কথাগুলা কতটুকু পরিমান গুরুত্বপূর্ণ আমি জানি না। হয়ত অনেকের কাছে বাকোয়াজ মনে হতে পারে। কিন্তু ইচ্ছে হলো তাই জানানোর জন্যই আজ এই লেখাটি।
দয়া করে আমাকে কেউ কোন দলের সাথে যুক্ত করবেন না। আমি বাঙালী এবং বাংলাদেশি। আমার মাতৃভাষা বাংলা। তার ভালোবাসায় আজ এটা উৎসর্গ…
সবচেয়ে বড় পরিচয় কি?
আপনি যদি কোথাউ যান অর্থাৎ নিজের দেশের বাহিরে। আগে কিন্তু কেউ প্রশ্ন করবে না আপনার ধর্ম কি? ধর্মটা নিজের জীবন ক্ষেত্রে, শিক্ষার লক্ষ্যে, আলোর পথের পথ প্রদর্শক। আপনার পাসপোর্ট এ আপনি কোন ধর্মের সেটা থাকবে। এটা গুরুত্ববহ কিন্তু আপনি কোন দেশের নাগরিক সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
Passport দেখে বুঝা যায়। আর যদি সেটা না দেখা হয় কেউ অর্থাৎ অন্য কোন দেশের মানুষের সাথে কথার প্রেক্ষিতে সে জানতে অবশ্যই চাইবে আপনি বা তুমি কোন দেশের? English এ You —- আপনি, তুমি দুইটাই বুঝায়। এজন্য এখানে দেখা যায় আমি যাকে চিনি না সেও হয়ত আমাকে তুমি বলতেছে। আপনি বা তুমি তাতে কিছু যায় আাসে না আমার কাছে। আমি মানুষ এবং সম্পর্ককে প্রাধান্য দেই। একটা মানুষ দুইদিনে খুব আপন না হলেও আপন হয় আবার আপন পর হয়।।দুনিয়ার খেলা।
যাইহোক আজ প্যাচায় প্যাচায় বিরাট রচনা লেখার মত মন নাই। বরাবরই অস্থির মানসিকতার সাথেই আমার আমির বসবাস।
প্রতিদিনের থেকে আজ একটু ব্যতিক্রম হলো আমার। কাল রাতে কিছুসময় ফেসবুক এ থাকার পর ঘুমায় পড়ি। সকালে নামাজ পড়ে প্রতিদিন আবার ঘুমায় কিন্তু আজ আর ঘুম আসলো না দুটো কারনে।
১. আমি যার রাজকুমারী তার জন্য।
২. আর একজন মানুষ যাকে আমি না আমার ভাইয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে সেই বড় ভাইয়ের কথায়।
১ নং আমার বন্ধু আত্মীয় সবাই বুঝতে পারবেন।
কিন্তু বাধ সাধবে ২নং।
ঘুম না হওয়াতে সকালটাকে দেখি। আজ আর ভাইয়ার সাথে Hospital এ আসা সম্ভব না। তার Important meeting আছে আগ্যতা আমার একাই আসতে হবে।দূরের জন্য দুটি বাস পরিবর্তন করতে হয়। একটা সুবিধা এখানে বাস খুলনার মুড়ির টিন না। মুড়ির টিনে উঠার মজাই আলাদা। আমি কিছু চিনি বা না চিনি এক মাত্র Hospital road টা খুব ভালো চিনি। তারপরও ভয় লাগে কই যাই।।। যাইহোক, এটাই জীবন ভয় লাগলেও এগিয়ে যেতে হবে।
এবার আমার ২নং টা বলি,
যার কথা বলছি সে একজন বাঙালি। বাংলাদেশী। জন্মস্থান, ঠিকানা খুলনা।
Canada,Toronto তে আছেন প্রায় ১৮/ ২০ বছরের মত।
আগে Downtown এ থাকতেন পরে Markham, এখন Scarborough তে আছেন।
মানুষটি ভালোই। গতকাল আব্বাকে দেখতে এসেছিলেন। কথায় কথায় তিনি বললেন তিনি এ মাসেই বাংলাদেশ থেকে ঘুরে এসেছেন। তার কথাই তুলে ধরছি আর কি। তিনি বললেন যা আমার কাছে শুনতে খুব আনন্দদায়ক লাগেনি বরং কষ্টই লাগেছে। তিনি বললেন বাংলাদেশে যাওয়ার মত অবস্থা না। ওখানে কি যাওয়া যায় নাকি , গরম অনেক। এটা মানছি গরম অনেক। কিন্তু মানুষতো আছে। আমিওতো এসিতে বাস করি নাই। অতি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। গরম কিভাবে কষ্ট দেয় জানি। তার উপর ইলেক্ট্রিসিটি থাকে না। আমি এগুলাতেই অভ্যস্ত। যাইহোক,
তিনি বলেন…
খুলনা বাজে অবস্থা, ওখানে মানুষের থাকার যোগ্য না। ছিঃ কি গন্ধ আর বাইরে বের হওয়া যায় না। মানুষের হট্টোগোল, আরো কত কি ।
আমি চুপচাপ শুনতেছি। নিজেই নিজের হাতটা মুখে চেপে রাখছি। যদি কিছু বলে ফেলি। আমার ভাইয়ারও বড় সে।
এক পর্যায়ে আর চুপ থাকতে পারলাম না। যখন বললো খুলনা এখন খুব বাজে। রাস্তাঘাট, মানুষের হট্টোগোল। চারপাশে ময়লা।
তখন মুখ থেকে একটা কথা বের হয়ে গেলো।
এখন কথা হচ্ছে আপনারাও আমাকে তার মত কোন দলের মনে করবেন না দয়া করে। আমি যে মানুষটির নাম উচ্চারণ করবো তাকে আমি দল হিসাবে না তাকে আমি প্রচন্ড শ্রদ্ধা করি তার কর্মের জন্য। আব্বাকে নিয়ে ২০১৪ তেও যখন খুলনা পাবলিক লাইব্রেরিতে ভাষা সৈনিক এর সম্মানোত্তর জন্য যাই তখনও এই মানুষটির সাথে কথা হয়। বিন্দুমাত্র অহংকার বলতে কিছু নাই। সেই একমাত্র ব্যক্তি যে খুলনাকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে ছিল।
-“আলহাজ্ব আব্দুল খালেক তালুকদার”-
এই মানুষটার নামে অনেকেই অনেক কথা বলে। কিন্তু আমার কাছে কথা হলো হাজার মানুষকে কাজ করাতে গেলে এবং কাজটা সুষ্ট ও সুন্দর করতে গেলে অনেক সময় রাগ করে কথা বলতে হয়। অনেকে আছে কাজে ফাঁকি দেয় তাদের সাথে কি মিষ্টি সুরে কথা বলবে??? আমি হলেও বলতাম না। অনেকে তার রাগ কথা ধরে কিন্তু তার কর্মকে বিবেচনা করে নাই।
যাইহোক তার নাম বলার সাথে সাথে আমাকে বলে সেই ভাইয়া, তুমি তো তাহলে আওয়ামীলীগ করো। আমি পুরাই টাস্কি খাবার যোগাড়। বললাম ভাই একটা মানুষের কর্ম গুনকে প্রশংসা করলে তার দলের হয়ে যাওয়া হয় না। তাকে বললাম ভাই সে মেয়র থাকাকালীন আপনি খুলনাতে যাননি কিন্তু আমি তখনও কানাডাতে আসিনি। আমি কিন্তু ছিলাম খুলাতেই। তখন গেলে আপনি বুঝতেন পার্থক্য । কেনো জানি তার সাথে কথা বলার ইচ্ছেটা মুহূর্তেই হারিয়ে ফেললাম।
কেনো জানেন?
যে ব্যক্তি নিজের দেশ কে ভালোবাসে না সেই একমাত্র এমন কথা বলে। তার মত অধম দুনিয়াতে আর নাই। মানছি রাজনৈতিক দলগত সমস্যা, সন্ত্রাসী সমস্যা, হত্যার সমস্যা, ন্যায় বিচারের সমস্যা। তারপরও ওটাই আমার বা আপনার দেশ। ওখানেই আমাদের জন্মস্থান। ঠিকানা সব।
দেশের বাহিরে দেখতে সুন্দর। ছবি তোলার জন্য খুব ভালো। চিকিৎসা, শিক্ষা, উন্নতমানের। সব ঠিক আছে। কিন্তু কথা এ দেশেও কিন্তু ভুল চিকিৎসা, মারামারি হত্যা সবই হয়। পার্থক্য উন্নত দেশ বলে বিচার ব্যবস্থা ও উন্নত। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আছে। এই আর কি ।
তাই বলে নিজের দেশকে কটুক্তি…!!!
বিদেশ যদি এতই ভালো হয় তাহলে বছরে বছরে দেশে যাবার আর দরকার কি? পরিবারের লোকজন এর সাথে ৫ বছর পর দেখা করলেই হয় আর নাহলে তাদেরকেও নিয়ে আসলে হয়। নিজেকে আর বাংলাদেশি না বলাই উচিত। নিজেকে কানাডিয়ান মনে করে কানাতা ভাষায় কথা বলা উচিত। আমি কি ভুল কিছু বললাম?
কিছু মানুষ ২৫/৩০ বছর দেশের বাহিরে থেকেও পাল্টায় না। আর কিছু মানুষ এমন ভাব করে জেনো তার জন্মই হয়েছে দেশের বাহিরে। ভাষাটা ভুল করে বাংলায় বলে।
আমি নিজেও দেশের বাহিরে আছি। আপনারা অনেকেই আছেন যারা বিদেশে থাকেন। অনুরোধ করবো আমার দেশ যেমনই হোক না কেনো ওটা আমার বা আপনার দেশ।
নিজের দেশকে কটুক্তি করবেন না তাহলেই নিজেই কেউ সামনে প্রকাশ না করলেও অবহেলার পাত্র হবেন। নিজেকে নিজেই ছোট করবেন।
বাঙালি উন্নতি করতে পারে না নিজের দোষে। কেউ এক না। অথচ চাইনিজ বা জাপানিজ দেরকে দেখলে এমনকি শ্রীলঙ্কানদের দেখে অবাক হই তাদের দেশপ্রেম আর একাত্মতা।
আমরা কি হতে পারি না ???
তাই অনুরোধ করছি দয়া করে আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না। আমি কারো মনে কষ্ট দেবার জন্য এটা বলছি না। ভুল হলে আমি সত্যিই দুঃখিত। কিন্তু শুধু এটাই বলবো নিজের জন্মস্থান, নিজের ভাষা, নিজের দেশকে এমন ভাবে প্রকাশ করবেন না। তাহলে যে অস্তিত্ব বলে কিছু রইল না।
যতই খারাপ হোক বা চারপাশ আগোছালো হোক তাও ওটাই আমার বা আপনার আসল ঠিকানা।
বাংলাদেশ। বাঙালী। বাংলাদেশী।
ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী।

সময় :—- দুপুর ১:৫৫

3 মন্তব্য

  1. নিজেকে মহিমান্বিত করতে অন্যকে ছোট করার প্রবণতা কিছু কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যায়. এরা প্রয়োজনে নিজের জন্মভূমিকেও খাটো করতে দ্বিধান্বিত হননা. উনারা সম্ভবত ভুলে যান যে হতদরিদ্র দেশ হলেও জন্ম উনাদের বাংলাদেশে. একটি ঘটনা মনে পড়ছে. বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা. তখন কাজ করি একটি ব্রিটিশ উন্নয়ন সংস্থায়, কান্ট্রি ডিরেক্টর নেদারল্যান্ডের. দিল্লিতে ফুড সিকিউরিটি নিয়ে কনফারেন্সে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রেসেন্টেশন করবো. আমার তৈরী করা পেপার কিছুটা পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে আমার সেই বিদেশী বস যা বলেছিলেন তা আমি আজও ভুলিনি, “Don’t glorify your paper at the expense of dignity of your country” দেশের পরিস্তিতি মেনে নিয়েও যে দেশ আমাদেরকে জন্ম দিয়েছে, তার সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে আমরা কয়জন এই বিষয়টি মনে রাখি ? অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার চমৎকার লেখার জন্য.

  2. লেখাটি ভালো লাগলো।আমরা যারা বিদেশে আছি অবশ্যই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার দায়িত্ব আমাদের খারাপ আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়না, চেষ্টা করে ভালো করতে হয়। সমালোচনা করার আগে প্রথমেই একটি প্রশ্ন করতে হয় নিজেকে , তা হলো: আমি কেন সমালোচনাটি করছি? আমি কি চাই?
    কাউকে নত করার জন্য না উন্নত করার জন্য?
    এর উত্তরই গাইড করবে সমালোচককে।
    নিন্দুক সমালোচক নয়।
    ধন্যবাদ।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন