“Shafi Bhuiyan, MD, MPH, MBA, PhD Distinguished Visiting Professor, Faculty of Community Services and co-founder of ITMD bridging program The G. Raymond Chang School of Continuing Education, Ryerson University; Assistant Professor, Dalla Lana School of Public Health, University of Toronto.”

 আমরা সবাই এই দেশে এসেছি কোনো না কোনো স্বপ্ন নিয়ে এবং চেষ্টা করে জাসছি স্বপ্ন পূরণেরও। অনেকের স্বপ্ন পুরোনও হস্ছে। এখন যাদের স্বপ্ন পূরণ হস্ছে তাদের অনেকেই পরিবার পরিজন, বনধূ-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজন নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটাসছেন। কিন্তু এদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যারা শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণ করেই বসে নেই, সাথে সাথে তারা নিরলস ভাবে কাজ করে জাস্ছেন অন্যের স্বপ্ন পূরণের অনুঘটক হিসাবে এবং এ কথাগুলি তারা যেমন কাউকে ফলাও করে বলেন না বা অনেক ক্ষেত্রে আমরা জানিও না।হাঁ, মাঝে মধ্যে এরকম ২/১ জনের কথা শোনা গেলেও অনেকের কথাই অজানা থেকে যায়। আমি মনে করি এই ধরণের মানুষদের কথা আমাদেরকে যেমন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসাবে গর্বিত/অনুপ্রাণিত করতে পারে, আবার এর থেকে অনেক কিছু শিখতেও পারি তাই আমাদের উচিত সুযোগ সুবিধা এবং সময় পেলে এদেরকে আমাদের সবার কাছে তুলে ধরা। এই বিষয়ে আমি আজকে যার সমন্ধে কথা বলবো তিনি হস্ছেন চিকিৎসক ডঃ সাফি ভূঁইয়া। আপনারা কেউ কেউ হয়তো ইতিমধ্যে তাকে জানেন। আসুন যারা তাকে জানেন না তারা জেনে নেই তিনি কেন বা কিভাবে নিজের সাথে সাথে অন্যের স্বপ্ন পূরণে অনুঘটক হিসাবে কাজ করছেন।

ডঃ সাফি ভূঁইয়ার কারণে প্রায় ৭/৮ বছর আগে একদিন রায়েরসন বিশ্ববিদ্দালয়ের কোনো এক একাডেমিকের বাংলাদেশী কিছু ছাত্রদের প্রতি মন্তব্যে যে মন খারাপ হয়েছিল সেটা ঘুঁচে গেছে এবং সেই একাডেমিশিয়ানরাই আমাকে প্রথমে ডঃ সাফি ভূঁইয়ার সমন্ধে বলেছিলেন এবং সেই প্রথম আমি ডঃ সাফি ভূঁইয়াকে চিনলাম। তারা তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বলেছিলো তারা এবং তাদের বিশ্ববিদ্দালয় তার সাথে কাজ করতে পেরে গর্ব বোধ করেন। স্বাভাবিক কারণেই আমার কৌতূহল বেড়ে গেলো। এর পর BCBBর মাধ্যমে কিছুটা তার সম্মন্ধে জানি, তবে খুব বেশি না। যাহোক healtcare ফোরামের ইনফরমেশন সেশন এর জন্যও তার সমন্ধে আরো একটু জানার ইচ্ছা ছিল। খোঁজ নেওয়া শুরু করলাম বিশবিদ্দালয়ে এবং তার ডিপার্টমেন্টে, এবং তার অভূতপূর্ব কর্মকান্ডের কিছু তথ্য পেলাম। আসুন তাহলে সংক্ষেপে জেনে নেই উনি কে।

ডঃ সাফি ভূঁইয়া বর্তমানে কানাডার ২টি বিশ্ববিদ্দালয়ের সাথে যুক্ত আছেন এবং কাজ করছেন মাল্টি মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টে। ডঃ সাফি ভূঁইয়া, MD, MPH, MBA, PhD রায়েরসন বিশ্ববিদ্দালয়ের Faculty of Community Services and The G. Raymond Chang School of Continuing Education এর একজন Distinguished Visiting Professor এবং একাধারে টরন্টো বিশ্ববিদ্দালয়ের  Dalla Lana School of Public Health এর Assistant Professor. এর সাথে সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় যেটি; সেটি হলো, তিনি কানাডার ইতিহাসে প্রথম এখানকার ইমিগ্র্যান্ট ডাক্তারদের জন্য non-licensed health care job এর জন্য একটি Bridging প্রোগ্রাম চালু করেন।

আমি আমার দৃঘ্যদিন আগের আসার সময় থেকে আজ পর্যন্ত শুনে আসছি যে ডাক্তারদের লাইসেন্সিং এর সংখ্যা যেমন কম এবং উনাদে জন্য বিকল্পও তেমন কিছু নেই। দুঃখজনক ভাবে কানাডাতে একথা প্রচলিত যে, আমাদের এখানকার ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং পিজা ডেলিভারি যারা করেন তাদের অনেকেই ডাক্তার ( প্লিজ, আমি ওই সমস্ত পেশাকে খাটো করে দেখছি না). লাইসেন্স করে প্রাকটিস করা ছাড়াও যে অন্য কিছু থাকতে পারে সেটা নিয়ে সরকারও যেমন তৎপর ছিলেন না, তেমন আমরাও ওয়াকিবহাল ছিলাম না। যদিও বিকল্প আছে। ঠিক এই সময়টাতে ডাক্তার সাফি এগিয়ে আসেন তার non-licensed health care job এর জন্য একটি ITMD নামের Bridging প্রোগ্রামের প্রজেক্টের প্রস্তাব নিয়ে। আমরা ভালো করে জানি যে ইম্মিগ্রান্টদের জন্য কোনো কিছুর ফান্ডিং আনতে হলে কত ঝামেলা পোহাতে হয়। উল্লেখ, আমি এমনি একটি Bridging প্রোগ্রামের আদি অন্ত অনেক কিছু যানি এবং তাদের স্ট্রাগলের কথাও জানি। কিন্তু ডাঃ সাফি তার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এর সুনিপন দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রজেক্টটি শেষমতো দাড় করাতে সক্ষম হলেন। শুরু হলো non-licensed health care job এর জন্য ITMD নামের Bridging প্রোগ্রাম। বর্তমানে তৃতীয় বছরে পাড়া দিয়েছে প্রোগ্রামটি। আমি যে bridging প্রোগ্রামের বেপারে জানি তাদেরকে প্রতি বছর হা করে তাকতে হয় পরবর্তী কোহর্টএ ফান্ডিং এর জন্য, এবং এই অবস্থা অন্যান্য bridging প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেও। কিন্তু ডঃ সাফির প্রোগ্রামের অভূতপূর্ব সাফল্যে মিনিস্ট্রি তাকে তার প্রজেক্টির আগামী ফান্ডিং পর্যন্ত নিশ্চিত করে রেখেছেন। এবং রায়েরসন বিশবিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ডিন এবং অন্নান্য একাডেমিসিয়ানরাও তার এই সাফল্যে গর্বিত। শুধু উনি নয়, বিশবিদ্যালয়ের অন্যান্য ২/৪ জন একাডেমিশিয়ানের কাছে থেকে এটা জেনেছি এবং আমিও গর্বিত হয়েছি।

যাহোক উনার সমন্ধে এগুলি জানার পরে আমার খুব ইচ্ছা হলো তার সাথে দেখা করার। তাছাড়া ঠিক এই সময়ই এসে পড়লো Job Support টিমের Healthcare ইনফরমেশন সেশন। তাই তাকেও দরকার ছিল একজন স্পিকার হিসাবে। তাকে যখন মানুষের সামনে উপস্থাপন করবো তখন তাকে তো ভালো করে জানতে হবে। প্রথমে যোগাযোগ করলাম তার ওই প্রোগ্রামের বর্তমান স্টুডেন্টদের সাথে, তার পর যোগাযোগ করলাম তার ওই প্রোগ্রামের স্টুডেন্ট যারা প্রোগ্রাম করে চাকরি পেয়েছেন। খুবই সন্তোষজনক ফিডব্যাক পেলাম সব দিক থেকে।

এবার উনার সাথে যোগাযোগ করলাম দেখা করার জন্য। উনার শত বেস্ততার মধ্যেও একদিন বিকালে সময় দিলেন।  উনার সিম্প্লিসিটি দেখে মুগ্ধ হলাম। নিশ্চিত আমার অবস্থান থেকে উনার অবস্থান অনেক উপরে, কিন্তু ঘন্টাদুয়েকের আলাপে আমি কোনো পার্থকই খুঁজে পেলাম না। কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে অনেক কিছু শিখলামও। আমন্ত্রণ করলাম আমাদের ইনফরমেশন সেশনে আসার, উনি সাদরে গ্রহণ করলেন এবং এলেন আর প্রোগ্রামের বিষয় সহ, ডাক্তারদের চাকুরীর বেপারে আরো কিছু তথ্য দিলেন। শুধু তাই নয়, BCCB Healthcare ইনফরমেশন সেশনের পরে অনেকে যোগাযোগ করছেন, তাদেরকে যখনই উনাকে রেফার করছি, উনি উনার সাধ্যমতো তাদেরকে সহায়তা করছেন।

এখন অনেকের প্রশ্ন থাকে পারে ওখানেতো মাত্র ২৪/২৫টি সিট্ এবং তার মধ্যে অন্যান্য দেশের ইমিগ্র্যান্ট ডাক্তাররাও আছেন। আমার কথা হলো এ পর্যন্ত যে ৮/১০ দেশি ডাক্তার উপকৃত হয়েছেন এবং আরো হসছেন সেটাই বড়ো কথা। মিনিস্ট্রি যখন উনাকে প্রোগ্রামটির এক্সটেন্ডেড ফান্ডিংয়ের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন তখন উনার দেওয়া উত্তরের একটি উক্তি আমার খুব ভালো লেগেছিলো, আর সে কারণেই আমি লিখেছি যে উনি একজন স্বপ্ন পূরণের অনুঘটক। ” আমি তিন বছর আগে কিছু ইম্মিগ্রান্টকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম, আজ তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এবং হসছে, আমি চাই ইম্মিগ্রান্টদের এই স্বপ্ন পূরণের প্রক্রিয়াটা চলমান থাকুক, এতে করে শুধু তাদের স্বপ্ন পূরণই হবে না, এদেশের অর্থনীতিতেও তারা অবদান রাখবে, কারণ আগে এই সমস্ত ইমিগ্র্যান্ট যেখানে অড জব করে বলতে গেলে $২০০ ট্যাক্স দিতো; এখন তারা হাজার ডলার ট্যাক্স দিবে” . উনার অভিজ্ঞতা ও কোয়ালিফিকেশন দিয়ে উনি সহজেই এখানে অন্য কোনো কিছু নিয়ে খুব ভালো ভাবে থাকতে পারতেন, কিন্তু নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে এদেশের সরকারকে কাজে লাগিয়ে উনি অন্যানো ইমিগ্র্যান্ট ডাক্তারদের স্বপ্ন পূরণে যে নিরলস কাজ করে জাস্ছেন তা অবশই প্রশসার দাবি রাখে। after all উনার আগে কেউতো এগিয়ে আসেনি। তাছাড়া এদেশের একটি বিশ্ববিদ্দালয় যখন তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে, তখন আমরা তার দেশি ভাই বোন হয়ে কেন গর্ব করবো না। টরন্টো অথবা রায়েরসন বিশ্ববিদ্দালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গেলে উনার সমন্ধে বিস্তারিত জানতে পাবেন।

ডঃ শাফি কানাডাতে এসেছেন ৫/6 বছর আগে। উনি জাপান থেকে পিএইচডি করেন এবং সেখানে গ্লোবাল পাবলিক হেলথ এর উপর গবেষণা করেন, এবং এখন ওই বিষয়ের গবেষণায় জড়িত। উনার উক্ত বিষয়ের গবেষণার অনেক রেকমেন্ডেশন UNO প্রজন্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশেও উনার অনেক বড়ো মাপের প্রজেক্টের সাফল্য আছে। পরিপূর্ণ ভাবে উনার গবেষণা এনং একাডেমিক কর্মকান্ড বর্ণনা করতে গেলে অনেক লিখতে হবে বা অনেক সময় লাগবে।

হতাশা, দুর্দশা এবং রূঢ় বাস্তবতার কথা আমরা অহরহই শুনে থাকি তবে এর মাজেও যে কিছু সাফল্য বা ভালো লাগার বেপার আছে সেটা আমাদেরকে অবশই জানতে হবে, সেটা যদি মাত্র একটিও হয় তাও আমাদেরকে জানতে হবে এবং অন্যকে জানাতে হবে। সম্প্রতি আমি যখন রায়েরসন বিশ্ববিদ্দালয় গিয়ে উনাকে নিয়ে একটি ডিপার্টমেন্টে গেলাম তখন ওখানকার এক কোঅর্ডিনেটর আমাকে প্রশ্ন করলো “How do you know Shafi” তখন আমার খুব ভালো লেগেছিলো। আমি চাই আমাদের দেশের ভাই বোনেরা যে কোনো পেশায়ই হোক ভালো করুক, আর আমি তখন বেশি খুশি হই যখন দেখি আমার ছোট একটু সহায়তায় আমার দেশি ভাই বোন আমার থেকেও ভালো পর্যায় পৌঁছে গেছে। এমনটি অলরেডি ঘটেছে, অনেক অনেক দিন আগে একটি এসাইনমেন্টের কপি দিয়ে এক দেশি ভাইকে সহায়তা করেছিলাম, খুব বড়ো কিছু না কিন্তু ৭/৮ বছর পরে একটি ট্রেনিংয়ে গিয়ে যখন দেখি উনি আমাকেদেরকে ট্রেনিং দিবেন তখন মনটা ভোরে গিয়েছিলো। আসুন আমরা সবাই একে অপরকে সাহায্য করি এবং এদেশের বিভিন্ন পেশায় সাফি ভাইয়ের মতো অনেককেই  যেন দেখতে পারি। এই ধরণের মানুষরা শুধু ইম্মিগ্রান্টদের জন্যই কিছু করছেন না, বরং তারা এদেশের প্রতিও অবদান রাখছেন।

সেদিন এক চায়ের আড্ডায় আকদ উল্লার বেপারে কথা হসছিলো। আমি তখন বলেছিলাম একজন আকদ উল্লা মানে সমস্ত বাংলাদেশ নয়, যেমনটি একজন Stephen Paddock(লাস ভেগাস শূটার) মানেও সমস্ত আমেরিকা নয়। তাই তুমি Stephen Paddock এর কুকর্মে যদি একজন আমেরিকান বলতে লজ্জা বোধ না করো তেমনি আমিও একজন  আকদ উল্লার জন্য আমাকে বাংলাদেশী বলতে লজ্জা পাই না। সমস্যা আমাদের অবশই আছে এবং সেটা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা যেমন করবো তেমন ভালো কিছু থাকলে তা নিয়েও কথা বলতে হবে। ডঃ সাফিদের সংখ্যা যত কমই হোক না কেন, আমাদেরকে তাদের কথা বলতে হবে।

আমি ইতিমধ্যে ২/১ জন সাধারণ মানুষের সাফল্যের কথা লিখেছি।  সেজন্য কেউ কেউ বলেছেন গুটি কতেক লোকের সাফল্য সারা কানাডার দেশি ইম্মিগ্রান্টদের সাফল্যের কথা নয়। হাঁ সেটা সত্যি হতে পারে কিন্তু আমার উদ্দেশ্য এই সত্যিকে অস্বীকার করা নয়। জাস্ট ওই ২/৩ টি লোকের সাফল্যের গল্প থেকে  যে কিছু লোক অনুপ্রাণিত হলো এবং তাদের ক্যারিয়ার এর বেপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলো সেটাই আমার উদ্দেশ্য। অবশেষে ডাক্তার সাফিকে অসংখ ধন্যবাদ, আমাকে তার সমন্ধে কিছু লেখাতে অনুমতি দেওয়ার জন্য, যদিও initially he was reluctant . কারো ক্ষতিতো করছি না।

ভবিৎষতে আরো অন্যান্য পেশার দেশি ইম্মিগ্রান্টদের স্ট্রাগগল এবং অবশেষে তীরে পৌঁছানোর গল্প লিখতে চাই, হতে পারে সেটা ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার, সোশ্যাল ওয়ার্কার, ট্যাক্সি চালক, রেস্টুরেন্ট কর্মকর্তা ইত্যাদি। আপনি যদি আপনার অবস্থানে থেকে হ্যাপি থাকেন এবং মনে করেন আপনার ছোট খাটো যে স্বপ্ন ছিল সেটা পূরণ হয়েছে তাহলে আমাকে জানান, আমি আপনার কথা জানতে চাই এবং অন্যকে জানাতে চাই কারণ আপনাদের কষ্ট এবং সাফল্যের গল্প আমাদেরকে অনেক অনুপ্রাণিত করবে।

সবাইকে বাংলাদেশী বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা দিয়ে শেষ করছি।

সবাই ভালো থাকুন।

মুকুল

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন