আশাহত তবে স্বপ্নভঙ্গ নহে
বাংলাদেশের ইনিংসের তখনও দুটি ওভার বাকি, ইন্ডিয়ার পেসার বুমরাহ-র পরপর দুই বলে রুবেল ও মুস্তাফিজ বোল্ড আউট। সারা দুনিয়ার কোটি কোটি বাংলাদেশী দর্শক যারা বলে বলে রানের হিসাব রাখছিলেন চোখের পলকে থেমেগেলো তাদের সমস্ত হিসাবনিকাশ। সবাই মাছের মতো কিছুক্ষন স্থির ভাবে তাকিয়ে থাকলেন স্কোরবোর্ডের দিকে। পারলে না সাকিব/মুস্তাফিজ অথবা পাকা ব্যাটাসম্যান হয়ে উঠা দীর্ঘদেহী বলার সাইফুদ্দিন। আশাহত হলো কোটি কোটি দর্শকের হৃদয়। অধরা থেকেগেলো সেমিফাইনালে উঠার স্বপ্ন। এই লেখা যখন লিখছি একরাশ ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ক্রিকেটপাগল এই দেশের মানুষ বিছানায়ছটফট করছে, আফসোস করছে তামিমের ক্যাচ মিস নিয়ে। আমরা যারা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে আছি, আজকের খেলা দেখা শেষ করে আমাদের দিনের কাজের মাঝামাঝি সময়। কিছুতেই কাজে মন বসাতে পাচ্ছিনা। ভাবখানা যেন মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। আগামীকালের ইংল্যাণ-নিউজিল্যান্ডের খেলার দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হবেনা। ইংল্যান্ড হারুক বা জিতুক এখন আমাদের আর কোনো মাথা ব্যাথা নেই। শুক্রুবারে নিয়ম রক্ষার খেলা খেলতে হবে পাকিস্তানের সাথে। আজ থেকে মুক্তি পেলাম সেমিফাইনালে উঠার জটিল হিসাবনিকাশ থেকে ।
বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট এখনো চলছে। থেমেগেছে আমার সকল উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিশ্বকাপ ঘিরে। তাই আজকেই ইতি টানতে হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে লেখা ধারাবাহিক পর্ব। কষ্ট করে আপনাদেরকে আমার ফেসবুক পেজে আর দেখতে হবে না বিশ্বকাপ নিয়ে আমার ধারাবাহিক পর্বের পোস্টসমূহ।
প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনের পাতা ভরে লেখা ছেপেছে “বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের”, “যখন হাতের ফাঁক গলে চলে যায় সেমির স্বপ্ন”, “২ রানের জন্য শীর্ষ মুকুটটা পেলেন না সাকিব ” ইত্যাদি ইত্যাদি । ক্রীড়া সাংবাদিকরা বিভিন্নরকমারী লেখায় বিশ্লেষণ করছেন আমাদের খেলার দোষ-ত্রুটি সমূহ: আজকের খেলায় তামিমের ক্যাচ মিস, নিউজিল্যাণ্ডের সাথে প্রায় জেতা মাচে উইলিয়ামসন যখন মাত্র ৮ রানে, মুশফিকুর রহিমের রান আউট করার সহজ সুযোগ ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে সত্যি কথাবলতে কি, বুকে হাত দিয়ে বলুনতো , আমরা এবারের বিশ্বকাপ জিতব এরকম বিশ্বাস আমাদের কতজনের ছিল? তবে এটা ঠিক, আমরা একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম অন্তত সেমিফাইনালে উঠার। অন্তত চার বছরের জন্য এ স্বপ্ন তুলে রাখলাম আগামীর জন্য।আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলোনা সত্যি , আমরা আশাহত তবে আমাদের স্বপ্ন এখনো ভেঙে খান খান হয়ে যায়নি। আজ যেখানে শেষ হলো আগামীকাল শুরু হবে সেই বিন্দু থেকে। এই প্রবাসে, আমি পেশায় একজন সমাজকর্মী। আমাকে কাজ করতে হয় সমাজের বাস্তুহারা মানুষদের সাথে, মানসিক ভারসম্যহীন মানুষদের সাথে। এই মানুষগুলিকে সর্বদাই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাতে হয়, প্রেরণা জোগাতে হয়। স্বপ্ন দেখানো আমার পেশা । আমি তাই এখনো স্বপ্ন দেখি, একদিন আমরাও…. ।চলুন পজিটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি এই অধরা বিশ্বকাপের অপ্রাপ্তিগুলিকে ভুলে প্রাপ্তিগুলিকে শুধু মনে করতে চাই। মনে-প্রাণে ভাবি এ বিশ্বকাপ থেকে আমাদের প্রাপ্তিগুলির কথা: অনন্য রেকর্ডধারী আসমানের চান সাকিবুল হাসান , পুরাতন ফর্মে ফেরে আসা মুস্তাফিজ অথবা অলরাউন্দর সাইফুদ্দিনের কথা।
জন্মভূমি থেকে যোজন মাইল দূরে থেকে প্রচন্ড আশা নিয়ে , স্বপ্ন নিয়ে আমি ও আমার ছেলে তাকিয়ে থাকলাম আগামীর দিকে। জয় আমাদের হবেই হবে ইনশাল্লাহ.