সুন্দর দ্বীপ আছে, এবং নদীর দুই তীর ধরে সুন্দর সুন্দর কটেজ আছে। তাছাড়া নদীর দুই পাশ ধরে সুন্দর সুন্দর পাইন, কনিফার আর ইস্প্রুস গাছের সমারোহ। উপরে নীল আকাশ, নিচে ঘন কালো পানি, দুই দিকে সবুজ, আর এর মধ্যে দিয়ে পাক্কা দুপুরের রোদে গায়ে ঠান্ডা হওয়া লাগিয়ে বোট চলছে একই গতিতে। আস্তে আস্তে লোকালয় একটু কমে গেলো। আসে পাশে বেশ ফাঁকা মনে হলো, এই সুযোগে ভাতিজা মুগ্ধকে বোট চালনার তালিম দেওয়া শুরু করলাম এবং এক পর্যায়ে তার হাতে ইঞ্জিন চালনার দায়িত্ব দিয়ে আমি observationএ থাকলাম আর মাঝে মধ্যে পানিপথের ট্রাফিক নিয়ম সম্মন্ধে কিছু ধারণা দিতে থাকলাম। সেও খুব একসাইটেড এবং খুশি হস্ছিলো জীবনে প্রথম স্পিড বোট চালিয়ে। মাঝে মাঝেই সর্ব্বোচ গতি দিয়ে চালানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু সেটা থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছিল।
ও চালাচ্ছিল আর আমি নেভিগেট করছিলাম, এবং নদীর দুই পাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। মাঝে মাঝে কিছু ছবিও তুলছিলাম। এদিকে নদীর রোদের তাপ, নদীর ঠান্ডা হওয়া, সব মিলিয়ে আমাদের আর এক ভাতিজা রিশাদ বোটের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে তার ঘন কালো সানগ্লাসের মধ্যে দিয়ে নীল আকাশ আর নদীর অ্যাশ পাশ দেখছিলো। এর মধ্যে হটাৎ করে নব্য চালক ভাতিজা মুগ্ধ বললো শ্মানের দিকে দূরে দেখতে কারণ তার কাছে মনে হস্ছিলো আমরা যে দিক দিয়ে এসেছি এই দিকটা যেমন মনে হস্ছে না। আমি বোট থামাতে বলে দূরে ভালো করে দেখলাম। যাদের নদীতে নেভিগেশনের অভিজ্ঞতা আছে তারা জানবেন। দূর থেকে গভীর পানির রিফ্লেকশন দেখতে এক রকম আর অল্প পানির রিফ্লেকশন দেখতে আরকে রকম দেখায়। ভাতিজা মুগ্ধ ম্যাপ চেক করে বললো যে আমরা আসলেই অন্য দিকে চলে এসেছি এবং দূরে আসলে একটি Rapid আছে অতএব ঐদিকে যাওয়া ঠিক হবে না। সঙ্গে সঙ্গে বোট ঘুরাতে বললাম এবং গ্যাসোলিন চেক করলাম। আমি বোট নিয়ে কোথাও গেলে ট্যাঙ্কের অর্ধেক গ্যাসোলিন খরচ হয়ে গেলে আর সামনে আগাই না কারণ ফিরে আসার গ্যাসোলিন না থাকলে অবশেষে দীর্ঘ পথ বৈঠা বেয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।
যে সমস্যাটি হয়েছিল তা হলো আমি ফেরের পথে ছোট একটি দ্বীপের দেন পাশ দিয়ে না গিয়ে বামে কাট মেরেছিলাম। অল্প কিছুক্ষন চালানোর পরে একটি পনটুন দেখে ভাতিজা মুগ্ধ বোটের চালককে জিগ্যেস করলো আমরা সঠিক পথে ফিরছি কি না। ওরা বললো হা। মোটামুটি নিশ্চিত হলাম আমরা ঠিকই আছি, যদিও আমি ইন কেস দিনের আলোতে ফিরতে না পারলে কি কি করবো সে প্ল্যান করে ফেলছিলাম। রবিনসন কুরুসোর্ কথা ভাবতে ভাবতে ছোট্ট একটি দ্বীপও ঠিক করে ফেলেছিলাম রাত কাটানোর জন্য। এদিকে দুই ভাতিজা মিলে তাদের গল্প চালিয়ে যেতে থাকলো। ওহ আর একটা কথা বলে নেই, ওই এলাকায় কোনো সেল ফোন কভারেজ নেই। ফ্ল্যাশ লাইট এবং আগুন হলো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের একমাত্র উপায়, তবে আসে পাশে লোকালয় থাকায় কোনো অসুবিধা নেই, তাছাড়া অ্যাশ পাশ দিয়ে অসংখ বোট বা ক্যানুর যাতায়াত থাকে সব সময়। তবে এই ধরণের এডভেন্চারে একটি স্যাটেলাইট ফোন থাকলে খুব ভালো হয়। এই জন্য ঐবার এসে প্রথমেই খোঁজ নিয়েছি স্যাটেলাইট ফোনের। দাম মোটামুটি ৩/৪ শত ডলারের মধ্যে কিন্তু এয়ার টাইম কস্টলি। তবে মাত্র সামারের ৩ মাসের জন্য প্ল্যান নেওয়া যায় এবং সেটা করে ভালো। আপনারা ইসছা করলে ২/৩ জন মাইল ফোন এবং প্ল্যান কিনতে পারেন তাতে করে খরচ খুবই কম হবে। কানাডা একটি বিশাল দেশ। আপনি ইভেন অন্টারিও উত্তরে গেলেও শত শত মাইল গাড়ি চালিয়েও কোনো বসত বাড়ি বা তেলের পাম্পের খোঁজ পাবেন না এবং ঐসব জায়গায় অনেক সময় সেল ফোন কভারেজ থাকে না। তাহলে বুঝুন যদি আপনার গাড়ি খারাপ হয়ে যায় ! এ জন্য সেই মুহূর্তে একটি স্যাটেলাইট ফোন থাকলে কোনো চিন্তা নেই।
যাহোক রোধ পড়তে থাকলো, আর আমরাও আমাদের বাড়ির দিকে ফিরতে থাকলাম। এসময় নদীর এবং যদি পাড়ের দৃশ্যের পরিবর্তন দেখা গেলো। এ যেন প্রাকৃতিক আলোর ঝলক। আমরা অপক্ষাকৃত আসতে আসতে চালিয়ে চারিদিকের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে চলতে থাকলাম। মাঝে মাঝে বাংলাদেশের গ্রামের মতো পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বোটগুলির যাত্রীরা কুশল জানিয়ে চলে জাস্ছে। মনে হস্ছে আমরা যেন ওই এলাকারই বাসিন্দা, এবং আমি মনে করি এটিই আসল কানাডা। মাঝে মধ্যে পানির মধ্যে মাছের লাফ লাফি চোখে পড়ছে। সব মিলিয়ে একটি wonderful experience . এই জিনিষগুলি আসলে ধরা ছোয়ার বাইরে, শুধু হৃদয় দিয়ে উপভোগ করার।
যাহোক আমরা নোঙ্গর করলাম আমাদের অটো কালের স্পটে। ঘন্টা খানেক ছোট খাটো কিছু মাছ ধরে ডকে ফি গেলাম। বোট ডাকে বেঁধে সোজা চলে গেলাম সুইমিং পুলে। কিছুক্ষন মনের মতো সাঁতরে টেন্টে ফায়ার কাপড় চেঞ্জ করে কিছু স্নাক্স করলাম। এর পর ভাতিজারা দুজনে আবার ডকের কাছে মাছ ধরতে গেলো। আমি কিছুক্ষন হাইক করে এসে কিছু ম্যাচে নিয়ে ফিশিং রুম থেকে মাছের ফিলে করে এনে গ্রিল করে ফেললাম। ছেলেদের ডেকে গ্রিল করা মাছ, সবজি এবং চিকেন সুবলাকী দিয়ে ডিনার করে ফেললাম। এবার ভাতিজাদের নিয়ে একটু পাশে ড্রাইভ করে গিয়ে ওদেরকে ১৫ মিনিটের জন্য ওদের বনধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করতে দিলাম এবং আমি তাদের বাবা মাকে আমাদের সর্বশেষ আপডেট দিলাম।
টেন্টে ফিরে এসে কিছুক্ষন ক্যাম্পফায়ার করে জোস্নার আলোয় আবার একটু হাটা হাটি করে টেন্টের ভিতরে গেলাম সবাই। ওরা ওদের ল্যাপটপ আর গল্প নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো, আর আমি দ্বিতীয়বারের মতো ইংরেজ লেখক থমাস হার্ডির ” ফার ফ্রম টি মেডেন ক্রাউড” পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে সব প্যাক উপ করে রওনা হলাম মিডল্যান্ড এর ছোট শহর Tinyর দিকে। ওখানে পৌছালাম দুপুরের দিকে। বিচে বসে BBQ করে সবাই মিলে সুইমিং এ নামলাম। কিছিক্ষন পানির মধ্যে বল খেলে তার পর উঠে এলাম। আবার সব প্যাক আপ করে রওয়ানা হলাম টরোন্টর দিকে।
দুই ভাতিজাকে স্কারবোরোতে নামিয়ে দিয়ে আমি আমার বাসার দিকে চলে আসলাম। প্রস্থানের সময় ভাতিজারা প্রমিজ করিয়ে নিলো যে আগামী সামারে তারা আবারো যাবে।
শেষ হয়ে গেলো আমাদের ২০১৬ র শেষ ক্যাম্পিং। আমরা কাটিয়েছিলাম মারো ৩ দিন কিন্তু সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম প্রায় ৩০ দিনের এনার্জি। একারণেই বোধ হয় মিলিওনারাও চলে যায় ওই জঙ্গলের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে টেন্টের মধ্যে সময় কাটাতে।
পরবর্তীতে এমন সস্তা এবং তাপপর্যপূর্ণ আরো কিছু মন জুড়ানো ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে ফিরে আসবো।
ধন্যবাদ।
মুকুল।