সুধীজন পাঠাগারে অবৈতনিক পাঠাগারিকের দায়িত্ব পালনের সময় পাঠাগারের অনেক সদস্যদের সাথে আমার পরিচয় হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন ডক্টর সৈকত আসগর, অধ্যাপক খালেদ হোসাইন, শম্ভুনাথ আচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এমফিলের ছাত্র, আনোয়ারুল মামুন ভাই, আবদুল্লাহ ইউসুফ সোহেল বর্তমানে সপরিবারে স্কটল্যান্ড প্রবাসী, মোবারক, সুইট ও অনেকে। সিলভা মাইন্ড কন্ট্রোল সম্পর্কে পাঠাগারে মামুন ভাইয়ের কাছ থেকেই প্রথমে জানতে পারি। পাঠাগারে নিয়মিত দশ-বারটি পত্রিকা রাখা হতো। সেসব পত্রিকায় মন নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কোনো আর্টিকেল থাকলে মামুন ভাই আমাকে পড়ার জন্য উৎসাহিত করতেন। রিডিং টেবিল থেকে পত্রিকাটি নিয়ে কাউন্টারে আমার কাছে চলে আসতেন। এমনকি বিদেশে তিনি আমাকে চিঠি লিখলেও চিঠির সাথে মন নিয়ন্ত্রণের আর্টিকেলের পেপার কাটিং পাঠাতেন। পরে জানতে পারি আইসোমেট্রিক থেকে শ্রদ্ধেয় মাহী কাজী মন নিয়ন্ত্রণ কোর্স পরিচালনা করেন। আসজাদুল কিবরিয়া তানিম নিয়মিত পাঠাগারে আসতো। তাঁর সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তখন কোর্স ফি ছিল ৬,৫০০/- টাকা। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঐ পরিমান অর্থ একটু বেশি বলেই অনুমিত হলে কোর্সে অংশগ্রহণে অপারগ ছিলাম।
মন নিয়ন্ত্রণের কোর্সের কিঞ্চিৎ বিকল্প হিসাবে বইয়ের সন্ধান পেলাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের ছদ্মনাম বিদ্যুৎ মিত্র। বিদ্যুৎ মিত্র নামে আত্মউন্নয়ন ও মননিয়ন্ত্রণ শিরোনামে তিনি দু’টি বই লিখেছেন। খাজা মার্কেটের মমতা বুক ষ্টোরের দোকানের মালিক সেলিম। সেলিমের মাধ্যমে প্রজাপতি প্রকাশন থেকে বই দু’টি সংগ্রহ করে এনে পড়ি ও নিয়মিত প্র্যাকটিস করি। বই পাঠ ও একা ধ্যান অনুশীলনের ফলে পথ চলা সহজ হয়ে গেল। দীর্ঘদিন পর অর্থ সংকুলান হলে রঁদেভু সুন্দরমে শ্রদ্ধেয় মাহী কাজী (প্রয়াত) পরিচালিত পরিচিতিমূলক সেশনে (ইন্ট্রুডাকটরি ক্লাস) উপস্থিত হই ও সারাদিনব্যাপী চার দিনের পরবর্তী ক্লাসে অংশগ্রহণ করি। পরবর্তী পর্যায়ে চামেলী হাউস, মহাখালীতে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অডিটোরিয়াম, গ্রামীন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে দাদার পরিচালিত কোর্সে অংশগ্রহণ করি এবং প্রায় দশবার সম্পূর্ণ কোর্স রিপিট করি। সব সময়ই দাদা কোর্সটি নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতেন। “আলট্রা” কোর্সটি শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোর্স ইনস্ট্রাক্টর হয়ে আমেরিকা থেকে এসেছিলেন এ্যালেক্স সিলভা।
ডক্টর আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্যার, ডক্টর সাঈদ-উর-রহমান স্যার ও আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগ স্যার সবার সাথে আপনি সম্বোধনে কথা বলতেন। সিলভা মাইন্ড কন্ট্রোল কোর্সের প্রশিক্ষক শ্রদ্ধেয় মাহী কাজী (প্রয়াত) কোর্সের সবার সাথে আপনি সম্বোধনে কথা বলতেন। সবার কাছে তিনি স্যার বা গুরু না হয়ে “দাদা” নামের আবেগময় এক উচ্চারণ হয়ে আছেন আজো। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম এই কোর্সের অগ্রদূত। তাঁর মাধ্যমেই দেশবাসীর কাছে প্রথম মন নিয়ন্ত্রণের জগত উন্মোচিত হয়। কোর্স সম্পন্নকারী ছাত্রকে “সিলভা গ্রাজুয়েট” বলা হয়। বাংলাদেশে সব সিলভা গ্রাজুয়েটদের কাছে প্রয়াত মাহী কাজী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়।
মন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত লেখাটি নস্টালজিয়া ছুঁয়ে গেল।ছাত্র বেলায় বিদ্যুৎ মিত্রের দুটো বই ডিআইটি থেকে নিয়ে পাঠ করি ও এর নির্দেশ অনুসরণ করার চেষ্টায় বারবার অধৈর্য হয়ে চর্চা গুটিয়ে নেই।ওরে বাব্বা,কি যে অনুশীলন যা অস্থির চিত্তে ধারন করা দুরূহ।একটি বই খোয়া গেছে সাথীর একটি আজো আগলে রেখেছি।বই দু’টি মজার।স্পর্শ করিয়ে দেয়ার জন্য কামালকে ধন্যবাদ।