দ্বিতীয় পর্ব: কাগুজে বাঘ মাশরাফির ঢাকা প্লাটুন

পয়েন্টস তালিকায় তিনে থাকা মাশরাফির ঢাকা প্লাটুন কে অনেকে ইতিমধ্যে বলা শুরু করেছে কাগুজে বাঘ নামে। আজ বড় দিনের দুই দিনের বিরতির পর মাশরাফির ঢাকা প্লাটুনক কে আট বল হাতে রেখে মাত্র চার উইকেট হারিয়ে হেসে-খেলে হারিয়ে এই কাগুজে বাঘের ধারণাকে যেমন আরও পোক্ত করলো উল্টাদিকে আবারোও আলোচনায় উঠে এলো শেষ চার গ্রূপে নিশ্চিত প্রথম দল, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার।

চলুন দেখাযাক এই কাগুজে বাঘের প্রকৃত চেহারা। দেশে/বিদেশের অনেক নামিদামি খেলোয়াড় নিয়ে গড়া এই ঢাকা প্লাটুন দল। বোলিং এ দেশের সেরা বলার মাশরাফির সাথে দেশীদের মধ্যে আছেন অলরাউন্ডার উদীয়মান খেলোয়াড় মেহেদী হাসান, বাংলাদেশের এমার্জিং দলের বলার হাসান মাহমুদ। এঁদের সাথে আরোও আছে তারকাখচিত বিদেশী খেলোয়াড় পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদী , সাদাব খান ও ওহেব রিয়াজ এবং আরো আছেন টি -২০ বিশেষজ্ঞ অলরাউন্ডার শ্রীলংকার থিসেরা পেরেরা। ব্যাটিং এ আছেন তামিম ইকবাল, এনামুলহক বিজয় ও সদ্য ভারত সফরে টেষ্টে নেতৃত্ব দেওয়া মোমিনুল হক।

ঢাকা প্লাটুনের এবারের বি পি এল টুর্নামেন্টে কাকতালীয়ভাবে পরাজয়-জয়ের একটি প্যাটার্ন হয়েছে । সেটা হইয়াছে ১-২-১-২-১; আরো ভেঙ্গে বললে প্রথম খেলায় হার, পরের দুইটি খেলায় জয়, চতুর্থ খেলায় আবার হার পরের দুইটি খেলায় আবার জয়ের পর আবার হার।

এবার টুর্নামেন্টে ঢাকা প্লাটুন দলে দেশীদের মধ্যে কিছুটা নিয়মিত ছিলেন তামিম, এনামুল হক বিজয় ও অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। আজকের ম্যাচ এর আগে পর্যন্ত অর্থাৎ গত ছয় ম্যাচে মাশরাফির পারফরম্যান্স ছিল তথবৈচ. বিদেশিদের মধ্যে থিসেরা পেরেরা কিছুটা জ্বলে উঠলেও তারকা তকমা লাগা শহীদ আফ্রিদিকে ব্যাটে/বলে এখনো তেমন জ্বলতে দেখা যায়নি। তবে আজকের খেলায় পুরাতন মাশরাফিকে এবার দেখা গেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে এক স্পেলে টানা ৪ ওভার বোলিং করেছেন। ১৪ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট, কিন্তু তবুও ম্যাচ শেষে হারতে হয়েছে ইমরুল কায়েছের চট্টগ্রামের কাছে।

ঢাকা প্লাটুন প্রথম খেলায় গত ডিসেম্বরের ১২ তারিখে অর্থাৎ টুর্নামেন্টের তৃতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় দিনে হার দিয়ে এবারের টুর্নামেন্ট শুরু করে। এবারের টুর্নামেন্টের আরেক শক্তিশালী দল রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে সেই খেলায় তামিম ফিরে যান মাত্র ৫ রান খেলে। এনামুল হক বিজয়ের ৩৮ রানের উপর দাঁড়িয়ে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ১৩৪ রানের মোটামুটি সম্মান জনক একটি টার্গেট দেওয়া হয় রাজশাহীকে। শক্তিশালী রাজশাহী হেসে খেলে মাত্র ১ উইকেটের বিনিময়ে সেই টার্গেট অতিক্রম করেন। সেই ম্যাচে মাশরাফি ৩ ওভার বল করে ১৮ রান দিলেও উইকেট শূন্য থাকেন। বলাবাহুল্য, এই ম্যাচ শেষে চারিদিকে ঢাকা প্লাটুন দল কে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। প্রথম ম্যাচে  এই হরে কাগুজে বাঘের তকমা তখনি পেয়ে যায় এক ঝাঁক তারকা খচিত খেলোয়াড় নিয়ে গড়া এবারের ঢাকা প্লাটুন দল ।

দলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পিঠাপিঠি খেলায় জয়ে সমালোচনার জবাব দেয় ঢাকা প্লাটুন দল। ডিসেম্বর ১৩ তারিখে কুমিল্লা-র বিপক্ষে সাত উইকেটের বিনিময়ে ১৮০ রানের টার্গেট দেয়। জবাবে ১৬০ রানে আটকে যায় কুমিল্লার রানের চাকা। এই খেলায় তামিম খেলেন তামিমের মতো ৫৩ বলে ৭৪ রান, এই ম্যাচে থিসেরা পেরেরা অলরাউন্ডারের নৈপুণ্যে জয় পায় ঢাকা। পেরেরা ১৭ বলে ৪২ রান করেন ও বল হাতে ৪ ওভার বল করে ৩০ রান দিয়ে ৫ টি উইকেট তুলে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

এক দিন পরেই, দলের তৃতীয় ম্যাচে ডিসেম্বর ১৪ তারিখে সিলেট থান্ডার এর বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১৮২ রানের টার্গেট দেন। এই ম্যাচে তামিম ২৮ বলে ৩১ রান করলেও এনামুল হক বিজয়ের মাত্র ৪২ বলে ৬২ রানই বড় পুঁজিতে বিশাল ভূমিকা রাখে। এই ম্যাচে অবশ্য মাশরাফি ৪ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে সিলেট দলের ধস নামান।

এর পরে ম্যাচে পর পর দুই জয়ে আবারো হারের মুখে পরে ঢাকা প্লাটুন দল। ডিসেম্বর ১৮ তারিখে এবারের টুর্নামেন্টে শীর্ষে থাকা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জারের বিপক্ষে পরাজিত হতে হয় ঢাকাকে। বড় পুঁজির এই খেলায় ইমরুলের ৪০ ও মাহমুদুল্লাহ-র ৫৯ রানে গড়া চট্টগ্রামের ২২১ রানের জবাবে ২০৫ রান তুলেই পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় ঢাকা প্লাটুন দল। তামিম বিহীন এই ম্যাচে মমিনুলের মাত্র ৩৫ বলে ৫২ রান দলের রান ২০০ টপকাতে কিছুটা সহজ করে।

এই হারের পরে, আবারও দুই পিঠাপিঠি ম্যাচে টানা জয় কাগজে কলমে শক্তিশালী ঢাকা প্লাটুনকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়। ডিসেম্বর ২৩ তারিখে কুমিল্লার বিপক্ষে তরুণ দেশী খেলোয়াড় মেহেদী হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ১৬০ রানের টার্গেট দেয় ঢাকা প্লাটুন। এই ম্যাচে আগের ম্যাচে ভালো খেলা এনামুল আউট হন শূন্য রানে। তামিম ৩৪ রান করলেও মেহেদী হাসানের মাত্র ২৯ বলে ৫৯ রান দলকে একটু ভালো পুঁজির টার্গেট করার সুযোগ করে দেয়। জবাবে ১৬১ রান তুলে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় কুমিল্লা। এই ম্যাচে বল হাতে ৪ ওভার বল করে মাত্র ৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে সকলের নজর কেড়ে নেন এই তরুণ মেহেদী হাসান।

ঠিক পরের দিনেই অর্থ্যাৎ ডিসেম্বর ২৪ তারিখে সিলেটের বিপক্ষে আরেক জয়ের মাধ্যমে আবারো উপর্যপুরি জয়ের দেখা পায় ঢাকা প্লাটুন দল। এই ম্যাচে সিলেটের ১৭৪ রানের জবাবে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে সহজ জয় পায় ঢাকা প্লাটুন দল। এই ম্যাচে তামিমের ৪৯ বলে ৬০ , এনামুলের ২৩ বলে ৩২ এর পাশা পাশি তরুণ অল রাউন্ডার মেহেদী হাসান আবারো জ্বলে উঠেন। বল হাতে ১ উইকেট নেয়ার পরে মাত্র ২৮ বলে ৫৬ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

পর পর দুই জয়ের পরে হারের প্যাটার্নে পরা ঢাকা দল আজকের খেলায় আবার হেরে বসেন শক্তিশালী চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জারের কাছে। এই নিয়ে এই টুর্নামেন্টে দুই বার হেরে বসলো মাশরাফির ঢাকা ইমরুল কায়েছের চট্টগ্রামের কাছে ।

আজকে পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকায় ৮ ম্যাচ খেলে শীর্ষে রয়েছে ধারাবাহিক সফল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার। ৮ পয়েনটি নিয়ে ৭ ম্যাচ খেলে তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা প্লাটুন দল। আর মাত্র ৫ খেলা চার জয় নিয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবসানে আছে রাজশাহী দল।

শক্তিশালী ঢাকা প্লাটুনকে কাগুজে বাঘ বললেও আসলে কিন্তু তা বলা যাচ্ছে না। খেলার আরো অনেক ম্যাচ বাকি পরে আছে। পয়েন্ট তালিকায় নিচে থেকে দল কে শিরোপা জয় এনে দেয়ার উদাহরণ কিন্তু মাশরাফির আছে। তাই, মাশরাফি, পেরেরা, আফ্রিদি , তামিম, বিজয়, মোমিনুল হক, সেই সাথে উদীয়মান অলরাউন্ডার মেহেদীহাসান এক সাথে জ্বলে উঠলে সে যে কোনো দলের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে এই ঢাকা প্লাটুন দল এবং কাগুজে বাঘ হতে পারে শক্তিশালী রয়েল বেঙ্গল টাইগার্স।

চলুন, চলমান বিপি এলে চোখ রেখে উৎসাহিত করি আমাদের ঘড়ের ছেলেদের। চোখ রাখি আমাদের জনপ্রিয় পরবাসী ব্লগে খেলার পাতায় (চলবে)

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ যেন আরো এগিয়ে যায় এ প্রত্যাশা রাখি…
পরবর্তী নিবন্ধফারাওয়ের দাস
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন