টরন্টো থেকে:-
টরন্টোতে সবজি চাষের সময় ঘনিয়ে এসেছে।এখানে কেউ খামারে, কেউ সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন দেয়া প্লটে , কেউ বাড়ির পেছনের আঙ্গিনায় এমন কি বারান্দায়ও নানান সব শাক-সবজি চাষ করেন । অনেকেই কানাডিয়ান শাক-সবজি চাষ করেন। তবে বেশিরভাগ বাংলাদেশীই, দেশীয় সবজি চাষ করতেই ভালোবাসেন। সবজি চাষের জন্ন বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।শখ থাকলে যে কেউ এ চাষটা করতে পারে। আপনার ইচ্ছাটাই এখানে প্রধান। সবজি চাষ করতে হবে ভালোভাবে এবং সুন্দর করে। বাগান দেখতে সুন্দর হলে আপনার মনে আনন্দ থাকবে, ক্লান্তি কম লাগবে। পরিবারের সবাই খুশি থাকবে। কত ডলারের সবজি খেলাম সেটা নয়, স্বাস্থগত দিকটা এবং নিজের বাগানের সবজি খাওয়ার আনন্দটাই এখানে প্রধান।
টরন্টোতে সবজি চাষ করেতে হলে পূর্ব বছরের শেষ ও প্রথম ফ্রস্ট তারিখ মনে রাখলে ভালো হয়। গত বছরে সবজি মৌসুমের শুরুতে শেষ ফ্রস্ট পরার তারিখ ছিল ৯ই মে এবং মৌসুম শেষে প্রথম ফ্রস্ট পরার তারিখ ছিল ৬ ই অক্টোবর। তাহলে ধরে নিতে পারেন এবার সবজি করার জন্য আপনি কমবেশি ১৪৯ দিন সময় পাবেন। এখন নির্ধারণ করতে হবে এই সময়ের ভিতরে কি কি সবজি আপনি করতে পারবেন। টরন্টোতে আমরা ফসলের ঠান্ডা কষ্টসহিষ্ণু জোন ৬ এ আছি অতএব মে মাসের ২০ তারিখের আগে জমিতে সবজি চারা লাগালে মরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখানকার প্রথা অনুযায়ী চাষীরা ভিক্টরি ডেতে জমিতে সবজি ফসল লাগানো শুরু করে, এর আগে নয়। মে মাসের ২৩ তারিখ হলো ২০১৬ এর ভিক্টরি ডে। মনে রাখতে হবে এখানে জলীয় বাষ্প কম থাকায় বীজ গজাতে বেশি দিন লাগতে পারে।লাউ, কচু, করল্লা, পুঁই শাক , মরিচ এর চারা ঘরে করে লাগানো যায় অথবা চারা কিনে লাগালেও হয়। লাউয়ে মাচা দিতে হয়। মাচার নিচটা খালি না রেখে পুঁই শাক লাগানো যায়। মাচার নিচের ছায়ায় পুঁই শাক হবে। ভালোভাবে সবজির চাষ করতে হলে ৬ ঘন্টা সূর্যালোক প্রয়োজন কিন্তু এখানে আমরা অনেক বেশি ঘন্টা সূর্যালোক পাই। তাই সবজি বাড়ে দ্রুত। আধো -ছায়াতেও সবজি ভালই হয়।
সূর্যালোক বেশি বলে কচুর জন্ন প্রচুর পানি দিতে হয়।সম্ভব হলে সকাল-বিকাল দু-বেলা পানি দিতে হবে। ঠান্ডা-সহিষ্ণু সবজি যেমন, ওলকপি, মুলা , মেথি, মটর শাক , সরিষা শাক , ধনিয়া পাতা ২/১ টা ফ্রস্ট সহন করতে পারে। এগুলো এপ্রিল মাসের ৩য় সপ্তাহেই লাগানো যায়। যদি জমি তৈরী থাকে লাল শাকের বীজ এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে বুনে দেয়া যায়। অনেকে মিষ্টি আলু লাগায় পাতা খাওয়ার জন্ন।
লাউ এর চারা করতে বীজ ৮ থেকে ১০ দিন ভিজিয়ে রেখে ঐ বীজ একটা ভিজা কাপড়ে অথবা ভিজা কাগজ টাওয়াল এ পেঁচিয়ে একটু গরম স্থানে রেখে দিলে ৪ থেকে ৫ দিনের দিন গজিয়ে যাবে। তখন চারা করার পটে পটিং মাটি দিয়ে ১ ইঞ্চি নিচে বীজের গজানো দিকটা নিচে দিয়ে পুতে দিতে হবে। ১০ দিন ভেজানোর পর সরাসরি পটে দিয়ে দিলেও হয়। সময় লাগবে বেশী তবে চারা গজাবে। এখানে পোকা -মাকড় , বিশেষ করে মৌমাছি কম বলে লাউয়ের পর্যাপ্ত পরাগায়ন হয় না ।তাই পরাগায়ন করে দিতে হয়। না হলে লাউ ধরে না , হলুদ হয়ে মরে যায়। তবে মনে রাখতে হবে, আলো-বাতাস এবং তাপমাত্রা, ভালো ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। লাউয়ের ভাল ফলন পেতে হলে প্রচুর পরিমাণ সার আর পানির প্রয়োজন হবে। লাউগাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। তাই নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ দেয়া, মাটির চটা ভেঙে দেয়া, বাউনি দেয়া, মাচা দেয়া ও গাছের গোড়ার শাখাগুলোও ভেঙে দেয়া বাঞ্ছনীয়।জমির আগাছা পরিষ্কার করার সময় মাটি আলগা করে দিতে হয়। তার ফলে গাছের গোড়ার মাটি নরম এবং ঝুরঝুরে থাকে। এতে গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস সহজে প্রবেশ করে গাছের খাদ্য গ্রহনের কাজটা ভালো হয়।
সবজি ফসলে এখানে পোকা-মাকড় খুব একটা হয় না , তবে রোগ হয়। বিশেষ করে কুমড়া জাতীয় ফসল যেমন লাউ, কুমড়া, শসা, যুকিনি ইত্তাদি ফসলে পাউডারি মিলউড রোগ হয়।। এ রোগে আক্রমণ করলে গাছের পাতায় পাউডারের মতো আবরণ দেখতে পাওয়া যায়। এ রোগের কারণেও লাউ লাল হয়ে মরে যায়। মাটিতে বেশি রস থাকলে এ রোগ হয়। আবার অ্যানথ্রাকনোজ রোগ এর কারণে ডাটা সবজি করা মুশকিল হয়ে যায়। এসব রোগের সমাধানের ঔষধ বিষাক্ত বলে সাধারনভাবে তা কিনতে পাওয়া যায় না। তাই এসব প্রতিরোধের জন্য চাষের সময় ভালোভাবে আগাছা পরিস্কার করা জরুরি। জমিতে পানি সরে যাওয়ার নালা রাখতে হবে। প্রতি বছর স্থান বদল করে সবজি লাগাতে হবে। যেমন গত বছর যেখানে লাউ লাগানো হয়েছে এবার সেখানে লাউ না লাগিয়ে অন্য় ফসল লাগাতে হবে। আর অন্য় ফসলের স্থানে লাউ লাগাতে হবে। এখানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কাঠবিড়ালি। বিষ দেয়া যাবে না। তাড়াতে যাবেন ? কোনো রকম আঘাত পেলে বা মরে গেলে খবর আছে। কানাডিয়ান টায়ার অথবা ওয়ালমার্ট থেকে পশু বিরক্তিকর কিছু কিনে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।