Lucy

ইংল্যান্ডের সেন্ট হেলেন শহরে লুসি হল্ট এর জন্ম ১৯৩০ সালে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের হাসপাতালে আসেন সেবাকর্মী হিসেবে। কথা ছিলো দু’বছর বাদে দেশে ফেরার। কিন্তু এখানকার প্রকৃতি, মানুষ আর মানুষের ভালোবাসা আবিষ্ট করে তাকে। তাই তো গত ৫৬ বছর ধরে লাল-সবুজের দেশে আচেন ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্ট। তাঁর হৃদয় জুড়ে আছে বাংলাদেশ। আর সেজন্যই চলনে-বলনে সবকিছুতেই তার বাঙালীয়ানা।

বিনে পয়সায় কখনো সেলাই শেখানো, তাঁত প্রশিক্ষণ, পথ শিশুদের পাঠদান, আবার কখনো বা হাসপাতালে সেবা দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর এসব কাজের শুরুটা বরিশাল থেকে। পর্যায়ক্রমে নওগাঁ, রাজশাহী, যশোর, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, খুলনা হয়ে আবারো বরিশালেই। পরিবার-পরিজন, বৃটিশ আভিজাত্য ফেলে এ বিদেশিনী একা থাকেন অক্সফোর্ড মিশন হোস্টেলের ছোট্ট খাট্টো একটা রুমে।

নাম মাত্র উপার্জন বলতে অনুবাদ এর কাজ। কেউ কেউ তাঁর কাছে আসেন ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদের জন্য, আবার কেউবা বাংলা থেকে ইংরেজী করাতে। আর এসব কাজ করেন তিনি হাসিমুখে। যদিও, বৃটিশ নগরিক হওয়াতে ৭০ পাউন্ড বা হাজার ছয়েক টাকা পান মাসিক ভাতা হিসেবে। তাও আবার আসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেন বলে জানান অক্সফোর্ড মিশনের ম্যানেজার বেনিডিক্ট বিমল ব্যাপারী। সঞ্চয় বলতে কেবলই বাঙালীদের ভালোবাসা।

একাত্তরের স্মৃতি রয়েছে লুসির চোখজুড়ে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে বেশ কয়েক মাস আয়া হয়ে যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে আহতদের সেবা দেন তিনি।

লুসি বলেন, “কোন স্বীকৃতি বা কিছু পাওয়ার আশায় নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় হাসপাতালে আমি বেসামরিকদের সেবা দিয়েছিলাম মানবিক দিক চিন্তা করেই।”

আহতদের সেবা দেওয়ার অবদান হিসেবে সনদ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে এক কথায় বলেন, ‘না’।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশীরা নিজেরা নিজেদের পেছনে লেগে থাকে। নিজেরা নিজেদের প্রশংসা করে না। এটা আমাকে কষ্ট দেয়। আমি চাই একে অপরকে ভালোবাসবে, প্রশংসা করবে।”

লুসি দ্বৈত নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন, পাননি। শুধু বাংলাদেশী নাগরিকত্ব নিবেন তাও সাহস পাচ্ছেনা। কারণ বৃটিশ নাগরিক হওয়াতে তিনি ভাতা পান সেখান থেকে। সেটি বন্ধ হবে যদি তিনি সেখানকার নাগরিকত্ব ছেড়ে দেন।

আর্থিক নিঃস্ব এ মানুষটির সরকারের কাছে আহ্বান, তাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদানসহ বছরে ভিসা রিনিউয়ের ৩৮ হাজার টাকা মওকুফের। বলেন, “আমি অনেক বছর পর্যন্ত এদেশে আছি। বাংলাদেশকে ভালোবাসি। সরকার চাইলেই বছরের ঐ ৩৮ হাজার টাকা কনসিডার করতে পারে। আমি খুব কৃতজ্ঞ থাকবো যদি টাকাটা কমানো হয়। মাসিক পেনশনে যে টাকা পাই তাতে খুব কষ্ট হয় আমার। আমার কাছে ফিক্সড কোন টাকা নাই।”

লুসি ভালোবেসেছেন বাংলাদেশ। ভালোবেসেছেন বরিশাল। আর তাই জন্ম না নিলেও, শেষ নিঃশ্বাস ছাড়তে চান বরিশাল শহরেই। বাংলা মাটির সোঁদা গন্ধেই ঘুমোতে চান চিরদিনের জন্য। সেজন্য লুসি ঠিক করে রেখেছেন মাটির সেই কবরও।

ওপরের সবটই নেওয়া হয়েছে ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ এর দৈনিক জাগরন এর একটি রিপোর্ট থেকে। এছাড়াও লুসি হল্ট এর ওপরে পহেলা ডিসেম্বর সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করে সংবাদ ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল-ডিবিসি।

এই ব্লগে অনেকেই আছেন যার বরিশালের উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে পরিচিত, আপনি/আপনারা একটু চেষ্টা করলে হয়তো লুসি হল্ট দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যাবস্থা এবং প্রতিবছরের এই বড় অংকের ভিসা ফিস থেকে তাকে রেহাই দেবার কোন একটা ব্যাবস্থা করতে পারবেন সেই আশায়ই এখানে পোস্ট করা।

4 মন্তব্য

  1. খুব ভালো লাগলো নিবেদিত প্রাণ একজন মানুষের নীরব সেবার বিবরণ শুনে. আশা করছি বাংলাদেশের মিডিয়া এবং ক্ষমতা কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন উনার প্রাপ্য সম্মান দেবার জন্য.

    • লুসি হল্ট এর ফোন নং আপনাকে ফেসবুকে ইনবক্স করেছি (পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে ফোন নং ওপেনলি দিলে কেউ কেউ ঝামেলা করে ফোন করে, তাই ইনবক্স এ দিলাম)

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন