একজন নারীর অবিশ্রান্ত ,অক্লান্ত অবদান ও ক্রমাগত স্বার্থত্যাগ কে আমাদের ঘুণেধরা সমাজ ,পরিবার ,রাষ্ট্রের সদস্যরা আদৌ কি সম্মান প্রদর্শন করতে শিখবো না ? আমার এক উচ্চশিক্ষিত ও পেশা জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত বান্ধবী গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে জানালেন তিনি সংসারের শতকরা আশি ভাগ দায়িত্ব পালন করেন ,তাঁর উপার্জিত অর্থ ও সম্পদ সংসারের অন্যতম চালিকা শক্তি। আমার বান্ধবী স্বভাবসুলভ ভাবেই একজন স্বল্পভাষী ও বিনম্র এক মানবিক সত্তা , আর সমাজের চাপে (!!!) সম্ভবত নারীর প্রতি প্রচলিত নীরবতার সংষ্কৃতি কে মেনে নিতে বাধ্য হন । তাঁর ক্রমাগত অবদানের প্রতি স্বীকৃতি নয়বরং প্রতি মুহূর্তে তিনি তাঁর ছোট খাট কোন ভুলের জন্য সমালোচিত / ধিকৃত হন তাঁর যাপিত জীবনের কোন নিকটজনের কাছে । অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর কপালে জোটে অপরিসীম অপমানের দুর্ভোগ ।
দীর্ঘকালীন বন্ধুত্বের সুবাদে সরাসরি ওনার প্রত্যাশার কথা আমি জানতে আগ্রহ প্রকাশ করাতে অনেকটা হতাশার সুরে তিনি ক্ষেত্রটি তুলে ধরেন । দিনশেষে কয়েকটি হাস্যজ্জ্বল আনন্দময় প্রিয়জনদের মুখ ,মানবিক বোধ ও সম্মান জনক সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থানের একটি আবহ ,অন্তত পক্ষে নিকট জনের কাছ থেকে তাঁর কর্মের / অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি এর বেশি কিছু আর তাঁর চাওয়ার নেই । এই শ্রদ্ধাবোধ ,ভালোবাসার ও স্বীকৃতির বলয় সৃষ্টি করা কি খুব কঠিন ? আমার এই বান্ধবীর জীবনচিত্রের সাথে আমাদের চারপাশের চেনা অচেনা অনেক নারীর জীবনের সুস্পষ্ট সাদৃশ্য আমাদের খুব সহজেই দৃশ্যমান হয় ।
সার্বিক ভাবে নারীর মানবিক স্বাধীনতার মূলমন্ত্র স্রোতের গতির অনেকটাই কি উল্টোপথে চলছে না ? আদৌ কি আমরা এই আদর্শের সামনে অগ্রসর হচ্ছি নাকি সন্তপর্ণে এই দ্বার রুদ্ধ হচ্ছে । বিশ্বের সমগ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেকাংশ জুড়ে আছেনা নারী সমাজ । মানবসভ্যতার এই বৃহৎ অংশকে পশ্চাতে নির্যাতিত ,নিগৃহীত অবস্থায় লালন করে আদৌ কি কোন অগ্রগতি সম্ভব ? সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী সমাজ কর্মী ও নারী শিক্ষা আন্দোলন কর্মী নেত্রী মালালা ইসুফজাইয়ের একটি বিশেষ মতামত এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে প্রাসঙ্গিক We cannot all succeed when half of us are held back । নারী কেন অথবা নারীর মানবিক স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রয়াস প্রতিনিয়ত কেন বিসর্জিত,নির্যাতিত অথবা বলি হচ্ছেন অথবা তথাকথিত আধুনিকতার নামে বিকশিত ভোগবাদী সমাজের নিদর্শন স্বরূপ একটি ভোগ্যপণ্যের মতো উপস্থাপিত হচ্ছেন ও বস্তুতান্ত্রিক আদর্শে পুষ্ট সমাজ কাঠামো ,পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সুকৌশলী এক হীন নীরব চক্রে নিপতিত সেই প্রশ্ন নিয়ে আমাদের নারীর মানবিক মুক্তির দিকটা বিচার করতে হবে ।
(ছবি:-সৌজন্যে Working Mother)