Kristiansand,নরওয়ে থেকে:-
বুকের ভিতর হাজারো কষ্টকে চেপে রেখে দিন , মাস, বৎসর পার করি। হাজার কষ্টেও কাঁদিনা , কান্না আসেনা চোখ দিয়ে, বেদনার বেলায়ও নিজেকে বলি যে শরীফ তোমার বয়স অনেক হয়েছে , এখন আর কাঁদার সময় নাই।আজকে হটাৎ করে কান্না পেলো, নিজেকে সামলে নিয়ে কোনো মতে টয়লেটে চলে গিয়ে কাঁদলাম কিছুক্ষন। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমার ছোট্ট একটা ব্যবসা আছে , সেই বেবসা চালানোর জন্য যোগ্য ও কর্মঠ মানুষ লাগে, আমার ও আমার ব্যাবসায়িক পার্টনার সহ আরো দুজন মানুষ লাগে ব্যবসা চালানোর জন্য , তাই আমরা দুজন সিরিয়ান ছেলেকে কাজে নিযুক্ত করি। গত কয়েক মাস ধরে সিরিয়ান একটা ছেলে আমার ব্যবসা দাড় করানো ক্ষেত্রে আমার সাথে সাথে অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নাম হচ্ছে মোহাম্মদ , ওর বয়স মাত্র ২২ বৎসর , আমি আমার পরিচিতজনদের সাথে খুবই অমায়িক হলেও বেবসা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। অনেক টাকা ইনভেস্ট , একটু +- দিলেই ভবিষৎ অন্ধকার , যদিবা আমার বর্তমান বেবসাকে ভিত্তি করে অনেক উপরে যাবার স্বপ্ন। আজকে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পার হয়ে গেলেও মোহাম্মদের কোনো দেখা নাই, মনে মনে আমি চরম বিরক্ত কেননা বাইরে অনেক লোকের আনাগুনা , যে কেউ ভিতরে ঢুকে কোনো কিছু অর্ডার করলে মোহাম্মদের ছাড়া আমার একার পক্কে সব কিছু সামলানো সম্ভব নয় , আর আমিও চাই না আমার প্রতিষ্টানে এসে একজন মানুষও কুনো কিছু কম পেয়ে যাক যা পরবর্তীতে আমার বেবসার উপরে খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। প্রায় ১ ঘন্টা দেরি করে মোহাম্মদে কাজে আসে , মুখচুক কালো , দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও আমাকে ভয় পাচ্ছে এবং ও খুবই ক্ষুদার্ত. ওকে খাবার কথা বললাম যাতে ও আস্বস্ত হয়, আমি রাগ করলেও অমানুষ নোই।এর পর আমি ওর সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলাম, যা জানলাম তাতে কান্না পাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিলোনা।
সিরিয়াতে যুদ্ধ শুরু হবার পর প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে ভাগা ছাড়া ওদের পরিবারের অন্য কোনো পথ ছিলোনা. অনেক কষ্টে তুরস্কে আসার পর নরওয়েতে আসার জন্য ও এবং ওর বড় ভাইকে আনুমানিক ৩ বৎসর প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে পশুর মতো কাজ করতে হতো। ১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করলেও মাস শেষে প্রায় ই টাকা মিলতো না। টাকা জমানোর জন্য ওদের পরিবারে কেউই ভালো করে কোনো কিছু খেতোনা বা পারতোনা। কোনোমতে যখন দালালের ডিমান্ড অনুযায়ী টাকা জমা হয় তখন নৌকায় উঠার সময় োর দু ভাই ও পরিবারের অন্য সবাইই জানতো যে ওপারে গিয়ে উঠবার সম্ভবনা খুবই কম, সমুদ্রে ডুবে মরার সম্ভবনাই বেশি। তার পরও জীবনকে বাজি রেখে, পরিবারের সবার খাবার না খাবার সঞ্চিত টাকা জমা করে োর নরওয়েতে পারি জামায়। এখন ওর পুরো পরিবার ওর সামান্য ইনকামের উপর নির্ভরশীল। আমি ওর মুখের দিকে ভালো করে থাকলাম। তরুণ যুবক , এই বয়সে কত আনন্দ করার সময়, কিন্তু ও দূর বিদেশে আমার সামান্য একটা বেবসার উপর নির্ভর করে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে ?? কেন করছে ?? নিজের ফুর্তির জন্য অবসসই নয়। তুরস্কে ফেলে আসা মা বাবা ভাই বোনকে সামান্য একটু সুখী রাখার জন্য। আমার বেবসার জন্য মোহামেদ এর অবদান অনেক এবং আমি তাকে আশস্ত করেছি যে আমার পক্ষ থেকে কোনোদিনও ও ঠকবেনা । আমাদের সিলেটি ছেলেরা কি করি ? মাসের পর মাস বিদেশে থাকা ভাইদের পরিশ্রমের টাকা ফুর্তি করে খাই আর পলিটিক্স এর নাম করে গুন্ডামি করে বেড়াই বা বেকার জীবনকে খুব উপভুগ করি !! সমস্ত বাংলাদেশের কথা জানিনা , তবে সিলেটের ছেলে হিসাবে সিলেটের কথা বলতে পারি যে, যে সকল সিলেটি ছেলেরা অপরিসীম সুযোগ থাকার পরও বড় ভাই বা বাবার উপর বসে বসে যে জীবন যাপন করে ও ফুর্তি করে জীবন কাটায়, অন্তত তাদের বাপ্ ভাইদের কষ্টের কথা চিন্তা করে, জীবনে যেহেতু কিছুই করতে পারছেনা এবং ভবিষতে করার ও আসা নাই , তাই তার চেয়ে তাদের মরে যাওয়াই ভালো। যত্ত সব অকর্মার দল।
শরীফ ভাই, অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো. নরওয়ের জীবনযাত্রা নিয়ে আরো লেখা আশা করছি. ভালো থাকুন.